Nikhil Mitra Thakur

Romance Others

3  

Nikhil Mitra Thakur

Romance Others

সরস্বতী পুজো ও প্রেমদিবস

সরস্বতী পুজো ও প্রেমদিবস

2 mins
39


কুয়াশা ঢাকা ভোরে তখনও সূর্য উঠতে ঢের দেরি কুলি ( গ্রামের রাস্তা) জুড়ে দ্রুম দ্রুম দাপাদাপির শব্দে হকচকিয়ে ওঠা। কোনরকমে চোখে মুখে জল নিয়ে দে দৌড় আর দৌড়--। অনেকে তো এগিয়ে গেছে--। আর বোধ হয় পাওয়া যাবে না!


সরস্বতী পুজোর ভোরে বাসক ফুল,আমের মুকুল, গম ও যবের শীষ তোলার রীতিমতো প্রতিযোগিতা। আমাদের সময় তো আজকের মতো মুক্ত অর্থনীতির বাজার ছিল না যে সকাল বেলায় মাথায় ঝাঁকা নিয়ে কেউ বাসক ফুল,আর আমের মুকুল বিক্রি করতে আসবে বাড়ির সামনে,আর আমরা টাকা ফেলে কিনে নিয়ে টুকটাক পুজো দিয়ে দেবো।


সেই সময় ওইভাবে ভোর বেলায় বনে জঙ্গলে ঢুকে,সাপ খোপের ভয়কে হেলায় হারিয়ে আমাদের বাসক ফুল, মুকুল সংগ্রহ করতে হতো। কিন্তু,এত ফুল,এত মুকুল তো কারো একার জন্য লাগবে না! তা হলে---!

আসলে তখন মেয়েদের বন জঙ্গলে যাওয়ার অনুমতি ছিল না,যাওয়ার কথা কেউ ভাবতে পারতো না। আমরা কখন এনে ওদের হাতে দেবো সেদিকেই ওরা তাকিয়ে থাকত।


পুজো মন্ডপে থাকা বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়া বান্ধবীদের বাসক ফুল,মুকুল নেওয়ার অকুল আকিঞ্চন। আমাদের মধ্যেও তাদেরকে দেওয়ার সুপ্ত প্রতিযোগিতা,অন্তরে বইতে থাকা এক বিশেষ অনুভূতির ফল্গু ধারা। বান্ধবীদের,বিশেষ করে সিনহা, মজুমদার,ঘোষ,সরকার বাড়ির বান্ধবীদের হাতে বাসক ফুল,আমের মুকুল,গম ও যবের শীষ ধরিয়ে দিতে না পারলে সারা বছর তো পুরুষের মর্যাদা পাওয়া যাবে না। আজ দিতে না পারলে সারা বছর আর সুযোগ পাওয়া যাবে না।

তখন সমাজ হরেক রকম বাঁধনে বাঁধা ছিল। গ্রামের কোণায় কোণায় থাকতো স্বঘোষিত অভিভাবক। একটা ছেলে ও মেয়েকে কোথাও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গল্প করতে দেখলে তা নিমেষে ছড়িয়ে পড়তো সর্বত্র। মনের পাতায় ছবি, ঠোঁটের ডগায় তাদের কথা জীবন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় নিমেষে ভাইরাল হয়ে যেত। কপালে জুটতো দেবকী শাস্তি।


এই একটা দিনেই শুধু সারা বছর ধরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা কিছুটা শিথিল করা হতো। এই একটা দিনেই একটু আলগা প্রশয় পাওয়া যেত। তাই সারা বছর ধরে এই দিনটার জন্য চলতো আমাদের আয়ান অপেক্ষা।

পাজামা ও পাঞ্জাবি পড়ে বান্ধবীদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার,অব্যক্ত প্রেম বিনিময় করার ক্ষেত্রে

এই দিনটি ছিল বছরে সেরা সুযোগ। ফুল,মুকুল,শীষ দেওয়ার ছলে অসামান্য কারো হাতের একবার একটু স্পর্শ পাওয়া। আর তার আবেশ বুকের বাম দিকে সারা বছর ধরে রাখা সেই তো সুযোগ।

আসলে, আজকাল কার মতো তখন সারা বছর ধরে

হাগ ডে, রোজ ডে,কিস ডে পরস্পর সাক্ষাতের এত এত বিশেষ দিন ছিল না। আর আজকে একটা বিশেষ দিনের আবেশ যেমন সেই দিনেই রাত্রির আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায় ও অন্য একটা বিশেষ দিন পালনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যায় তখন তেমনটা হত না। আমরা তখন এই দিনটার সুদ সারা বছর ভাঙিয়ে খেতাম।

আসলে, আমাদের তখন রোজ ডে,হাগ ডে,কিস ডে ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে সব মিলিয়ে একটাই ভ্যালেন্টাইন্স ছিল, আর সেটা হলো বসন্ত পঞ্চমী তে সরস্বতী পুজোর দিনে প্রেম দিবস।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance