Rima Goswami

Fantasy Thriller Children

3  

Rima Goswami

Fantasy Thriller Children

কালো বউ

কালো বউ

5 mins
330



স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে তখনকার দিনে বাপ মায়ে আমাদের সোহাগ করে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া তো নিয়েই যেত না , নিবেদন পক্ষে পুরীটাও বিয়ের হানিমুনের জন্য তোলা ছিল । আমাদের ড্রিম ডেস্টিনসন ছিল মামাবাড়ি বা কারো কারো দেশের বাড়ি । পরীক্ষা শেষ করে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদ্যার দেবীকে কিছু দিনের জন্য শয়নে পাঠিয়ে পাড়ি দেওয়া হত ড্রিম ডেস্টিনসন এর দিকে । দেওয়ানদীঘি আমার মামার বাড়ি , আমি হলাম কলকাতার শহুরে মানুষ । সোনামুখ করে ল্যাজ তুলে দৌড় দিতাম মা আর বোনের সাথে এই গ্রামের দিকে । বর্ধমান সদর থেকে সাত আট কিলোমিটার দূরত্বে দেওয়ানদীঘি কাটোয়া রোডে অবস্থিত । যাই হোক ওখানে পৌঁছেই আমাদের অদৃশ্য একটা ল্যাজ ও দুটো ডানা নিশ্চিত গজাত । তাই আমরা দুপুরের ভাত টুকু গোগ্রাসে গিলেই রওনা দিতাম কালো বৌয়ের বাড়ি । কালো বৌ আসলে সম্পর্কে আমাদের মামী হতো । তার নাম কি ছিল জানিনা তবে গ্রাম শুদ্ধু লোক তাকে কালো বৌ বলেই ডাকত । আমরা তাকে সামনে গেলে মামী বলে সম্বোধন করলেও পিছনে তাকে প্রচলিত নামেই ডাকতাম । তার এই নাম হবার কারণে হলো তার ঘোর কৃষ্ণ কালো রঙ । মামী দেখতে শুনতে খারাপ বলা যেত না , লম্বা দোহরা চেহারা । তার মুখ খানি শ্যামা কালীর মতোই মায়াময় , কোমর ছাপানো চুল । মামা ছিল ঠিক উল্টোটা , তার গায়ের রং সাদা ফ্যাসফ্যাসে , পুরুষ মানুষ হিসেবে উচ্চতা ও গড়ন বেশ নীচের দিকে । মামী খুব ভালো ভালো খাবার বানিয়ে খাওয়াতো গেলেই । তার হাতে একটা আলাদাই জাদু ছিল , সেই স্বাদ যে একবার নেবে কোনদিনই ভুলতে পারবে না ।


নাড়ু , ক্ষির দিয়ে তৈরি প্যারা , মুড়কির মোয়া , আচার সব কিছুতেই একটা অন্য স্বাদ মাত্রা পেত । মামাবাড়িতে যাওয়া মানেই কালো বৌ এর কাছে মুখের স্বাদ বদলানো এটা আমাদের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল । আর একটা আকর্ষণ ছিল তার গল্প । সে বড়োই ভালো গল্প বলতে পারত , আর সেই গল্প আমাদের সারা সন্ধ্যা মাতিয়ে রাখতো । মামী নানা ধরনের গল্প বলত তার মধ্যে সেই গল্পটা আজও আমার মনে গেঁথে আছে । সেবার আমি আমার বোন আর মামার তিন ছেলে মিলে গেছি কালো বৌদের বাড়ি , তো সেখানে পৌঁছেই নানা ধরনের খাদ্য সাবার করে ধরলাম তাকে গল্পের জন্য । মামী মুড়ি ভাজছিলো , বললো তোরা বস ক খোলা মুড়ি আছে সেকটা ভেজেই আজ তোদের এক খানা ভূতের গল্প শোনাবো । কিছুক্ষণ পর মামী এসে আমাদের সাথেই বসলো , খড়ের চালের কুঁড়ে ঘরের দাওয়াতে বসে আছি আমরা সবাই । অন্ধকারে নারকেল গাছ আর তাল গাছ গুলো দেখে মনে হচ্ছে কোন লম্বা লম্বা ভূত মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে । মামী বললো তোরা জল পেত্নীর নাম শুনেছিস রে ? মামীর সামনে বসে আছি অথচ অন্ধকারে তাকে দেখতেই পাচ্ছি না । জল পেত্নীর নাম শুনে বুকটা ধক করে উঠলো । বললাম না শুনিনি তুমি বলো । মামী বলতে শুরু করলো ,


তখন আমি ছোট বাচ্চা মেয়ে , যাত্রা পালা দেখতে পাশের গাঁয়ে গেছিলাম । সাইকেলে চেপে বাপের সাথে আসছি রাত হয়ে গেছে বেশ । কালি করালবদনী যাত্রা পালা দেখতে যাবার আগে মা আমাকে এক খান লাল পেড়ে সাদা শাড়ি গাছ কোমর করে পরিয়ে দিয়েছিল আর কপালে লাল টিপ , নাকে রুপোর নথ । শখ করে আমি আলতা পরে ছিলাম পায়ে । বাবা দেখে বলেছিল মেয়ে আমার সাক্ষ্যত কালী গো । যাই হোক ফেরার পথে সাঁকোর পারে একখানা বাওর ছিল । ওর পাশেই আমাদের গ্রামের মুসলমানদের কবর খানা ছিল । সাঁকোর পথটা রাতের দিকে সচরাচর কেউ ব্যবহার করত না । ও পথ ভালো ছিলো না বলেই জানি । তা বাবা তো সাঁকোতে উঠেই তাড়াতাড়ি সাইকেল চালিয়ে যেতে লাগলো কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো দু মিনিটের সাঁকোর পথ কিছুতেই যেন শেষ হয় না ! বাবা বুঝে গেছে তেনারা আমাদের শিকার বানাতে চাইছে । বাবা ঘেমে নেয়ে উঠেছে তবু প্যাডেল করেই যাচ্ছে তবে প্যাডেল করাই সার সাঁকো আমরা পেরোতেই পারছি না । আচমকাই দুম করে বাবা পড়ে গেল সাইকেল থেকে আমিও ছিটকে গেছি দূরে । বাবা চিৎকার করে বললো খুকি পালা , জল পেত্নী খুকি ...

তাকিয়ে দেখি বাওর থেকে উঠে আসছে সাদা সাদা আলোর মত কিছু একটা । বাবা বুঝে গেছে বাঁচার আর উপায় নেই । আমার মাথায় খেলে গেল একটা বুদ্ধি , মরতেই হবে যখন একবার তো বাঁচার চেষ্টা করি ? এটা তো আমাদের দুজনের বেঁচে থাকার লড়াই ! ক্ষেপি মায়ের থানের কবচ খানা হাতে তুলে ধরে বললাম আয় কে আসবি আয় ... আজ তোদের শেষ করেই যাবো আমি । মা কালীর মত গায়ের রং , অমন সাজ তার পর চুল খানি দিলুম খুলে । পরে বাবা বলেছিল আমাকে দেখে নাকি তখন ক্ষেপি মায়ের মতোই লাগছিল । জল পেত্নিরা জলের বাইরে আসে না । ওই খান থেকেই শিকার ধরে তাদের চুবিয়ে মারে বাওরের জলে । আমার ওই রূপ দেখে ওরা ভাবে আমি সত্যি ক্ষেপি মা আর হাতের তাবিজ খানিও ছিল তাই বাবার দিকেও ওরা হাত বাড়াতে সাহস করেনি ।


এক এক করে ঝুপ ঝুপ করে জলের তলে চলে গিয়েছিল । আর এক ক্ষন না নষ্ট করে আমরা ছুটে ছিলাম গাঁয়ের দিকে। পরের দিন বাবা মোড়ল কে সব জানালে তিনি ওই বাওরটা চারদিক থেকে ক্ষেপি মায়ের ধাগা দিয়ে সূর্য ডোবার আগেই ঘিরে দেন । তার পর আর কোনদিন জল পেত্নীদের উপদ্রব ওদিকে হয়নি ।


গল্প শেষ হয়ে গেল রাত অনেক হয়েছে আর পেত্নীর কথা শুনে আমাদের আর সাহস বাকি নেই মামাবাড়ি পর্যন্ত ফিরে যাবার । মামী বললো বাছারা আমি তো আছি ভয় কি ? চল তোদের দিয়ে আসি । হ্যারিকেন নিয়ে মামী আমাদের দিয়ে গেল মামাবাড়ি পর্যন্ত , পিছনে পিছনে যেতে যেতে মামীকে দেখে সত্যি মনে হচ্ছিল যেন স্বয়ং মা কালি আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন । দিদা মামী চলে যাবার পর মাকে বললো দেখ বুবু কালো বৌ আমাদের মা মহামায়ার অবতার যেন , দেখলাম দিদার দুহাত জড়ো হয়ে কপালে ঠেকেছে ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy