জীবে দয়া
জীবে দয়া
ছোট্টছেলে সোমরাজ। সবাই সোমু বলেই ডাকে। প্রচন্ড গরমের জন্য স্কুলের ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মা অফিস যাওয়ার আগে পই পই করে রোজ বলে যান ,"সোমু, একটু পরে পরেই জল খাবে। দুপুরে গ্লুকোন ডি মিশিয়ে জল খাবে। ঠাম্মা বিকেলে ঘোল দিলে খেয়ে নেবে। আলাদা করে নুনচিনির জল রেখে গেলাম খেয়ে নেবে। এই গরমে যেন শরীরে জল না কমে যায়। তরমুজ কেটে রাখলাম খেয়ে নেবে।আর এই গরমে ছোটাছুটি করবে না। দুপুরে গল্পের বই পড়বে, ছবি আঁকবে বুঝেছো?" সমু গুড বয়। মায়ের সব কথা শোনে। দুপুরে ঠাম্মা ঘুমোলে ও জানলার ধারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।ওদের বাগানে কত রকম পাখী আসে। কাঠবিড়ালি আসে। সমুর সঙ্গে সবার ভাব। সেদিন একটা সবুজ হলুদ মেশানো পাখী রঙ্গন গাছের ডাল থেকে ধপ করে পড়ে গেল।পড়ে গিয়ে চোখ পিটপিট করছে আর ঠোঁট টা হাঁ করছে। সমুর মনে হলো পাখিটার শরীর খারাপ। ও দৌড়ে গিয়ে মালতী পিসীকে ডাকলো। সব কাজ সেরে ও নিজের ঘরে একটু ঘুমিয়ে নেবে ভাবছিলো। সমুর ডাকে উঠে এসে পাখীটাকে দেখে বললো,"ইস, একেবারে নেতিয়ে পড়েছে।" মালতী ঘরেএসে জল নিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে পাখীটার ঠোঁটের ওপর দিতে লাগল। পাখীটাও সেই জল গিলে নিলো। তখন মালতী একটা বাটীতে করে ওর সামনে জলটা রেখে সরে এলো। পাখীটা উঠে অনেকটা জল খেয়ে আবার উড়ে গিয়ে গাছে বসলো । কিছু ক্ষণ পরে সমু দেখে আরো কয়েকটা পাখী এসে ওই বাটী থেকে জল খেয়ে যাচ্ছে। মালতী পিসী বললো,"ওদেরো তো তেষ্টা পায়। এখন এতো গরমে সবার এতো তেষ্টা পাচ্ছে, ওদেরো তেষ্টা বাড়ছে। সব তো শুকিয়ে গেছে, ওরা জল কোথায় পাবে? তখন সমুর খুব মন খারাপ হলো। ওর মা ওকে নানা রকম ভাবে জলীয় জিনিস খাওয়ানোর চেষ্টা করে। আর পশু পাখীদের মায়েরা তো পারে না। ওদের এই গরমে খুব কষ্ট তাহলে। সন্ধ্যায় বাবা এলে সমু বাবার কাছে বললো সমস্যাটা। বাবা বললেন ,"সত্যিই তো। আমার আগেই ভাবা উচিত ছিলো। ওদের যদি আমরা না দেখি তবে ওদের দেখবে কে? পরদিন সকাল থেকে সমু আর ওর বাবা কাজ শুরু করে দিল। বাড়ীতে একটা পুরোনো পায়া ভাঙা টেবিল ছিল। বাবা সেটাকে কাঠ আর পেরেক ঠুকে সারিয়ে বাগানের একধারে রাখলো। তারপর একটা বড়ো গামলায় জল ভরে টেবিলের ওপর রেখে দিলো। মালতী পিসী বললো,"একটা বাটিতে কটা ভিজে ছোলা রেখে দিই বরং। ছোলা খেয়ে জল খাবে। সমু খুব খুশী। তারপর সমুর মনে পড়লো কাঠ বেড়ালীদের কথা। ওরাও তো সমুর হাত থেকে এটা ওটা খেতে বাগানে নেমে আসে। ওদের জন্যেও জল রাখতে হবে। তাই আর একটা ছোট বাটিতে জল রাখলো আমগাছটার গোড়ায়।আর মালতী পিসী একটা কলাই করা বাটীতে করে খানিকটা জল রাখলো সদর দরজার বাইরে। ওখানে তো রোজ ভুলু এসে ভাত খেয়ে যায়। সব ব্যবস্থা হলে সমু খুব খুশী। দুপুরে দেখে ওই গামলা থেকে কত পাখী জল খেয়ে যাচ্ছে। কাঠবিড়ালি দুটোয় জলখাচ্ছে।আর ভুলু তো একবাটি জল একেবারেই খেয়ে নিয়ে লেজ নাড়ছে। ঠাম্মা বলেন ওরা সবাই তোমাকে আশীর্বাদ করছে। ছোট্ট বন্ধুরা, জলের অপর নাম জীবন। জল ছাড়া কোন প্রাণী বাঁচে না। আর সব প্রাণীই আমাদের পরিবেশের অঙ্গ। তাই প্রাণীদের বাঁচাতে, পরিবেশকে বাঁচাতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তোমাদের যাদের বাগান নেই, তারা বাড়ীর ছাদে বা বারান্দায় একটু জল রেখে দিতে পারো বারোমাস। আর হ্যাঁ রাস্তার কুকুর দের জন্যেও যদি রাস্তার ধারে একটু জল রাখতে পারো তবে ওদের প্রাণটা বাঁচে।
