বৃত্তের বাইরে পর্ব চুয়াত্তর
বৃত্তের বাইরে পর্ব চুয়াত্তর
পর্ব চুয়াত্তর
ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ ও রফা করে বিভূতিভচষণ এবং শুভমিতা যখন চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসছেন শ্রীধর মাইতি এসে নমস্কার জানিয়ে বললেন - কনগ্রাচুলেশনস মিঃ এণ্ড মিসেস ব্যানার্জী । আজ আপনারা দু'জনে মিলে যে পবিত্রতম কাজটি পূর্ণ করলেন এ জন্য কোন বাহবাই যথেষ্ট নয় ।
বিভূতিভূষণ গোঁফের রেখায় বাঁকা হাসি এনে বললেন - এ আর কি এমন কাজ মিঃ মাইতি ! একজন অসুস্থ মানুষকে নার্সিং হোমে নিয়ে আসা তো মানবতারই প্রতীক !
- একদম ঠিক কথা বলেছেন মিঃ ব্যানার্জী । মানবতা ! আজকাল তো কথাটাই বইয়ের পাতায় মুখ ঢেকে রেখছে। আপনারা তা' তুলে এনে মানুষের মনর আসে প্রতিষ্ঠিত করে দিলেন ।
শুভমিতা দেবী বললেন - কাটাবাবু ভীষণ ভালো এবং সজন ব্যক্তি । ঈশ্বর নিজে তাঁর হসায় আছেন ।
- যা বলেছেন মিসেস ব্যানার্জী । মিঃ মুখার্জীর মত মানুষের ঈশ্বর নিজে নেমে এসে তাঁকে রক্ষা করেন । তা না হলে তিন তিনটে পিস্তলের গুলি কি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় ?
শুভমিতা দেবী বললেন - আসলে কি জানেন মিঃ মাইতি ! আমার মেয়ে জামাই না থাকলে যে কি কাণ্ড ঘটে যেত - ভাবতেই শিউরে উঠছি ।
- হ্যাঁ তাই তো শুনলাম । ওরাই তো আমাদের এখানকার ঠিকানা দিয়ে সাহায্য করল ।
বিভূতিভূষণ দাঁতে দাঁত চেপে মেয়ে জামাইয়ের গুষ্ঠি উদ্ধার করলেন । শুভমিতা দেবী বললেন - হীরের টুকরো জামাই পেয়েছি কপাল গুনে ।
- এও ঠিক বলেছেন মিসেস ব্যানার্জী । আপনাদের কপাল তো দেখছি ভীষণ চওড়া । যাই হোক মিঃ ব্যানার্জী ! ডিক্তার বাবু কি বললেন ? কতটা ক্ষতি হয়েছে মিঃ মুখার্জীর ?
বিভূতিভূষণ বললেন - আই সি ইউতে রাখা হয়েছে। বলেছেন বাহাত্তর ঘন্টা না কাটলে কিছু বলা যাবে না ।
তাঁদের থেকে কিছু দূরে মিঃ পাঠক অপেক্ষা করছিলেন কামদাকিঙ্করের পরিবারের লোকেদের নিয়ে । মিঃ মিত্রকে বললেন - আপনি এখানে এঁদের পাহারায় থাকুন। আমি ডক্টরের সঙ্গে কথা বলে আসি । মিঃ মাইতি তো মিঃ ব্যানার্জীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন । এর মধ্যে ডক্টরের সঙ্গে কথা বলে আসি ।
ডাক্তার আশরাফ আলী বিভূতিভূষণের দেওয়া উপহার সামগ্রী ব্যাগে ভরে আলমারিতে তুলছিলেন । দরজা ঠেলার আওয়াজ শুনে পিছন ফিরে চাইতেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলেন ।
মিঃ পাঠক নিজের পরিচয় দিয়ে পরিচয় পত্র ডাক্তার বাবুর হাতে ধরিয়ে দিলেন । ডাক্তার বাবু নাম দেখলেন এবং ব্র্যাকেটে আই পি এস এবং তার নীচে সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ লেখাটি দেখে ভয় পেয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকালেন। দুই কাঁধে চারটে করে তারা আঁটা দেখে চেয়ারে বসে পড়লেন ।
মিঃ পাঠক বললেন - আর ইউ ওকে ডক্টর ?
নড়ে চড়ে বসলেন ডক্টর আশরাফ আলী ।
- ইয়েস আই অ্যাম ওকে । প্লীজ সীট ডাউন ।
ধমকে উঠলেন মিঃ পাঠক । বজ্রহুঙ্কার দিয়ে বললেন - স্ট্যাণ্ড আপ এণ্ড লেট মি ফলো হোয়্যার মিঃ মুখার্জী ইজ হিলিং ।
ডাক্তার বাবু বললেন - ওকে চলুন ।
তারপর বললেন - এক্সকিউজ মি । আলমারিতে ইমর্টেন্ট ফাইল আছে , প্লীজ লেট মি লক ইট ।
মিঃ পাঠক বললেন - ব্যাগটা বেশ মোটা এবং ভারী মনে হচ্ছে - কি আছে ওতে ?
- ভি আই পি ফাইলগুলো আমি ব্যাগে রাখি ।
হাসলেন মিঃ পাঠক । ফাইল ইম্পর্টেন্ট হয় ; ভি আই পিও হয় ব্যাগের মধ্যে ? দেখি কত বড় ভি আই পি ?
ডাক্তার বাবূ বললেন - আগে আই সি ইউতে যাবেন না ফাইল দেখবেন ?
মিঃ পাঠক বললেন - বাইরে আমির অফিসারেরা রয়েছেন । আই সি ঈউ ওঁরা যাবেন । আমি ততক্ষনে ফাইলগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিই । আপনি যান - ওঁরা ওয়েট করছেন।
ডাক্তার বাবু যেতে চান না । কোমর থেকে পিস্তল বের করে মিঃ পাঠক বললেন - এবার যাবেন নিশ্চয় ?
ডাক্তার বাবু বেরোলেন । দুটো গ্লাবস হাতে পরে নিয়ে মিঃ পাঠক ব্যাগ খুলে দেখেন নগদ এবং গয়নাগাটি মিলিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের সামগ্রী সেখানে রাখা আছে ।
ব্যাগ নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলেন । তারপর বামাল বেরিয়ে এসে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য মিঃ মাইতিকে জমা দিলেন ।
গটগট করে চললেন আই সি ইউতে । বাইরে জুতোজোড়া খুলে ঢুকলেন ভেতরে । কামদাকিঙ্কর তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । ক্ষণপ্রভা দেবী গুমরে উঠলেন । কঁকিয়ে কান্না শুরু করার আগে কালীকিঙ্কর মাকে নিয়ে বাইরে চলে এলেন ।
জনৈক ফিজিশিয়ান ডেকে মিঃ পাঠক বললেন - দেখুন তো স্যার বেঁচে আছেন কি না !
বলে অক্সিজেনের নল নিজের হাতে খুলে দিলেন । একটা পচা ডিমের মত দুর্গন্ধ নাকে লাগল ।
ফিজিশিয়ান বললেন - হি ইজ স্টিল এলিভ ।
মিঃ পাঠক বললেন - অক্সিজেন সিলিণ্ডারে কি পচে যাওয়া ডিম ঢোকানো আছে ?
ফিজিশিয়ান নাকের কাছে নল ধরতেই যেন গা গুলিয়ে গেল । বললেন - স্যার এ তো হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস। আক্সিজেন সিলিণ্ডারে কি ভাবে এল ?
মিঃ পাঠক বললেন - এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং মারাত্মক দাহ্য গ্যাস ।
বলে আশরাফ আলীর মুখের দিকে চাইলেন । মিঃ পাঠক বললেন - বুঝতে পেরেছি, আমিও সায়েন্সের স্টুডেন্ট । ল্যাবে ঐ নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করেছি ।
তারপর মিঃ মাইতিকে বললেন - তাহলে এটি একটি খুনের পরিকল্পনা মাত্র । ডক্টর আলী ইউ আর আণ্ডার অ্যারেস্ট । মিঃ মাইতি হাত কড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলুন ।
ফিজিশিয়ান কামদাকিঙ্করকে পরীক্ষা করতে লাগলেন । তাঁকে ইঞ্জেকশন দিয়ে কিছুক্ষণ পরই সজ্ঞান করলেন । শেষে বললেন - ওঁকে কেনই বা এখানে এডমিট করা হয়েছে বোধগম্য হল না । আমি তো কোন খারাপ লক্ষণ দেখছি না । আজব কাণ্ড ! আজকাল এখানে দেখছি অনেক অবৈধ কর্মকান্ড চলছে !
মিঃ পাঠক বললেন - যেমন !
এস পি সাহেবের কাছ ঘেঁষে বললেন - ওই ডাক্তার কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গেও যুক্ত আছেন স্যার । এই তো সেদিনও নার্সিং হোমে জনতা ভাঙচুর করেছে।
- আপনি এগানে পড়ে আছেন কেন ? নাকি লাভের গুড় আপনিও খান ?
নিজের কান ম'লে ডাক্তার বাবু বললেন - আমি তো অলরেডি রিজাইন করে দিয়েছি । রিলিজ হলেই চলে যাব ।
মিঃ পাঠক বললেন - আপনাকে যদি বরাবরের মত রিলিজ করে দেয় ?
ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেল ডাক্তারের । এস পির হাতে ধরে বললেন - আমাকে বাঁচান স্যার ।
- ভয় নেই , আমি আজই নার্সিং হোম সিল করে দেবার বন্দোবস্ত করছি । আপনি মিঃ মুখার্জীকে আবার পরীক্ষা করে ওঁর ফিজিক্যাল কণ্ডিশন কেমন জানান ।
ডাক্তার বাবু আবারও পরীক্ষা করলেন । হার্ট বিট খুবই কম । আমি অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছি , আপনারা এখনই ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে চলে যান ।
- পথে যদি কিছু হয়ে যায় !
- আমি সঙ্গে থাকব । কিছু হবে না ।
কামদাকিঙ্কর চোখ মেলে চাইলেন । মিঃ পাঠক বললেন - কেমন আছেন স্যার ?
কামদাকিঙ্কর হাত তোলার চেষ্টা করলেন । দুর্বলতার জন্য পারলেন না ।
হৈমন্তী দেবী ডাকলেন - বাবা !
কামদাকিঙ্কর পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন । ডাক্তার বাবু বললেন - ওই তো উনি ডাকে সাড়া দিচ্ছেন । তার মানে ওঁর আসুস্থতা শুধু হাইড্রোজেন সালফাইডের জন্য । ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন ।
( চলবে )