Apurba Kr Chakrabarty

Horror Classics Fantasy

3.8  

Apurba Kr Chakrabarty

Horror Classics Fantasy

অজানা পথেপর্ব - ৪৫

অজানা পথেপর্ব - ৪৫

3 mins
216


একা এ ঘরে ময়নার ভীষণ একটা অস্বস্তি ভয় লাগে।কেন যেন একা থাকলেই মনে হয় তার কেউ ঘরে আছে তাকে নজর করছে।এ কথা সে মুখ দিয়ে বলতে ভয় করে।বিনয়দা বিশ্বাস করবে না আর এসব বললে সেই এঘরে থাক তিনি অসন্তুষ্ট হবেন আরো তার বিপদ হতে পারে সে তাই ঐ শরীরীকে মেনে নিয়েই থাকবে মরে গেলেও তার উপস্থিতি অন্য কারো কাছে বলবে না। এ এক ধরনের নালিশ! উনি চাইলে তো তাঁর উপস্থিতি বিনয়দাকে জানাতে পারেন! আমি কে! হয়ত শিবানী দি! স্বামী সন্তানের আকর্ষণে এ ঘরে,তাই আমাকে একা দেখলে অসন্তুষ্ট হোন! ভয় দেখান। যাইহোক এ বাড়ি আমি ছাড়ব না।দৃঢ় সংকল্প করে সব ভয় যেন জোর পূর্বক উপেক্ষা করে।একটু আতঙ্কগ্রস্থ মুখে ময়না বিনয়ের উদ্দেশে বলল,

"কখন বাড়ি ফিরবেন দাদা?"

"দেখি দুপুর তো হবেই বিকাল হতে পারে।"

ময়নার মুখটা শুকিয়ে গেল আবার তার একা একা ভয়ে তাই বিনয় রওনার পর তার পরামর্শ মত। বিনয় রওনা হলে গ্যারেজের মেন গেট বন্ধ করে তাড়াতাড়ি বিছানায় এসে আবার শুয়েছিল। তার ক্লান্ত শরীরে একটু তার ঘুম ঘুম আসছিল।গোপাল উঠে পরে তাকে তুলল। ময়না উঠে বসল। শরীর দুর্বল অসুস্থ নিরীহ স্বভাবের ময়নার কিছু করার ছিল না।গোপালের জন্য সে এগৃহে, তার সেবা দেখভাল করাই তার প্রধান দ্বায়িত্ব। এই শর্তে বিনয়দা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। গোপাল দিকে তাকাল ময়নার চোখ তখনও ঘুমে ভারী হয়ে আছে।দু চোখের জলের ঝাপটা দিতে একটু ঘুমটা ছাড়ল।

বিছানা থেকে নেমে গোপালকে কোলে তুলে বাইরের

ডাইনিংরুমের সোফায় বসিয়ে তার দাঁত ব্রাশ করিয়ে হাত মুখ জলে ধুয়ে মুছিয়ে সোফায় বসতে বলে তার খাবার তৈরী আর সব বাড়ির কাজে ব্যস্ত হল।

এতটাই তার শরীর দুর্বল অসুস্থ এ কদিন তার কেবল শুয়ে থাকতে মন চায়।কিন্তু মুখে বলে না।সংসারের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।আজ তবু নিজের ওষুধ ঠিক ঠাক খেলো,খাবার খেল।

 গোপালকে কাছে টেনে আদর করে বলল,

"বাবুসোনা তুমি বাবা সোফায় বসে খেলা করো আমি তোমার বাবার ঘরে একটু আমার ঘা গরম জলে ধুয়ে পরিস্কার করে মলম লাগাব তুমি ঘরে এসো না যেন!"

গোপাল দুষ্ট হেসে বলল, "তোমার তাহলে নুনু দেখতে পাব মা!"

ময়না লাজুক হেসে বলে"তুমি তো আমার সোনা ছেলে যা বলছি তাই শোন ,আবার দুষ্ট কথা বলছ কেন!"

গোপাল বলল "আমি ঘরে যাব না মা সোফাতেই বসে খেলা করব।"


ময়নার এতটাই একা ঐ ঘরে একি থাকা আতঙ্কের, গোপালের উপস্থিতি দুরে দেখেও যেন সাহস পাচ্ছিল। তার মনে অপরাধবোধ কাজ করত,এ ঘরে ঠাকুরের ছবি প্রতিমার সামনে ,অভির মৃত মা বাবার ফটোর সামনে অপবিত্র নিন্মাঙ্গ অনাবৃত রেখে গরম জলে ধুয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে মুছে মলম লাগানোটাও হয়ত সেই শরীরী আত্মার তার উপর বিরক্তির কারণ। এতটাই সে নিজের এই গোপনাঙ্গকে ঘৃন্য ভাবত। তার বেশ্যা জীবনের পরিসমাপ্তি হলেও, তাই এই ক্ষতস্থান আর তার আড়ষ্টতা নিয়ে ভুগছে। ভীষণ কান্না পায়।নিজের প্রতি ঘৃনা হয়। গোপালের প্রতি অকৃত্রিম মাতৃস্নেহ আর অভিদার তার উপর স্নেহ দরদ সম্বল করে তার বেঁচে থাকা। নিজের প্রতি নিজের দেহের প্রতি কোন টান আকর্ষণ অনুভব করত না। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বনশ্রী ম্যাডাম একবার তার সাথে কথা বলেই তার এই হীনমন্যতা মানসিক পরিস্থিতি অনেকটা আন্দাজ করেছিলেন।


কৃষ্ণনগর থেকে ময়নার গ্রাম আসার পথে বিনয় নবদ্বীপ বাস স্ট্যান্ডে ফুটপাথের খাবার দোকানে লুচি ঘুগনী খেয়েছিল।তারপর অভি নির্ধারিত বাসে উঠেছিল ।বাস থেকে নেমে প্রায় পঁচিশ মিনিট হাঁটা পথ ময়নাদের গ্রাম, রোদে ছাতা থাকায় তবু কষ্টটা কম হল।

পূর্বস্থলী থানা এলাকার এক অজ প্রান্তিক গ্রাম হরিপুর নুরপুর ময়নার গ্রাম।তার জন্ম ভূমি।বিনয় প্রায় দশটার সময় গ্রাম পৌছাল।গ্রাম ঢুকতে প্রথমে ময়নার গ্রামের হাইস্কুল। এই স্কুলে ময়না মাধ্যমিক অবধি তার স্কুল জীবন কাটিয়েছিল।মাধ্যমিক পরীক্ষা এই স্কুল থেকেই দিয়েছিল।

 

গৌরাঙ্গ উচ্চ বিদ্যালয়। বিনয় সোজা হাইস্কুলের অফিস রুমে হাজির হল।মর্নিং স্কুলের তখন ষষ্ঠ তথা শেষ ক্লাস চলছে।হেড মাষ্টার আব্দুল হক অফিস রুমের মধ্যেই এক ছোট কাঠের ঘেরা পৃথক কক্ষে ছিলেন। বিনয়ের নজরে এল এই কক্ষে উপরে লেখা, প্রধান শিক্ষক, মাননীয় আব্দুল হক।


অভি সৌজন্যতাবশত প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করার আগে বলল,


"মাষ্টার মশাই একটু আসছি আমি পুলিশ,গোয়েন্দা বিভাগের তরফে থেকে কিছু দরকারী তথ্য নেব।"

হেড মাষ্টার একটু ভীত আর বিষ্ময়ে বিনয়কে তার টেবিলের সামনের চেয়ারে বসতে বললেন। 


                 ক্রমশ 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror