দুজনে
দুজনে
" হ্যালো রায়চৌধুরী স্পিকিং । "
" হ্যাঁ রাজাবাবু আপনার বিশেষ সাহায্য চাই আমার টিমের । "
" আপনি খুব সম্ভবত বড়তলা থানার ওসি ! কারেক্ট ? "
" একদম ঠিক । "
" আপনারা পরিচয়ের ব্যাপারেও রহস্য করেন মশাই ! তা বলুন কেসটা কী ? "
" আসলে রূপবাণি সিনেমা , বন্ধ অনেকদিনই ... তো তার পিছন দিকে বেশ খানিক খালি জমি রয়েছে । লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দা ওই স্থানে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন । ওই জমিতে গুপ্ত ঘর করে বেশ কয়েক কোটি ড্রাগস মজুদ আছে সন্দেহে উনি অনুসন্ধানে যান । কিন্তু আজ তিনদিন যাবৎ ওনার কোনো খোঁজ নেই । "
" জায়গাটার ডিটেইল আমায় মেসেজ করুন , আমি এখনই যাচ্ছি সন্তুকে নিয়ে । "
" সিওর স্যার । ম্যাপ লোকেশন শেয়ার করছি । "
" সন্তু তৈরী হ , এবার আর ন্যাশনালি বা ইন্টারন্যাশনালি নয় লোকালি কেস সলভ করবো । চ , এই লোকেশন শেয়ারড । "
জায়গায় পৌঁছে , সন্তু , " কাকাবাবু এখানে তো রাস্তা বন্ধ । ওখানে শুধু একটা পাথরের স্ল্যাব । "
" লোকেশন হিসাবে এটাই দেখাচ্ছে ! ওটা টেনে দেখ সন্তু । "
সন্তু টেনে দেখলো ভিতর নিশ্ছিদ্র অন্ধকার । কাকাবাবু লাঠির ভরে বেণ্ড হয়ে যত দূর সম্ভব ঝুঁকে দেখতে দেখতে হঠাৎ ব্যালান্স বিগড়ে একদম হুমড়ি খেয়ে পড়লেন ওই জমাটি অন্ধকারে ।
" কাকাবাবু... " বলে প্রচন্ড চিৎকারে উপর থেকে আপসোস করতে লাগলো সন্তু ।
কাকাবাবু প্রথম স্থির হয়ে একটা ঘরে এসে পড়লেন । তিনি অবাক হয়ে গেলেন । এ কোথায় তিনি এসে পড়লেন ! ঠিক করে চারপাশটা দেখতে দেখতে প্রথম একটা বাকেটে কটা কাগজের টুকরো দেখতে পেলেন । ওর একটাতে ছড়া করে লেখা
" আর্মস্ট্রং ছিলেন চাঁদে নম্বরেতেও আছেন ,
উচ্চারণ শেষে দেখুন কীভাবে বাঁচেন !
তিন অঙ্কের প্রথমটি এক্ষেত্রে দরকার ,
নিজে বাঁচতে বলুন তাকে পাঁচবার । "
১৫৩ সংখ্যাটাকে রাজাবাবু পাঁচবার বলতেই ঘরের মধ্যে একটা বড়ো ফাঁক তৈরী হলো । ওর মধ্যে দিয়ে বাইরে আসতেই একটা স্তম্ভের সামনে যাঁকে দেখলেন তাঁর সাথে দেখা হবে কস্মিনকালেও ভাবেননি ।
" রাজাবাবু আপনি ! "
" আরে আরে শবরবাবু ! আপনিও এখানে ! "
" আরে কীসব অদ্ভুত ব্যাপার বলুন তো ! আমি তিনদিন আগে এসেছিলাম এখানে ড্রাগসের অনুসন্ধানে । কিন্তু এখন এইরকমভাবে ট্র্যাপড । "
" আমাকে তো স্বয়ং বড়তলা থানার ওসি জানালেন । "
" লালবাজারেও তো ওনারই ফোন গেছিলো । আর এসব উটকো কেসে আমি বল
ির পাঁঠা । "
" কী বুঝছেন ? "
" বুঝবো আর কী ? একটা একটা মাইলফলক ছুঁচ্ছি যেন । একটা ধাঁধা দিয়ে ঘরের গর্ত ওপেন করলাম , এখন স্তম্ভ ছোঁয়ার পর ওমা খুব সিরিয়াস হয়ে গেলাম । মাটির দিকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে দেখি একটা কোড লেখা ২৩৭।৪৫২১। তারপর একটা ? আমি মনে মনে ৬৭৪৩ বলতেই আবার সেই সিরিয়াস থেকে ফ্রি হয়ে গেলাম । "
" আরে বাবা , কিন্তু কোড তো চেঞ্জ হয়ে গেছে মশাই । ৩৪২৫।৫৬৬১।? অতএব ৭৮১১৩ । "
" একদম । দেখুন কিছু বদল অনুভব করছেন কিনা ? "
" পায়ের জোর ফিরে এসেছে লাঠি লাগবে না আর । মাই গড কী হচ্ছে ? "
" দিন আমি একটু মেজাজ নিয়ে দেখি লাঠির । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এসব আপনারই প্ল্যান । "
" মানে কী বলছেন ? "
" ধরুন এটা আপনার গোপন আস্তানা , গুমরাহ করে আমায় নিয়ে এসেছেন ... মজা করছিলাম ।
" এই হুঠহাঠ মজা করার ব্যাপারটা গেলো না মশাই ! চলুন দেখি এগিয়ে গিয়ে । "
একটু এগোনোর পর দুজনে দেখলেন কজনে টেবিল চেয়ার পেতে বসে । ওদের মধ্যে একজন দুম করে হেসে উঠলো ।
" এ এদের কে ডেকেছে ? ৬টা বাজে । চলো সব দেরী হয়ে গেলো । "
ওদের অনুসরণ করে যেতে যেতে একটা বড়ো হলঘরে এসে উপস্থিত হলেন সবাই । " এখানে আপনাদের বিচার হবে । হে হে হে । "
" কীসের বিচার ? " শবর বললেন ।
" বিনা অনুমতিতে ঢুকেছেন কেন ? "
এমন সময় কাকাবাবু লক্ষ্য করলেন ওই বিশ্রী হাসি হাসা লোকটির হাতে একটা কি ডিভাইস । শবরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পর শবর লাঠির ঘায়ে ওই ডিভাইসটা হাত থেকে ফেলে দিলেন । ওতে দুটোই সুইচ মাত্র । লাল বাদ দিয়ে সবুজটা টিপতেই চেনা পৃথিবী । ওপর দিকে চেয়ে দেখলেন সন্তু নীচের দিকে চেয়ে । মাটির নীচে এই বিরাট বাড়ি ।
লোকটি ততক্ষণে রাগে লাল হয়ে গেছেন । একটা পিস্তল বের করতেই দুজনে আক্রমণ করলো ঘুষি মেরে । সন্তু উপর থেকে কাচের দেওয়াল ভেঙ্গে নীচে নেমে পিস্তল দিয়ে আরও দুজনকে ধরাশায়ী করলো ।
পুলিশ আসতে একটু সময় লাগলো । এসে অপরাধীদের ধরে তাদের জিম্মায় থাকা ড্রাগস উদ্ধার করলো ।
" আপনি এর কী ব্যাখ্যা করবেন কাকাবাবু ? " বাড়ি এসে সন্তু জিজ্ঞাসা করলো । সাথে শবরবাবুও আছেন ।
" তুই তো প্রফেসর শঙ্কু পড়েছিস , আপনিও নিশ্চয়ই ! তো এলডোরাডো গল্পে নকুড়বাবুর ক্ষমতাটাকে এখানে দোষীরা যন্ত্রে বন্ধ করেছেন । ডিভাইসটা রেখে এলাম তাড়াহুড়োয় ! "
" থাক রাজাবাবু , আবার কোন কুঠুরিতে গিয়ে পড়বো , থাক ! "