সান্ত্রা
সান্ত্রা


আজ যেন বড় বেশি পড়ায় মনোযোগী হয়ে পড়েছে, অন্যদিন মায়ের চিৎকার, ছোড়দির মাথায় কিল মারাও যে কাজ হয় না, আজ তাদের কোন চেষ্টা ছাড়াই টাবুল খুব জোরে জোরে ভূগোল বইয়ের পড়া মুখস্ত করতে লাগলো। ছোড়দি একবার ঘরে উঁকি দিয়েই রান্নাঘরে মায়ের কাছে এমন ভাবে কথাটা বলল যেন তৎক্ষণাৎ কোন সপ্তম আশ্চর্যের কিছু দেখে এসেছে। "মা টাবুল তো সত্যিই মানুষ হয়ে যাবে গো"। মা মশলা বাটা টা কড়াইতে দিতে দিতে বলে ওঠে "কেন এতদিন কি অমানুষ ছিল তোর ভাই? এবার ছোড়দি ববি একটু আশ্চর্য হয়ে বলে ওঠে "তুমিই তো বলো ভাইটাকে আর মানুষ করতে পারলাম না"। মা হাত ধুতে ধুতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে একটা চাপা হাসি এনে বলে "শোন টাবুল জানে আজ রাতে সান্ত্রা এসে ওকে অনেক গিফট দিয়ে যাবে, তবে পড়াশুনা না করলে সান্ত্রা রাগ করে সেটা নাও দিতে পারে। সান্ত্রা যে বড়দিনের আগে সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের পড়াশোনা ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখে, এটা ও বিশ্বাস করে"। ববি এবার খিলখিল করে হেসে উঠে বলে "তা এই গল্পটি বলল কে ওকে? মা কথার উত্তর দেওয়ার আগেই টাবুল হাঁক পাড়ে "ছোড়দি আমার ইংরেজি ট্রান্সলেশনটা দেখিয়ে দাও, বুঝতে পারছি না"। ববি তৎক্ষণাৎ খুশি হয়ে ভাইয়ের পাশে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ে। মা কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকেই কি যেন ভেবে সদর দরজায় এসে দাঁড়ায়। তার শূন্য দৃষ্টি চলে যায় পথের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। কিন্তু নিরাশ হয়ে কয়েক মুহূর্তেই ফিরে আসে। টাবুল পড়া থামিয়ে জিজ্ঞেস করে "মা আজ অনেক পড়েছি, এবার খেতে দাও শুয়ে পড়বো, না হলে সান
্ত্রা গিফট না দিয়ে ফিরে যাবে।" মা শুধু "আয়" বলে রান্না ঘরে গিয়ে ঢোকে । টাবুল খেতে খেতে ছোড়দিকে প্রশ্ন করে "তুমি কখনো সান্ত্রাকে দেখেছো? ববি বলে "না, তিনি সবাইকে দেখা দেন না"। টাবুল যেন একটু নিরাশ হয়ে জিজ্ঞেস করে "তাই?" টাবুল সেদিন ঠিক করল রাতে সে কিছুতেই ঘুমিয়ে পড়বে না, যত কষ্টই হোক জেগে থাকবে। সব কাজ সেরে মা যখন ঘরে ঢুকলো তখন প্রায় রাত বারোটা। ছোড়দি ঘুমে অচেতন কিন্তু টাবুল বারবার ঘুমের সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে জিতিয়ে নিচ্ছে। শুধু একটাই আশা কখন সান্ত্রা এসে তার বালিশের নিচে গিফট রেখে যাবে, কিন্তু মা যদি টের পায়, সে এখনো ঘুমায়নি তবে খুব বকাবকি করবে। তাই চোখ বুজে চুপটি করে শুয়ে রইল। টাবুলের খুব বাবার কথা মনে পড়ছিল তখন। বাবা অনেক দূরে কোন খনিতে যেন কাজ করে, তাদের এই তিন ভাই বোনের সংসারের জোয়াল যে তার কাঁধে, এইসব ভাবতে ভাবতে চোখটা কখন জুড়ে এসেছিল টাবুল টের পায়নি। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। মা উঠে সদর দরজার খিল খুললো। তবুও টাবুল চোখ খুলল না। জেগে থাকলে সান্ত্রা গিফট দেবেনা। কিন্তু মায়ের ফিসফিসানিতে স্পষ্ট বুঝতে পারল আর কেউ নয় তার বাবা বাড়ি এসেছে। তবু চোখ বুজেই রইল। বাবা ছেলের মাথার বালিশের নিচে হাত দিয়ে কি যেন রাখতেই টাবুল আর ঘুমের ভান করতে পারল না। উঠে বসেই বাবাকে প্রশ্ন করে "তুমি কি সান্ত্রা হয়ে আমার গিফট রাখো বাবা? বাবা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে "হ্যাঁ বাবা, সান্ত্রা সব শিশুদের কাছে তার প্রিয় মানুষের ছদ্মবেশেই আসে, যেমন আজ আমি শান্ত্রা তোমার কাছে"। টাবুল ততক্ষণে তার গিফট খুলে ছোড়দিকে দেখাতে চলে গেছে পাশের ঘরে।