STORYMIRROR

Gopa Ghosh

Children Stories

5  

Gopa Ghosh

Children Stories

বাবুই

বাবুই

3 mins
612

বাবুই আজ কিছুতেই স্কুল যেতে চাইলো না। বাবার ধমক, মায়ের মার তাকে সেদিন স্কুল পাঠাতে সমর্থ হলো না। শেষে বাবা হাল ছেড়ে দিয়ে বাবুইয়ের মাকে বলে দিলো "থাক, আজ যখন কিছুতেই যেতে চাইছে না, যেতে হবে না"। মায়ের সুর চড়লো সপ্তমে "এই করেই ছেলের মাথাটা খাচ্ছো, তুমি না বুঝলেও আমি বুঝি, আজ দাদু আসবে বলে ওর শয়তানি"। বাবা হেসে বাবুইয়ের চিবুক ধরে বলে "আমার থেকেও বেশি তুই দাদুকে ভালোবাসি না বাবুই?" বাবুইয়ের মন নেচে ওঠে। আজ দাদুর কাছে সারাটাদিন অনেক গল্প শুনবে। বিশেষ করে আগের বার দৈত্যের গল্পটা অর্ধেক শোনার পর বাবুই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে উঠে দ্যাখে দাদু ছোটকার বাড়ি চলে গেছে। এতদিন পরে আবার আজ আসার কথা। বাবুইয়ের সময় যেনো কাটতে চাইছে না। একবার জানলায় আবার পরক্ষনেই ছাদে। বাবুইয়ের একটা খুব আপসোস সে ঠাকুমাকে কখনো দ্যাখে নি। ঠাকুমা মারা যাওয়ার এক বছর পর ওর জন্ম। তবে ছবিতে দেখেছে। দাদুর সাথে রাতে শুতে গিয়ে অনেকবার দেখেছে দাদু ঠাকুমার ছবিটার সাথে কখনো সখনো কথা বলে। বাবুইকে কতবার বলেছে "জানিস দাদুভাই, তোর ঠাকুমার কাছে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে আমার, বেশি দেরি করলে আবার আগের মত গোঁসা করবে"। শেষের কথাগুলো বলে দাদুর দৃষ্টি স্থির হয়ে থাকতো ঠাকুমার ছবির ওপর। 

বাবুই সারা সকাল দাদুর অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল। বিকালে ঘুম ভেংগে দাদুর গলা পায়। এক ছুটে পাশের ঘরে গিয়ে দ্যাখে দাদু আর সব কাকুরা কি যেনো আলোচনায় ব্যস্ত। মা ওকে হাত ধরে সরিয়ে নিয়ে আসে। দাদু ঘর থেকে বলে ওঠে "থাক না বৌমা, কতদিন পর আমাকে দেখছে, ওকে আমার কাছে নিয়ে এসো"। মা আর কি করে, অগত্যা বাবুই কে খাটে বসিয়ে দিয়ে সাবধান করে দেয় কোনো দুষ্টুমী যেনো না করে। বাবুই দাদুর কোলে ঠেস দিয়ে কিছুক্ষণ বসে বটে তারপর শুরু হয়ে যায় এক পায়ের সাথে অন্য পায়ের লড়ালড়ি। ক্রমশঃ ডান পা জিততে জিততে বাঁ পায়ের এক ঠেলায় শুধু পা নয় দাদুর হাতে ধরা চিনে মাটির কাপটা ভেঙে চৌচির। ঘরে উপস্থিত সবাই রে রে করে উঠলো। মা ছিল না ওই সময়ে কিন্তু বাবা হাত উঁচিয়ে এগিয়ে এলো বাবুইয়ের দিকে। "বাঁদর ছেলে, আজ তোকে মেরে শিধে করছি দাঁড়া"। দাদুর এক ধমকে থেমে যায় বাবা "করছিস কি, দুষ্টুমী এই বয়সে করবে না তো কি ধেড়ে হয়ে করবে, বেশ করেছে কাপ ভেঙেছে, আমি কিনে আনবো আবার"। দাদুর বাজ খাঁই গলা শুনে পাশের ঘর থেকে মা কাকিমারা সব ছুটে আসে। তবে দাদুর কাছ থেকে বাবুইকে ছাড়িয়ে নিয়ে শাসন করার সাহসটুকু মা করতে পরে নি। 

বাবুই পরে বুঝছিল সেদিন সেই আলোচনা সভার বিষয় কি ছিল। সেদিন দাদু খুব দুঃখ করে ঠাকুমার ছবির দিকে তাকিয়ে বলেছিল "আমার সব কিছু তোমার তিন ছেলেকে দিয়ে দিলাম, আমার চিকিৎসার খরচ এখন ওরাই করবে, তুমি এবার নিয়ে যাও রমা, আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না"। বাবুই ছোটো হলেও দাদুর কষ্ট তাকে খুব কষ্ট দিত। পিছনে দাঁড়িয়েও বেশ বুঝতে পারলো দাদুর চশমার কাঁচ জলে ঝাপসা হয়ে গেছে। বাবুই পিছন থেকে দাদুর কোমর জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো "দাদু, তুমি মরে যাবে না, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি"। দাদু বাবুই কে কোলে তুলে গালে একটা হামি দিয়ে বলে উঠলো "না দাদুভাই, তোমার জন্য আমি হাজার বছর বাঁচতে রাজি"। 

 



Rate this content
Log in