Nityananda Banerjee

Crime Inspirational Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Inspirational Thriller

ভোরের সূর্য্য পর্ব দুই

ভোরের সূর্য্য পর্ব দুই

4 mins
11


দ্বিতীয় পর্ব

মজ:ফরপুর সেন্ট্রাল জেলের ভারপ্রাপ্ত জেলর মি: বিবেকানন্দ কুমার এবং তাঁর ধর্মপত্নী মিসেস সঞ্জনা কুমার ডিনারের আয়োজন করেছেন । আজ রাত্রে স্বয়ং জেলার সাহেব আসছেন তার সঙ্গে একাসনে নৈশভোজ করবেন ।


নানা রকমের লোভনীয় পদ সহযোগে খাস্তা কচুরি , বিরিয়ানি, নানা রকমের মিষ্টান্ন দ্রব্য নিয়ে জেলের অভ্যন্তরে তাঁর চেম্বারেই ডিনার টেবিলে বসে আছেন ।


জনৈক চৌরাসিয়া নামক পেয়াদাকে বললেন শশাঙ্ককে সেখানে নিয়ে আসতে । সেল থেকে চেম্বার রেড করিডোর দিয়ে শশাঙ্ক উপস্থিত হল সাহেবের অফিসে ।


এলাহি খাবারের আয়োজন দেখে প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেল শশাঙ্ক । খাবার দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ল ।

 মিসেস কুমার শশাঙ্ককে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন । একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী যার রাত পোহালেই ফাঁসির আয়োজন করা হয়েছে ; সে এইভাবে হাসতে পারে নাকি !


মিঃ কুমারও বিস্মিত হয়েছেন । শশাঙ্ককে এই রকম হাসতে দেখে প্রশ্ন করলেন - কি রে ! বড় হাসছিস যে ! কাল না তোর ফাঁসি ! টেবিলের দিকে চেয়ে অমন হাসছিস কেন ?


- পাচ্ছে হাসি ; হাসছি তাই । জানেন স্যার আজ আমার বুকটা এক্কেবারে হালকা হয়ে গেছে , ঠিক যেমনটি হয়েছিল চার বছর আগে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে । জেলায় এক নম্বরে আমি । কি আনন্দই না হয়েছিল আমার । চারুকাকার কথা মত দারুন রেজাল্ট করেছি । এবার তো কোষাধ্যক্ষের চাকরিটা হাতের মুঠোয় ! বাবা গত হয়েছেন । মা রোগে শয্যাশায়ী । ওষুধ কেনার টাকাটিও নেই । আর যাই হোক মাকে আর বিনা চিকিৎসায় মরতে দেব না ।


মিসেস কুমার বললেন - চাকরিটা হয়েছিল? দাঁড়িয়ে আছো কেন ? বস । আজ আমরা তোমার সঙ্গে একসাথে খাব আর তোমার গল্প শুনব ।


- গল্পই বটে ম্যাডাম । একটা দুর্দান্ত গল্প আমি নিজে ।

মিসেস কুমার পুনরায় বললেন - চাকরিটা হয়েছিল ?


আবার হেসে উঠল শশাঙ্ক । সেই অনাবিল হাসি যেখানে কোন রকম কপটতা নেই । কি সুন্দর সহজ ভাষায় বলল 

- না ম্যাডাম ! যোগ্যতর প্রার্থীকেই চারুকাকা চাকরিটা দিয়েছিলেন ।


- তোমাকে অন্য কোন চাকরি দিলেন না কেন? কথা দিয়ে কথার খেলাপি সে ও তো এক ধরণের অন্যায় ।


- কে বিচার করবে ম্যাডাম ? বিচারকর্তা নিজেই তো অন্ধ !

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল - অন্ধ বলাটা পাপ । ভাগবদ্গীতা পড়ছি ম্যাডাম ; শেষ সময়ে মিথ্যে কথা বলব না । খুশি হয়ে চারুকাকা মুখের উপর একটা হাজার টাকার নোট ছুঁড়ে বলেছিলেন ' কলেজে ভর্তি হবার ফিস এবং প্রথম মাসের ফিসসমেত দিলাম । মন দিয়ে পড় গে যা । তারপর পাশটাশ করে আসিস তখন দেখব ।


- টাকাটা নিশ্চয় নাও নি ?

- খেপেছেন ! না নেওয়ার ভুল কেউ করে ! জানেন ম্যাডাম ! আমি ভেবে দেখলাম টাকাটা দিয়ে মাকে ডাক্তার দেখানো মায় ওষুধপথ্য কেনাও হয়ে যাবে । নিয়ে নিলাম।


 বাড়িতে গিয়ে দেখি মা আর নেই । কিছুক্ষণ আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন । পাড়াশুদ্ধ প্রতিবেশীরা এসে উঠোনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করছে । বললাম ' তোমরা এমন গুজগুজ করে কথা বলছ কেন ? সরে যাও মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব । একজন তো বলে দিল তার আর প্রয়োজন নেই । আমি হাজার টাকার নোট দেখিয়ে বললাম এই তো টাকার জোগাড় করেছি। সরে যাও এখন আমি আমার মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব।


মিসেস কুমারের চোখ ছলছল করে উঠল । বললেন - তখন কি করলে ?


- একদমই কাঁদিনি ম্যাডাম । বরং তখন মনে হল আমি যেন নির্দায় হলাম । ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন তো । এবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারব । আর তো পিছুটান নেই !


এমন সময় বোনটা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ঢুকল । ওই শোকের মধ্যেও বলল - দাদা ! তোরা টিভি দিসনি বলে আমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে । ম্যাডাম ! সে আর এক যন্ত্রণা । তবু ভেঙে পড়িনি । বোনকে বললাম ' ধৈর্য্য রাখ ' মায়ের কাজ শেষ হলেই আমি টিভি কিনে দেব ।


বোনের যন্ত্রণা আমার বুকে মোচড় দিল । টাকা চাই। টাকা চাই । মাথাটা ঘুরে গেল । আমি পড়ে যাচ্ছি দেখে কোন পাড়াতুতো দাদা এসে বলল - ধৈর্য্য রাখ । এমন সময় চিরদিন থাকবে না । শ্মশান থেকে ফিরে বোনকে বললাম তিনদিনেই শ্রাদ্ধের কাজ করে নেব । 


বোনটা আমার বড় আদরের , ম্যাডাম । এই বিপদের দিনেও তার মঙ্গলের জন্য টিভি কেনার টাকা জোগাড় করে ফেললাম। টিভি দিয়ে ওকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এলাম । এসে দেখি আমার জেঠু কালিদাস আমাদের বাড়ির দখল নিয়ে ফেলেছে। পঞ্চায়েত থেকে নাকি জানিয়েছে ওই জায়গাটা নাকি আমার জেঠুর নামে লিখে দিয়েছেন আমার বাবা । 


বাবা এ বিষয়ে আমাদের কাউকে কিছু জানাননি । কিন্তু একটা কাগজে সই করে দিয়ে জেঠুর কাছে দু'হাজার টাকা নিয়ে বোনের বিয়েতে খরচ করেছেন । পঞ্চায়েত নাকি সাক্ষী । যাই হোক মায়ের কাজ শেষ করে, বোনকে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমি গ্রাম ছেড়ে চলে এলাম শহরে মানে এই মজ:ফরপুরে ।


সঞ্জনা ম্যাডাম বললেন - আইনের আশ্রয় নিলে না কেন ? পঞ্চায়েতই তো হর্তাকর্তা বিধাতা নয় !


আবার হাসল শশাঙ্ক । - সে চেষ্টা কি করিনি ভাবছেন ? দু'ক্রোশ পথ হেঁটে গিয়েছিলাম উকিলের বাড়ি । সব শুনে বললেন ' দু'শো টাকা ফিস দাও আগে। তারপর পরামর্শ দেব । 


দু'শো কি ম্যাডাম দু'টো নয়া পয়সাও ছিল না পকেটে । বোনের জন্য টিভি কিনতেই হাজার টাকা গচ্চা গেল । খাব কি তারও ঠিক-ঠিকানা নেই ।


সঞ্জনা ম্যাডাম বললেন - বোনের শ্বশুরবাড়িতে খেলে না ?

ম্লান হাসল শশাঙ্ক । আদিখ্যেতা দেখাতে গিয়ে উপোসী ফিরেছিলাম ম্যাডাম । আর তখন খিদেও ছিল না ।

কুমার সাহেব বললেন - তারপর ?


( চলবে )




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime