নারীশক্তি
নারীশক্তি
নারীশক্তি
পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় , মানবসত্তা হয় মরীয়া;
তখনই সৃষ্টি হয় যুগান্তকারী বিপ্লব। যেমনটি ঘটেছিল নাগপুর আদালত কক্ষে; আজ থেকে ঠিক আঠারো বছর আগে ১৩ই আগষ্ট ২০০৪ সালে।
এর শুরু হয়েছিল তারও ১৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে যখন একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করে আসামী তার রাজত্ব কায়েম করে ।
আক্কু যাদব যার আসল নাম ভরত কালীচরণ জন্মেছিল মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের উপকন্ঠে কস্তুরবা নগর নামে এক দলিত বস্তীতে। নারী ধর্ষণ দিয়ে শুরু করেছিল তার কেরিয়ার মাত্র ২০ বছর বয়সে। আর হঠাৎই দলীয় পাণ্ডা রূপে আবিষ্কার করেছিল নিজেকে।
আক্কু ছিল নাগপুরের একজন কুখ্যাত অপহরণকারী,
ধর্ষক, তোলাবাজ এবং সিরিয়াল কিলার। তার এমনই দাপট ছিল যে পুলিশ প্রশাসনও তার ভয়ে কাঁপত।
ঊষা নারায়ণে জনৈকা ২৫ বর্ষীয়া দলিত মহিলা হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করে বস্তীতে এসেছেন। বাড়ি ঢুকে শুনলেন পাশের বাড়ির সাত মাসের গর্ভবতী প্রতিবেশীনীকে আক্কু ও তার দল রেপ করেছে গতকাল। তিনি ছুটলেন নিকটবর্তী থানায়। কিন্তু আক্কুর ভয়ে পুলিশ ডায়েরী নিল না। উল্টে পরামর্শ দিল চুপ থাকতে। আক্কুর কানে গেল সে কথা। সে দলবল নিয়ে অ্যাসিড হাতে চড়াও হল ঊষার বাড়িতে। দরজায় ধাক্কাধাক্কি করতে লাগল। দরজা না খুললে ভেঙে ঢোকার হুমকি দিল। ঊষা নাচার হয়ে গ্যাস সিলিণ্ডারের ক্যাপ খুলে গ্যাস বের করতে লাগলেন । সিলিণ্ডারের গ্যাস দরজা বেয়ে আক্কুর নাকে লাগল । বলল - থানায় করা কমপ্লেইন তুলে নিলে তাকে ওরা কিছু করবে না।
কিন্তু ঊষা জানেন আক্কুকে। দরজা না খুলে সিলিণ্ডারের গ্যাস ছড়াতে লাগলেন । ভয়ে আক্কুর দল তখনকার মত পালিয়ে গেল ।
ইতিমধ্যে কয়েক বছর ধরে আক্কু তিনটের বেশী খুন, এবং চল্লিশ জন মেয়েকে অলরেডি রেপ করেছে। তার মধ্যে দশ বছরের একটি নাবালিকাও ছিল। তার ঠাকুমার সামনে তাকে রেপ ও মার্ডার করে। কমলা নামের মেয়েটিকে রেপ করে নগ্ন অবস্থায় নাচতে বাধ্য করে। এ সব ছাড়াও গরীব দলিতপল্লীর ঘরে ঘরে ডাকাতি করে। দোকান লুঠ করে। ত্রস্ত বস্তীবাসি প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও পুলিশ কোন অ্যাকশন নেয় না । ধর্ষিতা মহিলারা থানায় গেলে উল্টে তাদের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করে ভাগিয়ে দেয় কাউকে বা বলে - যাবি তো যা, নইলে আমরা সবাই মিলে তোকে রেপ করব।
আক্কু তোলাবাজি লুঠের টাকা থেকে পুলিশকে বখরা দিত । আমদানি ভালোই ছিল ।
ঊষা প্রতিকার চান কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতায় নিরাশ হন।
পুলিশ ১৪ বার আক্কুকে গ্রেপ্তার করেও ছেড়ে দেয়। যাতে বস্তীর মনোবল ভেঙে যায়। অবশেষে এল সেই দিন। সেই মহাবিপ্লবের সন্ধিক্ষণ।
১৩ই আগষ্ট ২০০৪ । আক্কুকে জামিন পাইয়ে দিতে ক্রীড়নক পুলিশ নাগপুর জেলা আদালতের সাত নং কক্ষে কড়া পুলিশি প্রহরায় নিয়ে যায়।
বস্তীতে রটে যায় আদালতে আক্কুর জামিনের কথা। দলে দলে নারীবাহিনী লঙ্কার গুঁড়ো, ছুরি, সবজি কাটা বটি নিয়ে আদালত চত্বরে জড়ো হয় ।তার মধ্যে জনা চৌদ্দ মেয়ে আদালত কক্ষের সীটে এমন জায়গায় বসে পড়ে ঠিক তার পাশ দিয়ে আক্কুকে নিয়ে যাবে। তাদের আঁচলে লঙ্কার গুঁড়ো। তাদের মধ্যে একজন মেয়ে ছিল আক্কুর ধর্ষণের শিকার।
আদালত কক্ষে প্রবেশ করে আক্কু তাকে দেখে হাসতে থাকে। বলে - এই বেশ্যা ! এসেছিস ? দাঁড়া, একটু পরে তোকে আবার ধর্ষণ করব। নারীশক্তি জাগ্রত হয়। হঠাৎ ওরা আক্কু ও পুলিশের চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছুঁড়তে থাকে। হৈ-হট্টগোলে বাইরে অপেক্ষমাণ দুই থেকে চারশো জন মহিলা এসে এলো এলোপাথাড়ি ছুরি মেরে আক্কুকে ধরাশায়ী করে। পুলিশ এই সন্ত্রাসের বিভীষিকায় পিঠটান দেয়। সবাই সুযোগ পেয়ে ঝাল মিটিয়ে নেয়। আক্কু ভয়ে জোড়হাত করে ক্ষমা চাইতে থাকে। ভবিষ্যতে কখনো দুষ্কর্ম করবে না বলে অঙ্গীকার করে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা ! জীবন বিপন্ন হলে, মর্য্যাদা ভূলুন্ঠিত হলে, তার কি কোন ক্ষমা হয়। ঊষাও আসেন। হাতের ছুরি দিয়ে আক্কুর গোপনাঙ্গ কেটে দেন। তখনও ছুরি খেলা চলছে। আর মাত্র পনের মিনিট পর আক্কুর ভবলীলা সাঙ্গ হয়।
মেয়েরা নাচতে নাচতে বস্তীতে আসে, যেন কতদিন পর স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে।
এরপর শুরু হয় পুলিশি ধরপাকড়। পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করলেও আদালত প্রমাণাভাবে তাদের বেকসুর খালাস করে দেন। তার মধ্যে ঊষা নারায়ণে একজন।
এই হল আমার দেশের মাটিতে উৎপন্ন শস্যশ্যামলা ফসল। নারীর অবহেলা স্বয়ং ঈশ্বরও ক্ষমা করেন না। এই নারীশক্তিকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
( শেষ )
