অজানা পথে পর্ব -১২
অজানা পথে পর্ব -১২
ইতিমধ্যে কাজের মাসী প্রথম একবার এসেছিল, বিনয়ের গেটে চাবি দেখে অন্য বাড়ি কাজ সেড়ে সাড়ে নটার পর বিনয়ের বাড়ি এল। এ কাজের মাসী সাতটা বাড়িতে কাজ করে।মেশিনের গতিতে তার কাজ,আর বেতন প্রতি বাড়িতে মাসে দুহাজার টাকা।খুবই দ্বায়িত্বশীল, তাই প্রথমবার বিনয়ের সদরের কপাট চাবিতালা দেখে পরে আবার একটু পরে সে সদর গেটে চাবি খোলা দেখে কলিং বেল বাজায়।
বিনয় গেট খুলে বলল ,
"মাসী আজ বাড়িতে নতুন অতিথি গতকাল আমি আবার রেজিস্ট্রারী ম্যারেজ করে নতুন বৌ ঘরে এনেছি।"
রান্নার ঘর থেকে ময়নাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে, মিথ্যা করে বলল,
" আমার আর দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা ছিল না,ছেলের দেখ ভালের জন্য করা।তুমি জানলে,আর যেন পাঁচ কান করো না।আমার খুব লজ্জা লাগছে।"
কাজের মাসী শিল্কি বলল,
"লজ্জার কি আছে বাবু আপনার এমন কিছু বয়স নয়,কত মানুষ প্রথম বিয়ে চল্লিশ পঞ্চাশে করছে। তবে যাই বলুন বাবু আপনার বৌ ভাগ্য খুব ভাল । আগের বৌদি যেমন সুন্দরী এ বৌদিও খুব সুন্দরী! বয়স কম তাই একটু হালকা গড়ন।"
ময়না হেসে বলল,"মাসী আপনি চা খাবেন করব?"
"তা করো বৌদি,আমাকে আবার আপনি কেন তুমি বলবে বৌদি।"
শিল্কি চা মুড়ি খেল। তারপর ঘর মুছে বাসন ধুয়ে কাপড় কেচে পঁচিশ ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই কাজ সেড়ে চলে গেল ।মিষ্টি খাওয়ানোর আবদার করল।বিনয় আজ বাজার থেকে মিষ্টি এনেছিল। ময়না যত্ন করে কাজের মাসী শিল্কিকে চারটে বড় সাইজের রাজভোগ খেতে দিল।
অনেক ক্ষণ আগেই ময়না,রান্নার ঘরে গ্যাস ওভেন জ্বেলে , হাঁড়িতে ভাত বসিয়ে ময়না খাসীর মাংসের জন্য পেঁয়াজ রসুন আদা মিক্সিতে বাঁটছিল। আলু বড় বড় কেটে,নানা মশলা তেল সহযোগে গ্যাসের ওভেনে রান্না করবে। আধ সিদ্ধ হওয়া ভাত নামিয়ে চাপাবে।ভাত আধসিদ্ধ করে নামিয়ে বিনয়ের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর কৌশল অজান্তে যেন ময়না মনে মনে পরিকল্পনা নিয়েছে।এতে জ্বালানীর নাকী স্বাশ্রয়!
বিনয় উদ্বিগ্নতা নিয়ে আর বিস্ময় সহকারে পেপার পড়তে পড়তে গোপালের ঘর থেকে বের হয়ে, তার গতকাল রাতে শয়ন ঘরে ময়নাকে ডাকল।বলল ,
ময়না কাছে এলে ,বিনয় একটি জনপ্রিয় দৈনিক বাংলার সংবাদ পত্র পড়তে পড়তে দেখাল।বলল,
"এ কী সাংঘাতিক খবর লিখেছে দেখেছ! তোমার সম্পর্কে এটা কী ঠিক খবর না, ভুলভাল খবর ছাপিয়েছে?" বিনয়ের চোখ মুখে আতঙ্ক আর তীব্র বিষ্ময়।
"কী লিখেছে দাদা!" ময়না হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল।
বিনয় পেপারটা ময়নার কাছে এনে পড়তে লাগল।
তাতে লিখেছে,"গত কাল সন্ধ্যা সাড়ে ছটা সাতটার সময়, সমাজ বিরোধী শামসুর রহমান ওরফে বাবু লালকে তার গোপন আস্তানায় অর্দ্ধ মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন।বিশেষ সুত্রে প্রকাশ নারী পাচার চক্রের অন্যতম পান্ডা শামসুর গত সন্ধ্যার সময়, তার আশ্রিত, ময়না নামের এক যৌনকর্মীর সাথে অপকর্মে লিপ্ত হতে তার গোপন কক্ষে গেছিল।
সেই সময়ে হঠাৎ ঐ মেয়েটি উগ্ররূপ ধারণ করে, শামসুরের হাত থেকে মদের বোতল কেড়ে নিয়ে তার মাথায় বারংবার খুব সম্ভবত ক্রোধে আঘাত করতে থাকে। শামসুর অচেতন হয়ে পড়লে, ঐ ভাঙ্গা বোতলের তীক্ষ্ণ ধারাল অংশ দিয়ে তার মুখে চোখ বার বার আঘাত করে, এ ফলে শামসুরের চোখ দুটো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা,এমনই ডাক্তারের অনুমান। হাতের কব্জি দুটো এবং কোনাই দুটো মুছড়ে উল্টে ভেঙ্গে দিয়েছে।এতটাই ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আর স্বাভাবিক বা সুস্থ হবার কোন সম্ভাবনাও নেই।
মেয়েটির দুর্বল রোগা পাতলা শারীরিক গঠন ও দুদিন প্রায় অনাহারে বন্ধীদশা ছিল।শামসুরের মত বলিষ্ঠ শক্তিশালী মস্তান গুন্ডাকে,সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ অবধি সতর্ক থাকে। সামান্য এক আঠারো উনিশ বছর বয়সের মেয়ে,ওর রক্ষিতা দুদিন প্রায় অনাহারে রাখা হয়েছিল। সে কী ভাবে এত ভয়ঙ্কর শক্তি নিয়ে শামসুরের উপর চরম এমন চরম প্রতিশোধ নিল।পুলিশ চরম ধন্ধে।
মেয়েটি খুব সম্ভবত যৌন পেশা ছেড়ে লুকিয়ে
শামসুরের নাগালের বাইরে পালাতে গেলে দুদিন আগেই শামসুরের লোক তাকে ধরে এনেছিল। এর পর শামসুর তাকে তার গোপন আস্তানায় বন্ধী করে।তার উপর লাগাতার দুদিন যখন তখন চরম নির্যাতন ও সহবাস সম্ভোগ করে বলেই পুলিশের ধারনা।হঠাৎই এমন মেয়েটার মনে এত প্রতিহিংসা ও সাহস শক্তি এল কি ভাবে সেটাই বড় রহস্য।
শামসুরের ঘনিষ্ঠ সাকরেদরা এই গোপন আস্তানার নজরদারিতে থাকত।ঐ সময়ে যে সমাজ বিরোধী শামসুরের সাকরেদ, নাম বলতে সে অনিচ্ছুক।এক গুন্ডা মস্তান পাহাড়ায় ছিল।তার কথা ও বয়ান মত, মেয়েটি ঘরে এত সব কান্ড করলেও সে বারেন্দা নজরদারিতে ছিল। এত নিকটে থেকে কোনরকম ঘরের ভেতরের এসব ভয়ঙ্কর ঘটনার টের পায় নেই।
হঠাৎই মেয়েটি ঐ কপাট খুলে বের হলে,গুন্ডা মস্তান যুবা ,ময়না নামে যৌন কর্মী মেয়েটাকে
আটকাতে যায়। কারন সে পূর্বেই জানায় বন্ধ ঘরের ভিতর এত কান্ড তার কোন শব্দ চিৎকার চেঁচমেচি শুনতে পায়নি।তার বয়ান অনুসারে ঐ গুন্ডা মস্তানটির ধারনা হয়েছিল,মেয়েটি হয়ত বা মদের ঘোরে,শামসুরের নেশার সুযোগে ঘর থেকে পালাচ্ছে ।
এই ভেবেই যুবকটি তেড়ে আসে।মেয়েটির মুখে তীব্র ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা ও বীভৎস রূপ দেখে ঐ গুন্ডা মস্তান ভয়ে চমকে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ে। দুরে সিঁড়ি ,মাঝে দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি। তাই তাকে অতিক্রম করার সাহস হয়নি।
নিকট বারেন্দার রেলিং টপকে পালাতে যায়।মেয়েটি তীব্র গতিতে তাকে ধাক্কা মেরে দোতলার বারেন্দা থেকে উল্টে ঠেলে ফেলে দেয়।
ঐ গুন্ডাটিও গুরুতর জখম, তার মেরুদন্ড ভাঙ্গার ফলে, আর জীবনভর খাঁড়া হয়ে চলার ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা। তার জ্ঞান ফিরতেই সে তীব্র আতঙ্কে ভয়ে আধমরা হয়ে কাঁপছে,কখনও বা ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করছে কাঁদছে।তার ধারনা মেয়েটি সাধারণ মানুষ নয়।কোন অপদেবতা বা অলৌকিক শক্তি ওর উপর ভর করেছে।"
এতটা পড়ে বিনয় কহিল হয়ে পড়েছিল, ক্লান্ত বিধ্বস্ত মুখে বলল,"এই সব কী লিখেছে! তোমার এসব বিষয়ে কিছু বলার আছে?"
ময়নার মুখ কেমন ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে বলল,
"দাদা সব মিথ্যা আমি ভুত হব কেন! আমার হাত কেটে দেখাচ্ছি দেখুন রক্ত বের হয় কীনা!
ক্রমশ
