Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব আটাত্তর

বৃত্তের বাইরে পর্ব আটাত্তর

5 mins
9


পর্ব আটাত্তর


- কি কেচ্ছা ! কি কেচ্ছা ! ছিঃ ছিঃ ছিঃ। এমন মানুষও দুনিয়ায় থাকে !

বিভূতিভূষণের অফিসের চেম্বারে তাঁরই চেয়ারে বসে উপ-পুরপ্রধান মালবিকা সাহা কথাগুলো বলছিলেন তাঁর অতি পরিচিত সহায়িকা অবিবাহিতা তরুণী শুভশ্রীকে ।

- ভাগ্যিস ম্যা'ম আমার পোস্টিং ওনার চেম্বারে হয়নি । কাছে পেলে আর আমার কুমারীত্ব অটুট থাকত না !

মালবিকা দেবী বললেন - আমি থাকতে এখানে ও সব করতে পারতেন না । যাই হোক, আদালতের নির্দেশ মত ওঁর বাড়ির মিউটৈশনটা কি ভাবে বাতিল করতে হয়েছে তার একটা ড্রাফট তৈরী করে নিয়ে এস ।

শুভশ্রী বলল - এনেছি । পড়ে দেখুন ঠিকমত হয়েছে কি না । 

- আমি পড়লে হবে না গো । ল অবিসারকে এখানে নিয়ে এস । আইনের খুঁটিনাটি উনিই ভালো বুঝবেন ।

শুভশ্রী গিয়ে ল অফিসারকে এত্তেলা দিল । ল অফিসার সমরেন্দ্র চৌধুরী চেম্বারে এসে ড্রাফট পড়লেন এবং খুশী হয়ে বললেন - দারুন হয়েছে। এটাই পাশ করে দিন ম্যা'ম ।

বিভূতিভূষণের স্বপ্নের বাড়ি যেতে বসেছে । আদালতের সীলমোহর পড়লেই অধিকারের অন্তর্জলী যাত্রা হয়ে যাবে। সমরেন্দ্র চৌধুরী মিউটেশন বাতিলের আদেশ সমেত পুরো প্রক্রিয়ার খসড়া নিয়ে আদালতে গেলেন ।

কামদাকিঙ্করও একটি অন্য মামলায় আদালতে গেলেন । সেটি রাজদীপ ও সম্পাতির বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়ক দাখিলনামা । রাজদীপ যে মামলাটি করেছে সম্পাতি তাতে সিগনেচার করেনি ।

ছয় মাসের সময় সীমা যা ডিভোর্সের নিয়মানুযায়ী সিদ্ধ তা' অতিক্রান্ত । এরপর আদালত রায় দেবেন । কামদাকিঙ্কর ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, সার্টিফিকেট এবং রক্ত পরীক্ষার তথ্য নিয়ে উপস্থিত হলেন আদালতে।

বিচারক আসনে বসতেই তদ্বির করলেন ডিভোর্স যেন মঞ্জুর না করা হয় । উপরন্তু বললেন বিবাহের আগে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের রিপোর্ট নিয়ে এবং গর্ভস্থ শিশুর ভ্রুণ পরীক্ষার তথ্য নিয়ে তিনি এসেছেন রাজদীপ লাহার নামে পাল্টা মামলা দাখিল করতে ।


এদিকে বিভূতিভূষণ, শুভমিতা, আশরাফ আলী এবং ওমপ্রকাশ খৈতানের মামলাও উঠেছে অন্য বিচারকক্ষে ।

কামদাকিঙ্কর সেখানেও একবার ঘুরে এলেন । শম্ভু, মহিম, ভাবনা সাক্ষ্য দিতে এসেছে । সম্পাতিও সাত মাসের গর্ভ নিয়ে বেঞ্চে বসে আছে ।

কামদাকিঙ্কর তাকে মুঠো করা হাতে বুড়ো আঙুল সোজা করে দেখিয়ে জানিয়ে দিলেন রাজদীপের কেস ফাইল হয়ে গেছে।

বিভূতিভূষণ ম্লানমুখে বসে আছেন । ল অফিসারকে দেখে আরও আশঙ্কিত হলেন । শুভমিতা দেবী বললেন - আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছি । আর কোন আশাই নেই । ওই বুড়োটার বুদ্ধি নিয়ে পুলিশ যে ভাবে কেস দিয়ে দিয়েছে আমাদের পক্ষে কোন উকিল দাঁড়াতে চাইছে না ।

বিভূতিভূষণ ম্লান হেসে বললেন - ভাবনা কিসের ? বড় জোর ফাঁসি হবে । তারপর উচ্চ আদালতে গিয়ে ঠিক বেরিয়ে আসব ।

কামদাকিঙ্কর ঠিক তাঁদের পিছনেই ছিলেন । বিভূতিভূষণের কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন - উইশ ইউ গুড লাক । 

বিভূতিভূষণ বা শুভমিতা দেবী কেউ তাঁকে চেয়েও দেখলেন না । 

শুভমিতা বললেন - আপনি খুশী হয়েছেন তো ?

আদালত কক্ষে জোরে হাসতে নেই । কামদাকিঙ্কর তবু হে হে করে হেসে বললেন - বহুতল থেকে ঝাঁপ দিলে কি হয় জানো নিশ্চয় ? তোমরা বহুতলের ছাদে উঠেছিলে নিজেদের পতন ত্বরান্বিত করতে । আমরা কি করব ?

বিভূতিভূষণ বললেন - ছাড়া পেয়ে প্রথম প্রতিশোধ আপনার উপরই নেব। কথা দিলাম।

- তোমরা ছাড়া পাওয়া তো দূর, জামিন পাবে কি না তাই দেখ আগে ! যে ক্রাইম করেছ গণতন্ত্র বলে বিচার হচ্ছে নইলে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়াতে হত ।

সম্পাতি উঠে এসে বলল - দাদু ! আমি এসেছি সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চাক্ষুষ করতে । 

আদালতে শুনানি চলছে । তদন্তকারী অফিসারের ভূয়সী প্রশংসা করলেন বিচারক । একে একে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সকল আসামী কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ করতে লাগল ।

কামদাকিঙ্কর বললেন - অনুতাপে পাপ দগ্ধ হয় ; কিন্তু রায়ের বদল হয় না ।

বিচারক চার আসামীকে মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন । সম্পাতি বিভূতিভূষণ ও শুভমিতাকে চোখের জলে বিদায় দিয়ে বলল - নিজেরা তো নরকের কীট, তাই কি আমাকেও নরকেই রেখে গেলে শুধু বিকৃত মনের পরিচয় দিয়ে ?

শুভমিতার ইচ্ছে করল মেয়ের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। সম্পাতি পিছিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু বেঞ্চের পায়ায় ধাক্কা খেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে গেল । খৈতান সাহেব এবং বিভূতিভূষণ হেসে ফেললেন । 

- পাঁকে জন্মালেই পঙ্কজ হয় না । পঙ্কজ তো সে যে জেনেবুঝে তোকে প্রত্যাখ্যান করতে ডিভোর্স দিচ্ছে ।

কামদাকিঙ্কর সম্পাতিকে তুলে বললেন - এখানে তোমার থাকা চলবে না । এখন হাসপাতালই তোমার ঘর । চল ।

খবর পৌঁছাল রাজদীপের কানে । সে বাইক নিয়ে চলে এল আদালত চত্বরে । তখন কামদাকিঙ্কর ও কালীবাবু সম্পাতিকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন ।

রাজদীপ পিছু নিল । কিছুদূর গিয়ে গাড়ি আটকে বলল - দাদু ! আমার চোখ খুলে দিয়েছেন । আমি যা করেছি উত্তেজনার বশে করেছি । ভুল করেছি। তবে এখন নিজেই বৃত্তের বাইরে এসে দাঁড়াতে পেরেছি । সে তো আপনারই জন্য দাদু । 

আমি আমার স্ত্রীর সব দায়িত্ব নিলাম । আর কথা দিলাম ভবিষ্যতে কোনদিন ওকে কোন দুঃখ দেব না ।

সম্পাতি কথা বলতে পারছিল না । অস্ফূট স্বরে বলে উঠল - কারও অনুগ্রহে আমি বাঁচতে চাই না । দাদু আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলুন ।

মুখ নীচু করে রাজদীপ গাড়ির পিছু পিছু চলল । 

কামদাকিঙ্কর সম্পাতিকে বোঝাতে লাগলেন - দেখ মেয়ে - তুমি মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছ ; এটাই তো তোমার সৌভাগ্য। কার কোলে জন্মেছ , পিতৃপরিচয় আছে কি নেই , এসব জেনে তো জন্ম নাওনি ।

সম্পাতি বলল - পরিচয় পেয়েও কি হল ! 

- তাহলেই বোঝো - আসল কথা হল তোমার নিজের পরিচিতি। অমুকের মেয়ে হয়ে না থেকে জন্ম যখন নিয়েছ সেই জন্মের স্বাদ নিতে থাক । এতেই পূর্ণতা, এতেই শান্তি। 

- কিন্তু দাদু -

- কোন কিন্তু নয় সোনা । জান তো মানুষ যখন আদিম ছিল , কতখানি বর্বর ছিল ইতিহাসে তো পড়েছ । তখন কি এ সব প্রশ্ন ছিল ? পশুরা এখনও যেমন আচরণ করে ; তখন মানুষও তেমনই করত । তখন তো বংশ, মান এ সবের অস্তিত্বই ছিল না । 

কালীকিঙ্কর বললেন - মা ! আমার ছেলেকে বিয়ে করতে তুমি রাজী হওনি । এতে আমরা কিছু মনে করিনি , কারণ তুমি প্রাপ্তবয়স্কা । সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার তোমার আছে । সেই অনুযায়ী আমরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি রাজদীপ ও তোমার বিয়েটা যাতে হয়ে যায় । হয়েও গেল । কিন্তু ভুল বুঝে রাজদীপ বিচ্ছেদের মামলা করল । সেও তারই মত করে । পরে তো সে তোমাকে মেনে নিচ্ছে। আর না মানলে তারও কিন্তু বিপদ আসন্ন । তাই বলি কি মা , তুমি আর মুখ ফিরিয়ে থেকো না । 

সম্পাতি বলল - আবার যেদিন ওর খেয়াল হবে সেদিন একটা মামলা ঠুকে দেবে.....

কামদাকিঙ্কর বললেন - সে পথ আমি বন্ধ করে দিয়েছি । কোনদিন ভুলেও ওই দিকে মাড়াবে না । তুমি সম্পাতি আর এ ভাবে নিজেকে বঞ্চিত করে রেখ না ।

হাসপাতালে আসতেই রাজদীপ এসে সম্পাতির হাত ধরে বলল - এক বারের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও ।

সম্পাতি বলল - তুমি কি পারবে আমাকে তোমাদের বাড়িতে স্থান দিতে ?

রাজদীপ বলল - মা আর দাদারাও আসছেন । মিলিয়ে নিও আমার কথা ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মঞ্জরী দেবী দুই ছেলেকে বগল দাবা করে নিয়ে এলেন । সম্পাতিকে বললেন - আমার বংশের মাণিককে আমরা হেলায় হারাতে চাইনা । আমরা আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীকে বরণ করে নিয়ে যেতে এসেছি ।

সম্পাতির দুই চোখ জলে ভরে গেল । কামদাকিঙ্কর ও কালীবাবু হাততালি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানালেন ।

( চলবে )




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance