STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Horror Classics Crime

4  

Nityananda Banerjee

Horror Classics Crime

অশান্ত জীবন

অশান্ত জীবন

3 mins
12

প্রত্যন্ত হিমালয়ের অলকানন্দা এবং মন্দাকিনীর সঙ্গমস্থলে এক অতি প্রাচীন কঠমূলী বৃক্ষতলে এক পক্ককেশ জটাজুট সন্ন্যাসীকে দেখে দিগন্ত চৌধুরীর ভাবান্তর হ'ল । 


নিসর্গমহলে অরণ্যবেষ্টিত স্থানে সন্ন্যাসীকে ধ্যানরত অবস্থায় দেখে দিগন্ত চৌধুরীর পূর্বেকার অশান্ত মন কিছুমাত্র শীতল হলে তিনি ঐ স্থানের শ্যামল প্রান্তরে বসে পড়লেন। অস্তমিত সূর্য্যের রক্তিম আভায় তাঁর মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠল ।


মাত্র তিনটি দিবসের ব্যবধানে মন যে এত প্রফুল্ল হতে পারে; সেই কথা , বোধ করি অকল্পনীয় মনে হল ।


 তিনদিন পূর্বেই তিনি জাগতিক মোহমুক্ত হয়ে সংসার ত্যাগ করে এসেছেন । বলা যেতে পারে , স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসেছেন। আর আসবেন নাই বা কেন ? সংসারে তাঁর শুধুমাত্র কিছু বৈষয়িক সম্পত্তি ব্যতীত অন্য কিছু অবশিষ্ট নাই।  


পত্নী এবং একমাত্র পুত্রকে হত্যা করে - আর বাটিতে ফিরে যাবার প্রবৃত্তি হয় নাই। বাটির চাবিকাঠি এবং যাবতীয় দায়ভার বিশ্বস্ত অনুচর রামশরণ যাদবের হাতে প্রত্যর্পণ করে সটান ট্রেন ধরে দেহরাদুনে এসেছেন। তথা হতে এই প্রত্যন্ত প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছেন।


সন্ন্যাসী চক্ষুরুন্মীলন করলেন। নিকট সম্মুখে দিগন্তকে বসে থাকতে দেখে বললেন - আ জা বেটা । ম্যায় জানতা থা তু আয়েগা । 


দিগন্ত চৌধুরী বিস্ময়াবিষ্ট হলেন। তবে কি এই সন্ন্যাসী তাঁর পূর্বপরিচিত ! কিন্তু অনেক চিন্তা করেও যখন স্মরণ করতে পারলেন না ; মন্ত্রমুগ্ধের মত উঠে দাঁড়ালেন এবং ঈশারা মত ধীর পদে সন্ন্যাসীর প্রতি অগ্রসর হতে লাগলেন।


সন্ন্যাসীই প্রথম কথা আরম্ভ করলেন। পরিষ্কার বাংলায় বললেন - সর্বম্ দু:খম। দু:খ আছে, দু:খ নিবারণের উপায়ও আছে ।


দিগন্ত চৌধুরী সন্ন্যাসীর মুখনিঃসৃত বুদ্ধবাণী শ্রবণ করে পুনরায় বিস্ময়াপন্ন হলেন । তাঁর নিকট এরূপ সন্ন্যাসীর দর্শন পাওয়া সৌভাগ্যের মনে হল । ভাবলেন ইনি কোন বৌদ্ধসন্ন্যাসী বা লামা হবেন। কিন্তু তাঁর মুখে বাংলা ভাষা শুনে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে বললেন - আমার প্রণাম গ্রহন করবেন। আপনি কি বাঙালি ?


সন্ন্যাসী বললেন - আমার কোন জাতিতত্ব নাই । আমি সন্ন্যাসীমাত্র । তবে মনুষ্য দেখলেই চিনতে পারি তাঁর প্রকাশের ভাষা কিরূপ হতে পারে । ভদ্রে ! তুমি এ স্থানে পরম নিশ্চিন্তে অবস্থান করতে পার। দেখছি তুমি অভুক্ত , পথশ্রমে অতিশয় ক্লান্ত । ওই কঠমূলী বৃক্ষের তলায় পাকশালা আছে। কিঞ্চিৎ খাদ্য গ্রহন করে প্রথমে ধাতস্থ হও এবং বিশ্রাম নাও। পরে কথা হবে।


দিগন্ত চৌধুরী শিশুবৎ সকল কথা শুনে পাকশালার দিকে অগ্রসর হলেন।

কিছু ফলমূল এবং অপরিপক্ক শাকসবজি উদরস্থ করে

অলকানন্দা এবং মন্দাকিনীর সঙ্গমস্থলে স্থিত কঠমূলির পাদদেশে পুনরায় এসে বসলেন ।

দিগন্ত চৌধুরী জঙ্গলমহল এলাকাস্থিত ঝাড়গ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত দারোগা । অত্যন্ত কঠিন হৃদয়ের মানুষ । চাকুরী গ্রহনের পূর্বে গৃহীত কঠোর অনুশীলন এবং অনুশাসন তথা শপথ রক্ষার জন্য আপন হৃদয়কে সমুচিত শৃঙ্খলায় বেঁধে নিয়েছেন । 


বস্তুত থানা এলাকায় তিনি সুপরিচিত ধুরন্ধর দারোগা রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন । তাঁর অনুশাসনে এলাকায় অশান্তি একপ্রকার নাই বললেই চলে ।


অথচ তাঁর মত চতুর সুদক্ষ পুলিশ অফিসার কেন বঙ্গ থেকে সহস্র মাইল দূরে হিমালয় সংলগ্ন বনাঞ্চলে আশ্রয় নিলেন - কেনই বা তিনি নিজ পত্নী-পুত্রকে হত্যা করলেন তারই করুণ কাহিনী বলব এই ধারাবাহিকে ।


শ্রীযুক্ত দিগন্ত চৌধুরী বর্তমান জঙ্গলমহল বলে পরিচিত ঝাড়গ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা । তিনি বিবাহিত , পত্নী মধুপর্ণা দেবী এবং একমাত্র পুত্র শ্রীমান প্রান্তর চৌধুরীকে নিয়ে তাঁর ছোটো একখানা সুন্দর সংসার । 


পুত্রকে উচ্চশিক্ষা দিবার জন্য কলকাতায় প্রেরণ করেছেন এবং সে তথায় কলেজ ছাত্রাবাসের একজন আবাসিক । সে পড়াশোনায় স্থিতধী এবং উচ্চাভিলাষী বলে কোনরূপ বিশৃঙ্খলায় অভ্যস্ত নয় । 


সন্তানের এইরূপ মনোবৃত্তিতে দিগন্ত চৌধুরী সস্ত্রীক যারপরনাই খুশী এবং সুখী ছিলেন । সন্তানও মাতৃ-পিতৃ-অন্ত-প্রাণ । মাতা পিতার প্রতি প্রত্যাশা মতোই ভীষণ শ্রদ্ধাশীল । 


দিগন্ত চৌধুরী মহাশয় পুত্রের জন্য বিশেষ ভাবে গর্বিত । অফিসে বলাবলি করেন ' ছেলে মানুষ করতে হলে এভাবেই করতে হয় । সর্বদা শৃঙখলাবদ্ধ না রেখে তাকে কিঞ্চিৎ স্বাধীনতা দিতে হয় । যাতে সে নিজের মত করে নিজেকে তৈরী করে নিতে পারে ।' - ইত্যাদি ।


পত্নী মধুপর্ণা দেবীও পতিগতপ্রাণা এবং ধর্মভীরু প্রকৃতির মহিলা । সরকারি আবাসনে থেকে যাতে একাকীত্ব অনুভব না করেন - সেইজন্য পূজার্চনা , সঙ্গীত , এবং পাকশালা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন । 


পুত্র প্রতি সপ্তাহে বাটিতে আসে , আবার প্রতি সোমবার কলকাতায় ফিরে যায় । প্রকৃত অর্থে একটি সুখী পরিবার বলতে যা বোঝায় ; দিগন্ত চৌধুরীর পরিবারটি তদ্রূপই ছিল । কিন্তু বিবর্তনের ধারায় সেই পরিবার কিরূপে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে গেল তারই করুণ আখ্যান বর্ণনা করব ।


পাঠক/পাঠিকাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ তাঁরা যেন গল্পটি শেষ পর্য্যন্ত পাঠ করার মত ধৈর্য্যশীল হবেন ।


( ক্রমশ:)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror