Protima Mondol

Romance

3.0  

Protima Mondol

Romance

বসন্তের ছোঁয়া লাগলো প্রানে

বসন্তের ছোঁয়া লাগলো প্রানে

6 mins
737



 আমিও এবার ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে ক্যম্পাস ইন্টারভিউ দিয়ে একটি ভালো কোম্পানিতে খুব ভালো বড়ো পোস্টে চাকরি পেয়েছে বিদেশি কোম্পানি মালয়েশিয়াতে। খুব ভালো থাকার জন্য ফ্ল্যাট দেবে। যাতায়াত করার জন্য একটা গাড়ি দেবে। ওখানে গিয়ে চাকরিতে জয়েন করে , তারপর ওখানে কিছুদিন চাকরি করার পর , সেখানে ভালোভাবে সেটেল করে গেলে, পরের বার বাবা মাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে

। বাবা-মার একমাত্র সন্তান আমিও।বাবা মাকে ছেড়ে সে কোনদিনই খুব বেশি দূরে থাকেনি।বাবা-মাও তাকে ছেড়ে থাকতে পারে না । বাড়ি থেকে অমিওকে বিয়ের কথা বলছে কিন্তু এখনো বিয়ের ব্যাপারে আমিও কিছু ভাবেনি। স্কুল কলেজে পড়াশোনার সময় ভালোভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করতো। সব সময় ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করতে করতে কারো সাথে প্রেম করে ওঠা হয়নি । পরাশোনায় সে সবসময় ভালো ফলাফল করতো। আমিওকে দেখতে খুবই সুপুরুষ । তাদের বংশের প্রায় সকলেই সুপুরুষ বলিষ্ঠ স্বাস্থ্যর অধিকারী। এটা তার বংশ পরম্পরায় পাওয়া দৈহিক গঠন। সে খুব লম্বা মাঝারি ফর্সা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী । বাবা তার স্কুলের শরীর শিক্ষার টিচার ছিলেন । তাই তার বাবা নিজেতো প্রতিদিন শরীর চর্চা করতো, তাকেও প্রত্যেকদিন ঘুম থেকে উঠে শরীরচর্চা করতে হতো। সে যত কাজই থাকুক না কেনো ঘুম থেকে উঠে কমপক্ষে ছক ঘণ্টা শরীরচর্চা করতে হতো।এই অভ্যাসটা তার ছোট থেকেই ঘরে উঠেছে। আমৃত্যু সে এই অভ্যাসটা ভালো করে পালন করতে চাই। স্কুল কলেজে অনেক মেয়েরাই তার প্রতি আকৃষ্ট দুর্বল হয়ে ছিল । তাদের মধ্যে অনেকেই তাকে ভালবাসার প্রস্তাব দিয়েছিলো কিন্তু সে খুব সুকৌশলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে, কারো মনে কোনো রকম কষ্ট না দিয়ে ।তার জীবনে একবারই ভালোলাগার অনুভূতি হয়েছিলো।একবার সে তার পিসির বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে, তার পিসির মেয়ে পলির সাথে তাদের পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব দেখতে গিয়েছিল। পলি তাকে প্রায় জোর করেই অনুষ্ঠানে নিয়ে গেছিলো। সেই অনুষ্ঠানে মধুরিমা নামের একটি মেয়ে খুব সুন্দর নাচ ও রবীন্দ্র সংগীত গান করেছিলো। আমিওর খুবই ভালো লেগেছিল মেয়েটিকে । মেয়েটিকে দেখতে খুব সুন্দর । লম্বা ফর্সা, টিকালো নাক, টানা টানা বড় বড় চোখ ।মুখে খুব সুন্দর হাসি। সে হাসলে সুন্দর গালে টোল পড়ে । খুব মিষ্টি দেখতে মেয়েটির সাথে আলাপ করার খুব ইচ্ছা ছিল আমিওর । সে পলির কছে জানাতে চেয়েছিল জানতে চেয়েছিল মেয়েটি সম্পর্কে কিন্তু পলি বলেছিল," দাদা ভাই তুই কি মধুরিমারকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলি নাকি । ওকে তোর খুব ভালো লেগেছে তাই পরিচয় করতে চাইছিস " তাই সে লজ্জায় আর পরিচয় করেনি। অনেকবারই মধুরিমার বলতে চেয়েছিল পলি তাকে কিন্তু তাও সে কোনদিনই কোন উৎসাহ দেখায় নি , মধুরিমার সম্পর্কে কিছু জানতে। তাই পলিও আর বেশি কিছু বলেনি মধুরিমার সম্পর্কে। কখনো কখনো আমিওর মধুরিমার কথা মনে পড়তো। তখন সে সোশ্যাল মিডিয়াতে মধুরিমার ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে দেখতো কিন্তু কোনদিনই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় নি । যখন ইচ্ছা করতো মধুরিমার প্রোফাইল খুলে তার ফটো দেখতো, আর ভাবতো হয়তো মধুরিমা অন্য কাউকে ভালবাসতে পারে । অন্য কাউকে তার পছন্দ হতে পারে ।তাই সে নিজে থেকে কোনদিনও কিছু বলেনি মধুরিমাকে। 



  আমিও কাজে জয়েন করার সময় হয়ে এসে গেছে। অনেক বার ইচ্ছা থাকলেও বসন্ত উৎসবের সময় শান্তিনিকেতন যেতে পারিনি আমিও। তাই মালয়েশিয়াতে চাকরিতে জয়েন করার আগে তার সব বন্ধু-বান্ধব, কাকাতো, মামাতো, পিসতোতো ভাই বোন মিলে বসন্ত উৎসব পালন করতে শান্তিনিকেতনে যাবে। একসঙ্গে সকলে মিলে অনেক আনন্দ করবে। তারপর বসন্ত উৎসবের সময় তাদের পনেরো জনের টিম গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে চলে শান্তিনিকেতন এর উদ্দেশ্যে। সেদিন বসন্ত উৎসব তাই সকলে সকাল সকাল উঠে পড়েছে। সবাই খুব রং বাহারি ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিয়েছে, বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব দেখতে যাবার জন্য। সকলে চলে এসেছে মাঠে যেখানে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। অনুষ্ঠানের পরিবেশ দেখে সবারই মন ভরে গেছে। চারিদিকের গাছে গাছে কাতো রঙের পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া ফুল ফুটে আছে।আম গাছের শাখায় শাখায় আম্র মুকুলেরা ফুটে উঠেছে। গাছে গাছে কোকিল সহ কতো জানা অজানা পাখির দল গান করছে আর এক গাছ থেকে অন্য গাছের ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। সবাই সুন্দর করে সেজেছে আনন্দে মেতে উঠেছে । সকলে আবীর হাতে দাঁড়িয়ে আছে।এরই মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন রতো অনেকের মাঝেই অমিও মধুরিমাকে দেখতে পায়। মধুরিমাকে দেখে অমিওর মনে হচ্ছে যেনো, স্বর্গ থেকে কোনো অপ্সরী নেমে এসেছে । সাদা লাল সবুজ রঙের কম্বিনেশনে পড়া শাড়ি ব্লাউজ , খোঁপায় পলাশ ফুলের মালা, দুই হাতে শাড়ি রঙের সঙ্গে মিলিয়ে দুই হাতে পরেছে চুড়ি। তার সঙ্গের অন্য বন্ধুরা তাকে ডেকে নিয়ে আসে মধুরিমা নৃত্য শেষ হলে । পলি গিয়ে মধুরিমাকে ডেকে নিয়ে আসে । মধুরিমা জানায় সে তার মাসিমনির সাথে এসেছে। তার মাসিমনিএই বিশ্বভারতী তে চাকরি করে । তাই সে মাসিমনির সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছে । প্রত্যেকবারই সে শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের সময় আসে এখানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। অনেকদিন পরে অমিও সামনাসামনি দেখলো মধুরিমাকে, তার চোখের পলক যেন পড়তে চাই না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে মধুরিমার দিকে।একটা অদ্ভুত ভাললাগা সর্বশরীরে যেন শিহরণ জাগিয়ে তুলছে মনের মধ্যে । আনন্দের আলোতে ভরে যাচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো তার বুকের মধ্যে। অনেক দিনের লালন করা একটা সুপ্ত ইচ্ছা যেন পূর্ণ হয়েছে আজ এই ক্ষনে।পলি মধুরিমা কে সকলের সাথে আলাপ করিয়ে দেয় । তারপর তারা সবাই মিলে একসঙ্গে রঙিন বসন্ত উৎসব পালন করে।একে অপরকে মন ভরে রং মাখিয়ে দেয়। অমিও একটু লাল আবির নিয়ে মধুরিমার দুই গালে আলতো করে লাগিয়ে দেয় । সেও অমিওকে রং মাখিয়ে দেয় মনের ইচ্ছে মতো। একে অপরকে স্পর্শকে তারা লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। তারপর তারা সকলে মিলে কোপাই নদীর ধারে বেড়াতে যায় । তারা সকলে অমিও আর মধুরিমাকে একটু আলাদা করে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়ে , অন্যেরা অন্য পাশে গিয়ে বসে । অমিও ও মধুরিমা দুজনে কোপাই নদীর ধারে একটি বড়ো গাছের তলায় গিয়ে বসে । অমিও কি বলবে, কোথা থেকে কথা শুরু করবে বুঝতে পারে না ।তার মনের মধ্যে জমে থাকা না বলা কথার পাহাড় ঝর্নাধারা মতো কলকল করে বেরিয়ে আসতে চাই। কিন্তু মুখ ফুঁটে বলতে পারছে না বলে অমিও । মধুরিমা অমিওকে সোজাসুজি স্পষ্ট ভাবে জিগ্যেস করে "তুমি কি আমাকে পছন্দ করো অমিও"। অমিও মধুরিমা মুখের দিকে চাই । মধুরিমা বলে "সেদিন রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তুমি আমাকে দেখেছিলে, আমিও তোমাকে দেখেছিলাম "। পরে পলির মুখে তোমার কথা শুনে , প্রায় প্রায় তোমার খবর নিতাম আমি। তুমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট গুলো দেখতে , আর আমার ছবিগুলোতে লাইক দিতে। কিন্তু আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাওনি। তাই আমিও তোমাকে কখনো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়নি। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম তুমি নিয়মিত আমার ফেসবুক একাউন্ট চেক করো এবং আমার পোস্টগুলো দেখে লাইক করো । তুমি যদি আমাকে না পছন্দ করতে, তাহলে তো আমার ছবিতে লাইক করার কথা ছিল না, তাই না অমিও । আমি ও তোমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখতাম । আমিও তোমাকে পছন্দ করি । আমি প্রত্যেক বার বসন্তোৎসবে শান্তিনিকেতনে আসি ।এবার পলি বলল তোমরা সবাই মিলে এবার বসন্ত উৎসব দেখতে শান্তিনিকেতন আসছো। আমার কাছে খবরটা খুবই আনন্দের স্পেশাল । তোমাকে দেখতে পাবো সামনাসামনি। তোমার সাথে কথা বলতে পারবো, ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছিল। আমি প্রতি মুহূর্তেই তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কখন তোমাকে দেখতে পাবো আমি। অমিও মধুরিমার দিকে তাকায় আর তার একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, আমিও তোমাকে খুব পছন্দ করি ভালোবাসি মধরিমাু কিন্তু আমি তোমাকে তা জানাতে পারিনি। ভেবেছিলাম তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো । আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করো। তুমি যদি মনে মনে অন্য কাউকে ভালবেসে থাকো। অন্য কাউকে পছন্দ করে থাকো ।সেই ভয় থেকেই আমি তোমাকে কোনদিন আমার মনের কথা বলতে পারিনি আর পলির কাছেও তোমার প্রতি ভালো লাগার কথা আমি বলতে পারিনি। মধুরিমা এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল । সে চেয়েছিল অমিও নিজে এসে তার মনের কথা তাকে জানাক। আনন্দের আবেগে দুজনের মন পূর্ণ হয়ে ওঠে। হওয়ায় তালে তালে তাঁদের মনের মধ্যেও প্রেমের বন্যায় ডুব দিতে থাকে। একে অপরের ভালোলাগার কথা ,তাদের মনের গোপন লুকিয়ে রাখা কথা একে অপরকে বলতে পেরে খুবই খুশি আনন্দিত হয়ে ওঠে। মধুরিমা তার মাথাটা ওর কাঁধে রেখে পরম নিশ্চিন্তে আরামে চোখ বুজে বসে থাকে । অমিও বলে আমি বাড়িতে গিয়েই বাবা-মাকে তোমার কথা জানাবো । তারপর তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমার সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেবো। তোমাকে বিয়ে করে আমার সঙ্গে করে আমি নিয়ে যাব । বাবা মা তুমি আমি একটা সুখের সংসার গড়তে চায় মধ। অমিও বলে মধু তুমি পারবে তো আমার স্বপ্ন পূর্ন করতে । মধু বলে 'পারব অমিও আমি তোমার জন্য সব করতে পারবো "। তখন দখিনের বাতাসে গাছের পাতায় পাতায় সঙ্গীত রচনা হয় আর বসন্তের প্রকৃতি যেন বলতে চাই আজীবন তোমাদের মনেপ্রাণে বসন্তের রঙে রঙিন রঙিন আলোয় ভরে উঠুক। তোমারা সুখী হও। তোমাদের জীবনে চিরো বসন্তের রঙের রঙিন হয়ে উঠুক। তোমাদের ভালোবাসা প্রেমের জয় হোক।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance