Protima Mondol

Horror Classics Thriller

2.3  

Protima Mondol

Horror Classics Thriller

ভূতের গল্প

ভূতের গল্প

11 mins
7.2K


গল্পটি প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের। তাই তখন কার সামাজিক ব্যাবস্থা ও এখনকার মত উন্নত ছিল না। রাস্তা-ঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। বাড়িতে বাড়িতে কারেন্ট ইলেকট্রিক ছিল না। এখনো এমন গ্রাম আছে যেখানে পাকা রাস্তা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ভালো নয়। নিজের সাইকেল, বাইক নিয়ে রাস্তায় চলতে হয়। অথবা অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে রিক্সা, অটো, টোটো রিজার্ভ করে যেতে হয়। এই গল্পটা উত্তর চব্বিশ পরগনার গাইঘাটা'র দিকের একটি অত্যন্ত গ্রাম্য এলাকার গল্প। আমি যেহেতু তখনো ও জন্ম হয়নি। তাই গল্পটা কতটা সত্যি জানিনা। কিন্তু আমার দিদিমার মুখে শোনা গল্প। তাদের সময়কার সকলেই এই গল্পকে সত্যি বলেই মনে করে। 


অমলের জন্য অনেক দিন ধরেই মেয়ে দেখা চলছিল। অমলকে বিয়ে দেবার জন্য তার মা, তার দুই দিদিরা অনেক মেয়ে দেখেছে। অমলের বাবা নেই। বছর ছয় হল তার বাবা মারা গেছে।


দুই দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের স্বামী পুত্র নিয়ে ভরাট সংসার। অমলদের অবস্থা মোটামুটি ভালোই। অনেক জমি জমা, পুকুর, বাগান আছে। বেশ স্বচ্ছল পরিবার। খাওয়া পরার কোন অভাব নেই। অমলের মায়ের বয়স হয়েছে। বয়স তাঁর পঞ্চাশপঞ্চান্ন'র কাছাকাছি। সেই ছোট্ট বেলায় দশ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এসেছিল। তখন থেকেই সংসার দেখছে। শাশুড়ি মাতা মারা যাবার পর তিনিই বাড়ির কর্ত্রী। এখন বয়স হয়েছে শরীর ঠিক মত সাত দেয়না। তাই ভরসা করে সব কাজ একা একা করতে পারে না। আগে মেয়েরা ছিল সাহায্য করার মতন। কিন্তু এখন তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। সেই জন্য অমলকে তারাহুরো করে বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অমল তার মা বাবার বেশি বয়সের সন্তান। তার ওপর সবার ছোট । তাই সে খুব আদরের। মা-বাবা, দিদিরা, কাকা-কাকিমা, জেঠতুতো খুরতুতো ভাই বোনেরাও খুব ভালো বাসে। আর বেশি ভালবাসার কারন সে খুব সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ। তাই তাকে ভাল না বেসে কেউ থাকতে পারে না।

অমলকে বিয়ে দেবার জন্য তার জামাইবাবুরাও যথেষ্ট উদ্যোগী । একের পর এক মেয়ে দেখেই চলেছে কিন্তু ঠিকঠাক সবার মনঃপুত হচ্ছে না। অবশেষে অমলের ছোট জামাইবাবু তার এক দুর সম্পর্কের আত্মীয় মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে ফেলে।বিয়ে পাকা করার দিন দুই জামাইবাবু, অমল ও তার কাকা জেঠ্যারা গিয়ে বিয়ে ঠিক করে আসে। আগামী দশ দিন পর একটা ভালো বিয়ের লগ্ন আছে। সেই লগ্নেই বিয়ে হবে অমলের। অমলের বয়স বাইশ বছর। আর মেয়েটির বয়স সবে পনেরো বছর। খুব ফর্সা, টিকালো নাক, উঁচু ছোট কপাল, মাথায় এক ঢাল কালো রেশমী চুল। বেশ লক্ষ্মীমন্ত, শান্তশিষ্ট মেয়ে। নাম টিও খুব সুন্দর। সোনামনি নাম তার।অমলের মেয়েটিকে প্রথম দিন দেখেই ভালো লেগে যায়। আজ বিয়ের পাকা কথার দিন মেয়েটিকে দেখে ভালবেসে ফেলে।


অমলের জামাইবাবু'রা বিয়ের পাকা দেখার দিনই সোনামনিকে স্বর্নালংকার দিয়ে আশির্বাদ করে। তেঁতুল পাতা ডিজাইনের নেকলেস, কানের দুরের সেট। বড় বড় দুটো নারকেল ফুল ডিজাইনের বালা পেয়ে সোনামনি খুব খুশি। সেদিন থেকে শুরু করে বিয়ের দিন পর্যন্ত সবসময় সেই স্বর্নালংকার গুলো পড়ে থাকত।কখনো সে গহনা গুলো কাছ ছাড়া করেনি।


বিয়ের দিন অমল বরের সাঁজে সেজেগুজে গরুর গাড়িতে চেপে গেল বিয়ে করতে। তার বাড়ি থেকে তার শশুর বাড়ি দুরুত্ব অনেকটা। তাই অমল ও তার জামাইবাবু'রা, জেঠ্যা মশাই,খুরো মশাই, খুরতুতো ভাই দাদারা মিলে গরুর গাড়িতে চেপে সকাল সকাল বিয়ে করার জন্য বেড়িয়ে যায়।বিয়ে বাড়ীতে দুপুরের দিকে পৌঁছে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন বেশ ভালোই ছিল। বিয়ে ছিল গোধূলি লগ্নে। ওদিকের নিয়ম ছিল। এখনো অবশ্য ঐ নিয়ম কার্যকর আছে । রাতে বিয়ে করে। খাওয়া দাওয়া সেরে সেই রাতেই নতুন বৌকে সঙ্গে নিয়ে রয়না দিতে হবে। বিয়েতে হই চই আড্ডা ইয়ার্কি সব হল। অমলের ছোট ছোট শালী'রা অনেক মস্করা করল নতুন জামাইবাবুর সাথে। জুতো লুকিয়ে রেখে টাকা আদায় করে ছাড়ল। খাওয়া দাওয়া বেশ ভালো আয়োজন ছিল। তিন রকমের ডাল,চার রকমের মাছ, খাসির মাংস, আরও অনেক ভাল ভাল সুস্বাদু তরকারি। বাড়িতে বিয়েন বসিয়ে বানানো কত রকমের মিষ্টি। অমলদের শশুর মশাই এর অবস্থা ও বেশ ভালো। তবে আগের মত এখন নেই। এখন তাদের অবস্থা পরতির দিকে। এখন ছিটে ফোটা যা আছে। তাই দিয়েই বেশ চলে যাচ্ছে। অমলের সদ্য বিবাহিত বৌ খুব আদরের মেয়ে। পর পর পাঁচ ছেলের পর একটি মাত্র মেয়ে।


বিয়ের সব কিছু অনুষ্ঠান আচার নিয়ম মিটে গেলে সন্ধ্যার দিকে অমল বাড়ির দিকে পা বাড়ায় তার নতুন বৌকে নিয়ে। 

তখনও আজকের দিনের মত এত ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গাড়ি ঘোড়া ছিল না। তাই গরুর গাড়ি করেই বিয়ে করতে গেছিল। গরু গাড়িতে করে বাড়ি ফিরতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লেগে যাবে। একটা গরুর গাড়িতে অমল তার বৌ সোনামনি ও তার ছোট দুই খুরতুতো শালী উঠেছে। ঘোমটার আড়ালে লাজুক লাজুক হাসি মুখে বসে আছে সোনামনি। গরুর গাড়ি চালক একটা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই নরম আলোয় সোনামনিকে দেখতে স্বর্গের কোন অপ্সরা মনে হচ্ছিল। সোনামনি মাঝে মাঝে মাথার ঘোমটা ঠিক করে নিচ্ছিল। আগে তো ঘোমটা দেওয়া অভ্যাস ছিল না। তাই শাড়ী পরে ঘোমটা দিয়ে রাখতে অসুবিধা হচ্ছে।অমল বলল," এখানে তো বড় গুরুজন কেউ নেই তোমার ঘোমটা দেবার দরকার নেই।"সোনামনি মিষ্টি মধুর প্রেমময় মৃদু স্বরে বলল,"না ঠিক আছে। মা বলে দিয়েছে আপনাকে দেখেও ঘোমটা দিয়ে থাকতে। আপনি আমার স্বামী। আমার গুরুজন।"সোনামনির মুখে 'আমার স্বামী'কথাটা শুনতে অমলের খুব ভালো লাগল। এক অনাবিল আনন্দের শিহরন খেলে গেল সর্ব শরীরে।অমল মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছিল এত সুন্দর একটা মেয়েকে তার বৌ করে পাঠানোর জন্য। গাড়িতে ওঠার সময় সোনামনির মা টিফিন কৌটো করে মিষ্টি সন্দেশ পাঠিয়ে ছিল। সোনামনি সেখান থেকে মিষ্টি বের করে। বাটিতে ঢেলে অমলকে দিল। অমল তা থেকে মিষ্টি নিয়ে প্রথমে তার দুই ছোট শালীকে মুখে তুলে খাওয়ালো। তারপর সোনামনিকে খাওয়াতে গেলে সে খুব লজ্জা পেল। কিন্তু অমলের জেদের কাছে হার স্বীকার করে মিষ্টি খেয়ে নিল। সোনামনি ও একটা মিষ্টি অমলের মুখে তুলে দিল।


 অমল শশুর বাড়ি থেকে বেড়োনোর তিনঘন্টা পরে এক জঙ্গল ও তালদিঘী আসে। সেখানে আসতেই সোনামনি তার ছোট বোনের কানের কাছে মুখ রেখে ফিসফিস করে কিছু বলল। তারপর অমলের ছোট শালী রমা বলল,"জামাইবাবু দিদি গাড়ি থামাতে বলল।"অমল বুঝতে পারলো রমা কেন গরুর গাড়ি দাঁড়াতে বলছে। অনেক ক্ষণ আগে খেয়ে দেয়ে বসে আছে। তাই হয়তো প্রস্রাব পেয়েছে।অমলদের গাড়িতে অমল, তার বৌ,ও দুটো ছোট শালী বসে আছে। বাকিরা অন্য গরুর গাড়িতে আছে।গরুর গাড়ি দাঁড়াতে সোনামনি নেমে পরল।তারপর রাস্তা পার করে পাশের কানা পুকুর পাড়ে চলে যায়। অমল অন্য গরুর গাড়ি গুলোকে এগিয়ে যেতে বলল। তারপর সোনামনির জন্য অপেক্ষা করে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে। কিন্তু দেখতে দেখতে আধঘন্টা হয়ে গেল তাও সোনামনি আসছে না দেখে। অমল সোনামনির বোনদের বলল,"তোমাদের দিদি তো আসল না এখন। যাও গিয়ে দেখে আসতে দেড়ি করছে কেন।"অমলের শালী'রা বলল,"ঠিক আছে জামাইবাবু।আমরা এগিয়ে গিয়ে দেখে আসি। আসতে দেড়ি হচ্ছে কেন।"দুই শালী গরুর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। তারপর একটু এগিয়ে যেতেই দেখল তাদের দিদি সোনামনি তাদের দিকেই আসছে। তারা দিদিকে বলল,"দিদি তুমি এত দেড়ি করলে কেন।"সোনামনি শীতল চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে দেখল । তারপর আসতে আসতে গরুর গাড়িতে গিয়ে উঠলো। দুইবোন একে অপরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ দিয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। তাদের দিদি কেন কোন কথা না বলে, ওমন ভাবে হনহন করে চলে গেল। তারপর গরুর গাড়িতে গিয়ে উঠল। সোনামনির দুই বোনও গরুর গাড়িতে গিয়ে উঠল।গরুর গাড়ি চলতে শুরু করল।ভোর রাতে অমল বিয়ে করা নতুন বৌ নিয়ে বাড়ির দুয়ারে এসে পৌঁছাল। তার মা দিদিরা নতুন বৌকে বরন করে ঘরে তুলল। আশেপাশের বাড়ি থেকেও মেয়ে বৌরা এসেছে নতুন বৌকে দেখতে। রসগোল্লা, সন্দেশ দিয়ে সবাইকে মিষ্টি মুখ করাল। নতুন বৌয়ের চোখের দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল যা নিয়ে সবাই আলোচনা করছিল।সোনামনির বোনেরাও তার অতিপরিচিত দিদিকে ভয় পাচ্ছে। হঠাৎ তার শান্ত শিষ্ট দিদির চোখের দুত্যিতে কেমন পরিবর্তন হয়েছে।বিয়ে বাড়ি জমজমাট। একে একে সব স্ত্রী আচার পালন করা হল। সব কিছুই খুব খারাপ ভাবে মিটল। বেশিরভাগ আচারেই কিছু কিছু বাঁধা পরেছিল। দুধে আলতার থালা উল্টে গিয়েছিল। দুধের রং আলকাতরার মত কালো হয়ে গেছিল। দুধ জ্বাল দেবার সময় দুধ কেটে কালো ছানার মত হয়েগেছিল। বৌভাতের ভাতের থালায় কাঁকরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছিল।

বৌভাতের দিন সোনামনির বাবার বাড়ি থেকে অনেক আত্মীয় স্বজনরা এসেছে। অমলদের আত্মীয় ও পাড়াপর্শী এসেছে। সবাই বেশ আনন্দ উপভোগ করেই কাটাল সোনামনি ও অমলের বিয়েতে। সোনামনির দুই বোন ও তাদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু সবার মনেই কিছু খটকা থেকে গেল।

ফুলসজ্জার খাট সাজানো হয়েছে। ঘরে আছে অমল ও সোনামনি। এমন সময় ঘরের দরজায় টোকা পরল। অমল বিরক্ত হল। এখন আবার কে তার দরজাই টোকা দিচ্ছে। এতো রাত হয়েগেছে। অমল দরজা খুলতেই দেখল তার ছোট দিদি হাসিহাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।অমল জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিদির মুখের দিকে। অমলের ছোট দিদি বলল,"ভাই তোদের ঘরে এই সময় আসতে চাইনি। কিন্তু মা জোড় করে পাঠিয়ে দিল। তাই আমি বাধ্য হলাম আসতে। হাত বাড়িয়ে একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল, এই নে এক গ্লাস দুধ। মা পাঠিয়ে দিল। মা বলল, আজকের দিনে খেতে হয়। বিয়েতে যে নিয়ম রীতি নীতি পালন করা হয়, এটা তারই একটা নিয়ম।"


অমল দুধের গ্লাসটা হাত বাড়িয়ে নিল। তার দিদি শুভ রাত্রি বলে চলে গেল। অমল দরজা বন্ধ করে দেয়। সোনামনি তার দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ অমল চমকে উঠে চিৎকার করে উঠলো। দুধের গ্লাসের দুধটা যখন তার দিদি দিয়ে গেছিল। তখন দুধের রং সাদা ছিল। আর এখন হঠাৎ দুধের রং নীল হয়ে গেছে। এটা কি করে সম্ভব হল। যে দুধের গ্লাস টা এতোক্ষণ গরম ছিল কিন্তু এখন ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে। সোনামনি নাকি সুরে বলল,"কি হল। কি হয়েছে। চিৎকার করলেন কেন।"

অমল বলল,"এই যে দুধের রং টা সাদা থেকে নীলাভ হয়ে গেছে। কিভাবে এটা হল বুঝতে পারছি না।"সোনামনি বলল,"কই দেখি। দুধের গ্লাসটা আমাকে দিন।"অমল দুধের গ্লাসটা সোনামনির হাতে দিল। সেই গ্লাসটা হাতে নিয়ে সোনামনি গ্লাসের ভিতরটা দেখে নিল। তারপর হাঁসি মুখ করে তার হাতটা অস্বাভাবিক লম্বা করে । আবার আর এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে অমলের হাতে ধরিয়ে দিল।অমল হতচকিত হয়ে গেল। সে যা দেখছে তা সত্যি। না সে স্বপ্ন দেখছে, কল্পনা করছে। এ কিরে সম্ভব। কোন মানুষের এত লম্বা হাত হতে পারে। কিভাবে এতো বড় হাত লম্বা করে। দুধের গ্লাস আনতে পারে। ভয়ে অমলের গা হাত পা কাঁপতে লাগলো। শরীর ভয়ের হিম শীতল স্পর্শে বরফের পাথরে পরিণত হয়। কথা বলার শক্তি হাড়িয়ে ফেলে।সোনামনি বলল,"কি হলো ভয় পেয়ে গেলে। ভাবছ বুঝি আমার হাত এত লম্বা হল কেন। আমি যে মানুষ নয়কো। আমি তো অশরীরী। অনেক বছর আগে মারা গেছি আমি।"অমল অনেক কষ্ট করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল," তুমি কে ? আমার তাহলে কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ?"সোনামনি বলল," আমি তো এখন প্রেত্নী। পিশাচ। কিন্তু একদিন আমি মানুষ ছিলাম।খুব গরীব ঘরের মেয়ে। তার ওপর আমি দেখতেও ভাল ছিলাম না। তাই আমার বিয়ে হয়নি। পাড়ার লোকজনের তামাশা টিটকারি শুনতে শুনতে আমি মনের দিক থেকে ভেঙ্গে পরি। একদিন আমি লজ্জায় ঘৃণায় পুকুরের জলে ডুবে মরি। আমি তাল পাড়ের পুকুরে থাকি।"অমল বলল,"তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে কি ?"সোনামনি বলল,"না আমার সঙ্গে তোমার বিয়ে হয়নি। তাল পাড়ের পুকুরের পাশে গত কাল ভোর রাতে যখন গরুর গাড়ি থেকে একটা সুন্দর মেয়ে, সুন্দর শাড়ী গহনা পরে নামল। তারপর পুকুরের পাড়ে এগিয়ে গেলো। তখন ঐ মেয়েটির দামি সুন্দর শাড়ী গহনা দেখে আমার খুব লোভ হয়। আমি তখন মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।সে আমার বীভৎস ভয়ঙ্কর রুপ দেখে ভয়ে ভীমরি খায়। আমি তখন তার গা থেকে শাড়ী গহনা খুলে নিতে চায়। কিন্তু ও আমাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। আর শাড়ী গহনা খুলে নিতে দেয়না। সব মেয়েরাই শাড়ী গহনা ভালবাসে। তাই সেগুলো হাত ছাড়া করতে চায় না। ও ওগুলো নিতে দিচ্ছিল না দেখে তখন আমি ওর ঘাড়টা মটকে দিয়। ও ওখানেই মরে পরে থাকে। এখন হয়তো ওখানেই মরে পরে আছে। আমি গরীব ঘরের মেয়ে। এত ভালো শাড়ী গহনা আগে কখনো পরিনি। তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই ওকে মেরে দিয়।


আমার তো বিয়ে হয়নি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল ভালো সুন্দর দেখতে একটা বর হবে। কিন্তু জীবদ্দশায় সে ইচ্ছে আমার পূর্ন হয়নি। তাই তো নতুন বৌ সেজে এসেছি। তোমার সঙ্গে সংসার করব তাই। আমি তোমার বৌ হয়েই এই বাড়িতে থেকে যাবো।"অমল বাক্যহারা হয়ে যায় এই সমস্ত কথা শুনে। কি করবে বুঝতে পারেনা।প্রেত্নী পিশাচ মেয়েটি নাকি সুরে আবার বলে উঠলো," আজ আমাদের ফুলসয্যা।আসো আমাকে আদর করো। কত কত বছর ধরে অপেক্ষা করে আছি। আমার বিয়ে হবে। আমার বর আমাকে ভালবাসবে, আদর করবে।"কথা গুলো বলেই সে এগিয়ে এলো অমলের দিকে। তারপর অমলকে জাপটে ধরল। অমলের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে গম্ভীর চুম্বন করল। মনে হল অমলের শরীর থেকে সব রক্ত শুষে নিচ্ছে। অমলের প্রাণ বায়ু বেড়িয়ে যাচ্ছে। প্রেত্নী পিশাচের তীক্ষ্ণ সুঁচালো নখের আঁচড়ে অমলের শরীর রক্তাক্ত হয়ে উঠল। বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটা ঘরের মেঝেতে পরতে লাগল। তীব্র যন্ত্রায় অমল কঁকিয়ে উঠল। শরীরের সমস্ত শক্তি জড় করে তাকে জোড়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। ধাক্কা খেয়ে প্রেত্নী পিশাচ গিয়ে পড়ল ঘরের মধ্যে বাঁধিয়ে রাখা একটা মা কালীর ফটোর ওপর। তারপর অমল ভয়ে আতঙ্কে অজ্ঞান হয়ে যায়। দরজায় প্রবল আঘাতের আওয়াজ পেয়ে অমলের জ্ঞান ফিরে আসে। তখন সে উঠে পড়ে কিন্তু ঘরে সোনামনির রুপ নিয়ে থাকা প্রেত্নী পিশাচ কে আর দেখতে পায়না। অমল ক্লান্ত শরীরে ধীর গতিতে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়।বাড়ির সবাই জিজ্ঞাসা করে এত বেলা হয়ে গেলো তাও দরজা খুলছো না। তাই দরজা ধাক্কা দিচ্ছিলাম। তোমাদের কিছু হয়ে গেল কিনা। সব ঠিকঠাক আছে তো।অমল আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেনা। তার মনোবল ভেঙ্গে গেছে। সে ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছে না। অমলের বড় দিদি বলল, "তোর কি হয়েছে ভাই। তোর সর্ব শরীরে এত আঁচড়ানোর দাগ কেন। রক্ত জমাট বেঁধে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে। অমল দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। তার শরীরে যে কোন শক্তি নেই। হঠাৎ সে পরে যাচ্ছিল। তখন অমলের দিদিরা তাকে ধরে ফেলল। অমলের ছোট দিদি বলল,"কিরে ভাই। কি হয়েছে বল তো?" আর নতুন বৌ কোথায়। ঘরের বাইরে আসছে না কেন ?"অমল বলল,"দিদি আমাকে নিয়ে গিয়ে। চেয়ারে বসিয়ে চাউ। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি। আমি বসে নিয়ে সব বলছি।"অমল চেয়ারে বসার পর। বাড়ির সকলেই তার চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কি হয়েছে শোনার জন্য।অমল চেয়ারে বসে একটু ধাতস্থ হয়ে নিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলতে শুরু করল," নতুন বৌ নেই।"


সবাই অবাক বিস্ময়ে অমলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,"নতুন বৌ নেই মানেটা কী ? নতুন বৌ কোথায় গেল। ঘরের বাইরে তো সে আসেনি। তাহলে গেল কোথায় ?"অমল গলায় জোড় এনে বলে উঠল,"ও নতুন বৌ নয়কো। ও নতুন বৌ নয়। ও প্রেতাত্মা। একটা প্রেত্নী, পিশাচ ও। মানুষ নয়।" কথা গুলো বলেই অমল হাউ হাউ করে কান্না করে উঠল। যদিও পুরুষ মানুষ সহজে কান্না করে না। তবুও অমল নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। গত কাল রাতে তার সঙ্গে যা ঘটেছে। আর সে যা জানতে পেরেছে। তাতে করে অমলের আর কোন সহ্য ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই। তার সহ্য ক্ষমতা গত রাতেই শেষ হয়ে গেছে। তার স্বপ্ন ভালবাসা সব শেষ হয়ে গেছে।

অমল কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। তারপর রাতের কথাগুলো মনে পরে। সেই কথাগুলো বাড়ির সবাই কে বলল। অমল ও তার জামাইবাবু'রা তাল পাড়ের পুকুরের দিকে যায়। সেখানে গিয়ে সোনামনির মৃত দেহটা পুকুরের পাড়ের পাক কাঁদার মধ্যে পরে থাকতে দেখে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror