অজানা পথে পর্ব - ৪১
অজানা পথে পর্ব - ৪১


বিনয় ডাক্তার ম্যাডামকে বলল,
"আমি ময়নার গ্রামের স্কুলে আগামীকাল যাব ভাবছি ওর মাধ্যমিক সার্টিফিকেটা খুব দরকার যদি আঠারো পূর্ণ হয় রেজিস্ট্রেশন ম্যারেজ করা আর সমস্যা নয়।তা না হলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। ওর নিজের কত বয়স সেটাও বলতে চায় না।সব কিছুই খুব গোপন করতে চায়।"
ডাক্তার ম্যাডাম একটু চুপ থেকে ভেবেচিন্তে বললেন,
"মেয়েটাকে দেখে আমার বেশ কম বয়স মনে হল,আঠারো বছর ওর বয়স আপনি বললেন, প্রেসক্রিপশনে তাই লিখেছি। ও তো কিছুই বলতে চায় না।আপনি কী ওর কাছে গ্রামের ঠিকানাটা জেনেছেন!"
"হ্যাঁ ও ভয়ে প্রথমে বলতে চাইছিল না।"
"মেয়েটা মাধ্যমিক পাস! কীভাবে এই অপরাধ জগতে এল!"
অভি এসব গোপন করতে বলল,
"আমি পুলিশ গোয়েন্দা হয়ে ওর কাছে জানতে পারি নি।খুব চাপা বেশী জোর করি না। কেঁদে ফেলে মুখ নামায়।"
"না না জোর করবেন না ওর উপর কোন মানসিক চাপ এখন দেবেন না। এমনি ও অসুস্থ আর খুব নার্ভাস। যদি ওর বয়স সার্টিফিকেট অনুসারে কম হয় আমাকে বললেন, যাতে আপনার রেজিস্ট্রেশন ম্যারেজ দ্রুত হয় আমি দেখব। "
"কী ভাবে ম্যাডাম?"
"এখন বলছি না,তবে আপনি তো পুলিশের লোক যদি ও আঠারোর কম হয় উইদাউট কোন ডকুমেন্ট ছাড়া মেয়েটিকে আপনার ঘরে রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় কী!
তাই এনি হাউ মেয়েকে দ্রুত আইনগত বিয়ে করুন। এতে আপনার যেমন ওকে ঘরে রাখার সমস্যার হবে না, আর মেয়েটা একটা সামাজিক নিরাপত্তা পাবে।ওর মনে জোর বাড়বে।"
"আমি কাল ওর স্কুল যাব,ওর সার্টিফিকেট পেলে আপনার সাথে তারপর দেখা করব।"
"ঠিক, আপনার কোন চিন্তা নেই ,আপনার সাথে মেয়েটির আইনি বিয়ে দিয়ে তবে আমি ছাড়ব। এই ঝুঁকি নিয়ে একটা মেয়েকে ঘরে রাখা ঠিক নয়।তবে আপনার কোন চিন্তার কারণ নেই আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি।এসব কথাবার্তা কেউ কোনদিন জানবে না।"
"ম্যাডাম আজ তাহলে উঠব!"
"হ্যাঁ আসুন পনের দিন পর আমি মেয়েটি আর একবার থ্রো চেকআপ করব।কোন ফি নেবো না।মেয়েটা খুব দুঃখী, আমার ভীষণ মায়া লাগল। ওকে সুখী করুন, আপনি আপনার ছেলে তাহলেই সুখে থাকবে।"
অভি ঘরে ফিরে পোষাক বদলের আগে ময়নাকে বলল,"তোমার ঘা টা গরম জলে ওষুধ মিশ্রণ করে ধুয়েছ ময়না।"
"না দাদা এবার ধোব, আপনি আগে খান দাদা। বেলা দশটা তো হল!"
"তুমি আগে নিজের যত্ন নাও যা গতরাতে ভয়ে অস্থির হয়েছিলে!অসুস্থ দুর্বল জ্বর শরীরের এমন হয় ডাক্তার ম্যাডাম বললেন, আগে নিজের শরীর সুস্থ করো।"
"দাদার আমার রক্ত টেস্ট রিপোর্ট সব ঠিক আছে!" একটু উদ্বিগ্ন মনে ময়না বলল। ভাবছিল যদি কোন খারাপ রোগ ধরা পড়ে!
অভি ঘরে বাইরের পোষাক বদল করে লুঙ্গি পরতে পরতে বলল,"সব ওকে,তোমার শরীর দুর্বল হার্টের জোর কম নার্ভাস ব্লাড কম হিমোগ্লোবিন নরম্যাল থেকে অনেক কম,একটু লো প্রেসার খুব সাবধানে যত্নে থাকতে হবে। চলো আমি তোমার ক্ষতটা গরম জলে ধুয়ে দি। অনেক বেলা করেছ।"
ময়না লাজুক মুখে রান্নার ঘর থেকেই বলল,
আপনি আগে খান দাদা।
রান্নার ঘরে ঢুকে অভি দেখল ময়না তার অসুস্থতা অগ্রাহ্য করে ওভেন স্লাইড পাউরুটি বাটার লাগিয়ে রেডি করে একটি প্লেটে ছটা স্লাইড পাউরুটি তার দুটো কাঁঠালি কলা নিয়ে অভির হাতে ধরাতে এল।
অভি দেখল ময়নার মুখ সারা শরীরের ঘাম নির্গত হয়ে ব্লাউজের অনেক অংশটাই ভিজে সপসপে ।মুখে ক্লান্ত ভাব।এসবে ময়নার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার যত চিন্তা যেন গোপাল আর তার সেবা যত্ন।
ময়নাকে দেখে খুব মায়া লাগছিল,বেচারা নিজের কথা নিজের শরীরের কষ্টের কথা ভাবেই না।বড় অসহায নিরীহ। খুব দরদী মনে বিনয় বলল
"এত বেলা হল তুমি কিছু খেয়েছ ময়না !"
ক্রমশ