ল্যাপটপ উপহার
ল্যাপটপ উপহার
থানা থেকে পুলিশ অফিসারের ফোন পেয়ে স্কুলের সভাপতি রাজাকে স্কুলে ভর্তি করে নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেন।
--কিন্তু, সভাপতি সাহেব এতে অনেক ভালো পরিবারের ছাত্র ছাত্রী আমাদের স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে চলে যাবে।
--সে তো সব সময় কোন না কোন ছাত্র ছাত্রী আসা যাওয়া করেই থাকে। সেই কারণে কোন নিরপরাধ ছেলেকে বঞ্চিত করা যায় না। যাইহোক না কেন আপনি ওকে কালকে ভর্তি নিয়ে নেবেন।
--পরেরদিন রাজা বিদ্যালয়ে আসে এবং বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে চায়।
--অফিস থেকে বলা হয় তোমাকে কলা বিভাগে ভর্তি নিতে বলা হয়েছে।
--এই নিয়ে চলে এক প্রস্থ নাটক। কম নম্বর পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হবে,আর এতো ভালো রেজাল্ট করেও কেন রাজাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি নেওয়া হবে না?
--এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর অফিসের কর্মচারী দের কাছে ছিল না। তাই অবশেষে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক রাজাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশ দেন।
--রাজা নিজের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
--নমিতা এদিন যেন হাতে স্বর্গ পায়। বাড়িতে যথাসাধ্য ভালো খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
--বিকালে কয়েকজন শিক্ষকের কাছে টিউশন পড়ার জন্য যোগাযোগ করতে রাজা বেরিয়ে পড়ে। ওই শিক্ষকদের প্রত্যেকে রাজাকে ব্যাচে পড়াতে অস্বীকার করেন।
--ডি এস পি সাহেব পুলিশ মারফৎ রাজার মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে পারেন এবং তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে হন। কিন্তু, কাজের চাপে এতদিন দেখা করতে পারেন নি। আজকে কাজের সূত্রে এই থানায় এসেছেন।
--তাঁর ইচ্ছা ছিল বাড়ি গিয়ে রাজাকে কনগ্রেচুলেশন জানাবেন। একটা ছোট উপহার রাজার হাতে দিয়ে আসার ইচ্ছে ছিল।
--কিন্তু,রাজার বাড়িতে তিনি গেলে সবাই রাজা থেকে সচেতন হয়ে পড়বে। রাজা আর কোন তথ্য পুলিশকে দিতে পারবে না। এমনকি রাজার জীবন সংশয় হতে পারে। তাই রাজাকে থানায় আসার জন্য খবর পাঠানো হয়।
--রাজা থানায় গিয়ে ডি এস পি সাহেব এর সঙ্গে দেখা করে।
--তোমার মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট শুনে আমি ভীষণ আনন্দিত। আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য এই ক্ষুদ্র উপহার টুকু নাও। জীবনে অনেক বড় হও, ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনা করি সবসময়।
--রাজার আজ খুশির সীমা নেই। উপহার নিয়ে পুলিশ অফিসারকে প্রণাম করে।
--তোমার ভর্তির জন্য টাকা কতো লেগেছে বলো। আর যে কটা টিউশন তুমি নেবে তার জন্য মাসে কতো খরচ হবে সেটা আমাকে জানাবে।
--তিনি রাজাকে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বলেন। ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ওই টাকা তিনি পাঠিয়ে দেবেন বলে কথা দেন।
--রাজা সুযোগ পেয়ে গতকাল বিকালে টিউশন টিচার দের কাছে যাওয়ার ঘটনা খুলে বলে।
--ডি এস পি সাহেব থানার সেকেন্ড অফিসারকে বলেন, আপনি সন্ধ্যা বেলায় এইসব টিউশন টিচারদের সঙ্গে দেখা করে রাজার টিউশন ঠিক করে আসবেন। আর মাসে কত টাকা লাগবে তা আমাকে জানাবেন।
--রাজা ঘরে ফিরে আসে। উপহার এর প্যাকেট খুলে রাজা দেখে যে সেটা একটা ভালো কোম্পানির ল্যাপটপ। রাজা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে।
--রাজা কল্পনাও করতে পারেনি যে এত ভালো ল্যাপটপ কোনদিন হাতে পাবে।
--নমিতা ও রাজার বোনেরাও উপহারের ল্যাপটপ দেখে ভীষণ আনন্দিত হয়।
--ল্যাপটপ পাওয়ার খবর অনিমা ও বস্তির সকলেই খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়।
--অনিমা একদিন ল্যাপটপ দেখার জন্য রাজাদের ঘরে আসে।
--সন্ধ্যা বেলায় সেদিন রাজার দেওয়া ঠিকানা ধরে ধরে এক এক করে শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে যান থানার সেকেন্ড অফিসার।
--শিক্ষকদের প্রত্যেকে বাড়িতে পুলিশ আসতে দেখে ঘাবড়ে যান। ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন।
--ভীত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই স্যার ,আমি এসেছি একজনের টিউশনের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কথা বলতে।
--প্রত্যেক শিক্ষকের সঙ্গে রাজার টিউশন এর ব্যাপারে কথা বলে টিউশনের ডেট ও টাইম ঠিক করে তিনি থানায় ফিরে যান । ফোনে ডি এস পি সাহেবকে ঘটনা সবিস্তারে জানিয়ে দেন।
--কোন টিউশন কখন থেকে শুরু হবে সেটা কি রাজাকে জানানো হয়েছে?
না,স্যার। টিউশন টিচারদের প্রত্যেকেই বলেছেন উনারা রাজাকে খবর দেবেন।
--তবু আপনি একবার রাজাকে ডেকে খবরটা জানিয়ে দেবেন।
--সেকেন্ড অফিসার পরের দিনই রাজাকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে টিউশনের ব্যাপারে বিশদে জানিয়ে দেন।
--হ্যা স্যার। আজকে সকালে গণিতের স্যার টিউশন পড়ার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমি ওখানে টিউশন পড়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। অন্যান্য শিক্ষকেরা ডেট ও টাইম জানিয়ে দিয়েছেন।
--যাক খুব ভালো হয়েছে। আমি দায়িত্ব মুক্ত হলাম। তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো ভাই।
--স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত কম্পিউটার ক্লাস সকলকেই করতে হতো। তাই সেখান থেকে রাজার কম্পিউটার সম্পর্কে অল্প সল্প জ্ঞান হয়েছিল। তবে তা অবশ্যই ডেক্সটপ কম্পিউটার বিষয়ে।
--রাজাও এর আগে কোনদিন ল্যাপটপ দেখেনি। তবে উচ্চমাধ্যমিকে ওর কম্পিউটার সাবজেক্ট থাকার কারনে স্কুলে সবেমাত্র একদিন ল্যাপটপ নিয়ে সকলকে দেখানো হয়েছে। স্কুলে এখনো ল্যাপটপের ব্যবহার খুব একটা শেখানো হয়নি ।
--তবু রাজা ঘরে সময় পেলেই ল্যাপটপ খুলে খুটখাট করতে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই কিছু না কিছু প্রোগ্রাম নিজেই শিখে যায়।তাই কম্পিউটার বিষয়ে ক্লাসে সবার চেয়ে এগিয়ে যায়।
--রাজা যখন ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে তখন ওর দুই বোন সব ছেড়ে অবাক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।
ওদের খুব ইচ্ছা দাদার মতো ওরা ল্যাপটপ নিয়ে খেলা করবে।
--কিন্তু,যদি খারাপ হয়ে যায় তবে তো মায়ের কাছে মার খেতে হবে,দাদার পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই ওরা
প্রবল ইচ্ছা দমন করে শুধু জুলজুলে অবাক দৃষ্টিতে ল্যাপটপের স্ক্রিনের চেয়ে থাকে।
--একাদশ শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষার পর স্কুলে গিয়ে সব ছাত্রছাত্রী জানতে পারে স্কুলে চুরি হয়েছে।
অফিস ঘরের তালা ভেঙে বিভিন্ন কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে গেছে।
--স্কুল কর্তৃপক্ষ থানায় ডায়েরি করে। সেখানে কাউকে সন্দেহের কথা জানানো হয় নি। বা সন্দহভাজন কারো নাম বলা হয়নি।
--ডায়েরিতে বলা হয়েছে খোয়া গেছে বলতে একটি কাঁসার ঘন্টা যেটা বিক্রি করে সাত বা আটশো টাকা পাওয়া যাবে। আর নগদ হাজার খানেক টাকা। আর স্কুলের বেশ কিছু নথি পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষক শিক্ষিকাদের সার্ভিস বুক গুলো পাওয়া যাচ্ছে না।
--সকলের তাই প্রশ্ন হচ্ছে চোরেরা চুরি করতে এলো কেন? ওরা তো খবর না নিয়ে আসে না।
--সকলের মনে উঁকি দিচ্ছে একটি নাম! সবাই মনে করছে এটা রাজারই কান্ড।
--কানাঘুষা করতে করতে সেই কথাটা রাজার কানে গিয়ে পৌঁছায়।
--রাজা ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। রাজার তদন্তে লোকাল তিন চারটে ছেলের নাম উঠে আসে। ওরা সবাই বাসস্ট্যান্ডের পকেটমার।
--ওদের মোটিভ জানতে গিয়ে রাজার চক্ষু চরক গাছ হয়ে পড়ে। স্কুলের কোন একজন শিক্ষক ওদেরকে দিয়ে এই চুরিটা করিয়েছে।
--রাজা ওই শিক্ষকের নাম জানার পর তা প্রধান শিক্ষকে জানায়। প্রধান শিক্ষকের উদাসীন ভাব দেখে রাজা হতবাক হয়ে যায়। উনি মোটেই চান না এই চুরির কোন কিনারা হোক।
--প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে স্কুলের খেলার শিক্ষক জানতে পারেন যে রাজা চুরির সঙ্গে তার যুক্ত থাকার বিষয়টা জানতে পেরেছে।
--খেলার শিক্ষক রাজার কাছে বিষয়টি সবিস্তারে খুলে বলে যে তার সার্ভিস বুকে কিছু সমস্যা ছিল।
ওই সার্ভিস বুক জমা উনার পেনশন পেতে অসুবিধা হতো। তাই সার্ভিসটা চুরি করানোর জন্যই চোর পাঠানো হয়েছিল।
--এখন সার্ভিস বুক পাওয়া না গেলে নতুন করে সার্ভিস বুক তৈরি করে নেওয়া যাবে।
--আর নতুন করে তৈরি করা সার্ভিস বুকে ওই সব ত্রুটি দূর করে দেওয়া হবে। ফলে পেনশন পেতে আর কোন অসুবিধা হবে না।