Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

3  

Nityananda Banerjee

Romance Crime Fantasy

বৃত্তের বাইরে পর্ব পঁচাত্তর

বৃত্তের বাইরে পর্ব পঁচাত্তর

5 mins
7


পর্ব পঁচাত্তর 


গ্রেপ্তার হলেন বিভুতিভূষণ, শুভমিতা দেবী এবং আশরাফ আলী । কামদাকিঙ্করকে ভর্তি করা হল অন্য একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে । বাকি রোগীদের কাউকে সরকারি কাঊকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে এস পি সাহেব স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমতি নিয়ে নার্সিং হোম সিল করে দিলেন ।

নার্সিং হোমের কর্তৃপক্ষ জনৈক ওমপ্রকাশ খৈতান , যিনি নিজেও একজন হার্ট স্পেশ্যালিস্ট - তাঁকেও এরেস্ট করা হল ।

সকলকে নিয়ে যাওয়া হল কোক ওভেন থানায় । এস পি সাহেব বর্ধমানের সদর থানার ওসি নিয়ামত শেখকে কোক ওভেন থানার কর্মভার দিয়ে মিঃ মিত্রকে সরিয়ে দিলেন মেমারী থানায় ।

কামদাকিঙ্কর সুস্থ হতেই তাঁর ডাক পড়ল কোক ওভেন থানায় । প্রসঙ্গত জানিয়ে দি বিয়ের রাতে এত সব কাণ্ড করার পর পুলিশ দল আর বিয়ে বাড়িতে যেতে পারেননি । কামদাকিঙ্কর বললেন - সবই ভাগ্যের খেলা । ঠিক আছে, আপনাদের সকলের নিমন্ত্রণ রইল গোপালপুরে আগামী ছয় অগ্রহায়ন বউ ভাতের দিন । মিঃ মিত্রকেও কিন্তু নেমন্তন্ন দিতে ভুললেন না ।

করালীকিঙ্কর, দিব্যেন্দু, রাজদীপ, এবং সম্পাতিকেও থানায় ডাকা হল ।

খুনীদের বয়ান অনুযায়ী বিভূতিভূষণ এবং শুভমিতা দেবীকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল । সে নিয়ে দুর্গাপুরে কম জল ঘোলা হয়নি । প্রমাণ করা গিয়েছিল বিভূতিভূষণ একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি । সুতরাং তাঁর জামিন হল না ।

তার আগে জেরা চলাকালীন সম্পাতি নিজে জানিয়েছিল তার বাবা মেডুলোব্লাস্টোমায় আক্রান্ত হওয়া সত্বেও তিনি কিওর হয়ে গেছলেন । 

করালীকিঙ্করও সম্পাতিকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিল - পোস্ট-রেমিশন পিরিয়ডে কিছু চিত্তবিকার ঘটে ; বিভূতিমূষণও তার ব্যতিক্রম নন । তবে তাঁর এই বৈকল্য যে অপরাধ তত্বে জড়িয়ে যাবে ভাবা যায় না ।

সম্পাতি বলল - জ্ঞান হওয়া থেকে জেনেছি বাবা ভীষণ জেদী এবং একগুঁয়ে। তিনি কোন সিদ্ধান্ত নিলে কারও সাধ্য নেই তাঁকে সেখান থেকে এক চুলও নড়ায় ।

মিঃ পাঠক বললেন - আর মা মিসেস ব্যানার্জী ? তিনি কেন এই জঘন্যতম অপরাধে জড়িয়ে ছিলেন ?

সম্পাতি বলল - ডক্টর ওমপ্রকাশ খৈতানের সঙ্গে মা'র একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে । ডক্টর খৈতানই প্রথম জানিয়েছিলেন আমার বাবা একটি সাংঘাতিক রোগে আক্রান্ত - ওঁকে নিউরোলজিস্টের কাছে নিয়ে যান । তাই করা হয়েছিল । নিউরোলজিস্ট নিজের মত করে চিকিৎসা করছিলেন বলে মা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অঙ্কোলজিস্ট দিয়ে পরীক্ষা করানোর । দৈবক্রমে ডক্টর কে কে মুখার্জী ধরে ফেলেছিলেন রোগটি মেডুলোব্লাস্টোমা । যা নাকি পাঁচ ছয় বছর বয়স থেকে শুরু হয় । 

মা যখন জানতে পারলেন এই রোগ লুকিয়ে আমার পিতামহ তাঁর সঙ্গে বিয়ে দিলেন ; মনে মনে বেশ ক্ষুব্ধ হলেন তিনি ।

মিঃ পাঠক বললেন - তারপর ?

- তিনি স্বামীর প্রতি অবিচার করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন এবং তাঁর সকল কাজে সহায়তা করছিলেন। বাবার একদিন খেয়াল হয় তিনি কোন হাসপাতালের পরিচালন পর্ষদে সদস্য হবেন । ততদিনে ডক্টর খৈতানের সঙ্গে মায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেছে । মা পরামর্শ দিলেন সেখানের পর্ষদে তাঁকে চেয়ারম্যান পদ দিলে তিনি নেবেন কি না । বাবা লুফে নিতেই খৈতান সাহেবও যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেলেন । খৈতানের সঙ্গে মায়ের এতটাই ঘনিষ্ঠতা ছিল যে ডক্টর খৈতান অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন ।

মা শিকার ধরতেন আর ওই নার্সিং হোমে পাঠিয়ে দিতেন । অবশ্য তার আগে আমার বাবাও এ কাজ নিয়মিত করেছেন ।

মিঃ পাঠক বললেন - তাহলে আপনি স্বীকার করছেন আপনার মা ও বাবা উভয়ে অপরাধী ?

সম্পাতি বলল - প্রথমে এ নিয়ে মাথা ঘামাইনি । পরে কলেজে রাজদীপের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্খ তৈরী হলে আমি মা বাবাকে বলি । বাবা নিমরাজী হলেও মা ছিলেন কট্টর বিরোধী । শেষ পর্য্যন্ত কামদা দাদুর পরামর্শে এবং বাধ্য হয়ে রাজদীপের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন । রাজদীপের মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা বাবারই চক্রান্তে হয়েছিল । বিয়ের আসরেও তিনি রাজদীপকে মারার ফন্দি করেছিলেন মায়ের পরামর্শে ।

শুভমিতা দেবী এবং বিভূতিভুষণ সব শুনছেন । সম্পাতির একটি কথারও প্রতিবাদ করেননি । যখন সম্পাতি প্রশ্নকক্ষে বোমা ফাটিয়ে দিল তিনি গর্জন করে উঠলেন । 

সম্পাতি বলল - আমার বাবা বিভূতিভূষণ জেনেশুনেও মাকে ছেড়ে দেননি স্রেফ টাকা রোজগারের অজুহাতে । যখন তিনি জানতে পারলেন এই মেয়ে তাঁর ঔরসজাত কন্যা নয় ; বরং তার জন্মের জন্য ডক্টর ওমপ্রকাশ খৈতানের সম্পূর্ণ অবদান রয়েছে - তবুও তিনি ঠাণ্ডা মাথায় তা মেনে নিয়েছিলেন । কারণ মা ছিলেন মোটা রকম রোজগারের হাতিয়ার ।

উপস্থিত সকলেই হতবাক এমনকি কামদাকিঙ্করও মুখ বন্ধ করে বসে আছেন । 

রাজদীপ বলল - ছি: একথা তো তুমি কোনদিন আমায় বলনি ?

সম্পাতি বলল - যে শরীরে অপরাধের রক্ত বয় , সে কি ভাবে তার অপরাধ স্বীকার করে বলতে পার ?

কামদাকিঙ্কর এবার বললেন - মাই ডিয়ার রাজদীপ লাহা ! জন্মের জন্য তো মেয়ে দায়ী নয় দাদু ?

- আমার প্রশ্নটা সেখানে নয় দাদু । আমি বলতে চেয়েছি ও এতদিন ধরে আমাকে দেখছে, আমার সাথে কথা বলেছে, অনেক কিছু বলেছে কিন্তু এমন একটা ভাইটাল জিনিস কেন গোপন করল ? জানলে কি আমি পিছিয়ে আসতাম ?

- দাদুভাই ! ওর মনের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে তোমাকে এ বিষয়টা এড়িয়ে গেছে । এ নিয়ে মাথা ঘামিও না । মেয়ে তো মেয়েই ; কে তার জন্ম দিল ; বিয়ে হয়ে যাবার পর ....

- না দাদু মানতে পারলাম না। 

কামদাকিঙ্কর বললেন - আগে থেকে জানলে তুমি আর ওকে এমন ভাবে ভালোবাসতে ? বোধ হয় - না । 

সম্পাতি বলল - আগে আমার সব কথা শুনবে তো !

রাজদীপ বলল - নতুন করে কি আর বলবে ? এই কথা তো ! যে তুমি এই কিছুদিন আগে জেনেছ ?

সম্পাতি বলল - একজাক্টলি তাই ! আমি দিন দুই আগে জানতে পারলাম । শুনবে?

- দেখ সমু ( সম্পাতি ) ! এমনিতেই আমি বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো ছেলে । তার উপর তোমার এই কথা ! এখন তো আমার মরে যাওয়াই শ্রেয় ।

সম্পাতি বলল - তুমি কেন মরবে ? আমিই আজ দামোদরের জলে আত্মঘাতী হব ।

সকলেই ভীষণ উদ্বিগ্ন হলেন । শুভমিতা দেবী কাঁদতে লাগলেন । বিভূতিভূষণের দুই গণ্ড বেয়ে অশ্রুধারা নেমে এল ।

এস পি সাহেব বললেন - মিঃ ব্যানার্জী ! এখন আর কুমিরের কান্নায় কি হবে ? দেখলেন তো অপরাধের শাস্তি পেতে নরকে যেতে হয় না । এখানেই স্বর্গ এখানেই নরক ।

আর মিঃ লাহা ! আপনাকে বলি আপনি যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন - যে এখন আপনার স্ত্রীর গর্ভে প্রতিপালিত হচ্ছে তার অপরাধ কি ? অতএব আপনাদের উচিত তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তি ভাবনা করা । গতস্য শোচনা নাস্তি ।

মিঃ মাইতি বললেন - সম্পাতি যে কথা শোনাতে চেয়েছে তা' শুনলে হত না ? হয়তো এর পিছনেও কোন অপরাধ জড়িয়ে থাকতে পারে ?

কামদাকিঙ্কর বললেন - আপনি ঠিক বলেছেন মিঃ মাইতি । এই কেচ্ছা কি ভাবে প্রসারিত হল তাও পুলিশ জানতে পারলে আখেরে কেস সাজাতে সুবিধা হবে ।

সম্পাতি বলল - এই রইল তার ভিডিও রেকর্ডিং। আপনারা শুনুন । আমি এখন আসি ।

মিঃ মাইতি বললেন - এর সত্যাসত্য তো আপনাকে বলতে হবে মিসেস লাহা । অতএব আপনার তো যাওয়া চলবে না ।

রাজদীপ বলল - মিসেস লাহা ! কি বলছেন ? আমাকে চিন্তা করতে হবে কি ভাবে ডিভোর্স ফাইল করা যায় !

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance