AYAN DEY

Action Children Stories Fantasy

1  

AYAN DEY

Action Children Stories Fantasy

গ্লোবিউলিনা

গ্লোবিউলিনা

10 mins
419


৩০২০ সাল , ২রা ফেব্রুয়ারী :

আজ স্কটল্যান্ডবাসী এনরিকস আর্নোল্ড ফিলিপিনসের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় এসেছেন । উদ্দেশ্য একটি বিশেষ ফুল সন্ধান । গ্লোবিউলিনা বলে একটি ফুল ফিলিপিনসের কিছু গভীর জঙ্গলে কিছুকাল যাবৎ ফুটতে দেখা যাচ্ছে । স্থানীয়রা ওই ফুলকে যদিও বা এলিয়েন ফ্লাওয়ার , দানব ফুল বলে থাকে কিন্তু একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্যের কথা শুনে এনরিকস না এসে থাকতে পারেননি ।

পৃথিবীর এখন যা অবস্থা তাতে কারোর শরীরে রক্তের দরকার হলে তা মানুষের শরীর থেকে পাওয়া বেশ দুষ্কর । তার কারণ লক্ষ কোটি নতুন জীবাণুর জন্ম এবং তার ফলস্বরূপ কিছু ব্যাধির জন্ম । এর ফলে শুদ্ধ রক্ত পাওয়া নিতান্ত মুশকিল হয়ে পড়েছে । ফিলিপিনসের এখন ৮০% সমুদ্রের নীচে । এই যে জায়গার কথা আমরা বলছি সেটা মিনদানাও বলে একটি জায়গার কথা যার কিছুটা এখনও অবশিষ্ট ।

শোনা যায় এখানে একটা সম​য় প্রচুর দাঙ্গা ও খুনখারাবি হতো । তারপর গত ৫০০ বছরে ম​ড়ক ও বন্যার জলে প্রচুর লোক এমনিতেই প্রাণ হারিয়েছে । এখন যে গুটিকতক মানুষ রয়েছে তাদের তিলধারণও রীতিমতো সমস্যা হয়ে উঠছে । ওদের মতে গ্লোবিউলিনার মতো দানব ফুলগুলো এর কারণ । ওরা নাকি অদৃশ্য পদ্ধতিতে মানুষের জীবনীশক্তি শুষে নেয় । এনরিকস এই তত্ত্ব না মানলেও একথা সত্যি যে ওই ফুলগুলো খুব একটা সাধারণ ফুল নয় । কেউ কেউ বলেছেন রফ্লেসিয়া ধরণের ফুলের সাথে এর মিল আছে । তবে কেউ এখনও এর পরীক্ষায় আসেননি ।

মিনদানাও এর এক বাসিন্দার সাথে এনরিকস সেবুয়ানো ভাষায় কিছু বলছিলেন । তা শুনে আরেকজন এসে বললো , “ayaw pag-adto didto” অর্থাৎ ওইখানে যাবেন না |

কেন যাবো না জানতে চাওয়ায় যেটা শুনলেন এনরিকস তার বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় :

গ্লোবিউলিনা যে অঞ্চলে ফোটে সেটা মিনদানাওয়েরই একটু ভেতরদিকে । কিছু বাচ্চা খেলার ছলে গিয়ে ওই ফুলের কিছুটা ছিঁড়ে আনে যার সাথে ফুলের খানিক রেণু উঠে আসে । বাড়ি এনে ও থেকে যে নির্যাস বেরোয় তা প্রায় রক্তের মতো ।

ঠিক এই কারণেই গ্রামবাসীর ধারণা ওই ফুল দানব ফুল । সব শোনার পর এনরিকসের যাওয়াটা আরও এগিয়ে এলো । কারণ তাঁর আর তর সই এলো না ।

ভেলভেটের মতো পাপড়িগুলোয় যে তরলবিন্দু জমা আছে তার কিছুটা হাতে লাগতে রীতিমতো অবাক হলেন এনরিকস । ভিতর থেকে যে রেণুগুলো উঁকি দিচ্ছে তার রঙ ঘোর লাল । এনরিকস দেখলেন ওই নির্যাসের সাথে রক্তের কিছু মিল আছে কিন্তু তবু রক্ত হিসাবে ব্যবহার সম্ভব কিনা তা পরীক্ষানির্ভর । নিজে প্রয়োজন মতো রেণু সমেত ফুলের দশ টুকরো করে নিজের বাক্সে যত্ন করে রাখলেন ।


৩০২০ সাল , ১৪ই ফেব্রুয়ারী :

গত হাজার - দেড় হাজার বছর ধরে পৃথিবী যেভাবে বেঁচে থাকার জন্য অযোগ্য হয়ে উঠছিলো তার জন্য ভিনগ্রহে বসবাসের জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া খুব জরুরী হয়ে উঠছিলো । নাসা , ইসরোর মত সংস্থা বহু স্বল্প ইঙ্গিত পাওয়ার পরও তা নিয়ে কনফার্ম করতে পারেনি । তবে বলে রাখা ভালো প্ল্যাটিনো-১ এর কথা প্রথম নাসাই প্রকাশ করে । ওই গ্রহের অনেক কিছু পৃথিবীর সাথে মিললেও অক্সিজেনের মাত্রা মারাত্মক কম । প্রাণীর উপস্থিতি নিয়ে কিছু তত্ত্ব ওরা প্রকাশ করেছিলো তবে ওই কিছু কনফার্ম করতে পারেনি । এমতাবস্থায় চিনাপ্রদেশের একদল মহাকাশচারী ঘোষণা করলেন যে , প্ল্যাটিনো-১ বলে সৌরজগতের বাইরে একটি গ্রহে মানুষ বসবাস করে । ওইখানে তারা নিজে প্রাণের খোঁজ নিয়ে এসেছে । প্রমাণ স্বরূপ তাঁরা কিছু ছবি দেখালেন । সত্যই তাঁরা যে ছবি দেখালেন তাতে ঠিক মানুষের মতই দেখতে কিছু প্রাণী দেখা যাচ্ছে । তারা এক দুইজন হলে কথা ছিলো কিন্তু তারা সংখ্যায় প্রচুর । ওনারা বলেন ১০০০ তো হবেই । 

এই খবর ফিলিপিনসে নিজের বন্ধুর বাড়ি বসে দেখছিলেন এনরিকস । ইয়েন বলে এক পদার্থবিজ্ঞানীর সাথে এনরিকসের আলাপ দুবছর আগে আমেরিকায় কোনো এক সম্মেলনে । ওখানেই কৃত্রিম উপায়ে রক্ত বানানো নিয়ে এনরিকস কিছু বক্তব্য রেখেছিলেন । তাঁর ল্যাবে তিনি অনেকবার বিভিন্ন মিশ্রণ নিয়ে রক্ত তৈরী চেষ্টা করেছেন কিন্তু কিছু বৈশিষ্ট্যের অভাবে তা রক্ত মানা সম্ভব ন​য় । তাঁর এই বিষয়ে কাজের অগ্রগতি খুবই প্রশংসিত হয়েছিলো । জীবরসায়ন নিয়ে তাঁর অমন জ্ঞানের সান্নিধ্যে এসে পদার্থবিজ্ঞানী ইয়েন জন তাঁর সাথে বন্ধুত্ব করেন । খবর দেখে এনরিকস ও ইয়েন রীতিমতো চমকে গেলেন ।

ইয়েন খবরের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে এনরিকসকে গ্লোবিউলিনা নিয়ে রিসার্চের কতটা বাকি জিজ্ঞাসা করলেন ।

এনরিকস বললেন , " লট টু ফাইণ্ড আউট ডিয়ার । ইউ কানট গিভ ইট দ্য স্ট্যাটাস অফ হিউম্যান ব্লাড জাস্ট ফ্রম দ্য সিমিলারিটিস উই আর সীইং উইথ বেয়ার আইস । "

ইয়েন ইংলিশ জানলেও তা একটু কাঠকাঠ । " ইউ জাস্ট টেল মি দ্যাট সাম সিমিলারটিস আর দেয়ার বিটুইন ব্লাড অ্যান্ড গ্লোবিউলিনা ফ্লুয়িড , কারেক্ট ? "

 ইতিমধ্যে এনরিকস গ্লোবিউলিনার কিছু স্পেসিমেন নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা করিয়েছেন । ফলাফল রীতিমতো অবাক করার মতো । মানুষের রক্ত ও ওই ফুলের নির্যাসের উপাদানের মধ্যে অনেক মিল আছে । তবু তাকে কোনোভাবে রক্ত হিসাবে ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে কারণ লোহার পরিমাণ ওতে প্রচুর বেশী আর অণুচক্রিকার পরিমাণ রীতিমতো কম ।

ফুলের স্যাম্পেল নেওয়ার পর ত​ৎক্ষণাৎ দেশে ফিরতে না পারার একটা কারণ ইয়েনের সাথে দেখা করা । পাণ্ডববর্জিত মিনদানাওয়ের গলিগলিতে চেনা কেউ নেই এক ইয়েন ছাড়া ।

আরেকটি কারণ মিনদানাও অধিবাসীদের মনের কথা জানা । এনরিকস জানতে পেরেছেন ওই গ্রামের লোকেরা কেন ভ​য় পায় । সেদিন যে লোকটা তাঁকে ওই ফুলের অঞ্চলে যেতে বারণ করেছিলো তার থেকে এনরিকস কিছু অদ্ভুত ব্যাপার জেনেছেন ।

গত ১০০ থেকে ২০০ বছরের মধ্যে মিনদানাও থেকে প্রচুর লোক গায়েব হয়ে গেছে ।

এনরিকস জানতে চেয়েছিলেন বিশদে । তাতে শুনেছেন : গত দুশো বছর ধরে ক্রমাগত লোক ওই ফুল তোলার অঞ্চলে নিখোঁজ হয়েছে । আর একেকজনের ভ্যানিস হওয়ার পরে একেকটি ফুলও কেমন উবে গেছে ! তাই ওদের সন্দেহ ফুলগুলো দানবীয় ।

মিনদানাওয়ের অনেক পুরোনো পুরোনো নিউজপেপার খোঁজ করেছেন এনরিকস , তা প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর পুরোনো । ঠিক কোন সম​য় গ্লোবিউলিনার উৎপত্তি তা জানাটা আবশ্যক ।


৩০২০ , ২১ শে ফেব্রুয়ারী :

দেশে ফিরেছেন তিনদিন হলো । এরই মধ্যে নিজের ল্যাবে ওই গ্লোবিউলিনা ফুল পরীক্ষা করে দেখেছেন । ওর নির্যাস প্রয়োগ করেছেন গিনিপিগের ওপর । দেখেছেন গিনিপিগের শরীর অস্বাভাবিক উষ্ণ হয়ে গেছে এবং তা সত্ত্বেও ওরা বেঁচে । মাথায় অক্সিজেন কম যেতে শুরু করেছে যার ফলে তাদের চেহারাগুলো নীলাভ হয়ে উঠেছে । এনরিকস বহু পরীক্ষার পর রক্তের বাইরে একটি অদ্ভুত পদার্থের সন্ধান পেলেন আজ । শুধুমাত্র এর উপস্থিতি অণুচক্রিকার ঘাটতির পরেও মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে । অক্সিজেনের মতই কার্যকরী তবে তা মানুষের সাধারণ জীবনযাপন বিঘ্নিত করে এই পদার্থ । নাইট্রোজেন , কার্বন ও ১১৯ নম্বর মৌলের বিক্রিয়ায় তৈরী এই যৌগ মানুষের রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি কমিয়েও বাঁচিয়ে রাখে । একমুহূর্তে ফিলিপিনসে ইয়েনের বাড়ি বসে দেখা চিনাপ্রদেশের খবরটির কথা মনে পড়ে গেলো । তিনি কি যা ভাবছেন তা ঠিক ? কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না ।

ফিলিপিনসের বর্তমান যা অবস্থা তাতে করে আর ১০০ বছর দেশটি বিলুপ্তই না হয়ে যায় । যে ১০০০০ লোক এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের মধ্যে ৬০০০ লোক অতি বিপন্ন । ওদেরকে যা কিছু প্রলোভন দেখানো যায় কিন্তু ...

পুরানো তত্ত্ব ঘেঁটে ঘেঁটে প্ল্যাটিনো-১ সম্পর্কে কিছু জানলেন । প্রথম ২৮৬০ নাগাদ নাসা ওই গ্রহটি আবিষ্কার করে । পৃথিবীর সাথে অনেক কিছু মিল থাকলেও অক্সিজেনের মাত্রা প্রচুর কম । তাই বসবাসের অনুকূল ছিলো না । 

এরই মধ্যে একদিন গ্লোবিউলিনা সম্পর্কে নিজের রিসার্চ একটি খ্যাতনামা জার্নালে প্রকাশ করলেন এনরিকস । মার্কিন ওই জার্নাল এম.আই.টিতে বেশ হইচই ফেলে দিলো । আমন্ত্রণও পেলেন খুব শীঘ্রই ।

এম.আই.টির ৩০২০ এর বিজ্ঞান সম্মেলন । নিজের বক্তব্য পাঠ করছেন এনরিকস । ২৪ শে ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ দেখা মার্কিন বন্ধু জেনিফার উইলিয়ামসের সাথে ।


৩০২০ সাল ২৪শে ফেব্রুয়ারী :

" হ্যালো এনরিকস । "

এনরিকস সবেমাত্র নিজের স্পিচ শেষ করে হল থেকে বের হচ্ছিলেন | পিছু ফিরে চাইতে চিনতে অসুবিধে হলো না | শেষ যেবার বিজ্ঞান সম্মেলনে এসেছিলেন সেই সময় আলাপ হয়েছিল জেনিফারের সাথে |

“ হাউ আর ইউ জেনিফার ? ”

" ইয়া গোয়িং অন | ইন দিজ প​য়জনাস ক্লাইমেট অফ টুডে , লাইফ ক্যাননট বি সো গুড | টেল মি এবাউট ইউ | "

" সেম হিয়ার | "

আরো কিছু স্বাভাবিক কথোপকথনের পর এনরিকস বেশ কিছু কথা জানতে চাইলেন জেনিফারের থেকে |

" হাউ আর ইউ টেকিং দিস নিউয়েস্ট ডিসকভারি অফ চায়না | "

" ডোন্ট নো ম্যান | হাউ ক্যান ইট বি পসিবল | অল দো আই এম এ মাইক্রোবায়োলজিস্ট , বাট মাই ফাদার , গ্র্যান্ডফাদার এন্ড গ্রেট গ্র্যান্ড ফাদার অল ওয়ার্কড অ্যাট নাসা | মাই গ্রেট গ্র্যান্ডফাদার ডেভিড উইলিয়ামস ওয়াজ ইন দি টিম হু ডিসকভারড প্ল্যাটিনো-১। উইথ এভ্রি এভিডেন্স দে মেড ইট ক্লিয়ার হিউম্যান বিংস ক্যান নেভার স্টে দেয়ার অ্যাস এ পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট । "

" ইওর ফাদার অ্যাণ্ড গ্র্যান্ডফাদার এভার ওয়ার্কড অন দিস প্ল্যানেট । "

" ইয়েস সিন্স দ্য ডিসকভারি ইট ওয়াস অন প্রাইম ফোকাস অফ নাসা । ওয়ান ফ্যাক্ট আই নিউ ফ্রম মাই ড্যাড প্রিন্স উইলিয়ামস উইচ ইজ এ লিটল শকিং অ্যান্ড স্টিল নো এক্সপ্ল্যানেশন অফ ইট । "

" ওয়াট ইজ দ্যাট ? "

জেনিফার এর উত্তরে যা বললেন তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো :

২৮৭০ সাল নাগাদ ফিলিপিনসের মিনদানাওতে মধ্যরাতে একটি ইউ.এফ্.ও নামে । নাসা এর ব্যাপারে জেনেছিলো ওদের বিদায়ের পরে । কারণ হতে পারে কিছুভাবে ওরা সতর্ক হয়ে নিজের যান থেকে ট্রান্সমিট হওয়া সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়েছিলো । কথাটার বিশ্বাসযোগ্যতা কম হলেও এটাই ছিলো সত্যি । কোনোভাবে কোনো সংকেত এসে পোঁছায়নি ওদের আসার আগে । ওই যান এসেছিলো প্ল্যাটিনো-১ থেকে কারণ প্ল্যাটিনো-১ এর পাশে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে মেসেজ এসেছিলো যানটি ফিরে যাওয়ার পর । শোনা যায় ওরা এসে বেশ কিছু মানুষকে হত্যা করেছিলো । হাতাহাতিতে প্ল্যাটিনো-১ এর কজন প্রাণীরাও মারা গেছিলো । এই কথার গোপনীয়তা মার্কিন সরকারকে রাখতে অনুরোধ করেছিলো ফিলিপিনস সরকার । তাই আর কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি । 

কাজ শেষে দেশেই ফেরার কথা ছিলো । বিষ​য়টা নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানোর সামর্থ্য তাঁর একার ছিলো না । তাই বিফল মনোরথ হয়ে নিজের গণ্ডিতে ফিরবেনই মনোস্থির করেছিলেন । কিন্তু হলো না । ফিলিপিনস থেকে ফোন এলো । ইয়েনের ভ​য়ঙ্কর শরীর খারাপ । অতি দ্রুত রক্ত দরকার । কি এক ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে গত ১০০ বছরে। তাতে রক্তের সব কণিকা রেচিত হয়ে যায় এবং রক্তের গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায় । সেই রোগেই ধরেছে ইয়েনকে ।

৩০২০ সাল , ১২ই জুন :

ভ​য়ানক অসুস্থতা থেকে বাঁচাতে ইয়েনকে একমাসের মধ্যেই গ্লোবিউলিনার নির্যাস ইঞ্জেক্ট করেছিলো স্থানীয় ডাক্তারেরা । এদিকে এনরিকস ফ্লাইট না পাওয়ায় সঠিক সম​য় পৌঁছতেই পারেননি । মহামারির প্রকোপ নাকি এশিয়ার বাকি উপকুলীয় দেশেও পড়ায় ফ্লাইট বন্ধ ছিলো । এনরিকস জানতেই পারলেন না ইয়েনের পরিণতির কথা ।

হঠাৎ ১২ই জুন ফোন এলো চিন থেকে ।

চাইনিজ স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে ফোন । ইমিডেয়েট এনরিকসকে ডেকে পাঠানো হলো । স্পেশাল ফ্লাইটে করে এনরিকস উপস্থিত হলেন চিনে । বেজিংয়ে হেডকোয়ার্টারে প্রথমেই ঝ্যাং ট্যাং এর সাথে যোগাযোগ করলেন যিনি কিনা বর্তমান অধ্যক্ষ । তাঁর থেকে বিবরণ শুনলেন গত একমাসের ঘটনার :

ইয়েনের শরীরে গ্লোবিউলিনার নির্যাস দেওয়ার ফলে এনরিকসের ল্যাবে টেস্ট করা গিনিপিগের মতোই চেহারা হয় ইয়েনের । এই পরিবেশে তাঁর বাঁচা অসম্ভব । তাই প্ল্যাটিনোতে তাঁকে রেখে আসতেই হবে ।

এই বিষয়ে অসম্মতি প্রকাশ করলে ঝ্যাং জানান আর কিছু করার নেই । গত একশো বছর ধরেই এই করছেন তাঁরা । ফিলিপিনসের সব অসুস্থ লোকেদের ওই নির্যাস পুস করার পর তাদের প্ল্যাটিনো-১ এর পরিবেশই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাসস্থান । চিনাপ্রদেশে জলপথে ওদের নিয়ে আসা হয় ।

ইয়েনকে মহাকাশযানে বসানো হয়েছে শুনে এনরিকস নিজেও যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেন । 

ক্রু মেম্বাররা রাজি হতে এনরিকসকেও সঙ্গে নেওয়া হলো । ইয়েনের চেহারা দেখে রীতিমতো চমকে গেলেন এনরিকস । এ কে ? অবশ্য হওয়ারই কথা । ওই ফুলের গুণাগুণ তো তিনি নিজেই পরীক্ষা করেছিলেন ।

" আই দু নট ওয়ান্ট টু গো টু প্ল্যাটিনো , প্লিজ ডু সামথিং । " বললেন ইয়েন ।

মিছে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারলেন না এনরিকস । প্রায় ৬ মাস পর অবতরণ প্ল্যাটিনোতে ।

ওখানে গিয়ে দেখলেন পরিবর্তিত চেহারার মানুষগুলোকে । আসল প্ল্যাটিনোর জীবরা সংখ্যায় আর জনা ৫০ । তাদের অবশ্য খুব সহজে বোঝা যায় না ।

পৃথিবী থেকে লোকদের দেখে মানুষগুলো ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলো । এনরিকস বললেন যে তাদের পৃথিবীতে এখন ফেরানো মুশকিল । তবে ফিরে গিয়ে তিনি চেষ্টা করবেন তাঁদের জন্য ওষুধ বানাতে যাতে তাদের রক্তের অবাঞ্ছিত পদার্থ সরে মানুষের মতই রক্ত হয় ।

সব দেখেশুনে ফিরতে যাবেন ইয়েন কেঁদে লুটিয়ে পড়লো তাঁর পায়ে ফিরত নিয়ে যাওয়ার জন্য । কিন্তু ফল হলো না ।

পৃথিবীতে ফিরে এনরিকসকে বলা হলো তিনি চিনের এই কাজ নিয়ে ইচ্ছে করলেই জানাতে পারেন । এনরিকস বললেন , প্ল্যাটিনোয় পৃথিবীর মানুষ বাস করে একথা তিনি জানাবেন কিন্তু তাতে চিনাপ্রদেশের প্রতি কোনো অনুযোগ থাকবে না । তিনি অন্যভাবে পেশ করবেন ঘটনাগুলো ।

এনরিকসে দেশে ফিরলেন ৩০২১ এর আগস্টে । ওখানে ফিরে কিছুমাসের মধ্যেই ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করলেন । জানালেন চিনের বেজিংয়ে প্ল্যাটিনোর একটি ইউ.এফ্.ও এসে মাঝেমধ্যেই এখানকার পরিবর্তিত মানুষদের নিয়ে যাচ্ছে । তাদের আদেশেই চিনারা গুপ্তপথে ফিলিপিনসের লোকেদের নিয়ে যাচ্ছে । এর কারণ হিসাবে তিনি জেনেছেন যে নিজের গ্রহে মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়া । প্ল্যাটিনোর লোকেরা যে পৃথিবীতে এসে আক্রমণ করেছিলো তাও জানান । এরই ফলস্বরূপ গ্লোবিউলিনাএ উৎপত্তি বলে তিনি মনে করেন ।

সবশেষে লেখেন , তাঁর বন্ধু ইয়েন রয়ে গেছে প্ল্যাটিনোয় । তাঁর এখন দুটো কাজ , প্রথমত ফিলিপিনস থেকে ওই ভ​য়ঙ্কর রোগের নিষ্পত্তি করার টীকা আবিষ্কার এবং দ্বিতীয়ত পরিবর্তিত মানুষগুলোর পৃথিবীতে ফেরার পথ সুগম করতে ওষুধের আবিষ্কার যা তাদের স্বাভাবিক মানুষে পরিণত করবে ।  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action