মাথাকাটা পুকুর
মাথাকাটা পুকুর
বেহালায় ডায়মন্ড হারবার রোডের ডানদিকের রাস্তা ধরে পাক্কা আধঘন্টা হাঁটলে পড়বে খেজুর বাগান। মনেই হবে না এটা কলকাতা শহরের মধ্যে এবং খুব কাছেই। একটি সুন্দর সাজানো গ্রাম যেন।ঠিক মধ্যিখানে একটা পুকুর। আর এর চারধারে চারটি বাড়ী। বাড়ী না বলে প্রাসাদ বলা যায়, তবে ভগ্ন প্রাসাদ বলাটাই ঠিক হবে। প্রাসাদ গুলি হলো লাহিড়ীদের চার শরিকের। আর পুকুরটি সবার।
ওই পুকুরের বিশেষত্ব হল, পুকুর ভর্তি বড় বড় মাছ, কিন্তু সে মাছ কেউ খায় না। কেন?
কেন না, লাহিড়ীদের কুলদেবতা হলেন মৎস্য অবতার, যিনি ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার।
ওই পুকুরে দক্ষিণ ধারে মৎস্য অবতারের এক বিশাল মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। লাহিড়ীরা নিরামিষ ভোজী, ওনারা মাছকে পূজো করেন। প্রতিদিন পালা করে চার বাড়ী থেকে চারবার মাছেদের খেতে দেওয়া হয়। সকালে মুড়ি, দুপুরে ভাতের ছোটছোট মন্ড। বিকেলে সুজির মন্ড, ও সন্ধ্যায় আটার.মন্ড। পুকুর ধারে এসে আয় আয় করে ডাকলেই ছুটে আসে।.পায়ে সুড়সুড়ি দেয়, হাত থেকে খাবার খায়। আশেপাশের বাসিন্দারাও খুব ভক্তি করে তাদের।
ওই পুকুর.ধারে কেউ বাসন মাজে না ,কাপড় কাচে না। সন্ধ্যেয় পুকুর পাড়ে মৎস্য অবতারের আরতি হয়, ও সবাই বাতাসা প্রসাদ পায়। ওই
পুকুরের ধারে এক সাধু এসে বসলেন একবার। সবাই নাম দিল মছলীবাবা। বড় বড় আঁশের মালা পরা। একটা মাটির মাছ সামণে রেখে জপ করে। বলে "এই পুকুর খুব পূণ্যের। আমাকে এক সাধু এখানে পাঠিয়েছেন তপস্যা করার জন্য।
না ফেনিয়ে আসল কাহিনীতে আসি। তখন সাতের দশকের প্রথম। নকশাল আন্দোলন চলছে।
বেহালা ছিল নকশাল আন্দোলনের ঘাঁটি। নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র, শিক্ষক, যুবক সবাই এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিল। তখন সিদ্ধার্ধ শংকরের আমল। নির্দেশ দিলেন বেহালার নকশাল নিধনের। বেহালার ভেতর.দিকে লুকিয়ে থাকার অনেক জায়গা ছিল। মছলীবাবা আসলে ছিল পুলিশের গুপ্তচর। সে কিছুদিনের মধ্যেই আবিষ্কার করলো এখানে নকশালদের ঘাঁটি।ব্যস শুরু হলো খন্ড যুদ্ধ। রাতের অন্ধকারে পুলিশ বাহিনী এসে যাকে পারতো গুলি করে ওই পুকুরের জলে ফেলে দিতো। লাহিড়ীরা ভয়ে বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলো, কারণ তাদের পরিবারে অনেক উঠতি যুবক ছিল।
সে কী কান্ড। সারা রাত বোমা বাজী। মাছ পুকুরের জল রক্তে লাল হয়ে নাম হল লালদিঘী। আর পুকুর ধারে বসে স্বয়ং অবতার সব দেখতেন , প্রতিবাদ করতেন না হত্যার। একদিন বোমার ঘায়ে মৎস্য অবতারের মাথা উড়ে গেলো। তখন পুকুরটার নাম হলো মাথা কাটা পুকুর।
এখনো পুকুর ধারে তিনি আছেন কাটা মাথা নিয়ে।

