পরিপূরক
পরিপূরক


লেখার এটা প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। কয়েকটা ইমিটেশন গয়না আর দুটি শাড়ি নিয়ে এই বাড়িতে তার প্রবেশ। না কোনো স্বপ্ন নিয়ে সে এ বাড়িতে আসে নি বরং তার স্বপ্নকে কবর দিয়েই এই বাড়িতে প্রবেশ। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের একমাত্র রোজগেরে মা বিছানা নিলো। পড়াশুনা বন্ধ হলো লেখার। মা বিছানায় পড়েও চেষ্টা করতে থাকে বিয়ের জন্য। যে আসে তাকেই অনুরোধ করে " আমার মরণ হলে মেয়েটার কি যে হবে? তোমরা একটা বিয়ের সম্বন্ধ দ্যাখো না গো"। কেউ মুখের উপর স্পষ্ট জানিয়ে দিত " বিয়ে দিতে হলে পয়সা চাই, এমনি এমনি কি হবে"? লেখার মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো। কিন্তু পাড়ার বিশু একদিন সুখবর এনে হাজির করলো। বললো " পাত্রের বাড়ির লোক কিছু না নিয়েই বিয়ে দিতে চায়, তবে ছেলের একটি খুঁত আছে, অ্যাকসিডেন্টে তার পা দুটি বাদ গেছে, তবে কৃত্রিম পায়ে সে সামান্য হাঁটা চলা করতে পারে, তোমরা যদি রাজি থাকো আমি ওদের জানাবো"। লেখার মা তৎক্ষণাৎ উত্তর না দিয়ে পরে মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছিল, সে এই বিয়েতে রাজি কিনা। লেখার নিরবতা যে তার অমত প্রকাশ করছে সেটা স্পষ্ট হয়েছিল। মা আর কোনো কথা নি, পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছিল। সকালে লেখার ডাকাডাকিতে যখন মায়ের ঘুম ভাঙছে না তখন ডাক্তার এলেন। লেখা মাতৃহারা হলো। এক বছরের মধ্যেই অনাথ হয়ে গেলো মেয়েটা। লেখা মায়ের মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দোষারোপ করতে লাগলো। যদি মায়ের কথা মত বিয়েতে রাজী হতো তবে মা হয়তো চলে যেতো না। কথায় আছে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে। লেখার বিয়ে হলো ওই পাত্রের সাথেই। লেখা প্রথম রাত মায়ের ছবিটা আঁকড়ে সারা রাত কেঁদেছে। সমর তাকে সান্তনা দেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই সে হাত ছিটকে দিয়েছে রাগে। সমর নীরব বসে থেকেছে সারা রাত। লেখার কষ্ট সে বোঝে কিন্তু এই বিয়েতে কোনো জোরাজুরি তো করে নি। সমর খুব নিচু স্বরে লেখাকে বলেছিল " তুমি যদি চাও, ফিরে যেতে পারো, কেউ আপত্তি করবে না, শুধু কষ্ট পেও না, অনেক কষ্ট পেয়েছ এইটুকু জীবনে"। লেখা সমরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠেছিল " কেমন করে আপনার এই দশা হলো?" সমর উত্তর দিয়েছিল "ছোট্ট এক প্রাণকে বাঁচাতে গিয়ে পা দুটো বলিদান দিতে হলো"। লেখা হাতটা সমরের হাতের ওপর রেখে বলেছিল " আপনার যা নেই, তা যদি আমার থাকে, তবে সেটা দুজনের"। আজ প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে লেখা মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বললো " মা আমরা খুব সুখী, তুমি শান্তিতে থেকো, পূরণ কখনো অসম্ভব হলেও পরিপূরক ইচ্ছার কাছে হার মানে"। লেখার চোখের জল মুছিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে সমর।