অজানা পথে পর্ব - ৪৬
অজানা পথে পর্ব - ৪৬


নুর হরিপুরের হাইস্কুলের হেড মাষ্টার আব্দুল হকএকটু গলা নামিয়ে বললেন,
"সাহেব কী থানা থেকে আসছেন ?"
অভি একটু গম্ভীর মুখ বলল,
"না আমি আই বির লোক,আমার আই ডি কার্ড দেখবেন!"
"না না সাহেব সে সব দরকার নেই,কী ব্যাপার বলুন তো! মিড মিল নিয়ে একটা ঝামেলা এই স্কুলে কিছু দিন আগে হয়েছিল। পঞ্চায়েত বিডিও থানা পুলিশ অনেক হল।এখন তো স্কুলে পড়াশোনাটা গৌন যত সব ঝামেলা, আর দুবছর পর, অবসর নিলে বাঁচব সাহেব । "
"আপনি ভীষণ চাপে আছেন বুঝেছি, আমি এসব নিয়ে তদন্তে আসি নেই ,জাস্ট একটা ইনফরমেশন ডকুমেন্ট থাকলে তার জেরক্স করা অ্যাটেষ্টটেড কপি সংগ্রহ করতে এসেছি ।একটা কোট কেশে লাগবে, খুব জরুরী।"
হেড মাষ্টার যেন দম ছেড়ে বাঁচলেন বললেন ,
"কী ডকুমেন্ট সাহেব যদি খুলে বলেন আমি সাধ্য মত সাহায্য করব।"
"ময়না খাতুন আপনার স্কুলের ছাত্রী গত বছর সে খুব সম্ভবত মাধ্যমিক দিয়ে ছিল--"
অভির কথা শেষ হবার আগেই হেড মাষ্টার আব্দুল হক কেমন উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
"হ্যাঁ সাহেব , মেয়েটি তো মারা গেছে ! "
"মারা গেছে !কবে কী ভাবে!"
"শুনেছি ওর সৎ মায়ের বাড়ি কলকাতা গেছিল, ঠিক মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর।গঙ্গায় মামার সাথে স্নান করতে গিয়ে সে ডুবে মরেছে।এমনটাই আমরা শুনেছি।"
"আপনি ওর সব খবর রাখেন দেখছি।"
"আমার পাড়ার মেয়ে তো সাহেব, মেয়েটির ভাগ্যটা বড় খারাপ, আবার ইদানীং শুনছি সে ভুত হয়েছে!"
অভি একটু চমকে ওঠে বলে,
"কী সব যাতা বলছেন আপনি! মেয়েটির আইডেন্টিটির জন্য ওর স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট বা স্কুল সার্টিফিকেট জন্ম তারিখ ওর ছবি,বাবার নাম এসব দরকার তাই আপনার স্কুলে এসেছি।কোট থেকে এই সব ডকুমেন্ট আমাদের
সংগ্রহ করে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন! ওর মৃত এমন কোন খবর তো বলে নেই !"
"ওর সার্টিফিকেট তো সাহেব স্কুলেই আছে ও মারা গেছে,এমনটাই তো জানি, তাই বাড়ির লোক ওর মার্কসিট সার্টিফিকেট কিছুই নিয়ে যায়নি !"
"আমার কী মেয়েটার পাড়াতেই বাড়ি?"
"হ্যাঁ,সাহেব,ময়নার সাথে আমার তো অনেক দুর সম্পর্কের একটু আত্মীয়ত
া ছিল।"
"আপনার নাম আব্দুল হক নেম প্লেটে দেখছি, মেয়েটি বলছেন আপনার দুর সম্পর্কের আত্মীয়া!"
"হ্যাঁ সাহেব, তবে এখন পারিবারিক ভাবে তেমন যোগাযোগ নেই। এখন প্রতিবেশী বলতে পারেন।"
অভির মনে ধন্ধ লাগছিল, ময়নার তো তাকে তাই বলেছিল, তবে দুর সম্পর্কের আত্মীয় বলেনি।তার পাড়ার মানুষ নিকট প্রতিবেশী জানিয়েছিল। কিন্তু ইনি বললেন মেয়েটা মারা গেছে, আবার সে কীনা ভুত হয়েছে! ময়না আবার ভুত নয় তো ! যে ভাবে ওর সাথে হঠাৎ পরিচয়, আর এক রাতের স্বল্প আলাপেই, গোপালের মা করার হটকারী সিদ্ধান্তে ওকে আমার বাড়িতে আশ্রয় দিবার প্রস্তাব দিলাম!সেটা বেশ রহস্যের !আবার ওর কেমন যেন সব যতরকম অস্বাভাবিক আচরণ প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্য করছি! অভির ভীষণ ভয় হচ্ছিল। গোপাল ঘরে একা, ময়না যদি ভুত হয়, ওর কোন ক্ষতি ও করবে না তো!এক রাত অবশ্য আগে আমি ছিলাম না! গোপালের কোন ক্ষতি সেদিন করেনি। বিভ্রান্ত অভির মন চরম উদ্বিগ্ন ছিল।
হেড মাষ্টার,তার অফিসের আলমারী খুলে ময়নার মাধ্যমিকের মার্কসিট, সার্টিফিকেট সব অরিজিনাল বের করে বললেন ,
"আপনি তো সাহেব অরিজিনাল ডকুমেন্ট নেবেন না,জেরক্স কপি বললেন ?"
"হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন জেরক্স কপি,তবে অ্যাটেষ্টটেড, স্কুলের সীল ছাপ, আর আপনার সাক্ষর সহ দিলেই হবে।"
"আমি জেরক্স করিয়ে আনাচ্ছি, একটু অপেক্ষা করুন সাহেব। "
তারপর হেড মাষ্টার আব্দুল হক,একজন স্কুলের গ্রুপ ডি কর্মী, সুদীপ্তর নাম ধরে ডাকলেন।
বয়স কম এক যুবা ঘরে এলে তাকে উনি বললেন,
"যা বাবা, বাজার থেকে এগুলো দু কপি করে জেরক্স করে আন দেরী করবি না।" তারপর দশ টাকা জেরক্স খরচ যা লাগবে অ্যাডভান্স দিলেন।
ছেলেটি চলে গেলে,অভি বলল,
" মাষ্টার মশাই এসব কথা পাঁচ কান করবেন না।"
"ক্ষেপেছেন সাহেব এই সব কোট পুলিশ ব্যাপার শেষে আমি ফাঁসব! সাহেবের সিগারেট চলে!"
"না আমি ধূমপান করি না।"
"খুব ভাল, তাহলে সাহেব চা বিস্কুট আনাই ?"
ক্রমশ