Gopa Ghosh

Children Stories Classics

5.0  

Gopa Ghosh

Children Stories Classics

চড়ক মেলা

চড়ক মেলা

4 mins
626


ববির গলা শুনতে না পেয়ে রান্নাঘর থেকে মা মলিনা চিৎকার করে ওঠে "কি হলো, গলা শুনতে পাচ্ছি না কেনো, স্যারের সব পড়া হয়ে গেলো এর মধ্যেই?" ববির কানে কথাটা যায় নি তা নয়, তবু মায়ের এইসব জিজ্ঞাসার উত্তর ও কোনদিনই দেয় না। বরং বুদ্ধি করে একটা খাতা পেন বার করে যেনো কিছু লিখছে এমন ভঙ্গি করলো।।মলিনা যে এবার ব্যাপারটা সরজমিনে তদন্ত করতে আসবে তা সে ভালো করেই জানে। তাই এই প্রস্তুতি। মায়ের ওপর খুব রাগ হলো। কাল পয়লা বৈশাখ, আজ চড়ক মেলায় কত কিছু কিনবে, মেলায় ঘুরবে, সেই চিন্তা না করে তাকে নাকি স্যারের পড়া মুখস্ত করতে হবে, সত্যি মায়ের একটুও মায়া দয়া নেই। মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো ববির।তবু খাতার দিকে চেয়ে আঙ্গুলের মাঝে পেন নিয়ে প্রস্তুত হয়ে রইলো, মা ঘরে ঢুকলেই শুরু করে দেবে লেখা। কিছুক্ষণ বাদেও যখন মা এলো না, এক লাফে খাট থেকে নেমে নিজেই গেলো। মলিনা রান্না করতে করতে পিছন ফিরে ববিকে দেখেই বলে ওঠে "কি রে, সব পড়া শেষ, না হলে কিন্তু আজ মেলায় যেতে দেবো না"। ববি ঠোঁট উল্টে উত্তর দেয় "বাবা ঠিক নিয়ে যাবে দেখো, পড়া সব না হলেও"। মায়ের গলা চড়ে "আচ্ছা দেখিস, আমি না করলে বাবা কেমন করে নিয়ে যায়, বদমাশ মেয়ে, তবু একটু মন দিয়ে পড়ে পড়াটা শেষ করতে পারছিস না?" ববি মায়ের পিঠ ধরে আবদারের সুরে বলে ওঠে "মনটা তো কখন হারিয়ে গেছে ওই মেলায়, তো কোথা থেকে মন দেবো বলো, মা আজ আর পড়তে ভালো লাগছে না"। মলিনার চোখ বড় হয়। "না সব পড়া আমাকে দিয়ে তারপর তোর ছুটি"। ববি আর উত্তর করে না, কারণ জানে এবার মা উত্তরটা মুখে দেবে না, হাতে দেবে। ঘরে গিয়ে পাংশু মুখ করে বইটা টেনে কোলের ওপর রাখে বটে কিন্তু ভূগোলের পরিবর্তে যে বাংলা ব্যকরণ বই নিয়েছে সেটা আর খেয়াল করেনি। ভুলটা ধরে দিলো মলিনা। "তোকে ভূগোল পড়া দিয়েছিলাম,একটা প্রশ্ন কাল ঠিক উত্তর দিতে পারিস নি, আবার ব্যকরণ পড়া শুরু করলি কেনো?" মায়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভূগোল বইটা টেনে নেয় ববি। কিন্তু পড়তে হয় না কারণ বড় পিসি আর মোমা এসে পড়ায় মা অনিচ্ছাকৃত হয়ে ছুটি দিয়ে দেয়। মোমা হলো পিসির মেয়ে, ববির সমাবয়সী। দুই বোনে খুব ভাব। প্রত্যেক পয়লা বৈশাখেই বড় পিসি আসে। ববি ছোটো হলেও বেশ বুঝতে পারে পিসির সংসারে খুবই অর্থ কষ্ট। পিসেমশাই সেলসম্যানের কাজ করে খুব কষ্টেই সংসারটা টানে। এইসব কথা ববিকে কেউ বলে নি কিন্তু বাবা মায়ের আলোচনা শুনে বুঝেছে। 

মোমাকে দেখে ববির মন খারাপটা এক নিমেষেই কি করে যেনো ভালো হয়ে গেলো। দুজনে এক দৌড়ে ছাদের চিলেকোঠায় হাজির। এই ঘর ওদের খুব প্রিয়। কত দুপুর মায়ের শুকোতে দেওয়া আচার খেতে খেতে গল্প করে কাটিয়েছে। যতই ছোটো থাক, সব মনে আছে। মোমা ঘরের চৌকাঠে বসে হতে মোড়া ঠোঙ্গাটা খুলে ববির সামনে মেলে ধরে বলে "এই দ্যাখ তোর প্রিয় প্রজাপতি বিস্কুট এনেছি"। ববি খুশি হয়ে বলে ওঠে "তোর মনে আছে?" মোমা হাসে "মনে থাকবে না, তুই মামীর কাছে আগে কত বায়না করতিস, এই বিস্কুট খাবি বলে"। দুজনের গল্প যেনো আর শেষ হয় না তবু মায়ের তলবে নিচে নামতে হয়। ববি নেমে একটু অবাক হয় এবার। বাবা মা আর পিসি যেনো কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। কারণটা জানার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। মোমা কিন্তু ওর ইচ্ছে পূরণ করে দিলো কারণ ও জানত এবারে ওর মা মামার সাথে কি আলোচনা করতে এসেছে। ববি শুনলো পিসি সম্পত্তির ভাগ বুঝে নেবে, কারণ এটা এখন মেয়েদের নিজের অধিকার। ববি খুব বেশি জটিলতা না বুঝলেও এটা স্পষ্ট বুঝলো যে এত সহজে ওর বাবা মা রাজি হবে না। মোমা কে মুখে কিছু না বললেও মনটা পুনরায় খারাপ হয়ে গেলো। আরো খারাপ হলো যখন দেখলো পিসি সেদিনই মোমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলো। বড়দের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করা বারণ তাই সবটা বুঝেও না বোঝার ভান করে খাটে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলো ববি। বাবা এই সময়ে মেয়েকে পড়তে দেখে একটু অবাক হয়েই প্রশ্ন করলো "কি রে, মেলায় যাবি না, এখন আবার পড়তে বসে গেলি কেনো, ওঠ, তৈরি হয়ে নে"। কথা শেষ হওয়ার আগেই মা ঘরে ঢুকে বেশ ঝাঁঝালো সুরে বলে উঠলো "ওই যে সকালে আমি বকেছিলাম, পড়া শেষ হলে তবে মেলায় যেতে দেবো বলেছিলাম, সেই জন্য তোমার মেয়ের গোঁসা হয়েছে"। কথাটা বলেই ববির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "থাক, অনেক হয়েছে,এবার উঠে রেডি হও"। ববি কিন্তু সেদিন মেলায় গেলো না। তবে পেটের যন্ত্রণার বাহানা করতে হলো, তার জন্য। নুন চিনির জলও খেতে হলো অনিচ্ছাসত্ত্বে। তবু মোমা ছাড়া ওর মন চাইলো না মেলায় যেতে। আসলে বড়রা ভাবে সব বিষয়ে ছোটদের মাথা দেওয়া উচিত নয়, কিন্তু তাদের সবকিছুই যে ছোটদের কোমল মনে কাঁটার মত বেঁধে তা তারা ভুলে যায়। তাদের শৈশব মনে করলেই হয়তো বুঝতে পারবে কিন্তু তাদের শৈশবটা এতটাই ঝাপসা যে ভালো করে দেখতে পায় না।  


Rate this content
Log in