ভেলেন্টাইন্স ডে: সেকাল ও একাল
ভেলেন্টাইন্স ডে: সেকাল ও একাল
এইদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য আমাদের সবার থাকতো হুড়োহুড়ি। সে কি উৎসাহ! ঘর ঝাঁট দিতে হবে,জল ঢেলে ঘর ধুতে হবে। যে ঘরটা সবচেয়ে বেশি পরিস্কার ও সুন্দর হবে সেটাতেই হবে বাগদেবীর পুজো,বান্ধবীরা এসে আলপনা দেবে। আলপনা দেওয়ার সময় টুকু শিক্ষক শিক্ষিকাদের নজর এড়িয়ে বান্ধবীদের আলাদা করে পাওয়ার মধ্যে অন্য এক মাত্রা কাজ করতো।
সারা বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম আমরা সবাই। সোলা দিয়ে নানা কারুকার্যের প্যান্ডেল করে, রঙ বেরঙের ত্রিকোণ পতাকা সাদা সুতো তে আঁটা দিয়ে আটকে রুম সাজানো,প্যান্ডেলের ভিতর ইট দিয়ে তৈরি অস্থায়ি ভাবে তৈরি সরস্বতী মূর্তি বসানোর কাজ করার অসীম আগ্রহ ও ধৈর্য।
এই কাজ করার মধ্যে আত্মতৃপ্তি ও সহপাঠীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা যে অনেকটাই বেড়ে যেতো তা বলাই বাহুল্য। সারা বছর স্কুলে সেই ক্রেডিট ভাঙিয়ে খাওয়া যেত। তাই সরস্বতী পুজো জীবনে এনে দিত এক বিশেষ মাত্রা।
পুজোর দিন সকাল বেলা স্নান করে পাজাম ও পাঞ্জাবি পড়ে স্কুলে সাত তাড়াতাড়ি গিয়ে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করার মধ্যে এই দিনটার আসল স্বার্থকতা নিহিত খুঁজে বেড়াতাম। এই কাজ করতে গিয়ে আসতো সেই শুভক্ষণ যখন বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে আসা কোন অসামান্য বান্ধবীর হাতে অঞ্জলির ফুল-পুষ্প দিতে গিয়ে স্পর্শ পেতাম। যে স্পর্শের আবেশ সারা বছর বুকের বাম দিকে কোন গহ্বরে থেকে টলমল করতো।
আসলে, আজকাল কার মতো তখন সারা বছর ধরে
হাগ ডে, রোজ ডে,কিস ডে পরস্পর সাক্ষাতের এত এত বিশেষ দিন ছিল না। আর আজকে একটা বিশেষ দিনের আবেশ যেমন সেই দিনেই রাত্রির আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায় ও অন্য একটা বিশেষ দিন পালনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যায় তখন তেমনটা হত না। আমরা তখন এই দিনটার সুদ সারা বছর ভাঙিয়ে খেতাম।
আসলে, আমাদের তখন রোজ ডে,হাগ ডে,কিস ডে ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে সব মিলিয়ে একটাই ভ্যালেন্টাইন্স ছিল, আর সেটা হলো বসন্ত পঞ্চমী তে সরস্বতী পুজোর দিনে প্রেম দিবস।