অজানা পথে পর্ব - ৪৮
অজানা পথে পর্ব - ৪৮
একটু যেন দায়সাড়া ভাব হেড মাষ্টারের অনুমান করে,বিনয়ের চায়ে নেশা থাকলেও তবু বলল "না থাক। আপনার বাড়ি বললেন ময়না নামের মেয়েটার পাড়াতে!"
"একটু দুর সাহেব, কত হবে পাঁচ ছটা বাড়ির পর হবে । ওর বাবা তো ওর মাকে তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করেছিল।মেয়েটা মায়ের সঙ্গে এ গ্রামের অন্য পাড়া মামার ঘরে থাকত। মা আবার গত দেড় দুবছর আগে কার সাথে পালিয়ে যায় । তারপর সৎমা বাবার কাছে শেষটায় ময়না থাকত।ময়না পড়াশোনায় ভাল ছিল। ফাস্ট ডিভিশন পেয়েছিল।মেয়েটি মারা গেছে,বছর খানেক আগে শুনছিলাম, আবার এখন শুনছি নাকি ভুত সে হয়েছে!কী সব আজব কান্ড!"
বিনয় একটু ভয় সন্দেহ হলেও রেগে বললেন,
"আপনি কী ওকে ভুত রূপে দেখেছেন!"
"নানা আমি কেন দেখব?ওর সৎমা এসব বলে প্রচার করছে,সেটা কতটা সত্য কে জানে,পেপারেও তো বের হয়েছিল, খবরটা পড়েন নি!"
"কৈ না তো! আপনার কাছে পেপারটা আছে?"
"থাকার তো কথা , স্কুলের পেপার অফিস রুম বা টিচার কমন রুমে থাকবে।"
সুদীপ্ত গ্রুপ ডি কর্মী হলেও সচ্ছল বটে।নিজের মটোর বাইক আছে।ময়নার মার্কসিট সার্টিফিকেট জেরক্স কপি এনে হেড মাষ্টারকে দিল। খুচর পয়সা ফেরত দিল।
হেড মাষ্টার বললেন, "সুদীপ্ত বাবা মঙ্গল বারের খবরের কাগজটা একটু খুঁজে আনো তো।"
"স্যার সবাই বাড়ি চলে গেল, শিক্ষক ছাত্র সবাই কেউ আর স্কুলে নেই,কেবল আমি আপনি আর নাইট গার্ড পড়ে আছি।"
হেড মাষ্টার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
"এই হল জ্বালা ,হাইস্কুল তবু কেরানি দুবছর নেই। অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার যারা, সব পড়ানো ছাড়া ওরা অফিসের কাজে সে ভাবে পাই না। একজন একটু হেল্প করে তবু সে প্যারা টিচার গায়ের ছেলে,আজ তার অফ ডে।"
বিনয় যেন সহমত প্রকাশ করে বলল,
"এটাই এখন সব অফিসের দশা,কাজ দিন দিন বাড়ছে আর স্থায়ী কর্মী কমছে।যতসব চুক্তিভিত্তিক কর্মী দিয়ে কী ঠিকঠাক কাজ হয়! কে বুঝবে!"
"আর বলেন না,আমি হেড মাষ্টার নয়,ক্লার্ক থেকে পিয়ন সব।এখন তাই হেড মাষ্টার সংক্ষেপে এইচ এম,এর নতুন নামকরণ হল, হাফ ম্যাড আমাদেরই কিছু সহকর্মী দুঃখে হতাশায় বলে।"
সুদীপ্ত পেপারটা খোঁজ করে নিয়ে এল।
হেড মাষ্টার পেপার ভিতরের একটা সংবাদ কলম দেখিয়ে বললেন,
"আপনি বরং ভয়ঙ্কর হিংস্র আর ভৌতিক খবরটা পড়ুন, আমি ততক্ষণ এই জেরক্স গুলো সই করে স্কুলের গোল শীল মেরে দি। ময়নার ছবি লাগবে কী সাহেব!"
"পেলে খুব ভাল হত।"
"দেখছি পাই কীনা, আমি মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ করার সময় একটা করে বাড়তি ফর্ম পূরণ করিয়ে রাখি, যদি পরে হারিয়ে যায় বা দরকার পড়ে! আর ওর দরকার নেই । অরিজিনাল ফর্মটাই নিয়ে যান ফটোটাও পেয়ে যাবেন। মেয়েটা মরে ভুত হয়েছে ভাবতেও কষ্ট হয়। "
বিনয় খুব মনোযোগ দিয়ে পেপারে বর্ণত খবরটি পড়তে লাগল।
উপরে হেড লাইন।"স্ত্রীর কর্তৃক স্বামীর যৌনাঙ্গ কর্তন।"
হেড লাইন দেখে অভি চমকে ওঠে।এ কদিন তার খুব ব্যস্ততা আর ময়নার শরীর খারাপ নিয়ে ভীষণ অস্থির মন,পেপার ভাল করে অভির পড়া হয়নি।ময়নার শরীর দুর্বল, সে পরশু থেকে কেমন মনমরা আনমনা চুপচাপ থাকছে, আর সংসারের কাজেই ব্যস্ত ,পেপারটা দুদিন ময়নাও পড়ে না। আর কী সব ময়নার গ্রামে এসে সে স্কুলের হেড মাষ্টারের মত এক শিক্ষিত দ্বায়িত্বশীল মানুষের মুখে শুনছে!ময়না শুধু মরে নেই! সে নাকী ভুত হয়েছে!
বিনয় নিচের মুল খবর দেখে আরো চমকে গেল।
আমাদের নিজস্ব সংবাদ দাতা গোলক বিহারী জানা জানাচ্ছেন।গত সোমবার পূর্বস্থলী গ্রামীণ এলাকার গৃহবধূ নুরজাহানের নামে এক মহিলা গভীর রাতে ধারাল অস্ত্রে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে। তীব্র কষ্ট ও অসহ্য যন্ত্রণায় নুরজাহানের স্বামী মনিরুলের ঘুম ভেঙ্গে যায়।তীব্র স্বরে বিকট চিৎকার করতে করতে এক সময়ে সে অচেতন হয়ে পড়ে।নুরজাহানের ছেলেমেয়েরা ঘুম ভেঙ্গে যায়।তারা দেখে তাদের মায়ের এক হাতে ধারাল অস্ত্র, মুরগীর মাংস কাটা মস্ত বড় ধারালো ছুরি, আর মায়ের অন্য এক হাতে বাবার পুরুষাঙ্গ!ছেলেমেয়েরা মাকে এভাবে দেখে ভয়ে কান্নাকাটি চেঁচামেচি করতে থাকায়, নুরজাহান হাত থেকে ধারাল অস্ত্র আর স্বামীর পুরুষাঙ্গ ফেলে দিয়ে সেও কাঁদতে শুরু করে।
ক্রমশ