Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব ঊনআশি

বৃত্তের বাইরে পর্ব ঊনআশি

5 mins
10


পর্ব ঊন আশি

শম্ভু, মহিম , ভাবনা , সম্পাতি - সকলে এক যোগে বিভূতিভূষণ এবং শুভমিতার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিল । সম্পাতি ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার বিরুদ্ধে এবং তার পিতৃ পরিচয় পেতে আদালতে আপীল করল ।

বিভূতিভূষণের বিরুদ্ধে তার মুখ্য সহযোগ ছিল দলিল পত্র এবং ব্যাঙ্কের পাশবই পুলিশের হাতে তুলে দেবার ।

বিচারক বললেন - তিন একর জায়গা বিভূতিভূষণ ভূমি এবং ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে প্রভাব খাটিয়ে এবং ঘুষ দিয়ে ওই জমি নিজের নামে এবং মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান হিসাবে সেখানেও মিউটেশন করিয়ে নিয়েছেন। মিউনিসিপ্যালিটি এবং সংশ্লিষ্ট ভূমি রাজস্ব দপ্তরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলাম ।

বিভূতিভূষণকে সকল কাজে সাহায্য করার জন্য এবং খ্যাতনামা প্রবীণ আইনজীবী কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়কে হত্যার চেষ্টা , বিনোদ ঠাকুর নামে জনৈক ব্যক্তিকে সুপারি কিলার দিয়ে খুনের অভিযোগে এবং কিডনি পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই ডাক্তার - ওমপ্রকাশ খৈতান, আশরাফ আলী, বিভূতিভূষণ এবং শুভমিতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিলেন। 

ওমপ্রকাশ খৈতানের সম্পত্তিতে সম্পাতি লাহার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে দিলেন । 

খুশী হলেন কামদাকিঙ্কর কিন্তু ভীষণ অখুশী হল সম্পাতি । বিভূতিভূষণেরা উচ্চতর আদালতে যাবেন বলেছেন । যদিও বর্তমানে তাঁরা সকলেই কপর্দকশূন্য। তাঁদের যাবতীয় ব্যাঙ্ক একাউন্ট, গয়নাগাটি সব কিছুই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । 

এদিকে তাঁদের হয়ে কোন উকিল দাঁড়ালেন না । বিচারক বাধ্য হয়ে সরকারি উকিল দিলেও সে কেস নিয়ে কোন স্টাডি না করেই মৃত সৈনিকের মত অভিনয় করে গেল ।

উচ্চতর আদালতে আপীল করার মত কোন উকিল না পেলে ....

ভাবছিলেন শুভমিতা দেবী । হঠাৎ বিভূতিভূষণ - আঁ আঁ

করে উল্টে দিয়ে অভিনয় শুরু করলেন । অনুরূপ ভাবে শুভমিতা দেবীও ' মেডুলোব্লাস্টোমা ' বলে চিৎকার করে বিচারককে বললেন হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে দিতে ।

মিঃ পাঠক ব্যাপারটা শুনেছেন । লাহা বাড়ি থেকে রাজকিশোর লাহা ওঁকে কলকাতায় ভর্তি করিয়েছিলেন । সেই সুযোগ নিয়ে তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ।

এবারও তিনি মনে করলেন ওঁরা নাটক শুরু করেছেন। বিচারককে বললেন - মি লর্ড ! যদি অনুমতি করেন আমি ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই ।

পদমর্য্যাদায় পুলিশ সুপার এ কথা বলছেন যখন; বিচারক সঙ্গে সঙ্গে সম্মত হলেন । শুভমিতা দেবী কটমট করে পাঠকের দিকে চাইলেন ।

এস পি সাহেব হাসপাতালে না নিয়ে ওঁদের জেল হাসপাতালে নিয়ে এলেন । একটি মেডিকেল টিম এল তাঁকে পরীক্ষা করতে , কিন্তু কোন অঙ্কোলজিস্ট ছিল না বলে ওঁরা রোগটাই ধরতে পারলেন না ।

মিঃ পাঠক দিব্যেন্দু দাস এবং করালীকিঙ্করকে অনুরোধ করলেন পরীক্ষা করে দেখতে । 

এদিকে বিভূতিভূষণের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে চলল । শুভমিতা দেবী বুঝতে পারলেন আর নাটক নয় , এবার সত্যিই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। 

- মেডুলোব্লাস্টোমা এক ধরণের...

বাধা দিয়ে মিঃ পাঠক বললেন - জানি । সেইজন্য অঙ্কোলজিস্ট ডেকেছি । 

শুভমিতা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন এই অভিনয় এবার সুপার ফ্লপ হয়ে গেছে । ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন।

দিব্যেন্দু ও করালী জেল হাসপাতালে এল । দু'জনে এক যোগে নিজ নিজ বিষয়ে পরীক্ষা করে জানিয়ে দিল - হি ইজ নো মোর এলিভ । ব্রেইন ডেথও হয়ে গেছে ।

মিঃ পাঠক শুভমিতাকে জানালেন সেই সংবাদ। শুভমিতা কাঁদল না । শুধু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস তাঁর বুকময় ঘোরাফেরা করতে লাগল । 

তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে যেখানে বিভূতি অনন্ত শয্যায় শায়িত রয়েছেন ।

শুভমিতা করালীকে বললেন - পারলে না তো ! জানতাম পারবে না । তবে বড় ভুল করেছি আমি । আমি ভেবেছিলাম সেদিনের মত আজও তিনি নাটক শুরু করেছেন । তাঁর অভিনয় আমাকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। 

করালী ও দিব্যেন্দু কোন কথা না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল । শুভমিতা বুঝতে পারলেন করালী এখন ডক্টর কে কে মুখার্জী। 

বাইরে বেরিয়ে মিঃ পাঠককে বলল - হি ইজ ডেড ডিউ টু সাডেন ফল অফ নিউরোব্লাস্টিক মেডুলোব্লাস্টোমা ।

দিব্যেন্দু বলল - জেল হেফাজতে মৃত্যু । সুতরাং বডি পোস্টমর্টেমে পাঠাবার ব্যবস্থা করুন স্যার । নিজেদের আইনি প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পেতে । কে কখন আইনের আশ্রয় নেবে...

এস পি সাহেব বললেন - ইউ আর রাইট স্যার । কিন্তু পোস্টমর্টেমের পর বডি কে নিয়ে যাবে সেটাই ভাবছি । মিসেস লাহা কি নেবেন ?

দিব্যেন্দু বলল - সে কথা বলতে পারব না । মিসেস ব্যানার্জীকে বলুন যদি কোন আত্মীয় নিতে চান ।

করালী ও দিব্যেন্দু চলে গেল । মিঃ পাঠক সম্পাতিকে ফোনে জানালেন ঘটনার কথা । 

কোন প্রতিক্রিয়া দিল না সম্পাতি । শুধু বলল - সরি স্যার । আমি ওঁদের ভুলে গেছি । নতুন করে আর স্মৃতি গায়ে মাখতে চাই না ।

সঙ্কটে পড়লেন এস পি সাহেব । শরণাপন্ন হলেন বিপত্তারণ কামদাকিঙ্করের । 

- শেষ কালে বিভূতির এই দশা হল ! 

আনমনে কথাগুলো বলে পাশে বসে থাকা স্ত্রীকে জানালেন বিভূতি মারা গেছে ।

মিঃ পাঠক বললেন - স্যার ওঁর মেয়ের সাথে কথা হয়েছে। ডেড বডি নিতে অস্বীকার করেছে।

- করবেই তো! এখনও তো মনের জ্বালা জুড়ায়নি । আপনি এক কাজ করুন আমি একটা ফোন নং দিচ্ছি - ওর শ্বশুর বাড়িতে ফোন করে কথা বলুন । ওরা ওর দেহ নিলেও নিতে পারে ।

- যদি না নেন ? 

