Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব সাতাত্তর

বৃত্তের বাইরে পর্ব সাতাত্তর

5 mins
6


পর্ব সাতাত্তর


মহিম এবং ভাবনা পুলিশকে মুচলেকা দিয়ে হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে গেল । বিভূতিভূষণ ডায়েরীতে উল্লিখিত কোন অভিযোগই প্রমাণ্ণ করতে পারলেন না । উল্টে তিনি নিজের জালে নিজেই জড়িয়ে পড়লেন।

মহিম এবং ভাবনাকে মুচলেকা দিতে হয়েছিল যে তারা অনুমতি না পাওয়া পর্য্যন্ত দুর্গাপুর ছেড়ে যেতে পারবে না । মহিম অথবা ভাবনাকে অথবা উভয়েকেই দিনে একবার থানায় হাজিরা দিতে হবে । বিশেষত বিভূতিভূষণ এণ্ড কোম্পানীর সম্পর্কে তারা যা জানে ওঁদের সম্মুখে বয়ান দিতে হবে ।

পুলিশ জেনেছে শম্ভু নামের লোকটি এখন কামদা স্যারের বাড়ির কর্মচারী ; সুতরাং কামদাকিঙ্কর দায়িত্ব নিলেন তাকে প্রয়োজনে ডাকা হলে অবশ্যই হাজিরা দিবে ।

মিঃ পাঠক এস পি সাহেব কোক ওভেন থানা এবং মিঃ মাইতিকে নির্দেশ দিলেন ওদের ডেকে বিভূতিভূষণ ও শুভমিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে এবং তা' আগামীকাল ফার্স্ট আওয়ারের মধ্যেই । যাতে তথ্য প্রমাণ এবং সাক্ষী নিয়ে ওদের আদালতে তোলা যায় ।

মহিম এবং ভাবনা ও শম্ভুকে লিখিত নোটিশ দিয়ে পুলিশ তুলে আনল । কামদাকিঙ্কর শম্ভুর সঙ্গে যেতে চাইলে হৈমন্তী ও ক্ষণপ্রভা দেবী বাধা দিয়ে বললেন - এই বয়সে আর কত ধকল নেবে ! শম্ভু তো বাচা ছেলে নয় ; তাছাড়াও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই , অতএব ও একলাই যেতে পারবে ।

কামদাকিঙ্কর বললেন - বিভূতির কথার জালে যদি ফেঁসে যায় !

কালীকিঙ্কর বললেন - বাবা ঠিক বলেছেন । বিভূতিভূষণ যা ধুরন্ধর লোক ; যখন দেখবে ও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে তখন কোন নতুন চাল দিয়ে বাজিমাত করার চেষ্টা করবেই । সুতরাং বাবার সঙ্গে আমিও যাব । আমাকে থাকতে না দিলে বাইরে অপেক্ষা করব ।

অকাট্য যুক্তি । ক্ষণপ্রভা দেবী বললেন - দেখিস বাবা , উনি যেন আবার অসুস্থ হয়ে না পড়েন ।

কামদাকিঙ্কর বললেন - এত চিন্তা কর না তো ! আমি একেবারে সুস্থ আছি ।

প্রথমে জেরা শুরু হল ডক্টর ওমপ্রকাশকে দিয়ে । পুলিশ অফিসার বললেন - কামদাকিঙ্কর মুখার্জীকে প্রাণে মারার প্ল্যান কি আপনার বানানো ?

ডক্টর খৈতান বললেন - না স্যার । চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশ ছিল অক্সিজেন সিলিন্ডারে হাইড্রোজেন সালফাইড ইনফিউজ করতে । 

- উনি বললেন আর আপনি রেডি হয়ে গেলেন ? এর জন্যই কি ব্যাগভর্তি উপঢৌকন পেয়েছেন ?

ডক্টর খৈতান চুপ করে গেলেন । পুলিশ ধরে নিল মৌন সম্মতি দিয়েছেন ডাক্তার ।

অফিসার বললেন - গতকাল পর্য্যন্ত কতগুলো কিডনি পাচার করেছেন ?

বিষম খেলেন ডক্টর খৈতান । এ কথা তো ডক্টর আলী ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানেন না ! তবে কি আলী সাহেব বলে দিয়েছেন সব কথা !

তবুও সাহসে ভর করে বললেন - আপনারা মিথ্যে মামলায় আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন অফিসার । আমি এর বিন্দুমাত্র কিছু জানি না ।

তখন ডক্টর আলীকে এনে এর সারবত্তা প্রমাণ করিয়ে নিলেন । এরপর শুভমিতা দেবীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করার সময় শম্ভুকে নিয়ে উপস্থিত হলেন কামদাকিঙ্কর এবং তাঁর পুত্র কালী ।

জিজ্ঞাসাবাদে ছেদ পড়ল । কামদাকিঙ্কর কালী ও শম্ভুকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে অফিসারকে বললেন - থেমে গেলেন কেন ? আমি আসাতে ? দেখুন মশাই , আমি এসেছি শম্ভু, মহিম আর তার বউকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যাতে তারা আপনাদের হাত থেকে রেহাই পায় । যাক গে আপনি কাজ চালিয়ে যান, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি ।

অফিসার জেরা শুরু করলেন । আশরাফ আলী বললেন - মাসে অন্তত দশ বারোটা কিডনির কেস না পেলে তিনি তাঁকে প্রাণে মারার আগে তাঁরই কিডনি দুটো কেটে নেবেন বলে হুমকি দেন ।

আলী সাহেব আরাও বললেন - দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান এবং তাঁর স্ত্রী তাঁকে কথা দিয়েছিলেন মাসে দশ বারোটা কেন পঞ্চাশ ষাটটাও পাবেন যদি আমাদের কথা মেনে নেন ।

- কি কথা ? 

- যে লোকটিকে ( পড়ুন কামদাকিঙ্কর) এখানে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে চিকিৎসার অজুহাতে মেরে ফেলতে হবে । আর ওই ব্যাগ দিয়ে বলেন ' এটা মিঃ খৈতানকে দিয়ে আসুন ' । আমি কামদাকিঙ্করের ব্যবস্থা করে ব্যাগ আলমারিতে রাখতে যাচ্ছিলাম, সেই সময় এস পি সাহেব আমাকে রেড-হ্যাণ্ডেড পেয়ে যান ।

ডাকা হল বিভূতিভূষণ ও শুভমিতাকে । 

পুলিশ অফিসার তাঁদের বললেন - এই দুই নরখাদককে চেনেন ?

দু'জনেই মাথা নীচু করে রইলেন । পুলিশ অফিসার বিভূতিভূষণকে উদ্দেশ্য করে ব্যঙ্গ করলেন - কত অর্থ পেলে আপনি খুশী হন ? এত অঢেল থাকা সত্বেও নিজের স্ত্রীকে পরপুরুষের হাতে তুলে দিতে আপনার লজ্জা করল না ?

শুভমিতা দেবী ফোঁস করে উঠলেন - ওই প্রশ্নটা আমাকে করবেন না ? করার আগেই বলে দি উনি মেডুলোব্লাস্টোমার প্যাশেন্ট । ওনার বিয়ে করাই উচিৎ ছিল না । তবু তো ওমের জন্য গর্ভধারণ করতে পেরেছি ।

পুলিশ অফিসার হতভম্ব হয়ে গেলেন । কামদাকিঙ্কর না এসে পড়লে হয়তো অজ্ঞানই হয়ে যেতেন ।

কামদাকিঙ্কর বললেন - নোংরা ঘেঁটে কি হবে অফিসার । ওদের ব্লাড টেস্ট করিয়ে নিলেই তো সব ঝামেলা চুকে যায় । অহেতুক ভদ্রলোকদের অবমাননা করছেন । বাইরে শম্ভু, মহিম ও তার বউ অপেক্ষা করছে । ওদের কোন প্রশ্ন করার থাকলে করুন । সবই যখন হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছেন এবার তো ওদের আদালতে তুলে দিতে পারেন ।

মিঃ পাঠক এসে পৌঁছালেন। জেরার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়ে বললেন - আসামীদের আদালতে তোলার বন্দোবস্ত করুন । আর মিঃ মুখার্জী আপনি ওদের ( মহিম ভাবনা এবং শম্ভুকে) নিয়ে যেতে পারেন । আদালতে সাক্ষ্য দান ছাড়া তাদের আর কোন প্রয়োজন নেই ।

কামদাকিঙ্কর বললেন - থ্যাঙ্কস এ লট । আমরা তাহলে আসি ।

মিঃ পাঠক হাসতে হাসতে বললেন - আর একটু সময় থেকে যান প্লীজ ।

মিঃ পাঠক এবার নিজে জেরা করলেন বিভূতিভূষণকে । আপনার বাড়ির দলিল ইত্যাদি চাই । আমার মনে হয় এগুলো সবই অবৈধ ।

সম্পাতি এসে কোথায় কি আছে সব বলে দিল । বিভূতিভূষণ ও শুভমিতার দিকে চেয়ে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল ।

মিঃ পাঠক বললেন - মিসেস লাহা ! আপনি ?

- ইয়েস স্যার । আমি সম্পাতি ( ইচ্ছে করেই কোন পদবী উল্লেখ করল না ) সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় বাড়ির জমির দলিলপত্র হস্তান্তর করে গেলাম । সঙ্গে যতগুলি ব্যাঙ্কের পাশবই পেয়েছি সব আপনার হাতে তুলে দিলাম । আমি চাই অপরাধীরা যেন কঠোর শাস্তি পায় ।

- কিন্তু ম্যা'ম, আদালতে আপনাকেও তো সাক্ষ্য দিতে যেতে হবে !

- তো চলুন না ! আমি তো তৈরী হয়েই এসেছি । আমি আদালতে কোন কথা গোপন করব না ।

হঠাৎ মিঃ খৈতান বলে উঠলেন - আমি যা করেছি তাতে যে আমার মৃত্যুদণ্ড হবে - খুব ভালো করে জানি । তবে ওই বিভূতিভূষণ এবং শুভমিতার মুখোশ খুলে দিতে চাই । প্রভাব খাটিয়ে সেও আমাকে শোষণ করে গেছে । ওই যে ব্যাগ আপনারা সিজ করেছেন - ওটা আমাকে ওকেই ফিরিয়ে দিতে হত । নইলে আমার মরণ ছাড়া অন্য গতি ছিল না । আর এটা ঠিক যে শুভমিতার সঙ্গে আমার দৈহিক ঘনিষ্ঠতা ছিল পঁচিশ বছর আগে থেকেই । 

আমি ওকে বলেছিলাম বিভূতিকে ছেড়ে আমার কাছে থাকতে । কিন্তু সেও যে অর্থের লালসায় জর্জরিত , আসেনি । সম্পাতি আমারই ঔরসজাত সন্তান । 

তারপর কামদাকিঙ্করকে বললেন - একটা উইল করবেন স্যার । আমার স্থাবর অস্থাবর যেটুকু সম্পত্তি বৈধ বলে গণ্য হবে সব আমি সম্পাতিকে দান করে দিতে চাই ।

সম্পাতি তার মুখে থুতু ছিটিয়ে বলল - জানোয়ার কোথাকার !

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance