Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Aparna Chaudhuri

Children Stories Romance Classics

2.6  

Aparna Chaudhuri

Children Stories Romance Classics

গন্ধ

গন্ধ

4 mins
482


আরুশির কেন জানিনা মনে হয় সবকিছুই একটা গন্ধ আছে। যেমন জুলাই মাস আসলেই ও কেমন জন্মদিনের গন্ধ পায়। এ বছর জুলাই মাসে, ওর সাত বছরের জন্মদিনেও ও পেয়েছে গন্ধটা। মার্চ মাসে ও পরীক্ষার গন্ধ পায়। ওর কথা শুনে মা বাবাই দুজনেই হাসে। ধ্যাঃ! পরীক্ষার আবার গন্ধ হয় নাও কিন্তু পায়। সব গন্ধগুলো কিন্তু আলাদা। এই যেমন ধর সরস্বতী পুজোর গন্ধ আর দুর্গা পুজোর গন্ধ কিন্তু আলাদা। আবার রবিবারের দুপুরের গন্ধ , সোমবারের দুপুরের থেকে আলাদা। এই কথাটা ও ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু শর্মিলাকে বলতে সে কিন্তু বুঝল। আসলে শর্মিলা আরুশির কোন কথাতেই না করতে পারে না। সেই নার্সারি থেকে ওরা একসাথে পড়ছে, এক স্কুল, এক ক্লাস, একই সেকশন। সেদিন সারা টিফিন টাইম আরুশি ওকে বোঝাল আনন্দের গন্ধ, দুঃখের আর ভয়ের গন্ধ কেমন, কি করে চিনতেদুপুর আড়াইতে নাগাদ ছুটি হয় আরুশির। অটো করে বাড়ি আসতে আসতে ও কেমন একটা আনন্দের গন্ধ পেল। আজ ভালো কিছু একটা ঘটতে চলেছে। দরজায় কলিং বেলটা বাজাতেই মা দরজা খুলে দি“ মা আজ কি কিছু স্পেশাল......” ওর কথাটা শেষ হবার আগেই ও দেখতে পেল দিদুন এসেছে, “দিদুন!!” ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল দিদুনকে। দিদুনকে খুব ভালবাসে আরুশি। খুব নরম আর মিষ্টি মত একটা মানুষ। খুব বই পড়তে ভালবাসে দিদুন। রোজ হেঁটে হেঁটে লাইব্রেরী যায় বই বদলাতে। তাই দিদুন একটা গল্পের ভাণ্ডার ।

“ দেখি তো জামার মাপটা ঠিক আছে কিনা। দিন দিন যা লম্বা হয়ে যাচ্ছ দিদি ভাই!” কাঁপা কাঁপা হাতে জামাটা আরুশির কাধের কাছে তুলে ধরে দিদুন। ওর জন্য পুজোর জামা নিয়ে এসেছে দিদুন।

দাদু আর দিদুন ওদের বাড়ির থেকে কিছু দূরেই থাকে। দাদু বেশি চলা ফেরা করতে পারে না। দিদুন মাঝে মাঝ “ দিদুন মহালয়া কবে গো?”

“ এই শনিবার। কেন তুমি গন্ধ পাচ্ছোনা?” মৃদু হাসল দিদুন।

“ পাচ্ছি ... কিন্তু ঠিক কতদিন বাকি সেটা বুঝতে পারছি না।“

“ আর পাঁচদিন।“

“ ইয়েয়েয়ে!” নাচতে লাগলো আরুশি।


এইটা আরেকটা মজার দিন আরুশির জন্য। মহালয়ার আগের দিন ও চলে যায় দাদু-দিদুনের কাছে।

দাদুর কাছে একটা পুরনো মারফি কোম্পানির রেডিও আছে। সেটা দাদু বার করে সেদিন চালায়। এখনও সুন্দর চলে রেডিওটা।

ভোরবেলায় দাদু ঘরের দরজাটা খুলে দেয় । ঘরে ফুরফুর করে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢোকে। আকাশটা হাল্কা সাদা দেখায়। ওকে ঘুম থেকে তোলে না দাদু। কিন্তু নিজেরা উঠে পড়ে। ঘরে আলো জ্বালে না পাছে আরুশির ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু যেই রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলাটা গমগম করে ওঠে, অমনি আরুশির ঘুম ভেঙ্গে যায়। চাদর মুড়ি দিয়ে ও গুটিসুটি মেরে শুয়ে শুয়ে দেখে, খাটের পাশের গোল টেবিলটায় বাজছে রেডিওটা। তার সামনে ইজিচেয়ারে আধশোওয়া হয়ে দাদু মন দিয়ে শুনছে মহালয়া। দিদুন! দিদুন কোথায়? একটুবাদেই দিদুনকে দেখতে পায় আরুশি। দিদুনের স্নান হয়ে গেছে, হাতে ধূপ নিয়ে সারা ঘরে ধূপ দিচ্ছে দিদুন।

“ আরুশিকে ডেকে দেব?”

“ নাহ! থাক একটুবাদে নিজেই উঠবে।“ বলে দাদু।

আরুশি কিন্তু ওঠেনা। মটকা মেরে বিছানায় পড়ে থাকে। ঠিক ঐসময় ও পায় মহালয়ার গন্ধ। একদম আলাদা! 

ধীরে ধীরে আকাশ ফরসা হতে থাকে। দিদুনের পুজো হয়ে গেলে দিদুন এসে খাটে বসে। আর ওমনি আরুশি টুক করে দিদুনের কোলে মাথাটা রেখে দেয়।

দিদুন চমকে উঠে বলে,” ও পাজি মেয়ে! কখন থেকে জেগে শুয়ে আছিস বিছানায়! মুখ ধুয়ে নে, কিছু খা!”

আরুশি কোলের মধ্যেই মাথা নাড়ে, এখন না।

মহালয়া শেষ হলে যখন দিনের আলো ঝকঝক করে তখন আরুশি প্রথম পায় পুজোর গন্ধ।

দিদুনের ঘরের সামনের বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে ও বুক ভরে টেনে নেয় ওই গন্ধটা।


কিন্তু প্রতিবারের মত এবার আর যাওয়া হলনা দিদুনের বাড়ী। দিদুন চলে যাবার পর সেদিনই সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ এলো দুঃসংবাদটা। দাদু বাথরুমের সামনে পড়ে গেছে। ফোনটা মা-ই ধরেছিল।

“ তুমি একদম চিন্তা কোরনা মা! আমরা এক্ষুনি চলে আসছি। “


দশ মিনিটের মধ্যে ওরা সবাই বেরিয়ে পড়ল বাড়ী থেকে। যাবার পথে পাড়ার ডাক্তারবাবুকেও সঙ্গে নেওয়া হল। 

ডাক্তারবাবু দাদুকে দেখে বললেন, “একটা স্ট্রোক হয়ে গেছে। এক্ষুনি হসপিটালে ভর্তি করা দরকার।“

অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করা হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাবা আর মা দাদুকে নিয়ে চলে গেল হাসপাতালে।

আরুশি আর দিদুন রইল বাড়ীতে। এই প্রথম দিদুনকে কাঁদতে দেখল আরুশি। সারা বাড়ীটাতে একটা দুঃখের গন্ধ। মা ফিরল অনেক রাতে। বাবা রয়ে গেছে হাসপাতালে। ওখানকার ডাক্তাররা দেখে বলেছে এখন ঠিক আছে দাদু। তিনদিন বাদে ছেড়ে দেবে দাদুকে। 

তিনদিন বাদে দাদু আর দিদুনকে ওরা ওদের বাড়ি নিয়ে চলে এলো। দাদুর দেখাশোনা করার জন্য কাউকে দরকার। আরুশির ঘরে দাদু আর দিদুনের থাকার ব্যবস্থা হল।

দাদুর অসুস্থতার জন্য আরুশি তিনদিন স্কুলে যায়নি। তাই আজ স্কুলে যেতেই হবে। কাল মহালয়া, কাল থেকে পুজোর ছুটি শুরু। 

“এবার তুই মহালয়া শুনবি কি করে?” জিজ্ঞাসা করল ওর বন্ধু শর্মিলা।

শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল আরুশির। সত্যি তো! ওদের বাড়ীতে রেডিও নেই।

বাড়ি ফিরে দাদুকে দেখতে গেল আরুশি। চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছে দাদু। এখনও শরীর খুব দুর্বল।

রাত্রে ওকে চুপচাপ দেখে বাবা জিজ্ঞাসা করল ,” কিরে মন খারাপ?”

“ বাবাই, এবার আর মহালয়া শোনা হলনা!” ছলছল চোখে বলল আরুশি।

“ কেন টিভিতে হবে তো!“

“ না ওই মহালয়া নয়।“ পাশ ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো ও।

পরেরদিন ভোরবেলায় বাবার ডাকে ঘুম ভাঙল আরুশির,” আরু মা! আরু... ওঠ মহালয়া শুনবি না?”

ধড়মড় করে উঠে বসলো আরুশি। বাবার হাতে ধরা মোবাইল।

“শিগগির নিয়ে দাদুর ঘরে যা আর ওদের সঙ্গে বসে শোন।“ বলল বাবা।

আরুশি এক ছুটে দাদুর ঘরে গিয়ে দেখে দুজনেই উঠে বসে আছে বিছানায়, জানালার দিকে তাকিয়ে। আরুশি তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে দুজনের মাঝখানে শুয়ে ইউটিউব থেকে চালু করে দিল মহালয়া। গমগম করে উঠলো বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলা।

দিদুন ওকে জড়িয়ে ধরল। দাদু ওর মাথায় আসতে আসতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আরুশি দেখল দাদুর দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে দু ফোঁটা জল । সারা ঘরটা হঠাৎ ম-ম করতে লাগলো মহালয়ার গন্ধে। আরুশি জানে মহালয়া শেষ হলেই ও পাবে পুজোর গন্ধ ।



Rate this content
Log in