অচেনা পথে পর্ব - ৪৭
অচেনা পথে পর্ব - ৪৭


হেড মাস্টার আব্দুল হক একটু গলা নামিয়ে বললেন "সাহেব থানা থেকে আসছেন ?"
"না আমি আই বি'র লোক আমার আই ডি কার্ড দেখবেন!"
"না না সাহেব সে সব দরকার নেই,কী ব্যাপার বলুন তো! মিড মিল নিয়ে একটা ঝামেলা এই স্কুলে কিছু দিন আগে হয়েছিল, পঞ্চায়েত বিডিও থানা পুলিশ অনেক কিছু হল।এখন পড়াশোনাটা গৌন যত সব ঝামেলা আর দুবছর পর অবসর নিলে বাঁচব ।"
"আপনি ভীষণ চাপে আছেন বুঝেছি আমি এসব নিয়ে তদন্তে আসি নেই , জাস্ট একটা ইনফরমেশন আর ডকুমেন্ট থাকলে তার জেরক্স অ্যাটেষ্টটেড কপি সংগ্রহ করতে এসেছি ।একটা কোট কেশে লাগবে খুব জরুরী।"
হেড মাষ্টার যেন দম ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন ,
"কী ডকুমেন্ট সাহেব যদি খুলে বলেন আমি সাধ্য মত সাহায্য করব।"
"ময়না খাতুন আপনার স্কুলের ছাত্রী গত বছর সে খুব সম্ভবত মাধ্যমিক দিয়ে ছিল --"
অভির কথা শেষ হবার আগেই হেড মাষ্টার আব্দুল হক কেমন উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
"হ্যাঁ সাহেব , মেয়েটি তো মারা গেছে ! "
"মারা গেছে !কবে কী ভাবে?"
"শুনেছি ওর সৎ মায়ের বাড়ি কলকাতা গেছিল, ঠিক মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর।গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে ডুবে মরেছে।এমনটাই আমরা জেনেছি।"
"আপনি ওর সব খবর রাখেন দেখছি।"
"আমার পাড়ার মেয়ে তো সাহেব, মেয়েটির ভাগ্যটা বড় খারাপ, আবার শুনছি সে ভুত হয়েছে!"
অভি একটু চমকে ওঠে বলে,
"কী সব যাতা সব বলছেন আপনি! মেয়েটির আইডেন্টিটির জন্য ওর স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা স্কুল সার্টিফিকেট জন্ম তারিখ ওর ছবি এসব দরকার তাই আপনার স্কুলে এসেছি। কোর্ট থেকে এই সব ডকুমেন্ট আমাদের কাছে সংগ্রহ করে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছ! ওর মৃত খবর এমন তো বলে নেই!"
"ওর সার্টিফিকেট তো স্কুলে আছে। ও মারা গেছে,এমন তো জানি,তাই বাড়ির লোক ওর মার্কসিট সার্টিফিকেট কিছুই নিয়ে যায়নি!"
" মেয়েটার কী আপনার পাড়াতেই বাড়ি!"
"হ্যাঁ, আমার তো অনেক দুর সম্পর্ক
ের আত্মীয়া।"
"আপনার নাম আব্দুল হক নেম প্লেটে দেখছি, মেয়েটি বলছেন আপনার দুর সম্পর্কের আত্মীয়া!"
"হ্যাঁ সাহেব তবে এখন পারিবারিক ভাবে তেমন যোগাযোগ ঘনিষ্ঠতা নেই। এখন প্রতিবেশী বলতে পারেন।"
অভির মনে ধন্ধ লাগছিল ময়নার তো তাই বলেছিল, তবে দুর সম্পর্কের আত্মীয় বলেনি।কিন্তু ইনি বললেন মেয়েটা মারা গেছে! আবার ভুত হয়েছে! ময়না আবার ভুত নয় তো! যে ভাবে ওর সাথে হঠাৎ পরিচয়, আর স্বল্প আলাপে গোপালের মা করার হটকারী সিদ্ধান্তে ওকে আমার বাড়িতে আশ্রয় দিবার প্রস্তাব দিলাম!সেটা বেশ রহস্যের ! আবার ওর কেমন সব যত অস্বাভাবিক রহস্যময় আচরণ! প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্য করছি! অভির ভীষণ ভয় হচ্ছিল, গোপাল ঘরে একা ময়না যদি ভুত হয় ওর কোন ক্ষতি করবে না তো! একরাত অবশ্য আগে আমি ছিলাম না! গোপালের কোন ক্ষতি অবশ্য করেনি। বিভ্রান্ত অভির মন চরম উদ্বিগ্ন ছিল।
হেড মাষ্টার,তার অফিসের আলমারী খুলে ময়নার মাধ্যমিকের মার্কসিট, সার্টিফিকেট সব অরিজিনাল বের করে বললেন ,
"আপনি তো অরিজিনাল নেবেন না, জেরক্স বললেন সাহেব?"
"হ্যাঁ ঠিক তাই জেরক্স অ্যাটেষ্টটেড স্কুলের সীল ছাপ সহ দিলেই হবে।"
"আমি জেরক্স করিয়ে আনাচ্ছি,একটু অপেক্ষা করুন সাহেব। "
তারপর একজন স্কুলের গ্রুপ ডি কর্মী সুদীপ্ত নাম ধরে হেড মাষ্টার ডাকলেন।
বয়স কম এক যুবা ঘরে এলে তাকে উনি বললেন,
" যা বাবা বাজার থেকে এগুলো দু কপি করে জেরক্স করে আন দেরী করবি না ।"
তারপর দশ টাকা জেরক্স খরচ যা লাগবে অনুমান করে অ্যাডভান্স দিলেন।
ছেলেটি চলে গেলে,অভির বলল,
" মাষ্টার মশাই এসব কথা পাঁচ কান করবেন না।"
"ক্ষেপেছেন সাহেব এই সব কোর্ট পুলিশ ব্যাপার শেষে আমি ফাঁসব! সাহেব সিগারেট চলে!"
"না আমি ধূমপান করি না।"
"খুব ভাল, চা বিস্কুট আনাই!"
ক্রমশ