একটি বৃষ্টি ভেজা দিন
একটি বৃষ্টি ভেজা দিন


তখন আমি মুম্বাই এ থাকি। বিয়ের পর সবে সবে নিজের সংসার করছি। আমারা থাকতাম পরেলে। আমার স্বামী শান্তনুর কাজ পরেলেই ছিল, আর আমার মাতুঙ্গায়। শান্তনুর সোম থেকে শুক্র আর আমার সোম থেকে শনি কাজ। শনিবার সকালে উঠে ভীষণ রাগ হত, কেন যে চাকরি করছি! আমার ছিল মর্নিং ডিউটি, অন্ধকার থাকতে উঠে দুপুরের খাবার বানিয়ে নিজের মুণ্ডপাত করতে করতে অফিস পৌঁছতাম।
সেদিনও ছিল শনিবার। সকাল দশটা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হল। আমরা অফিসের বারান্দায় এসে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। মুম্বাইয়ের বৃষ্টি আমি সেই প্রথম দেখছি। চিরকালই বৃষ্টি দেখতে আমার খুব ভালোলাগে। সবে কোলকাতা ছেড়ে গেছি। বৃষ্টি দেখে হাজার স্মৃতি ভিড় করে এলো। রেনি ডে, আলুর চপ, হাঁটু জল ভেঙ্গে কলেজ থেকে বাড়ী ফেরা।
দুপুর বারোটা নাগাদ আমাদের টিম লিডার বলল আজ অবস্থা সুবিধার লাগছে না, তাই হাফডে ছুটি হবে। আমি খুব উত্তেজিত। জল ভেঙ্গে বাড়ী যাব। অফিস থেকে বেরলাম হাঁটু জল। সামনের মোড়ে জল প্রায় কোমর অবধি। আমার সহকর্মীরা নিজেদের জুতো বাঁচাতে জুতো খুলে হাতে নিয়ে জলে হাঁটতে লাগলো। আমি বললাম আমার পা বেশি দামী। জুতো আরেকটা পাওয়া যাবে।
দাদরে পৌঁছে জল প্রায় বুকের কাছে। আমরা সবাই ‘রিঙ্গা রিঙ্গা রোসেস’ খেলতে খেলতে হাত ধরাধরি করে হাঁটছি। কেউই ব্যালেন্স পাচ্ছি না। যদি কেউ পড়ি তাহলে ওই সারা মুম্বাই ধোয়া জল পেটে যাবে।
তার ওপর জল দেখলে কিছু ছেলেপিলের একটু বেশিই পুলক জাগে। তারা শর্টস পরে ওই জলের মধ্যে ঝাঁপাচ্ছে ও সাঁতার কাটছে। তাদের দেখে ডারউইনের থিয়োরির সত্যতা সম্বন্ধে আমার মনে কোন সন্দেহই আর রইল না।
প্রায় বিকাল তিনটে নাগাদ বাড়ী পৌঁছলাম। আমার বেল শুনে শান্তনু ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুলে আমায় দেখে এক গাল হেসে বলল,” বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে বুঝি?“
নিজের ব্যাগটা ধপাস করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে, “ ক্ষমা পরম ধর্ম !“ আওড়াতে আওড়াতে বাথরুমে ঢুকে সাবান দিয়ে সেই নর্দমার জল ধুয়ে স্নান করে তবে শান্তি !!
একটা মোক্ষম উত্তর দেব ভাবতে ভাবতে স্নান করে বেরিয়ে দেখি দু কাপ গরম চা বানিয়ে আর চিকেন নাগেট ভেজে আমার জন্য বসে আছে আমার পতিদেব। ঝগড়াটা পোস্টপোন করলাম। আগে চা...