STORYMIRROR

Alpana Ganguly

Action

4  

Alpana Ganguly

Action

এক বেঞ্চের বন্ধু

এক বেঞ্চের বন্ধু

3 mins
7

আমাদের পাড়ায় মোড়ের মাথা থেকে বাঁদিকে গেলেই ব্যাঙ্ক, আর তার পাশেই গৌরের পাইস হোটেল।
এখানে আজকালের বাজারেও মাত্র ত্রিশ টাকায় পেট ভরা ভাত খাওয়া যায়। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর বড় প্রিয় জায়গা এটা। আগে মেঝেতে আসন পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও, এখন উন্নতি হয়েছে। সতী প্রসন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলটি উঠিয়ে দেবার সময় জলের দরে আসবাবপত্র বিক্রী করে দিয়েছে।
গৌর সেই সুযোগো তিন চার জোড়া বেঞ্চ কিনে ফেলেছে। সেখানে এখন খাবার ব্যবস্থা।

চার বন্ধুর নির্দিষ্ট একটি বেঞ্চ আছে, কারণ তারা দাবী করেছে যে
ছোটবেলায় ওই স্কুলের ওই বেঞ্চেই তারা একসঙ্গে বসতো। নাম সই আছে তাদের। ওই বেঞ্চ সাক্ষী যে তারা এককালে পড়া শুনো করতো। যদিও চতুর্থ শ্রেণীতেই ইতি।
এখন ওরা জোয়ান।

মইদুল রংমিস্ত্রী, বিপীন ছুতোর মিস্ত্রী, রতন ফল বেচে, ফুকলা বাতের ওষুধ বেচে। রোজ দুপুর দেড়টার সময় তারা চলে আসে গৌরের হোটেলে।
ছোটবেলার একবেঞ্চের বন্ধুরা
একসঙ্গে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন শেষে কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটায় পাশের ব্যাংকে। কারন সেখানে এসি চলে। ভরপেট্টা খেয়ে ওই ঝিরিঝিরি ঠান্ডায় একটু ঝিমিয়ে নেয় ওরা। এখন কথা হচ্ছে ওরা রোজ ব্যাংকে ঢোকে কীভাবে?
ওদের খাওয়ার পর গৌর ওদের হাত দিয়ে ব্যংকবাবুদের জন্যে চা আর টিফিন পাঠায়। পরিবর্তে তিরিশটাকা ভাতের থালি ওরা তেইশ টাকায় পায়। মাঝে মাঝে এক আধটুকরো মাংস পায় ফ্রিতে।
এর ফলে গৌর আর ওদের দু পক্ষেরই সুরাহা হয়।
বাবুদের টিফিন খাওয়া অবধি ওরা
আয়েস করে। তারপর খালি কাপডিস দোকানে জিম্মা করে ওরা কাজে ফিরে যায়।

সেদিন বাবুদের চা দিয়ে ঠান্ডা মেঝেতে বসে একটু ঝিমোচ্ছিলো। কখন তিনজন লোক  এসে বাবুদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়েছে জানে না। চোখ খুলতেই, ওরা বললো," চোখ বুঁজে থাক, তোদের সঙ্গে আমাদের
কোন লেনাদেনা নেই।"
ওরা চারজন চোখ বুঁজে থাকার ভান করে, কিন্তু চোখ পিটপিট করে সব দেখে।
ব্যংকের দরজা বন্ধ। দারোয়ান সিংজীর মাথায় বন্দুক ধরে আছে একজন। বাকী দুজন ম্যানেজারের কাছে ভল্টের চাবি চাইছে।

দুপুর বেলা  টিফিনটাইম বলে গ্রাহকরা উপস্থিত নেই। ম্যানেজার বাধ্য হয়ে ভেতরের ঘরে নিয়ে যাচ্ছে ওদের। মইদুল আর বিপিন চোখ চাওয়া চাউয়ি করে মৃদুপায়ে উঠে গিয়ে দুটো ভারী পেপার ওয়েট তুলে ডাকাত দুটৌর মাথায় ছুঁড়লো, একই সঙ্গে ফুকলা  লাথি মেরে তৃতীয়জনের বন্দুক ফেলে দিল। বন্দুকটা  উড়ে রতনের হাতের কাছে এলে রতন ক্যাচ করে নিলো। তারপর বেধড়ক পেটাতে থাকলো
তিনজনকে। ইতোমধ্যে ম্যানেজার পুলিশকে ফোন করলেন।
থানা কাছেই, পুলিশ এসে ওদের ধরলো। ব্যংকের বাইরে থাকা গাড়ীর অন্য শাগরেদরা গাড়ী নিয়ে পালালো।
সম্পূর্ণ ঘটনাটা ম্যাজিকের মতো হয়ে গেলো। চারজন বন্ধুর নাম, ছবি, ভাইরাল হয়ে গেলো মিডিয়ায়। দুদিন পর ওরা আবার এক বেঞ্চে বসেছে।  গৌর বললো তোদের আজ সব খাবার ফ্রি। পাড়ার ইজ্জত বাঁচিয়েছিস। সরকার তোদের পুরস্কার দেবে বলেছে। আজ তোরা আমার অতিথি।
চারজনে হাত ধুয়ে খেতে বসলো।
ওদের পাতের পাশে একটা করে পায়েসের বাটি।
হঠাৎ তিনজন গামছায় মাথা মুখ ঢেকে ঢুকে এলোপাথারী গুলি চালিয়ে চলে গেল। যাবার সময় বলে গেল," হিরো হবার খুব শখ, না?"
পায়েসের বাটী লাল হয়ে আছে রক্তে। চারবন্ধুর ভবলীলা সাঙ্গ হলো একই বেঞ্চে, যেখানে ওরা ছোটবেলায় বসতো।
সেই থেকে গৌর ওই বেঞ্চে কাউকে বসতে দেয়না। ওখানে রাখা থাকে চার বন্ধুর হাসিমাখা মুখের ছবি, যা গৌর তুলেছিল ওই ঘটনাটার আগে।
******
২০১৯ সালে মেদিনীপুরে একটি ঘটনা অনুসারে লেখা।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action