- আইন মোতাবেক পুলিশের মত কাজ করবেন । কিন্তু বিভূতি হঠাৎ মারা গেল কেন ?

মিঃ পাঠক বললেন - এই ভয়ই করছিলাম স্যার । জেল হাসপাতালে মারা গেছেন তবু আমার বড়ই মাথা ব্যথা । তবে আপনি আপনার পৌত্রকে জিজ্ঞেস করবেন - উনি এবং ডক্টর দিব্যেন্দু দাস দু'জন মিলে পরীক্ষা করে গেছেন। সম্ভবত ওনার মেডুলোব্লাস্টোমা হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে মারা গেছেন। 

কামদাকিঙ্কর বললেন - আমি সে কথা ভাবছি না সাহেব । আপনাদের কথা ভেবেই বললাম । শুভমিতা এ ব্যাপারে কিছু বলেছে?

- তিনি কেমন গুম হয়ে গেছেন । কেবলই বলছেন 'আমার কি হবে ' ।

- খুব স্বাভাবিক । তবে এ কথা বছর খানেক আগে ভাবলে এই দিন ওকে দেখতে হত না । এনি ওয়ে বিভূতির শ্বশুর বাড়িকে জানান । নিলে ভালো নইলে নিয়মে যা আছে করবেন ।

ধন্যবাদ জানিয়ে মিঃ পাঠক ড্রাইভারকে বললেন - দুর্গাপুর চল ।


সম্পাতি যতই অভিমান করুক , বিভূতিভূষণ তার পালক পিতা তো বটেন । সেইজন্য রাজদীপকে বলল - আমাদের কি করা উচিৎ ?

রাজদীপ কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে মঞ্জরী দেবী ও অগ্রজদের নিয়ে আলোচনা করতে বসল ।

মঞ্জরী দেবী বললেন - বউমার এই অবস্থায় আর মনের উপর চাপ নেয়া ঠিক হবে না । ও তো বলেই দিয়েছে বডি নেবে না । 

রাজকিশোর বলল - কিন্তু এই ভাবে বেওয়ারিশ বডির মত পুলিশ চিতায় তুলবে - ভাবতে কষ্ট হচ্ছে ।

রাজকুমারও অনুরূপ অভিমত দিল । মঞ্জরী দেবী বললেন - তাহলে তোরা তিন ভাই গিয়ে বডি নিয়ে শ্মশানে চলে যা ; কিন্তু বউমাকে কিছু জানাবি না ।

রাজদীপ বলল - মুঠাগ্নি আমিই না হয় করব । আর যাই হোন আমি তো ওঁকে শ্বশুর বলেই জানতাম । অতএব সেই অধিকারে....

সম্পাতি হঠাৎ এসে বলল - আমাকে তো প্রতিপালন করেছেন, আমি যে মেয়ে ওঁর! অতএব মুখে আগুন দিয়ে আমিই না হয় প্রতিদান দিই ।

মঞ্জরী দেবী বললেন - এই তো বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলেছ বউমা ! এমনটাই করা উচিৎ। কিন্তু মা! তোমার এই অবস্থায় তো শ্মশানে যেতে নিষেধ !

সম্পাতি বলল - আমি মর্গে গিয়ে মুখাগ্নি করব । তবে আমার মা যেন সেই সময় কাছেপিঠে না থাকে ।

রাজকিশোর বলল - ডাক্তারের বারণ আছে তোমার এত ধকল নেওয়া যাবে না ।

মঞ্জরী দেবী সব দিক বিবেচনা করে বললেন - তাহলে আমার বাড়িতেই নিয়ে আয় । তুলসী তলায় মুখাগ্নি হবে ।

তিন ভাই চলল থানায় । সঙ্গে সম্পাতির চিঠি নিয়ে ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance