STORYMIRROR

Alpana Ganguly

Crime

4.5  

Alpana Ganguly

Crime

থিম-মাস্ক পর্ব১

থিম-মাস্ক পর্ব১

9 mins
13

কাল দশমী ছিল। ভক্তদের কাঁদিয়ে মা এবছরের মত ফিরে গেছেন শ্বশুরালয়ে। আজ বাঙলার ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে বিজয়া দশমীর উৎসব। এই উৎসব মিলনের আনন্দের উৎসব। এ উৎসব জ্যেষ্ঠ কে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আর কনিষ্ঠদের আশীর্বাদ প্রদানের উৎসব।  এ উৎসব আত্মীয় আর বন্ধুদের শুভেচ্ছা  মঙ্গল কামনা করার উৎসব। আজ কয়েকজন বন্ধু বিজয়া সন্মিলনী উৎসবে মিলিত হয়েছে এক বন্ধুর বাড়ীতে। একটা ছোটখাটো পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। পার্টির হোস্ট শ্রীলা । গেস্ট হল আরো কিছু বন্ধু দম্পতি। প্রত্যেক পার্টির মত এই পার্টির থিম, ড্রেস কোড ও অন্য কিছু নিয়ম আছে, যাতে সবাই সহমত হয়েছে। থিম হলো " জঙ্গল " সবাই কেই মাস্ক পরে আসতে হবে কোন না কোন পশুর। ড্রেসকোড হলো মহিলারা লাল ও পুরুষরা চকলেট রংএর পোশাক পরবে।এমন মুখোশ পরতে হবে যাতে কাউকে না চেনা যায়। কোভিদ বিধি মেনে নিয়ম হলো শিশুদের আনা যাবে না। কাউকে হাগ করা যাবে না। হাতে অবশ্যই গ্লাভস পরতে হবে। আজ শ্রীলার বাড়ীর বিশাল হল ঘর জমজমাট। শ্রীলা ও শুভেন্দু উভয়ের বন্ধুরাই এসেছে। হলঘরের প্রবেশ দ্বারটি গুহার ন্যায় সজ্জিত হয়েছে। ভেতরে ঢুকলে মনে হবে সত্যিই জঙ্গলে এলাম। গাছপালা, ঝোপঝাড় তো আছেই। বসার চেয়ারে, বদলে পাথর খন্ড, গাছের গুঁড়ি , খড়ের গাদা। অতিথিরা সবাই  জন্তু জানোয়ারের মুখোশ পরেছে। তার ফলে একাধিক একধরণের পশু দেখা যাচ্ছে। যেমন, ছটি সিংহ, চারটি বাঘ, দুটি হাতি, হায়না, শেয়াল, শিম্পাঞ্জি সব আছে। খাবার পরিবেশন করছে যারা তারা সবাই খরগোশ। কে হোস্ট আর কে গেস্ট বোঝার উপায় নেই। খরগোশ রা তুরতুর করে হেঁটে ঠান্ডাপানীয়, স্টাটার পরিবেশন করছে। বক্সে গান বাজছে, মিউজিক বাজছে আর তার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে পশুরা নাচছে। নাচ গান খুব জমে উঠেছে। অনেকে অভিনয়ও করছে। যেমন একটি সিংহ একটি খরগোশকে তাড়া করায় খরগোশটি থাবা জোড় করে প্রাণভিক্ষা চাইছে। পার্টি জমে ক্ষীর।  হোস্ট কে চেনা যাচ্ছে না, কিন্তু তার রেকর্ড করা ভয়েস শোনা যাচ্ছে। যেমন," খুব ভালো হচ্ছে"  "চালিয়ে যাও।" "নাচো" এইসব। এবার ঘোষণা হলো," ডিনার হবে ঠিক বারোটায়। তখন সবাই মাস্ক খুলবে। তখনই পুরস্কার দেওয়া হবে সেরা সাজ এবং সেরা নাচ ও সেরা অভিনয়ের জন্যে।" মুখোশে সবার ঠোঁটের কাছে যে ছিদ্র আছে তার মধ্যে দিয়ে স্ট্র ঢুকিয়ে পানীয় ও চিকেন বল খাচ্ছে , কিন্তু জমিয়ে ডিনার খেতে গেলে তো মাস্ক খুলতেই হবে। তাই ঘোষণা শোনে সবাই খুশী। আধঘন্টা পরেই ডিনার, তাই আবার  নাচ, অভিনয়ে মেতে উঠলো সবাই। জোরে গান হচ্ছে, " চায় কোই মুঝে জংলী কহে" সবাই  নাচছে। একটা হাতি নাচতে নাচতে টলে মাটিতে পড়ে গেল এবং শুয়ে পড়ল। সংগে সংগে  মিউজিকের দায়িত্বে থাকা একটি শিম্পাঞ্জী গানটা বদলে দিয়ে অন্য গান চালালো। " নফরত কী দুনিয়া ছোড়কে পেয়ারকী দুনিয়া মে/খুশ রহে গা মেরে ইয়ার" সংগে সংগে অন্য পশুরা পা মুড়ে বসে গ্লাভস পড়া থাবা চোখের কাছে তুলে কাঁদার অভিনয় করতে লাগল। একটু পরেই  ঢং ঢং করে বারোটা বাজল। ঘোষণা হল " ডিনার রেডি, মাস্ক খুলে ফ্যালো সবাই " সবাই মাস্ক খুলল। কিন্তু পড়ে থাকা হাতি মাস্ক খোলে না। সবাই বলছে, " অসাধারণ অভিনয়। এবার ওঠো। " হাতি ওঠে না। শ্রীলা দেখল মোট দশ জন দম্পতিকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল, অর্থাত কুড়িজন আমন্ত্রিত,  তারা সবাই এসেছে । এই হাতি একুশ নম্বর অতিথি। একে কে নিমন্ত্রণ করলো। শ্রীলা বা শুভেন্দু কেউ তো বাড়তি কাউকে বলে নি। অতিথিদের মধ্যে ছিল একজন চিকিৎসক সে হাতির নাড়ি ধরে বলল, " নো মোর।" সবাই  বলল মাস্ক খোলা হোক। শুভেন্দু বলল," পুলিশ আসার আগে কেউ টাচ করবে না হাতিকে। (চলবে--)

পর্ব২



গতকালের গল্প " থিম--মাস্ক"
এর পরবর্তী ঘটনা।

দুঁদে পুলিশ অফিসার মিঃ বাসু এসে হাতির মুখোশটা
খুলে ফেলতেই  সর্ব প্রথম শ্রীলা চোখ বড় করে বলে উঠল " সম্রাট! এখানে?"
বলে একটা কৃত্রিম গাছের গুঁড়ির ওপর বসে পড়ল ।
বাকীরা এগিয়ে এসে ভীড় করলো। চার পাঁচজন বলে উঠল," আরে এ কোথা থেকে এলো? "
মিঃ বাসু জিজ্ঞাসুদৃষ্টি নিয়ে
তাকালেন সবার দিকে, তারপর প্রশ্ন করলেন শুভেন্দুকে," এনার পরিচয়?"
শুভেন্দু বলে," আমি এই প্রথম ওনাকে দেখছি।"
বাসু: তাহলে ওনাকে ইনভাইট
কে করলো, আপনি ম্যাডাম?"
কোন উত্তর নেই। শ্রীলা হেলান দিয়ে বসে আছে, জ্ঞান হারিয়েছে। শ্রীলাকে ধরাধরি করে বেডরুমে নিয়ে যাওয়া হল, শুভেন্দু ওর শুশ্রূষায় থাকল। শ্রীলার জ্ঞান ফিরে এলে শুভেন্দু বলল," এই কী সেই?"
শ্রীলা: হ্যাঁ, কিন্তু ওকে আজকে কে এখানে আসতে বলল?
শুভেন্দু: বুঝতে পারছিনা।কত ঝামেলা আছে কপালে কে জানে?
শুভেন্দু হল ঘরে ফিরে এলো। তখন সেখানে ডেডবডির ছবি তোলার কাজ চলছে। তারপর বাড়িতে খবর দেওয়া ও বডি পোস্ট মর্টেম করতে পাঠানোর কাজ সারা হলে, শুভেন্দু অতিথিদের অনুরোধ করল ডিনার করে নিতে,নাহলে সব খাবার নষ্ট হবে।
কিন্তু এমন একটা ঘটনার পর
কেউ খেতে চাইছে না, বাড়ী যেতে চাইছে।
মিঃ বাসু বললেন," কেউ কোথাও যাবেন না। আমি কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
আপনারা কিছু মুখে দিন, না হলে না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে অসুবিধা হবে।"
মিঃ বাসু জিজ্ঞেস করে জানলেন যে শ্রীলা ছাড়া আর
পাঁচজন মৃতব্যক্তিকে চিনত, কিন্তু ভিন্ন নামে।
পৃথা ও রমা ওকে চিনত সংগ্রাম সিং নামে। ময়না ওকে চিনত অজয় গোয়েঙ্কা
নামে। ওদের তিনজনের কর্তারা কেউ ওকে চিনত না। কণিকা আর কুন্তল এই দম্পতি ওকে চিনত সম্রাট সেন নামেই।
বাসু বললেন সবাই খেয়ে নিক।
তারপর আমি পাশের ঘরে
বসবো, যে পাঁচজন মৃত ব্যক্তিকে চেনে তারা এক এক করে আমার কাছে যাবে। প্রশ্ন
করা শেষ হলে তারপর বাড়ী যাওয়া।
ওই খেতে বসাই হল, খাওয়া
তেমন হলো না। তারপর
বাসুর কাছে যেতে হলো।
বাসু: আপনি ওকে চিনলেন কী করে?
পৃথা :একটা আর্ট গ্যালারিতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল।
বাসু : কী ভাবে?
পৃথা :আমার এক বান্ধবী
আমাকে বললো যে সংগ্রাম তোর সংগে আলাপ করতে চায়, তোর আঁকা ছবি ওর খুব পছন্দ হয়েছে।তখন আলাপ হয়।
বাসু : আলাপ কত দুর গড়ায়?
পৃথা: এমনিই বন্ধুত্ব হয়। দেখতে সুপুরুষ, আর্টের সমঝদার, রসিক মানুষ , খারাপ লাগেনি।কিন্তু যখন আমি বুঝি যে রমা সংগ্রামের প্রতি আসক্ত, তখন আমি নিজেকে সরিয়ে নিই।
বাসু: ওর মধ্যে এমন কিছু দেখে ছিলেন, যাতে মনে হয়
কোন খারাপ কাজে ও যুক্ত থাকতে পারে?
পৃথা : অত ভালোকরে তো মিশিনি। বান্ধবীর অনুরোধে বন্ধুত্ব করেছিলাম, আর এক বান্ধবীর জন্য সরে আসি, কারণ মনে হয়েছিল সংগ্রামের সংগে আমি মিশি এটা রমা চায় না।
বাসু: আচ্ছা আপনি এখন আসুন।

এবার রমার প্রবেশ।
রমা: নমস্কার।
বাসু: মৃত ব্যক্তির নাম? কীভাবে আপনার সংগে আলাপ?
রমা : সংগ্রাম ছিল পৃথার বন্ধু। ওই ওর সংগে আলাপ করিয়ে দিয়ে ছিল।
বাসু: কেমন সম্পর্ক ছিল আপনাদের?শুধুই বন্ধুত্ব?
রমা একটু চুপ করে থেকে
উত্তর দেয়।
রমা: আমার স্বামীকে বলবেন না যেন। খুব বেশী জড়িয়ে পড়েছিলাম ওর সংগে।ওকে আমি ভালোবাসতাম।
বাসু: ঘনিষ্ঠতা?
রমা : খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল।
কিন্তু বিয়ের কথা বলায় ও উধাও হয়ে যায়। পৃথার রিকোয়েস্টে আমাদের বন্ধুত্ব
হয়, কিন্তু পৃথার সংগেও ওর যোগাযোগ ছিল না। তারপর আমার বিয়ে হয় অন্যত্র। আর দেখা হয়নি।
এরপর আসে ময়না।
বাসু: আসুন, বসুন। আপনাকে  দেখে খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছে?
ময়না: স্কাউন্ড্রেলটা কীভাবে
এখানে এলো আর আমাদের বিপদে ফেলল ভাবতেই আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
বাসু: কী ভাবে চিনতেন ওকে ? কেমন লোক ছিল ও?
ময়না : আমি এক ফাংশানে গান গাইতে গিয়েছিলাম।
গান গাওয়ার পরে বসে আছি,
ফাংশানের উদ্যোক্তা আমার এক বান্ধবী বলে অজয় তোর সংগে আলাপ করতে চাইছে।
সংগীতের সমঝদার,  অনেক পয়সা ঢেলেছে এই অনুষ্ঠানের জন্য। তখন আলাপ।
বাসু: কেমন মানুষ ছিল?
ময়না : প্রথমে ভালোই লেগেছিল। চেহারায় একটা আভিজাত্য আছে। কিন্তু মিশে বুঝলাম মাকাল ফল। সংগীতের কিছুই বোঝে না। গানের থেকে গায়িকাদের ওপর নজর বেশি। আমি পাত্তা দিতাম না আর।
একদিন আমাকে রাস্তা থেকে জোর করে গাড়ীতে তোলে। সিন ক্রিয়েট করবোনা বলে আমি গাড়ীতে উঠি। একটু গিয়েই বলি নেমে যাবো। তখন  বলে আমাকে অনেক টাকা দেবে ওর সংগে বাইরে গিয়ে প্রোগ্রাম করতে হবে। রাজী নাহলে আমার কেরিয়ার শেষ করে দেবে।
উপায় না দেখে আমি রাজী হবার ভান করি, তারপর ফিরে এসে পুলিশে কমপ্লেন করি।বাছাধন জব্দ  হয়। কীভাবে ছাড়াও পেয়ে যায়।
আমাকে ফোনে শাসায় দেখে নেবে বলে।

(চলবে----৩ য় ভাগ দেখুন)




পর্ব ৩


  এরপর  কণিকার প্রবেশ। বাসু: আসুন, বসুন। কণিকা আপনি কীভাবে মৃত ব্যক্তিকে চিনলেন? কণিকা: শ্রীলার বন্ধু হিসাবে সম্রাট আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়, আমি অ্যাকসেপ্ট করি। তারপর শ্রীলার সংগেই এক কফিশপে চাক্ষুষ দেখি।বন্ধুত্ব হয়। বাসু: কেমন বন্ধুত্ব? কণিকা: সাধারণ বন্ধুত্ব।  আমার বিশেষ বন্ধু তো কুন্তল ছিলোই। সে জায়গাটা কেউ কোনদিন নিতে পারে নি। বাসু: আপনি ঠিক বলছেন না। আপনার ওর প্রতি দুর্বলতা ছিল, আর সেজন্যই আপনি আজ ওকে মার্ডার করেছেন। কণিকা : গল্প বানাবেন না। আগে প্রমাণ হোক যে মার্ডার হয়েছে। সম্রাট  এমনকিছু ছিল না যে ওকে পাবার জন্য আমি পাগল হয়ে যাবো। ও কুন্তলের নখের যোগ্যও নয়। বাসু: মানুষ রাগের বশে করতে পারে না এমন কিছু নেই। আপনি আমার সন্দেহের তালিকায় রইলেন। কণিকা রেগে গিয়ে "ডিসগাস্টিং" বলে চলে গেলো। এবার শ্রীলাকে ধরে ধরে নিয়ে এলো শুভেন্দু। বাসু : আপনার শরীর এখন কেমন ম্যাডাম? শ্রীলা : যা বলবেন বলুন।আমি ঠিক আছি। বাসু: শুভেন্দু আপনি বাইরে যান প্লিজ্। শ্রীলা : না, ও থাকবে। যা বলার ওর সামনেই বলুন। বাসু:  ওয়েল। আপনি মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে ও কী নামে চেনেন? কতদিনের সম্পর্ক,  কেমন সম্পর্ক ছিল? শ্রীলা: ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট  পাঠিয়েছিল। তখন তো কম বয়স। আমি অ্যাকসেপ্ট করেছিলাম। নাম বলেছিল সম্রাট। অনেকদিন আমরা বন্ধু ছিলাম। বাসু: তারপর? শ্রীলা : তারপর বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। আমাদের বিয়ের কথা হয়। বাবা ওকে আমাদের বিজনেস পার্টনার হতে অফার করেন। আমি আনন্দের জোয়ারে ভাসছি। এই সময়ে সম্রাট একদিন আমাকে নিয়ে বকখালি বেড়াতে গেলো, সেখানে আমরা ঘনিষ্ঠ হলাম। ওকে আমি এতটাই বিশ্বাস করেছিলাম। শ্রীলা মুখে হাত চাপা দেয়। শুভেন্দু বলে," শান্ত হও শ্রী।" বাসু বলেন," তারপর ম্যাডাম?" শ্রীলা: তারপর কলকাতায় ফিরে একদিন  ওর আসল চেহারা ধরা পড়ল আমার কাছে। লক্ষ্ণৌ থেকে আমার পিসীরা এসেছিলো বেড়াতে। ভাই বোনদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেছি। একটা কেবিনে বসে ছিলাম আমরা। পাশের কেবিন থেকে শুনি সম্রাটের গলা। ও বলছে," ও ডার্লিং, কটা দিনের তো ব্যাপার। আমি মিথ্যে বিয়ে করলে রাজকন্যা সহ রাজ্য ও পাবো তারপর রাজ্য দখল করে রাজকন্যাকে আউট করে আমার রাণীকে নিয়ে সুখে রাজত্ব করবো। রাণী খিলখিল করে হেসে উঠলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। পাশের কেবিনে গিয়ে সপাটে একটি চড় কষিয়ে চলে এসে বাবাকে সব বললাম। বাবা ওর বাড়ী গিয়ে যাচ্ছেতাই অপমান করে। ওবলে এর শোধ নেবে। তারপর আমার বিয়ে হয়ে যায়। ওর খোঁজ আর রাখিনি। বাসু: ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট ম্যাডাম। আপনি পুরোনো শত্রুতার জেরে এই কাজটা করেছেন। থানায় চলুন, ওখানে গিয়েই পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট দেখবো। তখনই সব বোঝা যাবে কীভাবে মেরেছেন। শ্রীলা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। শুভেন্দু বলে," আপনি কিঠোই বোঝেন নি। আমি মেরেছি সম্রাট কে শ্রীলাকে ঠকিয়েছিল বলে।চলুন থানায় যাচ্ছি। শ্রীলা মা হতে যাচ্ছে , ওকে চাপ দেবেন না। বাসু: হুঁ হুঁ বাবা, ঠিক বুঝেছি। কী করে পেটের কথা টেনে বার করতে হয় তা আমার থেকে ভালো আর কে জানে? শুভেন্দু ভাবে শ্রীলা যদি কাজটা করে থাকে তো ঠিকই করেছে। এমন খারাপ লোকের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। কিন্তু আমি থাকতে তো শ্রীলাকে জেল খাটাতে কেউ পারবে না। আমি থানায় যাবো, তারপর ভালো উকিল ধরে ঠিক নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো নিজেকে। ধন্য  শুভেন্দুর বুকের পাটা, ধন্য ভালোবাসা। এমন সময়ে দরজা ঠেলে কুন্তল ঢুকলো। কুন্তল : স্যার , সরি আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার ইনটারভিউ হবে না? বাসু: আসুন, আসুন, আপনিই শেষ সন্দেহজনক ব্যক্তি ছিলেন , কিন্তু এখন আর নয়। আচ্ছা, বলুন সম্রাট কে আপনি কীভাবে চেনেন? কুন্তল: কণিকার মাধ্যমেই চিনেছি। ঠিক বন্ধুত্ব বলতে যা বোঝায় তা নয়। চেনা শোনা ছিল। কনিকা চিনেছিল শ্রীলার  মাধ্যমে।  শ্রীলা তো  ওকে দুচোখে দেখতে পারে না। বাসু : আপনার সংগে যোগাযোগ ছিল? কুন্তল: না, বেশ কয়েক বছর কোন যোগাযোগ ছিল না। আর শ্রীলার শত্রু আমার বন্ধু কেন হবে? তবে কয়েকদিন আগে আমার সংগে দেখা হয়েছিল। ও ডাকল। বলল কথা আছে। তারপর বলল ও অনুতপ্ত ।একজন জ্ঞানী ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে ওর আত্মশুদ্ধি হয়েছে। ও এতদিন যা যা করেছে, বিশেষ করে শ্রীলার আর ময়নার  কাছে  তার জন্যে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছুক। আমিই ওকে বলি আজ এই পার্টিতে আসতে। তাহলে সবার সাথে দেখা হবে। আমি বলি মুখোশ পরে আসতে। আরো বলি যে বিজয়ার দিন সবাই ওকে ক্ষমা করে দেবে। এখন ভাবছি কেন বললাম। না এলে বেচারার প্রাণটা বেঘোরে যেতো না । বাসু: হুঁ বোঝা গেছে। এমন সময় মিঃ বাসুর ফোন টা বেজে উঠল। বাসু সবার দিকে চেয়ে স্পীকারে দিলেন ফোনটা। " স্যার, কোন বিষক্রিয়া নয়। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।" আপনি এলে বিশদ জানবেন। বাসু বললেন," হুঁ হুঁ বাবা, আগেই বুঝেছিলাম। শুধু সবাইকে একটু চাপে রাখছিলাম। সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। হাতির মুখোশের আঢ়ালে যে প্রতারক ছিল, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের সেই প্রতারক বন্ধু লোকচক্ষুর আঢ়ালে গিয়ে কবে নিজেকে বদলে ফেলে সকলের সত্যিকারেরর বন্ধু হয়ে উঠতে চেয়েছিলো। কিন্তুভাগ্য তা আর হতে দিল না। প্রবঞ্চক হয়েই তাকে চলে যেতে হলো। ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারলো না। (সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime