Rima Goswami

Comedy Drama Others

3  

Rima Goswami

Comedy Drama Others

প্রচন্ড কুঁড়ের .. শেষ পর্ব

প্রচন্ড কুঁড়ের .. শেষ পর্ব

7 mins
266


দীর্ঘদিন ঘরে আটকে থেকে এবার যে বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি বেড়ানো। বহুদিন ধরেই করোনার করুনায় সকলে গৃহবন্দী, আমিও । মন আঁকপাঁক করছে সকলের কি করে মুক্তি পাওয়া যাবে এই করোনার হাত থেকে ? আবার কবে ঘুরতে যাবো হই হই করে ? কেউই এর সদুত্তর দিতে পারছে না। পারছি না তাই বেশী করে ভাবতে হচ্ছে সত্যি আমরা বেড়াতে যাই কেন? আমার লেখাটা কাটা ঘায়ে নুনের ছেটা মনে হতে পারে। শেষ পর্যন্ত থাকুন আশা করি আপনাদের ভালো লাগলে লাগতেও পারে সাদামাটা আমার ভ্রমণ ডাইরি । তো যেই পর্যন্ত বলে আগের পর্ব শেষ করেছিলাম ... আমরা ট্রেনে করে যোধপুর থেকে জাইসেলমির গেলাম । স্টেশনে নেমে দেখি রেললাইন ওই স্টেশনেই শেষ । এর আগে আর রেল লাইন পাতা নেই । জানলাম এর পর আর পথ শেষ মানে পাকিস্তানের বর্ডার । নতুন অভিজ্ঞতা হলো , আবারও উঠলাম রেলের ডমেন্টারিতে । চারদিকে পাথরের তৈরি ঘরবাড়ি সবকিছু , শহরটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা যেন । ডমেন্টারিতে উঠেই ব্যালকনি থেকে আবিস্কার করলাম সোনার কেল্লা । সেই বাঙালির নস্টালজিয়া শ্রী সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা ! আমি তো রীতিমতো চিৎকার জুড়ে দিয়েছি ততক্ষণে ... ইউরেকা ইউরেকা । আমার কর্তা তো আমাকে দেখে হেসে কুটপাটি । আসলে বইয়ে পড়া বা চলচ্চিত্রে দেখার থেকে সামনে থেকে সেই আকাঙ্খিত দৃশ্য দেখার যে কি আনন্দ তা বলে হয়ত বোঝানো যাবে না । শিক্ষা ভ্রমণের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, অপরিচিত অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নতুন দক্ষতা বা জ্ঞান লাভ করার। অনেকের মতে উচ্চ বিদ্যালয় বা কলেজের ক্লাসের চেয়ে বিশ্ব দেখা বেশী শিক্ষামূলক। এই যে সবটা চোখের সামনে দেখে এসেছি কত বছর আগে তবে লিখতে বসে যেন সবটা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি । ইট পাথরের শহরে অভ্যস্ত আমার যেন মনে হচ্ছিল কোন স্বপ্নের দেশে আছি আমি । কি সুন্দর একটা জায়গা জাইসেলমির । নিজের পরিচিত পরিবেশের বাইরে গেলে প্রতি দিনের সমস্যা ও সুযোগ এবং সেগুলোকে নিজেই অতিক্রম করে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার নিজের আসল ক্ষমতা ও দুর্বলতা গুলোকে এবং জীবনে কী চান তা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরবেন। এই ভ্রমন আমার মধ্যে একটা পরিবর্তনের বীজ বপন করেছিল বৈকি ?

ছোট থেকেই জানি মরুভূমি মানে গরম , আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন তো শীতকাল তাই দিনের বেলাটা বেশ আরামদায়ক ছিলো ওখানে তবে সূর্যাস্তের পর থেকেই শীতের তীব্রতা আমাদের হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিত । সেদিন পৌঁছে আমরা খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে গেলাম বেড়াতে । কন্টাক্ট হলো লোকাল টুরিস্ট গাইডের সাথে ওরা আমাদের কয়েকটা জৈন মন্দির দেখিয়ে থর মরুভূমি নিয়ে যাবে । গাড়িতে উঠে বসলাম সঙ্গে আনা ফ্যান্সি জামাকাপড় তখন শীতের জন্য শিকেই তুলে জিন্স প্যান্ট ও টপ গলিয়ে কর্তার একটা ওভার কোট নিয়ে নিয়েছি সঙ্গে । থাক বাবা কথাতেই আছে রেঙ্গা মরে শীতে ...

আমার ফ্যান্সি হেয়ার ব্যান্ট , ক্লিপ , টুপি সব ফেলে পারলে একটা মাঙ্কি টুপি পড়ি এমন হাল । আমরা জৈন মন্দির গুলি দেখে এগিয়ে গেলাম থর । কিছুটা গিয়ে গাড়ি থেমে গেল আমরা সকলে জোড়ায় জোড়ায় উটে চেপে বসলাম । দুলকি চালে উট আমাদের নিয়ে গেল মরুভূমির বুকে । মরুপথে হেলেদুলে উট চলছে। ভয়ংকর সেই দুলুনি।

পিছন থেকে শ্যামল দা , ভোলা দা আর নন্দাই খুব হাসছে আর বলছে আরে উটটা বোধহয় মরেই যাবে এদের চাপে । আসলে আমি আর কর্তা দুজনেই লম্বা চওড়া আর চেপেছি একটি উটে তাই এত ক্যাওস । মরুভূমিতে নেমে তো সাড়া গা টাটিয়ে ছুঁচ । ওই উটের দুলকি চালের দাম আর কি । জীবনে প্রথম মরুভূমি দেখলাম তখনো কিন্তু সাগর , পাহাড় , জঙ্গল কিছুই দেখিনি । প্রথম ভ্রমণ মরুর বুকে । মরুভূমি ঘুরে বালুর বুকে সূর্যাস্ত দেখে আমরা এগিয়ে গেলাম বানজারা প্রোগ্রাম দেখতে ।


ডের্জার্ট ন্যাশনাল পার্কে উটের গাড়িতে সাফারি করে সেখান থেকে গেলাম খুরিতে আরও ৩১ কিমি। রাজস্থানের সংগীত-নৃত্য উপভোগ করলাম খুব , গদিতে বসে বসে অনুষ্ঠান দেখছি বানজারা মেয়েরা কফি , চা বিভিন্ন পানীয় দিয়ে যাচ্ছি খাচ্ছি .. কেমন একটা রাজকীয় ভাব । অনুষ্ঠানের শেষে ওদের স্পেশাল রাজস্থানী খাবার খেলাম। যোধপুর ত্যাগ করে থেকে ভাত খেতে পাইনি তাই ওদের খাবার গুলোর মধ্যে উঁকি দেওয়া ভাত দেখে আমার মত ভাত অপছন্দ করা প্রাণীও এগিয়ে গেলাম ভাতের দিকে । পেট পুরে নানা পদ খেলাম যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাল মাস , ঘেবার , ডাল বাতি চুরমা , গটটে কি সবজি , বাজরার রুটি । রাতে যখন মরুর বুক চিরে ফিরছি গাড়িতে তখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে এই নির্জন প্রান্তরে কেউ মেরে ফেলে গেলেও জানতে পারবে না মনে হয় । বাঙালি ভিড়ে থাকতে অভ্যস্ত তার কি এত নির্জনতা সহ্য হয় ? সব দেখলাম মন তবু ওই সোনার কেল্লার দিকে .. চোখের সামনে যা ভাসছে তার কাছে কখন যাবো ? অপেক্ষা করতে হবে সারা রাত কারণ সকালে যাবো সোনার কেল্লা । সকালে ব্রেকফাস্ট করে গেলাম রাজ কা মহল, নাথমলজি কি হাভেলি, পাটোয়া কি হাভেলি, সেলিম সিংজি কি হাভেলি আর গদিসর লেক হয়ে এলাম ডমেন্টারি থেকে কাছেই অবস্থিত সোনার কেল্লাতে । বহু আকাঙ্খিত পাহাড়ের ওপর সত্যজিৎ রায়ের সেই ‘সোনার কেল্লা’। প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও কনকনে শীত এবং শুষ্ক হিমেল বাতাস বইছে। ঠাণ্ডা হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে, তার পরেও এক অজানা ভালো লাগা । রাজপুত রাজা রাওয়াল জয়সল লোদুর্বা থেকে রাজ্যপাট গুটিয়ে থর মরুভূমির মধ্যে ত্রিকূট পাহাড়ে জয়সলমির দুর্গ স্থাপন করেন। আর নিজ নামে জয়সলমির শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। রাজস্থানের চিতোর দুর্গের পর সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গ এটি। শুধু তা-ই নয়, ভারতবর্ষে এটি একমাত্র দুর্গ, যেখানে তৎকালীন অধিবাসীদের বংশধররা এখনো বসবাস করছে । ফোর্টে উঠতে নামতে হাঁপিয়ে ওঠা একদিকে আমি আর ওখানে বাস করা বাসিন্দাদের নিত্য সঙ্গী ওই পথ । সত্যি অবাক হলাম আমি , অভ্যাস শব্দটার কি নিগুর মানে তাই না ?


ঢালু পথ বেয়ে পাঁচটি ফটক পেরিয়ে মূল দুর্গে প্রবেশ করলাম। মূল চত্বরে একদিকে রয়েছে প্রাসাদ, অন্যদিকে জৈন মন্দির। এ ছাড়া সরু সরু পথ দুর্গের অভ্যন্তরে চলে গেছে। গলি দিয়ে এগোচ্ছি। দুই পাশে সোনালি রঙের পাথরের কারুকাজ করা বাড়িঘর। সেগুলোর বাসিন্দারা পর্যটকদের জন্য পুতুল, পোশাক, গয়না, মেটালের জিনিসসহ পাথরের তৈজসপত্রের পসরা সাজিয়েছেন। পুরো দুর্গ পাঁচিলঘেরা এবং পাঁচিলের মাঝে মাঝে বুরুজ রয়েছে, তাতে কামান বসানো। সব দেখলাম মন তো আর ভরে না ফিরতে চাইছি না ডমেন্টারি এদিকে কাল আবার যেতে হবে জয়পুর । কর্তা নিয়ে গেল আমাকে কেল্লার মধ্যেই অবস্থিত বাজারে । উনি জানেন কেনাকাটা আমার খুব পছন্দের বিষয় । ওখানে পাগড়ি , খেলনা উট , গালার চুরি , কাঁচ বসানো রাজস্থানী ব্যাগ কিনলাম । তারপর আবার কবে দেখা হবে তোমার সাথে কেল্লা ? এই প্রশ্ন তাকে চুপিচুপি করে ফিরে এলাম । পথে এক জৈন শপে একটা রাজস্থানী ফাস্টফুড খেলাম খুবই স্বাদু । একটা বড় পাঁপড় টাইপের জিনিসের মধ্যে বিভিন্ন ডাল , আচার সল্যাড দিয়ে একটা চাট । আজও মুখে লেগে আছে সেই স্বাদ । মাছে ভাতে বাঙালি , আমিষখোর বাঙালি আমাদের হাল খারাপ কারণ পছন্দের আমিষ বা ভাত অমিল ওখানে । সব কিছুই নিরামিষ খাবার .. ডিম , মাছ বা মাংসের কারবার নেই । ভাবলাম জয়পুর গিয়ে নিশ্চই খেতে পাবো সব । রাতে কনকনে শীতে পাথরের তৈরি ডোমেন্টারিতে লম্বা ঘুম দিয়ে চললাম জয়পুরের দিকে । পিছনে ফেলে এলাম আমার নস্টালজিয়া সোনার কেল্লা । জয়পুরে পৌঁছে রেলের ডোমেন্টারিতে একটি মাত্র রুম পেলাম । অত গুলো লোক মিলে একটা হলের মত রুমে কোন মতে এডজাস্ট করলাম । দুটো দিনের ব্যাপার এই ভেবে । জয়পুর পিংক সিটি নামেও পরিচিত। এটি ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। ১৮ শতকে শহরটি ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর হিসাবে সায়াই জয় সিংয়ের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল । জয়পুর গোলাপী শহব় নামে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে কারণ প্ৰায় সবগুলো কাঠামো নির্মাণের জন্য একচেটিয়াভাবে ব্যবহৃত হয়েছে গোলাপি রঙের পাথর । আমরা যখন ওখানে গিয়ে পৌঁছাই কোন একটা পরীক্ষার সিট পড়েছিল শহরে । আর যারা পরীক্ষা দিতে এসেছিল যাতায়াত সুবিধার জন্য তারাও রেল স্টেশনের কাছাকাছি ছিলো । তো মনের মতো খাবার তো কোন ছাড় খাবার পাওয়া দুরহ হচ্ছিলো । রুটি চানা ও পাওয়া যাচ্ছিলো না সেই দিন রাতে । সেদিন কোথাও তেমন যাইনি সারাদিন ট্রেনে ধকল । সকালে উঠে আমরা বেরিয়ে পড়লাম হওয়া মহল , জল মহল এসব দেখতে । জানতাম না জল মহল বা হওয়া মহলের ভিতরে প্রবেশ অনুমতি নেই । বাইরে থেকে দেখে চলে গেলাম যন্তর মন্তর , সিটি প্যালেস , বিড়লা মন্দির ।


চলে গেলাম জয়পুরের প্রধান কেল্লাগুলোর দিকে যা শহরের উত্তর-পূর্বে আরাবল্লী পর্বতচূড়ায় অবস্থিত । হাতির পিঠে চাপতে সাহস হলো না তাই জিপে করে গেলাম আমের কেল্লা যার পাশেই অবস্থিত জয়গড় কেল্লা ও নাহারগড় কেল্লা । ওখানেই মাতা রানীর মন্দিরে পুরি সবজি , ফিরনি প্রসাদ খেলাম পেট ভরে । মনে ভয় ছিল আগের দিনের মত যদি খাবার না পাই ফিরে গিয়ে ? সেসব মিটিয়ে সেদিনকার মত ফিরে এলাম রাত করে । পথে দেখেছি সাদা ময়ূর । রাতের বেলা গুঁতো গুতি করে অতগুলো মানুষ শুয়ে পড়লাম বেশ । ঠান্ডায় আমাদের মুখ গুলো লাল বাঁদরের মত হয়ে গেছে । সকালে আবার গেলাম জয়পুরের রাজ মন্দির সিনেমা হলের কাছে । ওখানকার বাজার এলাকায় ঘোরাঘুরি করে কিছু জয়পুরি ওড়না , শাড়ি কিনলাম । তারপর টম্যাটোজ বলে একটা রেঁস্তোরা তে খেতে ঢুকলাম । কথা হয়েছিলো পিজ্জা খাবার কিন্তু যদি একটু ভাত পাই এই লোভে টম্যাটোজ গেলাম । ওরা তন্দুরি রোটি , বাটার পনির , ডাল মাখানি , রাইতা , সল্যাড দিয়েছিলো সঙ্গে ভাতও ছিলো কিন্তু কতটা জানেন ? ওই যে তোতার খাঁচায় আমরা ছোলা দি ! জানেন তো ? ওই সাইজের বাটিতে একটু করে ভাত । বেশ আশাহত হলাম তবু একটু স্নানজলের মত ভাত তো পেলাম ! তাই খেলাম । এসব নিয়ে বেশ ঘোরাঘুরি হলো তারপর রাজস্থানের বাকি দর্শনীয় স্থান গুলো ছেড়ে আমরা আগ্রার দিকে রওনা দিলাম কারণ এদিকে ছুটি শেষ হয়ে আসছে ওদিকে কর্তা কথা দিয়েছেন তাজমহল দেখাবেন । তারপর আর কি এ যুগের শাহজাহান তার মমতাজকে নিয়ে গেলেন তাজমহলের দর্শন করাতে । সে গল্প না হয় আর একদিন করা যাবে । আজ এ পর্যন্তই না হয় থাক ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy