Protima Mondol

Tragedy Inspirational

3  

Protima Mondol

Tragedy Inspirational

নিউক্লিয়ার পরিবার

নিউক্লিয়ার পরিবার

2 mins
396



 

তপব্রতের হাসিমুখের ছবিটাতে একটা রজনী গন্ধা ফুলের মালা দিয়ে , ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে তনুজা। অনেক শখ করে বড়ো ছেলের বিয়ে দিয়ে বড়ো বৌমাকে কতো আশা আর দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বরণ করে ঘরে তুলেছিল। ভেবেছিল বৌমাকে সংসারের চাবিকাঠি বুঝিয়ে দিয়ে তার এবার ছুটি।

কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই বড়ো ছেলেকে নিয়ে বৌমা নতুন ফ্ল্যাট বুকিং করে চলে যাচ্ছে। এই খবর শোনার পর থেকেই তনুজা এতো অবাক হলো যে, মাথায় বজ্রঘাত হলেও এতো অবাক হতো না ।


শরৎ কালের দূর্গা পূজার সময় দেবী দুর্গার যেমন বরন করে নেওয়া হয়, তেমনি একদিন তনুজাকে তার শাশুড়ি মা মৃন্ময়ী দেবী বরন করে ঘরে তুলেছিল।

তনুজা যখন নতুন বৌ হয়ে এই বাড়িতে এসেছিল, তখন তার কতো কম বয়স ছিল। তখন থেকেই সংসারের সব দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে শুরু করেছিল নিষ্ঠাভরে। এখনও পর্যন্ত সেই কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে খুশি মনে। কখনও তার মনে হয়নি কেউ জোর করে তার ওপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে।

বিয়ের পর এসে দেখেছে শাশুড়ি মায়ের কর্ম ক্ষমতা কমে গেছে, ছোট ছোট দুই দেওর ও ননদ।


 তাদের কখনও নিজের ভাই বোনের মতো, আবার কখনও নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছে, তাদের আগলে রেখেছে।


 তাদের হাজার বায়না, আবদার সব মিটিয়ে বড়ো করে তুলেছে। বৃদ্ধ শশুর শাশুড়ি যতদিন বেঁচে ছিল তাদের সেবা শ্রূশষা করে গেছে তনুজা।

কিন্তু বৌমা বিয়ের পরেরদিন থেকেই এই সংসারে মানিয়ে নিতো পারলো না। পুজোর সময় তনুজার ছোট ছেলে রিভু তার দাদা অতুলের কাছে একটা মোবাইল গিফট চেয়েছিল। কিন্তু অতুলের বৌ রাখি তার ছোট দেওরের এই আবদার মানতে পারেনি। মনে মনে এই নিয়ে অসন্তুষ্ট দলা পাকিয়ে উঠেছে। তারপর থেকেই এই বিষয় নিয়ে একটা ছুঁতো করে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চাই। রাখির ধারনা এই বাড়িতে থাকলে, তাদের নিজেদের কোন সংসার হবে না। নিজেদের স্বপ্ন পূরণ হবে না।


শাশুড়ি মা ও দেওরের আবদার মেটাতে মেটাতে তাদের জমাপুন্জি শেষ হয়ে যাবে। তাই আগেভাগেই লোন করে ফ্ল্যাট বুকিং করে, বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার আগের দিন বড়ো ছেলে রাতুল ও তার বৌ রাখি জানাতে এসেছে।


আর ক'দিন পরে দূর্গা পূজা। এই সময় যারা বাড়ির বাইরে থাকে, তারা বাড়িতে ফেরে। কিন্তু তনুজার ছেলে বৌমা পরিবারের উৎসবের আনন্দ নষ্ট করে, শুধু মাত্র নিজেদের স্বার্থে পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।


তনুজার আদরের ছেলে নিজে আর তার বৌকে নিয়ে তাদের একান্ত নিজেদের সুখের স্বর্গ বানাতে চলে যাচ্ছে ফ্ল্যাট বাড়িতে। এই সমস্ত কথা ভাবতে ভাবতে তনুজার বুকটা তীব্র যন্তনায় ফেঁটে যাবে। যে ছেলে একদিন মা ছেড়ে কোথাও থাকেনি, সে নিজেও একদিনের জন্যও ছেলেকে নিজের থেকে দূরে রাখেনি। আজ সেই ছেলেও মাকে ছেড়ে চলে যাবার ব্যাপারে দুবার ভেবে দেখল না। তনুজার বারবার মনে হচ্ছে সে নিজেও বাড়ির বড়ো বৌমা ছিল আর পিয়ালী ও তার বড়ো ছেলের বৌ। কিন্তু দুজনের চিন্তা ধারা কতো আলোকবর্ষ দূরের মনে হচ্ছে। এখন কি নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতেই সর্ব সুখ আছে বলে ভাবে নতুন প্রজন্মের কিছু কিছু মানুষ। 

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy