STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Horror Classics Crime

3  

Nityananda Banerjee

Horror Classics Crime

অশান্ত জীবন

অশান্ত জীবন

3 mins
20

অশান্ত জীবন (৩)

সত্তরের দশকের শেষভাগ । অখিল পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাড়ি আন্দোলন তীব্রতর হয়েছে । চারু মজুমদার , কানু সান্যাল আর জঙ্গল সাঁওতাল - এই ত্রয়ী মিলে নকশাল আন্দোলনের সুনামী নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন । শাসকদলও নানা প্রকার উৎপীড়নের সাহায্যে আন্দোলনকে দমন করতে প্রস্তুত হয়েছেন। 

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই তরঙ্গ এইরূপ আঘাত হেনেছে যে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এক অসম প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে - কে এই নকশাল বাহিনীতে যোগদান করতে প্রস্তুত।


দিগন্ত চৌধুরীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী নির্মম অত্যাচার করে নকশালপন্থীদের নাকাল করছেন । তখন তিনি জঙ্গলমহলের একটি মাও-অধ্যুষিত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দিবস যামিনী এতই ব্যস্ত রয়েছেন যে সংসারের সংবাদ নেবার অবকাশ নেই। গৃহে ধর্মপত্নী মধুপর্ণা দেবী নি:সঙ্গ কাল যাপন করছেন । একমাত্র পুত্র কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যয়ন রত। প্রতি মাসে একবার বাটিতে এসে থাকে। ইদানিং তা'ও বন্ধ। 


দিগন্ত চৌধুরী থানায় বসে আছেন। একটি গোপন পত্র এল লালবাজার গোয়েন্দা বিভাগ থেকে। তিনি পত্রটি হস্তে নিয়ে ইতস্তত করতে লাগলেন - খুলে দেখবেন কি না । হয়তো কোন বিশেষ নির্দেশ থাকলেও থাকতে পারে । পত্রটি খুলতে যবেন; অনুচর রামশরণ যাদব - যে তাঁর গাড়ির চালক - এসে নিবেদন করল -

'স্যার নয়াগ্রাম নামক গ্রামে নকশালদের দুষ্কৃতি তাণ্ডবে একই পরিবারের পাঁচ জন সদস্য নিহত হয়েছে। বেতার মারফত ঝাড়গ্রাম থানায় বার্তা এসেছে।


দিগন্ত চৌধুরী লম্ফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। পত্রের কথা তখন তিনি বিস্মৃত হয়েছেন। তড়িঘড়ি রামশরণকে নির্দেশ দিলেন - গাড়ি রেডি কর; কুইক। এক্ষুণই নয়াগ্রাম যেতে হবে।


থানার সেকণ্ড অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে চলে গেলেন। পত্রটি টেবিলেই পড়ে রইল ।


সেকেণ্ড অফিসার পত্রটি দেখলেন। গোপনীয় বলে তাঁর খুলবার নির্দেশ নেই। বর্তমান কালের ন্যায় সেই সময় মোবাইল ফোনের উদ্ভব হয় নাই । থানায় ফোন রয়েছে, কিন্তু সে তো সরাসরি বাক্যালাপের জন্য । সুতরাং সাহেবের সহিত যোগাযোগ করলেন বেতার তরঙ্গ মারফৎ। পত্রের কথা উঠতেই দিগন্ত চৌধুরী জিভ বের করে স্বগতোক্তি করলেন - এই যা: ।

তিনি তৎক্ষণাৎ সেকেণ্ড অফিসারকে নির্দেশ দিলেন পত্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে।

দ্বিপ্রহর গড়াল । তিনি প্রত্যাবর্তন করছেন না দেখে মধুপর্ণা দেবী উৎকন্ঠিত হলেন। এই স্থানে প্রতি পদক্ষেপে বিপদ লুকিয়ে আছে। কোন অঘটন ঘটল কি না তা' জানবার অবকাশ নেই। কারণ দিগন্ত চৌধুরী থানায় নতুন এসেছেন ; তাঁর বাটিতে টেলিফোন সংযোগ তখনও হয় নাই। 


অগত্যা মধুপর্ণা দেবী পুলিশ প্রহরায় থানায় উপস্থিত হলেন। যথাযোগ্য অভ্যর্থনা করে সেকেণ্ড অফিসার বললেন - স্যার তো নয়াগ্রাম গেছেন ইনভেস্টিগেশনের জন্য।

তথাকার ঘটনা সংক্ষেপে নিবেদন করলেন। মধুপর্ণা দেবী আশ্বস্ত হয়ে বাটিতে ফিরে গেলেন।

বৈকালে দিগন্ত বাটিতে এলেন। স্নানাদি কার্য্য সমাপন করে খাবার টেবিলে আসার আহ্বান শুনলেন। অদ্য তাঁহার ক্ষুধা তৃষ্ণা সকলই মিটে গিয়েছে। 

স্ত্রী বললেন - ক্ষিধা নেই কেন? ব্রেকফাস্টও তো অল্প করেছ ?

- না আর এই বেলায় কিছুই খাব না। শোন, তুমি খেয়ে নাও ; তারপর একবার নিকটে এস , গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

মধুপর্ণা দেবীরও ক্ষিধা অস্তমিত হয়ে গেল। এমন কি প্রকার কথা থাকতে পারে !

তিনি অন্নজল গ্রহন না করেই স্বামীকে বললেন - বল, কি কথা? জান তো, আমার ভীষণ ভয় করছে!

দিগন্ত আশ্বস্ত করলেন - আরে বাবা, তেমন কিছু না। খেয়ে এস। বলছি।

মধুপর্ণা দেবী তাঁর কথায় কোনরূপ মনোযোগ না দিয়ে বললেন - আগে বল, কি কথা ?

- তোমার ছেলে !

দিগন্ত চৌধুরী কিয়ৎক্ষণ চুপ করে রাইলেন। মধুপর্ণা দেবী আরও ভয় পেয়ে বললেন -

আমার ছেলে কি ? আমার ছেলের কি হয়েছে ?

কিছু হয় নি । যা' ভাবছ তার কোনটাই ঠিক নয়।

- তবে ? কি করেছে আমার ছেলে ?

- নকশালদের দলে নাম লিখিয়েছে। গোপন বার্তা এসেছে হেড কোয়ার্টার থেকে !

মধুপর্ণা দেবী কাঁদতে লাগলেন। 

- বলেছিলাম ছেলেকে কলকাতায় পাঠিও না ; শুনলে না আমার কথা ! এখন কি হবে ?

কি হবে তা' দিগন্ত চৌধুরীর মত জাঁদরেল পুলিশ অফিসারের অজ্ঞাত নয় । তথাপি স্ত্রীকে আশ্বস্ত করিতে লাগিলেন - দেখা যাক, কি করা যায় ! তুমি অতশত ভেবো না। কিছু একটা বন্দোবস্ত করব।

মধুপর্ণা দেবী আশ্বস্ত হলেন কি না জানা নাই। তিনি শয্যাগ্রহন করিলেন। কারণ আর অন্য কিছু নয় ; কারণ তাঁর স্বামী শ্রীযুক্ত দিগন্ত চৌধুরী মহাশয় স্বয়ং । 

মধুপর্ণা বিলক্ষণ জানেন এখন নকশাল আন্দোলন দমনের জন্য সরকার অতি কঠোর মনোভাব নিয়েছেন। এক্ষেত্রে দিগন্ত চৌধুরীর মত অনুশাসক দ্বিতীয়টি কেউ নেই । তিনি যে সরকারি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন তা' সর্বজনবিদিত । সুতরাং শয্যা গ্রহন ব্যতীত মধুপর্ণা দেবীর দ্বিতীয় কোন পন্থা ছিল না । 

সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ঘনঘন জ্ঞান হারাতে লাগলেন । দিগন্ত চৌধুরী পত্নীকে নিকটস্থ হাসপাতালে এডমিট করে চললেন থানায় ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror