STORYMIRROR

Aparna Chaudhuri

Comedy Drama

5.0  

Aparna Chaudhuri

Comedy Drama

কুট্টুন ২

কুট্টুন ২

4 mins
1.5K


“জানো কুম্ভকন্ন একটা রাক্কশ । সে সিক্স মান্থ ঘুমায়।“ ঠাম্মির কোলে চড়েই বলে উঠলো কুট্টুন। কোলকাতা এয়ারপোর্টে শেখরের বাবা আর মা ওদের নিতে এসেছিলেন। কুট্টুন গেট থেকে বেরিয়ে ওদের দেখেই নির্মলার হাত ছাড়িয়ে, ছুট্টে গিয়ে ওর ঠাম্মি নমিতা দেবীর কোলে চড়ে গেলো। 

“ ওমা! তুমি রাম সীতার গল্প জানো?” কুট্টুনকে আদর করতে করতে বললেন উনি। “এই দেখো! মুখটা একদম বুম্বার মত হয়েছে।“ বুম্বা, মানে শেখরের বাবার উদ্দেশ্যে বললেন উনি। শেখরের বাবা কমলবাবু ওনাকে সমর্থন করে মাথা নাড়লেন, তারপর যোগ করলেন, “ হাসিটাও একদম বুম্বার মত।“

“ঠিক বলেছ। আর বুম্বাও ছোটবেলায় কি দুরন্ত ছিল! তুই একদম তোর বাবার মত। জেরক্স কপি।“ বলে কুট্টুনের গালে একটা চকাস করে চুমু খেলেন উনি। ইতিমধ্যে গাড়ির ড্রাইভার হরিদা ব্যাগ, সুটকেস সব গাড়ির ডিকিতে তুলে দিয়েছে। গাড়ির সামনের সিটে শেখর আর পিছনের সিটে কুট্টুন, ওর মা, ঠাকুমা আর দাদুর সাথে। গাড়ী যথারীতি ট্র্যাফিক বাঁচিয়ে মন্থর গতিতে চলেছে। দাদু আর ঠাকুমা নিরলস ভাবে বুম্বার সঙ্গে কুট্টুনের একটার পর একটা মিল খুঁজে পাচ্ছেন। কুট্টুন প্রায় মিনিট পনেরো অবাক হয়ে শুনল তারপর ঝুঁকে মায়ের কোলে চলে গিয়ে মায়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় জিজ্ঞাসা করলো,” আমাল থবই কি বাবাল মত? তোমাল মত কি কান টান গুলোও হয়নি?

নির্মলা কোনোরকমে হাসি চেপে, ওর কানে কানে বলল ,” তোর কানগুলো একদম আমার মত।“


“মাম্মা আম সীতা কে?”

“ আম নয় রাম। আছেন একজন , তোর ঠাম্মি কে বলিস, তোকে গল্প বলবে।“

বাড়ী পৌঁছেই কুট্টুনবাবু আবার নিজের অবতারে ফেরত চলে এলেন। তীরবেগে সে সারা বাড়ী ছুটে বেড়াচ্ছে।   নমিতা দেবী একটা বাটিতে দুটি রসগোল্লা নিয়ে কুট্টুনকে ডাকলেন,” কুট্টুন সোনা রসগোল্লা খেয়ে যাও।“

নির্মলা দেখতে পেয়ে বলল,” মা ও রসগোল্লা খায় না।“

বলার দেরি ছিল। কুট্টুন ফুল স্পীডে এসে, “ ওগ্গা খাব” বলে নির্মলাকে অবাক করে দিয়ে দুটো রসগোল্লাই চেটেপুটে খেয়ে চলে গেলো।

“খাওয়াতে জানতে হয়!” বলে বিজয়িনীর মত নমিতা দেবী বাটি নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেলেন। নির্মলা মনে মনে নিজেরই মুণ্ডপাত করতে করতে নিঃশব্দে নিজের ঘরে ঢুকে গেলো।

রাতে খাওয়ার সময় নমিতা দেবী ভাত মেখে কুট্টুনকে রামায়ণের গল্প বলে বলে খাইয়ে দিলেন। এবারও নির্মলাকে অবাক করে দিয়ে কুট্টুন নির্বিবাদে করলা , কুমড়ো, রুই মাছ সব খেয়ে নিলো। বাড়ীতে চিকেন না হলে ভাত খাওয়াতে মল্লযুদ্ধ বেঁধে যায়।

পরেরদিন সকাল বেলায় কুট্টুন দাদু আর ঠাম্মির সাথে বেরিয়ে গেলো ঠাকুর দেখতে। নির্মলা শেখরকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো,” হ্যাঁ গোঁ, মা বাবা ওকে সামলাতে পারবেন তো?”

“ হ্যাঁ হ্যাঁ । দেখছো না ও কি সুন্দর মা বাবার সঙ্গে মিশে গেছে! আরে এ হল রক্তের টান বুঝলে।“ শেখরের confident উত্তর। নির্মলার অভিজ্ঞতা কিছুই মিলছে না। কুট্টুনকে ও চিনতেই পারছে না। সত্যি হয়তো রক্তের টান!

দুপুর একটা নাগাদ কুট্টুন বীরদর্পে বাড়ী

ঢুকলো, “আমরা অনেক থাকুল দেকলাম। জান মাম্মা প্যান্ডেলটা না এই ঘরের চেয়েও বড়।“

পিছনে পিছনে কমল বাবু রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে, আর তারও পিছনে নমিতা দেবী, শাড়ীর কুঁচি আর আঁচল কোমরে গোঁজা, মাথার খোঁপা অবিন্যস্ত প্রায় ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে কোনোরকমে এসে বাইরের ঘরের সোফায় বসে পড়লেন, “ সরমা, এক গ্লাস জল দে তো।“

ওনাদের আওয়াজ পেয়ে শেখর যেই বাইরের ঘরে গেছে, নমিতা দেবী ফেটে পড়লেন,” কি দস্যি ছেলে রে বাবা! উফফফ...! সারা প্যান্ডেল আমাদের ছুটিয়ে মেরেছে! একবার মা দুর্গার স্টেজে চড়ে যায়, একবার ঢাকির সামনে গিয়ে নাচে। কোনোরকমে ধরে নিয়ে বাইরে এলাম আমরা। “

শেখর কাঁচুমাচু হয়ে বলল,” হ্যাঁ, নির্মলা বলছিল, তোমরা ওকে সামলাতে পারবে না।“

“সামলাতে পারবো না কেন! সে তুমিও দুরন্ত ছিলে। কিন্তু অবাধ্য ছিলে না। রাস্তায় সেজ-মামার সঙ্গে দেখা । সেজ মামাকে কি বলে জানিস? জানো ,আমি আর আমার মা কুম্ভকন্ন, বাবা বলেছে!“


কমল বাবু একটু গলা খাকরে বললেন,” ছেলেমানুষ বলেছে...”

“আমাদের বুম্বা কক্ষনও ছোট বেলায় এসব বলে নি। “ বলে উঠে গেলেন শাড়ী বদলাতে।

উনি ঘরে চলে যেতেই শেখর ওর বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো,” কি ব্যাপার বলতো? মা এতো গরম হয়ে আছে কেন?”

“তোর মায়ের ইচ্ছা ছিল ছোড়দির বাড়ী গিয়ে একটু গল্প করে আসবে। কুট্টুন যেতে দেয় নি। সে গেটের সামনে গিয়ে বলে এখানে তো দুর্গা ঠাকুর নেই , আমি যাব না। তোর মা অনেক কাকুতি মিনতি করলো। কিন্তু ছেলে অনড়। শেষ পর্যন্ত বলল , শুধু এক কাপ চা খেয়ে...ই বেরিয়ে আসবো। তখন কুট্টুন তোর মাকে কি বলেছে জানিস? কেন বালিতে কি চা ফুলিয়ে গেছে ? “ বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন কমলবাবু।

শেখর হেসে বলল ,” ও ! এই ব্যাপার। “ 

সেদিন বিকালে বাবা আর মায়ের সাথেই ঠাকুর দেখতে বেরলো কুট্টুন। ওর দাদু ঠাকুমা বললেন ওনারা টি ভি তে পূজা পরিক্রমা দেখতে চান। ঠাকুর দেখে, আলো দেখে, আইসক্রিম খেয়ে, দুটো বেলুন কিনে সেদিন অনেক রাতে বাড়ী ফিরল ওরা।

পরের দিন নমিতা দেবীর আর্ত চিৎকারে সকলের ঘুম ভাঙল, “ ডাকাত ডাকাত, এ ছেলে বড় হয়ে ডাকাত হবে। আমার ধম্ম কম্ম কিছু রাখলো না? বউমা ও বউমা শিগগির এসো......”

ঘুম চোখে শেখর, নির্মলা, কমলবাবু সবাই ঠাকুরঘরে ছুটে গিয়ে দেখেন, ঠাকুরের সিংহাসনের উপর কুট্টুনের খেলনা রোবটটা আর লাল গাড়ীটা সাজানো রয়েছে। আর অষ্টধাতুর গোপাল, পাথরের শিবলিঙ্গ, গণেশ, মা তারার ছবি এবং নমিতা দেবীর গুরুদেব মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছেন।

“ কুট্টুন, কুট্টুন “ রাগে চিৎকার করতে করতে শেখর ছুটল কুট্টুনের খোঁজে, পিছনে পিছনে নির্মলা। কুট্টুন কে পাওয়া গেলো ফ্রিজের পাশে, দরজার পর্দার পিছনে। ওকে পর্দার পিছন থেকে একটানে বের করে এনে শেখর চেঁচিয়ে উঠলো,” ঠাম্মির সব ঠাকুরদের তুমি নিচে ফেলে দিয়েছ? জানো ঠাকুর পাপ দেবে?”

নির্মলা কুট্টুনকে শেখরের হাত থেকে টেনে নিজের কোলে তুলে নিলো। নির্মলার গলাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কুট্টুন ওর কানে কানে জিজ্ঞাসা করলো,” ঠাকুল পাপ দিলে কি হয় মাম্মা?” 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy