প্রথম রহস্য উদঘাটন
প্রথম রহস্য উদঘাটন


পুলিশের পক্ষ থেকে রাজাকে ইনফরমার হিসাবে কাজে লাগানোর যে পরিকল্পনা তা গোপন রাখার জন্য বারবার করে রাজাকে বলে দেওয়া হয়েছে। এই কারণে রাজা ওর মা বা অনিমা কাউকে ইনফরমার হিসাবে কাজ করার কথা বলেনি। শুধু এক বড় পুলিশ অফিসার পড়ার খরচ দেবে বলেছে বলে প্রত্যেক মাসে থানা যাওয়ার ব্যাপারটা ম্যানেজ করে রেখেছে।
অন্যদিকে,পুলিশ ভবিষ্যত পরিকল্পনা গোপন করে রাখলেও আন্ডার ওয়াল্ডের স্থানীয় সব ডন নিজেদের সোর্স মারফত খবর পেয়ে যায় যে রাজার উপর কোন কেস থানায় দেওয়া হয়নি। এমন কি থানার খাতায় রাজাকে গ্রেফতার পর্যন্ত দেখানো হয় নি। তাই ওরা বুঝতে পারে রাজাকে নিয়ে পুলিশের বড়ো কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে।
স্থানীয় সমাজবিরোধী দলের সব ডন নিজেদের গ্যাংয়ের ছেলেদের রাজা থেকে দূরে থাকতে, সাবধান থাকতে এবং ওর সঙ্গে কোনরকম গন্ডোগলে,বিবাদে জড়াতে নিষেধ করে দেয়।
রাতে অনিমা কে ওর বাড়ি পৌঁছে দিতে রাজা ও নমিতা যখন উত্তর পাড়ায় যাচ্ছিল তখন একদল সমাজবিরোধী রাজাকে দেখে ছুটে পালায়।
সমাজ বিরোধী দলের ছেলেদের গভীর রাতে রাজাকে দেখে ওইভাবে ছুটে পালিয়ে যাওয়া ডন দের নির্দেশের পরিণতি।
রাজাদের পাড়ার একটি লোক বছর চারেক আগে হঠাৎ পুরানো ঝুপড়ি ঘর ভেঙে দোতলা বাড়ি তোলে। বাড়িতে
টিভি,ফ্রিজ কেনে,একটা মোটরবাইক কেনে। রাজাদের
পাড়াতে তখন একমাত্র ওই বাড়িটায় পাকা দ্বিতল বাড়ি ছিল। তাই ওই সময় থেকে পাড়াতে ওই বাড়ির সম্মান যথেষ্ট বেড়ে যায়।
ওদের বাড়ির সবাই বলতে থাকে ওদের ছেলে অনেক টাকা লটারি পেয়েছে। আসলে ওই লোকটি বাড়ির সকলকে লটারি পাওয়ার কথা বলেছিল। পাড়ার লোকেও সেটাই বিশ্বাস করেছিল।
কিন্তু,কিছু দিনের মধ্যেই লোকটি এক এক করে বাড়ির সব জিনিস পত্র বিক্রি করতে থাকে। এমনকি বছর খানেকের মধ্যে মোটরবাইক টাও বিক্রি করে দেয়। ওদের
আর্থিক অবস্থা আবার আগের মতোই হয়ে পড়ে। লোকটি আগের মতোই রিক্সা চালায়,ওর মা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকা কাজ করতে থাকে।
এতদিনে রাজার একটা সন্দেহ হয়। লটারিতে এতো টাকা কেউ পেলে থানায় জানানো বাধ্যতামূলক। রাজা প্রথমে খুব সন্তর্পনে থানায় গিয়ে জানতে চায় ওদের পাড়ার কেউ বছর চারেক আগে লটারিতে অনেক টাকা পেয়েছিল কি না এবং সেই বিষয়ে থানায় কোন খবর আছে কি না?
রাজা জানতে পারে এই ব্যাপারে লোকাল থানায় কোন খবর নেই। লটারির টিকিট কিনার অছিলায় রাজা বিভিন্ন লটারি টিকিট বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করে বছর চারেক আগে কেউ কোন বড় লটারি ওই কাউন্টার থেকে পেয়েছিল কি না। কেউ সেরকম ঘটনা মনে করতে পারে না।
এবার রাজার সন্দেহ আরো দৃঢ় হয় কেননা যে কাউন্টার থেকে লটারি বড় প্রাইজ কেউ জিতলে সেই বিক্রেতা বড় মুখ প্রচার করে অথচ এদের কারো এমন ঘটনার কথা মনে পড়ছে না। তাই এতো টাকা লোকটি নিশ্চয়ই কোন না কোন অসৎ উপায়ে পেয়েছিল।
রাজা ওই লোকটির মায়ের সঙ্গে ভাব জমিয়ে জানতে পারে টাকা নিয়ে আসার আগে ওই লোকটি প্রায় মাস খানেক বাড়ি থেকে কোথাও চলে গিয়েছিল। যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে আসে।
এতে রাজা আরও নিশ্চিত হয় যে লোকটি অসৎ উপায়েই টাকা পেয়েছিল। কেননা, লটারির টাকা কেউ ওইভাবে ব্যাগে করে নিয়ে আসে না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে চেকের মাধ্যমে পেমেন্ট দেওয়া হয়।
কয়েকদিন মধ্যেই রাজা জানতে পারে বছর চারেক আগে ওই সময়ে পাশের শহরে একটা ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয়েছিল। কয়েক লাখ টাকা চুরি হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এখনো সেই চুরির কোন কিনারা করতে পারে নি। কেউ ধরা পড়ে নি এবং কোন টাকা উদ্ধার হয় নি। কোন কিনারা করতে না পারায
় থানার তৎকালীন ও সি কে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়।
এই কারণে এখানকার থানার পুলিশ প্রশাসন বেশ চাপে আছে। ক্রাইম রেকর্ডসের জন্য পুলিশের উপর মহলে এই অঞ্চলের থানা গুলোর বেশ বদনাম আছে।
আসলে এই পাহাড়ি শহর গুলো বর্ডার এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের দলগুলো এখানে ঘাঁটি গাড়ে এবং কড়িডোর রূপে ব্যবহার করে। ওরা এক দেশে ক্রাইম করে খুব সহজেই অন্য দেশে চলে যেতে পারে। ধরা পড়ার কোন অবকাশ থাকে না।
এই পাহাড়ি শহর গুলোতে এলাকা দখলের জন্য সমাজ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে প্রায়ই মারামারি ও বোমাবাজি
হয়ে থাকে। ফলে এই সব শহরে আইন শৃঙ্খলার অবনতি
খুবই মামুলি ব্যাপার।
যে কোন সময় এখানে খুন,ধর্ষণ, রাহাজানি,মেয়ে পাচার হয়ে থাকে। এই সব করার জন্য ওদের রাত্রি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না।
পাশাপাশি দুই তিনটি শহরে যে সব ক্রাইম ঘটে সেই সব ঘটনার সঙ্গে সাহিন বস্তির কেউ না কেউ যুক্ত থাকে। এই অঞ্চলে সাহিন বস্তির বেশ বদনাম আছে। এই বস্তির ছেলেদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যেমন সহজে মিশতে চায় না তেমনি সকলে ওদের ভয় করে।
যাইহোক,রাজা বিভিন্ন দিক থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর থানায় গিয়ে সেই বড় পুলিশ অফিসারের সঙ্গে দেখা করে যাবতীয় ঘটনা বলতে চায়। রাজা জানতে পারে ওই
পুলিশ অফিসার একজন আই এস অফিসার এবং তিনি এই পাহাড়ি মহকুমার ডি এস পি।
থানায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পরে রাজার সঙ্গে ওই পুলিশ অফিসারের দেখা হয়। ওই পুলিশ অফিসার সব কিছু বিস্তারিত শুনে রাজার তদন্ত পদ্ধতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে আরও উৎসুক হয়ে ওঠেন। ডি এস পি সাহেব তখনকার মতো রাজাকে ওর পড়াশোনার খরচ বাবদ কিছু টাকা দিয়ে রাজাকে ছেড়ে দেয়।
ডি এস পি সাহেব থানার ও সি কে কিছু নির্দেশ দিয়ে নিজে কিছু বিষয় জানতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকেন।
বেশ কয়েকদিন পর নিজের ও লোকাল থানা গুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ডি এস পি সাহেব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে চার বছর আগে ওই লোকটি কোন লটারি থেকে টাকা পায়নি।
আবার, ওই লোকটি এবং ওর ঘরের সকলে লটারি থেকে টাকা পাওয়ার কথা প্রচার করা থেকে বোঝা যাচ্ছে ওরা কিছু লুকাতে চাইছে। কি লুকাতে চাইছে তা জানতে হলে ওই লোকটি কে থানায় নিয়ে এসে জেরা করা দরকার।
যাইহোক,ডি এস পি সাহেব ও সি কে ওই লোকটি কে অন্য কোন অজুহাতে থানায় নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেন।
দুই একদিনের মধ্যে রাস্তায় একটা ছিনতাইয়ের ঘটনার অজুহাতে পুলিশ ওই লোকটিকে থানায় তুলে নিয়ে আসে। ডি এস পি সাহেব কে খবর দেওয়া হয়।
ডি এস পি সাহেব সন্ধ্যার অনেক আগেই থানায় চলে আসেন। ওই লোকটিকে জেরা শুরু করেন।
প্রথম দিকে কিছু স্বীকার করতে না চাইলেও কিছুক্ষণের মধ্যে জেরায় ভেঙে পড়ে এবং চার বছর আগের ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে। আরো যারা যুক্ত ছিল তাদের কয়েকজনের নাম বলে।
পুলিশ পাশের থানায় খবর পাঠায়। ওই থানার অধীনে পাশের যারা ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ওদের কাছ থেকে তথ্য থেকে বিহার ও উত্তর প্রদেশের যে সমাজবিরোধী এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের একে একে গ্রেফতার করা হয়।
চার বছর পেরিয়ে যাওয়ায় কোন টাকা বা গয়না উদ্ধার করা যায় নি। কিন্তু ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত দলটির সকলকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। একটা বড় কেসের সমাধান করা সম্ভব হয়।
ডি এস পি সাহেব ও লোকাল থানার সব অফিসার বুঝতে পারেন রহস্য উন্মোচন করার যথেষ্ট ক্ষমতা রাজার আছে।
প্রথম কোন বড় রহস্যজনক ঘটনা সমাধানে রাজা খুব ভালোভাবে সফল হয়।