STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Horror Classics Crime

4  

Nityananda Banerjee

Horror Classics Crime

অশান্ত জীবন

অশান্ত জীবন

3 mins
30

অশান্ত জীবন (২)


আহার সমাপনান্তে দিগন্ত চৌধুরী যখন পাকশালা থেকে নির্গত হয়েছেন ততক্ষণে দিনমণি নিদ্রাজগতে প্রস্থান করেছেন । 


পূর্ণমাসীর রাত্রি। পূর্ণচন্দ্র গগনে বিরাজমান। নিকটবর্তী সঙ্গমতটে নিশাকরের রূপালী আলোক প্রতিফলিত হয়ে সন্ন্যাসীর মুখমণ্ডলে পড়েছে । এক অপূর্ব অদৃষ্টপূর্ব যাদুজালে দিগন্ত চৌধুরী মোহিত হয়ে সন্ন্যাসীর দিকে চেয়ে রইলেন । দিব্যজ্যোতি যেন মুখে নেমে এসছে। কঠমূলীর সানুদেশে সন্ন্যাসী ধ্যান করছেন।


শ্রীমান দিগন্ত চৌধুরী এতদৃশ অপার্থিব পরিস্থিতি অবলোকন করছেন। 


এমতাবস্থায় সন্ন্যাসী পুনরায় তাঁকে নিকটে আসতে নির্দেশ দিলেন । দিগন্ত নিকটে এলে সন্ন্যাসী বললেন - ভদ্রে ! তুমি এক্ষণে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে পড়েছ ; অতএব তোমার বিশ্রাম অতি প্রয়োজন। কিন্ত এইখানে তোমার মত মানুষের উপযুক্ত বিশ্রামাগারের অভাব রয়েছে। আমি নিতান্তই সন্ন্যাসী ; শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এই বৃক্ষতলের পর্ণকুটিরেই অতিবাহিত করি । এমতাবস্থায় তুমি কি সেথায় থাকতে পারবে ?


দিগন্ত সন্ন্যাসীর এই অভুতপূর্ব আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে বললেন - আমি আবার মানুষ ! যে নিজের সন্তানকে ..


- জানি বৎস । সন্ন্যাসী তাঁকে অতিরিক্ত কিছু বলার পূর্বেই বলে দিলেন -

 'তুমি স্বহস্তে আপন সন্তানকে হত্যা করেছ এবং পরোক্ষে তোমার স্ত্রীও বলতে পারি খুনই হয়েছেন।'


দিগন্ত যারপরনাই বিস্মিত হলেন । সন্ন্যাসীর তো এই সকল ঘটনা জানবার কথা নয়। কোথায় ঝাড়গ্রাম আর কোথায় এই হিমগিরির ললিত লবঙ্গ রসের ধারাস্রোতের তীর !

 সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলেন -

'আপনি জানলেন কি প্রকারে ?

- তোমাকে পূর্বেই বলেছি ; আমি তপস্বী এবং মনুষ্য দেখে তার অতীত সম্পর্কে জানতে পারি। আমি ধ্যানযোগে তা' প্রত্যক্ষ করেছি । তুমি রাষ্ট্রীয় কৃত্যক। উঁচু পদে কর্মরত ছিলে। রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলে ! 


তিনি সঠিক বলছেন কি না তা' নিশ্চিত করতে প্রশ্ন করলেন - কি ? আমি ঠিক বলছি ?


দিগন্ত এমনিতেই অত্যন্ত ক্লান্ত এবং পরিশ্রান্ত ছিলেন । তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পূর্বেকার কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ স্মরণ করতে লাগলেন।


সন্ন্যাসী বললেন - এই স্থানে নিদ্রা নিষিদ্ধ। বুঝতে পারছি তুমি অতিশয় ক্লান্ত। যাও, গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে বিশ্রাম গ্রহন কর। সূর্য্যোদয় হলে তখন আলোচনা করব।


মোহাবিষ্ট দিগন্ত গর্ভগৃহে প্রবেশ করলেন। লতাপাতার প্রাচীরবেষ্টিত অন্ধকার গৃহে তৈলপ্রদীপ জ্বলছে। মহাকালেশ্বর শিবশঙ্করের পদতলে পড়ে গেলেন এবং নিদ্রাভিভুত হয়ে শয়ন করলেন ।


সন্ন্যাসী সান্ধ্যকৃত্য সমাপন করে পুনরায় সিদ্ধপীঠের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন । 


স্থানটি সমুদ্রতল থেকে অন্তত সার্দ্ধদ্বিসহস্র ফুট উঁচুতে। হিমালয় পর্বতমালার অন্তর্গত একটি দুর্গম স্থান। সচরাচর মনুষ্যগন ওইস্থানে গমন করে না। পশুপক্ষীর অবাধ বিচরণক্ষেত্র । তথাপি হিংস্র শ্বাপদের বাহুল্য নাই । কিন্তু সর্পকুলের বাসযোগ্য এলাকা। স্থানে স্থানে গুল্মলতার ঝোপ। যোগীবরের সিদ্ধপীঠ সেই রকমই একটি স্থান ।


দিগন্ত চৌধুরীর তন্দ্রা ঘণীভূত হয়েছে কিন্তু তা' নিদ্রায় পর্যবসিত হয় নাই। তিনি তখন কল্পলোকের বাসিন্দা। স্বপ্নে গত কয়েকদিন পূর্বে ঘটে যাওয়া অঘটন পুনশ্চ পর্য্যবেক্ষণ করছেন।

গৃহমধ্যে তুমুল বাদানুবাদ চলছে । মধুপর্ণা এবং তাঁরই ঔরসজাত একমাত্র সন্তানের মধ্যে । উপলক্ষ্য তিনি স্বয়ং । নিজ পিতাকে হত্যা করবার উদ্দেশ্যে প্রান্তরের অকস্মাৎ আগমন । মাতৃদেবীকে বিধবার বেশ ধারণ করতে বাধ্য করা । অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধর্মের বিরোধীতা করা । একজন সতী-সাদ্ধী রমণীকে বৈধব্য প্রদর্শণে প্ররোচিত করা ।

পত্নীর এই দশা দেখে পতির পৌরুষ আঘাতপ্রাপ্ত হলে দিগন্ত চৌধুরীর মত দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ অফিসারের আগামী কর্মসূচি প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে পুত্রকে শিক্ষা দিতে অবশেষে দিগন্তের কোমরের পিস্তল হাতে তুলে নেওয়া ।

প্রথম গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পত্নীর বক্ষ বিদীর্ণ করে তাঁকে ভূপাতিত করে অবশিষ্ট পাঁচটি গুলি উপর্য্যূপরি প্রান্তরের দেহে গেঁথে দেওয়া । 

দিগন্ত সত্যিকারের স্বপ্ন দেখছেন । জগৎ সংসারের নির্দিষ্ট নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে সরকারি আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন দিগন্ত চৌধুরী । 

না ! কোন অনুশোচনা বা দুঃখ বেদনা তাঁকে দুর্বল করে দিতে পারেনি । তিনি সরকারি নির্দেশ পালন করেছেন মাত্র । পার্থক্য শুধু এই - যা করেছেন সবই আপন কর্মফল বলেই মেনে নিয়েছেন । 


সন্তানকে হত্যা করায় তাঁর কোন আক্ষেপ নেই ; কিন্তু কপাল দোষে যে পত্নীও অকালমৃত্যু বরণ করবেন ....

দিগন্ত চৌধুরী কল্পনা করতে পারছেন না । অথচ কল্পনাতীত ঘটনা ঘটিয়ে দিয়েছেন । না , এতেও তাঁর কোন অনুতাপ নেই । কঠিন কর্ম সমাধা করতে গেলে সকল নিয়ম পুঙ্খানুপুঙ্খ মানা সম্ভব নয় । এ ছাড়া সত্যিই তো ! পত্নীর মৃত্যু যে নিতান্তই কাকতালীয় - অনিচ্ছাকৃত । তিনি তো তাঁকে মারতে গুলি করেননি ! তথাপি ..

পুত্র নয় ; পত্নীর মুখাবয়ব তাঁর মনশ্চক্ষে ফুটে উঠল । বিধবার বেশ , সিঁথিতে সিঁদুর বিন্দু তখনও জ্বলজ্বলে। 

মনে পড়ল মায়ের প্রতি সন্তানের উক্তি ' থান শাড়িতে মানিয়েছে ভালো মা ; কিন্তু সিঁথিটা বড়ই বেমানান ' ।

চক্ষুদ্বয় অশ্রুতে ভারাক্রান্ত হল দিগন্ত চৌধুরীর । এই তাঁর আদর্শ সন্তান । যাকে নিয়ে তাঁর গর্বের অন্ত ছিল না । হা ঈশ্বর !


( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror