Imran Hassan

Abstract Tragedy Thriller

4.8  

Imran Hassan

Abstract Tragedy Thriller

সাইকো পর্ব তিন

সাইকো পর্ব তিন

5 mins
790


Part 1 link:- https://storymirror.com/read/story/bengali/95taktm5/saaiko/detail

 Part 2 link:-https://storymirror.com/read/story/bengali/gf9vzstq/saaiko-prb-dui/detail

      মধুচন্দ্রিমার রাত—এই সাজানো বাংলো বাড়িতে। ইয়েট ভাসল ভূমধ্যসাগরের শান্ত জলে, গর্বিতা রাজহংসীর মতো এগিয়ে চলল তা। এই রাত তোমার আমার, কবি সাহিত্যিকরা কত ভাবে এই মধুচন্দ্রিমার গল্প কথা শুনিয়েছেন আমাদের। সেই অলৌকিকরাও নেমে এসেছিল তার সমস্ত স্বপ্নিল তন্দ্রা নিয়ে। ভরে উঠেছিল রবার্তোর মন। শরীর এবং চেতনাপুঞ্জ। বেজেছিল অধিরাস্তজল তরঙ্গ। সেতারে ঝিঝুটি, সরোদে হংসধ্বনি। তারপর..... যখন সকাল হল, পাশে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত মেয়েটিকে দেখে এক বুক ঘৃণা এবং অভিমান এসেছিল রবার্তোর মনের মধ্যে। ভেবেছিলেন তিনি, হায়, আমি কেন একেবারে নিষ্পাপ হলাম না? কেন আমার শরীরের এখানে সেখানে লেগে আছে স্বৈরিণী সর্বনাশিনীর সোহাগচিহ্ন।

     বেচারী মেয়েটি মেরিনিয়া, ভেবেছিলেন এই পৃথিবী বুঝি সত্যি এক স্বর্গ, সদ্য বিবাহিতা জীবন কাটছে লঘুপক্ষ বলাকার মতো আকাশে উড়ে উড়ে। অর্থের কোনো অভাব নেই। কিন্তু কদিন বাদেই মেরিনিয়া অনুভব করলেন, রবার্তোর মধ্যে একটা আশ্চর্য মানসিক রোগ বেঁচে আছে। অসম্ভব রাগী এবং জেদি। মাঝে মধ্যে এমন উদ্ভট বায়না করে বসেন, যা রাখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সামান্য এদিক ওদিক হলে হিংস্র মুখ বেরিয়ে আসে ওই সুন্দর মুখোশের আড়াল থেকে। নিজের স্বামীর এই পরিবর্তন দেখে নিজেই কেমন যেন অবাক হয়ে যান মেরিনিয়া। এই মানুষটির সাথে জীবনের বাকি দিনগুলি থাকতে হবে তাঁকে? তখনই একটা তীব্র অপরাধবোধ এসে বেচারী মেরিনিয়ার সমস্ত শরীর আচ্ছাদিত করে। শারীরিক অত্যাচারের মাত্রা তখন ক্রমশ বেড়ে উঠেছে। মুখ ফুটে কারো কাছে একথা বলবেন কী করে মেরিনিয়া? মা-বাবার একমাত্র কন্যা সন্তান তিনি। বড়ো আদরে আবদারে কেটে গেছে তাঁর সোনালী শৈশবের দিনগুলি। বাবার কাছে সবকথা খুলে বললে তিনি যদি আহত হন। হার্টের রোগী, যেকোনো সময় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। ডাক্তারবাবু পইপই করে বারণ করেছেন, তাঁর সামনে এমন কোনো কথা না বলতে, যা তাঁর মনে টেনশন এনে দেবে।


   অতএব পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে মেরিনিয়া নিশ্চুপ থাকাটাই ঠিক বলে মনে করেছিলেন। যদি না করতেন তাহলে তাঁর জীবন-নাটক আজ হয়তো অন্য ভাবে লেখা হত। সব ঘটনারই বুঝি একটা প্রেক্ষাপট থেকে যায়। আর এক্ষেত্রেও ঠিক তেমন ভাবেই ঘটনাটি এগিয়ে চলল তার কাঙ্খিত অথচ ট্র্যাজিক পরিসমাপ্তির দিকে।

    মধ্যদিনে হঠাৎ বেসামাল হয়ে উঠেছিলেন রবার্তো। সেই অর্থে তাঁকে বেহেড মাতাল বলা যায় না। বন্ধু-বান্ধবদের সংসর্গ ইদানিং ত্যাগ করেছেন একেবারে। সারাক্ষণ কী যেন চিন্তা করেন মনে মনে। কখনও বা কাগজের ওপর হিজিবিজি আঁকিবুকি আঁকেন। মেরিনিয়া কতবার ভেবেছেন, তাঁকে নিয়ে এক সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যাবেন। কিন্তু রবার্তোর কাছে সেকথা বলবেন কেমন করে? দু-একবার আভাসে ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে রবার্তো ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। গলা টিপে খুন করতে এসেছেন, গায়ে আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েছেন, পায়ের তলায় গরম ইস্ত্রি। কোনো কিছুই তো বাদ যায়নি। ভাগ্যিস, কাছে-পিঠে কেউ থাকে না। না হলে এই আর্তনাদ বোধ হয় পাশের বাড়ির মানুষকে আকৃষ্ট করত। সেই রাত, জানি না, কোন বিধাতা কীভাবে তা নির্ধারণ করেছিলেন। ঘুমন্ত মেরিনিয়াকে দেখে হঠাৎ কেমন যেন হয়ে গেলেন রবার্তো। যথেষ্ট মদ্যপ ছিলেন তিনি। না, এখন আর এই মেয়েটিকে স্পর্শ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা জেগে নেই তাঁর মনের মধ্যে। এখন কেবলই মনে হচ্ছে, নারীজাতি আমাদের সর্বনাশ করে। থাকে। মানুষের সমস্ত ধ্বংসের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক। যে করেই হোক, এই মেয়েটিকে পৃথিবী থেকে অন্য কোথাও পাঠতে হবে। কাল সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমি যেন এর মুখদর্শন না করি। 

       কথা রেখেছিলেন রবার্তো সত্যি সত্যি। পরদিন সকালে পৃথিবীর কোথাও মেরিনিয়াকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছিল, মাঝরাতে হঠাৎ এক দৈবদুর্ঘটনায় সমুদ্র সাগরের অতল তলে তলিয়ে গেছেন তিনি। কত টাকার বিনিময়ে এই ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়, আমরা তার হিসাব নিকাশ জানি না। 

   অথচ, আমরা জানি, রবার্তো কিন্তু আগের থেকে আরও বেশি হৃদয়হীন হয়ে গেছেন এখন। এখন তিনি মহিলাদের প্রতি আরও বেশি নৃশংস হয়ে গেছেন। কারো সাহচর্য আর সহ্য করতে পারেন না। মাঝে মধ্যে বুটিকে বসে থাকেন, কিন্তু চোখের কোণে কোথায় খেলা করে এক আশ্চর্য বিষণ্ণতা। এই পৃথিবীর সবকিছুর প্রতি তাঁর তীব্র অনীহা।

       

         লুই-এর এখন বয়স হয়েছে। একমাত্র সন্তান রবার্তো তাঁকে ঘিরে কত না স্বপ্নের জালবোনা। লুই বুঝতে পারছেন রবার্তোর মানসিকতার মধ্যে কোথায় একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। হয়তো স্ত্রীর মৃত্যুর খবরটা এখনও পর্যন্ত রবার্তো মনেপ্রাণে মানতে পারেননি। তাই সবসময় একা একা থাকতে ভালোবাসেন। অল্পবয়স, সামনে সোনালী ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। নারী বিবর্জিত দিন কাটাবেন কেমন করে? অথচ, ছেলেকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দেবেন এমন সাহস এবং সামর্থ্য দুইই লুই-এর নেই। ছোটোবেলা থেকে তিনি কখনও রবার্তোর ওপর তাঁর নিজের ইচ্ছার বোঝা চাপিয়ে দেননি। তিনি চেয়েছিলেন রবার্তো যেন নিজের মানসিকতা নিজেই গড়ে নিতে পারেন। এই কাজে সফল যে হননি, ঘটনা পরম্পরা তা প্রমাণ করছে। 

    রবার্তো আবার প্রেমে পড়লেন। প্রেম, না ইমফ্যাচুয়েশন আগের মতো সেই প্রশ্নটা করতে ইচ্ছা জাগছে আমাদের। যে রবার্তো নারী জাতিকে সর্বনাশের প্রতীক হিসাবে চিন্তা করেন, শরীর সর্বস্বা বিনোদিনী বিলাসিনীদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে ভালোবাসেন, তিনি কিনা শেষ পর্যন্ত ইসাবেলা নামে দেশীয় এক তরুণীকে গভীরভাবে ভালোবাসলেন। শুধু কি তাই?     এখানে সেখানে অন্য কোনোখানে তাঁর সাথে মিলিত হলেন বেশ কয়েকবার। মন থেকে উড়ে গেল বিষাদের চিহ্নগুলি। রবার্তোকে দেখে মনে হল তিনি বোধহয় আবার আঠারোর তাজা যৌবনের দিনে ফিরে গেছেন। তখন তাঁর স্মৃতিতে ভবিষ্যতে শুধু ইসাবেলার অবস্থান। ইসাবেলাকে ছাড়া এক মুহূর্ত কাটাতে পারছেন না, এমনই এক মানসিক অবস্থা হয়েছে রবার্তোর। 

         শেষ অব্দি ঠিক হল, এই দেশিনীকে তিনি বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ করবেন। রবার্তোর পেডিকুই অর্থাৎ বংশ পরিচয় শুনে যে কোনো কন্যাসন্তানের পিতা লালায়িত হবেন, এতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে? যে ছেলেটি দিনের পর দিন পায়ের ওপর পা রেখে নিশ্চিন্তে কাটাতে পারেন, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স অথবা সম্পত্তির পরিমাণের কোনো হিসাব নিকাশ নেই, তাঁকে জামাই করতে কার না আহ্লাদ হয় ? রবার্তোকে দেখে তো তাঁর মন-গহনে লুকিয়ে থাকা নিষ্ঠুরতার পরিচয় পাওয়া যায় না। বিধাতা তাঁকে এভাবেই তৈরি করেছেন। কুৎসিত মুখের ওপর এঁটে দিয়েছেন এমন এক সুন্দর মুখোশ, যা দেখে আমরা সকলে কমবেশি বিভ্রান্ত হই। অবশেষে আবার ল্যাটিন মন্ত্র উচ্চারিত হল মহাত্মা যিশুর সামনে। চুক্তি পত্রে  সই করা হল। মঙ্গল ঘন্টা বেজে উঠল। তারপর? বিশাল বাগানবাড়িতে সে কি সমারোহ? দিনের পর দিন শুধু লাঞ্চ আর ডিনারের আমন্ত্রণ। বন্ধুবান্ধব, পরিচিত প্রিয়জন, ব্যবসার পার্টনার সকলকে বলেছিলেন লুই। এব্যাপারে তাঁকে দোষ দেওয়া উচিত নয়। ছেলের যে আবার মতি ফিরেছে, এ তো বড়ো আনন্দের খবর।

Part 4 link :- https://storymirror.com/read/story/bengali/jjj4uhm2/saaiko-prb-caar/detail



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract