গল্পের নাম: মানবিকতা
গল্পের নাম: মানবিকতা
"মা ! মা ! এবার পূজোতে নতুন জামা কিনে দেবেনা আমাকে ?" আদুরে গলায় কথা গুলো বলেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো সৌমি। সৌমির মা রুমা, মেয়ের দিকে মিটিমিটি হেসে বলল," নিশ্চয়ই সামনের রবিবারই যাবো নতুন নতুন জামা কিনে দেবো। কিন্তু এবার তোমাকে দোকানে নিয়ে যেতে পারবোনা সৌমি। তুমি কিন্তু একদম বাইনা করবে না। আমি তোমাকে ছবি দেখাবো, যেটা তোমার পছন্দ হবে, সেটাই কিনে আনব। এবার তো অন্য বারের মতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়।"
সৌমি মাথা নাড়িয়ে বলল," ঠিক আছে মা । তুমি যা পছন্দ করে আনবে, আমি সেই জামায় নেবো। কিন্তু তুমি কিন্তু জামার সঙ্গে ম্যাচিং করে জুতো, ক্লিপ, হেয়ার ব্যান্ড, চুড়ি, ব্যাগ কিনে এনে দেবে।"সৌমির মা বলল," তাই হবে, তুমি যা যা চাও। তাই এনে দেবো।"রবিবার সন্ধ্যায় সৌমির মা ও বাবা হাতে করে অনেক গুলো নতুন নতুন জামা কাপড়ের প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঢুকলো। সৌমি দৌড়ে এলো তা দেখে। সৌমির মা বলল," এখন এগুলো একদম হাত দিয়োনা, আগে স্যানিটাইজ করে নিই, তারপর একটা একটা করে সব কিছুই দেখাবো।"সৌমির মা প্যাকেটগুলো স্যানিটাইজ করে, স্নান করে শাড়ি প্লাটে সোফার ওপরে এসে বসল। একটা একটা প্যাকেট বের করে দেখাতে লাগল। পাশের সোফায় সৌমির দাদু -ঠাম্মি- বাবা এসে বসল।সৌমি প্রায় তার মায়ের কোলে গিয়ে বসল। সৌমি তার জন্য আনা জামা,জুতো,সাজের জিনিস দেখে খুশি।একটা প্যাকেট থেকে একটা লাল রঙের ফ্রক বের করে সৌমি বলল," মা এটা তো খুব ছো
ট জামা। আমার গায়ে হবে না।"সৌমির মা বলল," এটা তোমার জন্য না। এটা কমলার মেয়ে টুসুর জন্য।"সৌমি বলল," মা কমলা মাসি তো এখন আমাদের বাড়িতে কাজ করে না। তবুও তুমি টুসুকে জামা দেবে।"একটা প্যাকেটে কমলার জন্য শাড়ি ও টুসুর জন্য জামা, সাজের জিনিস, টুসুর বাবার জন্য রেডিমেট শার্ট, প্যান্ট আলাদা করে রাখতে রাখতে সৌমির মা রুমা বলল," কমলা এখন আমাদের বাড়িতে কাজে আসতে পারছে না, তাতে তো তাদের দোষ নেই। সে তো কাজে আসতে চায়। কিন্তু তুমি ছোট, তোমার দাদু ঠাম্মির বয়স হয়েছে, কিছু কিছু রোগের সমস্যা ও আছে। তাই কোনো রিক্স নিয়ে তাকে আসতে বারন করেছি। কিন্তু কমলার তো সংসার আছে, তার স্বামীর কাজ ও তো অনিয়মিত। আমরা সাহায্য না করলে কি করে চলবে।"
সৌমির ঠাম্মি বলল," সেই কতো বছর হয়ে গেলো, কমলা আমাদের বাড়িতে কাজ করে। মেয়ের মতো করেই দেখেছি, সেও আমাদের কতো শ্রদ্ধা সন্মান দেখিয়েছে। তাদের প্রয়োজনে আমাদের তার পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।"সৌমির বাবা বলল," সেই জন্য তো, সে কাজে না আসলেও প্রতিমাসে তার মাইনের টাকা দিয়ে আসি। সে আমাদের বাড়িতে সুখ দুঃখের সব সময় থেকেছে। আমাদের উচিৎ। তাদের পরিবারের পাশে থাকা।"সৌমির দাদু বলল," যখন তুমি বড়ো হবে, আরো অনেক কিছু জানতে পারবে, শিখতে পারবে। কিন্তু বিনা স্বার্থে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সৎ গুণটা এখন থেকেই তোমার মনের মধ্যে তৈরী করে নাও। তাতে ভবিষ্যতে তুমি একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবে।"