STORYMIRROR

Protima Mondol

Abstract Fantasy Others

3  

Protima Mondol

Abstract Fantasy Others

বধূবরণ

বধূবরণ

4 mins
229


প্রভাতীর সঙ্গে ছোটোনের দেখাশোনা করেই বিয়েটা হয়েছিল,তখন ছোটোন ভালো চাকরি করতো। তারপর এলো কোরোনা মহামারী।

কোরোনা আবহে অনেক মানুষ অসুবিধার মধ্যে দিয়ে গেছে, ছোটোনেরও কপাল খারাপ। তাদের অফিসে যতো জন ইয়ং ছেলেকে ছাঁটাই করেছিল,ছোটোন তাদের মধ্যে একজন।

ছোটোনের বাবা একটা কোম্পানিতে চাকরী করতো, অনেক বছর হয়ে গেছে রিটায়ার করেছে।

ছোটোনের চাকরি চলে যাওয়ার জন্য সংসারের বেহাল অবস্থা। সংসারে রোজগেরে মানুষ বলতে কেউ নেই। এখন সবাই বসা। জমানো টাকা যা ছিল সব খরচ হয়ে গেছে ততদিনে।

এতো বড় সংসারের দৈনন্দিন খরচ, ওষুধ, লোক লৌকিকতা করতে গিয়ে ভীষণ হিমশিম খেতে ইচ্ছে তাদের।

প্রভাতী একটা গুণী মেয়ে। সে বসে থাকেনি কোনদিনও। বিয়ের পরও হাতের কাজ করেছে। তাতে তার হাত খরচের টাকা উঠে যেতো,তাই দিয়ে নিজের জন্য কিছু রেখে, বাকি টাকা থেকে মা-বাবা,বোন, শশুর মশাই -শাশুড়ি মা'কে, স্বামীর জন্য ব্যয় করতো। তাদের জন্য তার সাধ্য মতো দিয়ে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করতো।

প্রভাতীর অন্যান্য গুণের মধ্যে একটা,সে খুব ভালো রান্না করতে পারে। তার রান্না যারা খেয়েছে প্রশাংসা'ই করেছে।

তাই সে মনে মনে ভাবে ভালো ভাবে সংসার চালানোর জন্য হোম ডেলিভারীর কাজ শুরু করবে, যেমন ভাবনা তেমনি কাজ শুরু করে দেয়।

বাড়িতে রান্না করে, টিফিন ক্যারিয়ার করে নিয়ে কাস্টমারদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। প্রথমে অল্প অল্প কাস্টমার হলেও পরে বেশ অনেক গুলো কাস্টমার এসে যায় তার কাছে। তার সুস্বাদু ঘরোয়া রান্না আর সঙ্গে মিষ্টি ব্যবহারের জন্য, তাকে সবাই পছন্দ করে। তার কাছ থেকেই খাবার অর্ডার করে।

প্রভাতী'র এই কাজকে তার শ্বশুর বাড়িতে কেউ মেনে নিতে পারেনি, যে বাড়ির বৌ হয়ে হোম ডেলিভারির কাজ করবে সেটাও কী হয় কখনও। 

পাড়ার লোকজন ছাড়াও আত্মীয় স্বজনেরা খুব টিটকারী দিয়ে, ইনিয়ে বিনিয়ে কথা শোনাতে ছারবে না।

কিন্তু প্রভাতী একটা কথা বেশ ভালো ভাবেই বোঝে, তাদের সংসারের অভাব মেটাতে কেউ কোন সাহায্য করবে না, শুধু কিছু সহানুভূতির কথা বলে মজা নেবে। 

তাই যা করার তাকেই করতে হবে। কবে তার স্বামী আবার চাকরি পাবে সে আশায় বসে থেকে কোন লাভ হবে না।

তাই সে ভেবে দেখলো, পুরুষ মানুষদের আগে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই।

প্রথমে শাশুড়ি মা'কেই বোঝাতে হবে।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। শাশুড়ি মা'কে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজের দলে টেনে হোম ডেলিভারীর কাজটা শুরু করে।


তারপর এক সময় বাড়ির সবাই তার কাজকে মূল্য দিতে শুরু করলে, সকলে মিলে হোম ডেলিভারীর কাজে হাত লাগায়। এখন পরিবারের সব সদস্যদের যৌথ ব্যবসা এটা।

এখন তাদের হোম ডেলিভারীর ব্যাবসা ছাড়াও একটা রেস্টুরেন্টের ব্যাবসা আছে। সেখানে বিরিয়ানী এগরোল,মোগলাই, চাউমিন, পকোড়া, সিঙ্গারা সহ অনেক ধরনের তেলেভাজা, স্ন্যাক্সের সমস্ত কিছু খাবার পাওয়া যায়।

আজ জামাই ষষ্ঠী প্রভাতী এবং তার স্বামী যাবে জামাই ষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বাবার বাড়িতে।

প্রভাতী'র শাশুড়ি মা আজ সকাল থেকেই ভীষণ ব্যাস্ত। যদিও অন্যান্য দিনেও ব্যাস্ত থাকে, কিন্তু সে ব্যাস্ততা অন্য রকমের।

প্রভাতীর হাতে নতুন একটা শাড়ী দিয়ে তার শাশুড়ি মা বললেন,"যাও বৌমা,যাও এটা পরে নাও। এই শাড়ীটা পছন্দ করে তোমার জন্য কিনে এনেছি। আজ এই শাড়ী পড়ে বাবার বাড়িতে যাবে।"

প্রভাতীর শাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে, তার পছন্দের লাল হলুদ রঙের সফ্ট জামদানী শাড়ী। শাড়ীতে হাত বোলাতে বোলাতে সে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো শাড়ী পড়তে।

শাড়ী পড়ে ঘরের বাইরে এসে অবাক হয়ে গেলো,আজ মেঝেতে আসন পাতা হয়েছে।সেটা শাশুড়ি মায়ের নিজের হাতে তৈরী। অনেক যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখেন শাশুড়ি মা। আজ কী এমন হলো যে, সেই আসনটা মেঝেতে পাতা হয়েছে।

শাশুড়ি মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত, তাই স্বামী আর শ্বশুর মশাই এর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল,কী হচ্ছে।

কেউ কোন উত্তর দিল না, দু'ইজনের মুখেই হাসি। মনে হয় তারা কিছু জানে, কিন্তু তার কাছে গোপন করে যাচ্ছে। 

প্রভাতী এবার অধৈর্য্য হয়ে উঠল। আজ সে বাবার বাড়িতে যাবে, এদিকে শাশুড়ি মায়ের ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে কিছু ছোট খাট্ট অনুষ্ঠান আছে। তবে তাকে কেউ কিছু বলেনি কেনো। তাকে বললে, সেই তো কাজ করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়ে বাবার বাড়িতে যেতে পারতো।

তার ভাবনার মাঝে শাশুড়ি মা হাতে করে বড় কাঁসার থালায় ভাত, পাঁচ রকমের ভাজা,কারো কিছু তরকারি,বড় মাছের মাথা দিয়ে ডাল,চিতল মাছের মুইঠা,কচি পাঁঠার ঝোল, আমের চাটনি, পাঁপড় ভাজা এনে পেতে রাখা আসনের সামনে সাজিয়ে রাখলো। তারপর শশুর মশাই একটা প্লেটে অনেক রকমের কাটা ফল, তার স্বামী একটা প্লেটে নানান রকমের সন্দেশ মিষ্টি এনে রাখলো।

প্রভাতী অবাক চোখে চেয়ে রইল, প্রভাতীর শাশুড়ি মা তার হাত ধরে আসনে বসিয়ে দিতে দিতে বলল,"বৌমা আজ যেমন জামাই ষষ্ঠীতে আমার ছেলের আপ্যায়ন হবে তোমাদের বাড়িতে, তেমনি আমি বৌমা ষষ্ঠী পালন করে তোমাকে আপ্যায়ন করবো আমাদের বাড়িতে।

একটা মেয়ের বাড়িতে যেমন জামাই খুব গুরুত্বপূর্ণ, খুব আদরের। 

আমার সংসারের ও তুমি ঠিক তেমনি খুব গুরুত্বপূর্ণ খুব আদরের।

প্রভাতীর এই সব ব্যাবস্থা দেখে আনন্দে চোখে জল এসে গেলো। এতো খুশি, এতো সন্মানও কী তার পাওনা ছিল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract