Apurba Kr Chakrabarty

Action Crime

4.5  

Apurba Kr Chakrabarty

Action Crime

অজানা পথে( পর্ব -৪৯ )

অজানা পথে( পর্ব -৪৯ )

3 mins
42



স্বামীর ক্ষতস্থান চেপে রক্ত বন্ধ করার আপ্রান চেষ্টা করতে থাকে।আক্রান্ত স্বামী মনিরুলের প্রথমে তীব্র যন্ত্রনা কাতর  চিৎকার ও তার পরে ছেলে মেয়েদের ও স্ত্রী নুরজাহানের কান্না আওয়াজ শুনে পাশের বাড়ি নুরজাহানের  ভাশুর বড় জা  গভীর রাতে ছুটে আসে, পাড়া প্রতিবেশীরাও ছুটে এসে অচেতন নুরজাহানের স্বামী মনিরুলকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যায়।পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঐ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সে আক্রান্তকে  বর্ধমান সদর হাসপাতালের পাঠানোর ব্যবস্থা করে।আমাদের নিজস্ব সংবাদ দাতা জানাচ্ছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্লাড দিতে হয়েছে।বেলা নটা এখবর প্রাপ্তির সময় অবধি আক্রান্ত হতভাগা  নুরজাহানের স্বামী মনিরুলের জ্ঞান ফেরেনি।তবে তার জীবন সংশয়ের আশঙ্কা নেই । সেলাইন অক্সিজেন ব্লাড চলছে। ব্লাড গ্রুপ ও নেগেটিভ ঠিক সময় জোগান না পাওয়ায় জন্য  তার শরীর ভীষণ দুর্বল সংকটাপন্ন, এখনও অচেতন আই সি ইউ তে আছে।

খবরে আরো প্রকাশ আক্রান্তের স্ত্রীর বক্তব্য রাতে সে যখন বাথরুম যাওয়ার জন্য নিত্য দিনের মত ঘরের কপাট খোলে,সে দেখে তার মৃত সৎ কন্যা ময়নাকে সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্রুপ করে তার দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখেছিল।
এরপর সে অদৃশ্য হয়ে তীব্র ঠান্ডা হাওয়ার মত তার শরীরে প্রবেশ করে।এরপর তার কিছুই মনে নেই। ঘরে শয়ন করার তক্তার নিচে মনিরুলের মুরগী দোকানের ব্যাবহার করার জন্য ধারাল অস্ত্র বস্তার মধ্যে ভরে বাঁধা থাকে, ঐ অস্ত্রেই স্বামীর লিঙ্গ কর্তন,নুরজাহান তার নিজের হাতেই করেছে।
নুরজাহানের বক্তব্য সে এই ঘৃণ্য নৃশংস কাজ করেনি। তার মৃত সৎ মেয়ের পাপাত্মা তার শরীরে প্রবেশ করে এসব তাকে দিয়ে পাপ কর্ম করিয়েছে।স্বামীর  সাথে তার ভীষণ সুসম্পর্ক একসাথে এক বিছানায় তারা শয়ন করে। কেন এমন কাজ সে করবে!
যদিও অপরাধীরা নিজ দোষ ঢাকতে এমনসব আজগুবি  কান্ড  বলে।রহস্য জট এখনও খোলে নেই।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এখন চলছে।

বিনয় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ,বলল
"মাষ্টার মশাই আপনার কী মনে হয় ঐ মহিলার কথা ঠিক! ও কী সত্যি বলছে!"

হেড মাষ্টার আব্দুল হক বললেন
"ভুত আছে কী নেই,বা ওর সৎ মেয়ে মরে সত্যি ভুত হয়েছে কীনা এত সব জানি না, তবে আরো ভয়ঙ্কর ঘটনা পড়ুন এই দিন দুপুরে ঘটেছে।"

ময়নার স্কুলের হেড মাষ্টার আব্দুল হক,বিনয়ের কাছ থেকে পেপার নিয়ে আবার এক পৃষ্ঠা উল্টে ভিতরের দিকে পৃষ্ঠায় আর একটি খবরের  কলম নিদিষ্ট করে দিয়ে পড়তে বললেন। বিনয়ের চক্ষু চরক গাছ।

উপরে হেড লাইন "এক বিচিত্র লোমহর্ষক ঘটনা।"

"গত মঙ্গলবার দুপুর একটা কী দেড়টা নাগাদ বর্ধমান শহরে খোসবাগান হরিসভা গার্লস হাইস্কুলে পিছনের দিকে শ্যামসায়র পুকুরে পূর্ব পাড়ে হাসপাতাল ও খোসবাগান রোড সংলগ্ন এলাকায় এক বিস্ময়কর লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে।এক মস্ত বড় কালো বিড়াল  এক  মহিলার উপর অতর্তিতে আক্রমণ করে।ভয়ার্ত্ত মহিলা বিড়ালের আক্রমন থেকে বাঁচতে শাড়ি পোষাক খুলে  উলঙ্গ হয়ে উল্টো দিকে হাসপাতালের দিকে ছুটতে থাকে।
স্বাভাবিক থেকে অনেক বড় এই কালো বিড়ালটি পিছন থেকে দৌড়ে মহিলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তার সারা শরীর কামড়ে খামচে ক্ষত বিক্ষত করতে থাকে, মহিলা অচেতন হয়ে পরে। গ্রীষ্মের দুপুরে কতিপয় পথচারী এই সময়ে যারা এই পথে চলাচল করছিল। তারা ভয়ে কেউ বিড়ালের দিকে যেতে সাহস পায়নি। ক্ষত বিক্ষত ঐ অচেতন মহিলাকে নর্দমার জলে টেনে ফেলে এই বিচিত্র আকার আর স্বভাবের বিড়ালটি দৌড়ে মহাজন টুলির গলির দিকে ঢুকে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।

আক্রান্ত মহিলার সঙ্গী, সম্পর্কে জা ভয়ে বিভ্রান্ত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে, পথচারী প্রত্যক্ষ দর্শীদের জানায়,
আক্রান্ত মহিলার স্বামীর  সদর হাসপাতালের ভর্তি আছে।খোসবাগানের  মসজিদের কাছে এক হোটেলে তারা দুপুরে খেতে আসছিল।বাড়ি হরিপুর নুরপুরে। এই আক্রান্ত মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।আমাদের নিজস্ব সংবাদ দাতা প্রেরিত খবর অনুসারে  বেলা তিন ঘটিকা অবধি মহিলার জ্ঞান ফেরেনি।ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গতরাতে তার স্বামীর লিঙ্গ কর্তন করেছিলেন। তার স্বামীকে এদিন ভোরে বর্ধমান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।এখন তার শারীরিক  অবস্থা স্থিতিশীল।

বিনয় আর পড়ল না! বলল,
"এসবের ঠিক মানে বুঝলাম না!" ভয়ে বিভ্রান্ত মনে বিনয় চুপ করে গেল।
আব্দুল হক বললেন, "খুবই রহস্যজনক ঘটনা, সবটা জানি না তবে নুরজাহানের বড় জা আর তার স্বামী মানে মনিরুলের দাদা অ্যাম্বুল্যান্সে করে মনিরুলকে  নিয়ে নুরজাহানের সঙ্গে বর্ধমান সদর হাসপাতালের গেছিল। মনিরুলকে হাসপাতালে অ্যাডমিশন করিয়ে তার দাদা স্ত্রীকে নুরজাহানের সাথে থাকতে বলে। নিজের আর ভাই মনিরুলের  ছেলে মেয়েরা গ্রামেই থাকায় তাদের দেখভালের  জন্য নিকট প্রতিবেশীদের  দ্বায়িত্ব দিয়ে এসেছিল।  প্রতিবেশীরা তার ছেলে মেয়ের ও ভাইপো ভাইঝির খাওয়ানো বা অন্য দ্বায়িত্ব পালন ঠিক ঠাক করছে কীনা! উদ্বিগ্ন হয়ে তাই বাড়ি ফিরেছিল।

তখন বেলা দশটা মনিরুলের সদ্য জ্ঞান ফিরেছিল।অনেকটাই চিন্তা মুক্ত হয়ে মনিরুলের দাদা আমারুল আর থাকেনি। সন্ধ্যা সাতটা শেষ বাস ধরে নুরজাহান আর তার বড় জায়ের গ্রামে ফিরবার কথা।তার মধ্যেই এই বিপদ।

বিনয় ময়নার সব ডকুমেন্ট নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন মনে বলল

" স্যার আপনার মোবাইল নাম্বারটা যদি দেন।আর কিছু যদি ঘটনার অগ্রগতি হয় জানতে পারেন, আমি ফোন করে জেনে নেবো।"

হেড মাষ্টার নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বললেন,
" আপনার নাম্বারটাও দিন আমি নতুন কিছু খবর পেলেই জানাব।"


              ক্রমশ 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action