Apurba Kr Chakrabarty

Abstract Comedy Tragedy

4.0  

Apurba Kr Chakrabarty

Abstract Comedy Tragedy

বোটোর প্রেম

বোটোর প্রেম

10 mins
185


বটকৃষ্ণকে, বন্ধুবান্ধব পাড়ার মানুষ ডাকনামে বোটো এই নামেই জানত ।কোন সুন্দরী মেয়েকে ভালোবেসে তার বিয়ে করার বড় শখ ছিল, কিন্তু সাহস হয় না।

এই ব্যাপার সফল প্রেমিক, বন্ধু গোপালের পরামর্শ চাইলে, গোপাল বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,

"দেখ ভাই, আমি তিনটে মেয়ের সাথে একসঙ্গেই প্রেম করছি।একটা মামার বাড়ির গ্রামের, মামার প্রতিবেশীর মেয়ে টুসী,একটা দিদির ননদ মীরা, আর একটা আমাদের পাড়ার মেয়ে স্বর্ন ।"

কৌতুহলী বোটো জিজ্ঞেস করে

 "তিনটে কেন ! তিনটে বিয়ে করবি !"

"পাগল! আমিই বেকার নিজের ভবিষ্যত নেই, জাষ্ট একঘেয়েমী দুর করা! ওরা খুশী ,আমিও খুশী,প্রেম মানেই যে বিয়ে করতে হবে, কে বলল !"

"আমি কিন্তু প্রেম করলে বিয়ের জন্যই করব।একটু টিপস দে ভাই!"

"মেয়েদের কাছে লজ্জা পেলে হবেে না, হয়ত কোন মেয়ে তোকে মনে মনে ভীষণ ভালোবাসে, বলতে লজ্জা করে, যদি রিফিউজ করিস ! তার সম্মান হানি হবে। মেয়েদের সম্মান বেশী, আত্মবিশ্বাস কম। তুই পুরুষ মানুষ ! ভয় লজ্জা থাকলে প্রেম হবে না, আত্মবিশ্বাস চাই, কেউ যদি রিফিউজ করে তো করবে ! গায়ে তো ফস্কা পরবে না। আমাকেও অনেক মেয়ে রিফিউজ করেছে! মেয়ে পটাতে ভাই সাহস চাই।"

বোটো সাহস পেলো।সেদিন তার পাড়ার মেয়ে অষ্টাদশী দীপা তাদের বাড়ীতে পুজোর ফুল তুলতে এসেছিল ,স্নান সেড়ে পরিচ্ছন্ন শুদ্ধ পাটের শাড়ি, ফর্সা রং, পিঠভর্ত্তি একরাশ ঘন কালো খোলা চুল, ভারী সুন্দর লাগছিল। আত্মবিশ্বাস নিয়ে বোটো আবেগঘন হয়ে বলল,

"দীপা তোকে আমি ভীষণ ভালোবাসি , আমায় বিয়ে করবি ?"

দীপা হতচকিত,রেগে আগুন,তীব্র ভর্ৎসনায় বলে,

"মুখে ঝেড়ে এক লাথি মারব, অসভ্য ইতর ।"

তারপর সে রেগে তাদের বাড়ী থেকেই পালাল।

বোটো আঘাত পেলেও,হাল কিন্তু ছাড়েনি। বন্ধু গোপালকে দীপার রিয়্যাক্ট জানাল,গোপাল খুব হেসে বলল,

"তুই সত্যিই আনাড়ি,হঠাৎ করে কেউ পোষ মানবে!ধৈর্য চাই। সাপ পোষ মানে, বাঘ পোষ মানে, সামান্য একটা মেয়ে পোষ মানবে না ! ফিটফাট থাকবি, সৌখিন পোষাক পরবি, সেন্ট মাখবি, খাওয়াবি, গিফট দিবি, রূপের তারিফ করবি, মেয়েদের প্রতি তোর যে সম্মান ইজ্জত আছে কৌশলে জানাবি।হাসি হাসি তার মুখ দেখলেই জানবি তোর প্রেমে পড়েছে, তবে সঙ্গে সঙ্গেই প্রেমের প্রস্তাব দিবি না, দুদিন অপেক্ষা করবি।"

"কিন্তু আমি দেখতে তেমন নয়।"

"ওটা সেকেন্ডারী। কত সুন্দর ছেলে প্রেমে ব্যর্থ ,আবার সাধারণ দেখতে কত ছেলে দশ বিশটা প্রেম করেছে,তাও বড় ঘরের ভালো ভালো মেয়ে।মেয়েরা বড় আবেগপ্রবন।শাহরুখ কী এমন দেখতে রে ! লাখ লাখ মেয়ে ,তবু ওর প্রেমে পাগল ! "

বোটো,সৌখিন ড্রেস কিনল, সুগন্ধি দামী সেন্ট কিনল, সৌখিন বেশভুশায় সুগন্ধী লাগিয়ে একদশ শ্রেনীর ছাত্রী বেলাকে বাংলা পড়াতে যায় ওদের বাড়িতেই। একদিন বেলাকে এক প্যাকেট লজেন্স দিল।

বেলা হাসল,বলল "এই সব আপনি খান! পঞ্চাশ পয়সার লজেন্স ! "

"তোমারা কত দামী খাও।"

বেলা ব্যাগ থেকে একটা ডার্ক চকোলেট বোটোকে দিল , "এই চকোলেটটা খান।"

বোটো খেয়ে বলে "ভারী সুন্দর তো খেতে ! কোন দোকানে পাব ? "

অনলাইনে কিনবেন?

"হ্যাঁ,অর্ডার দাও।"

"ঠিক আছে।"

চারদিন পর বেলা একটা ব্রাউন ছোট সীল প্যাকেট দিয়ে বলল,"এটা রাখুন, পঁচিশ পিস ডার্ক চকোলেট আছে।"

"তুমি পাঁচ পিস নাও।"

বেলা প্যাকেট খুলে পাঁচটা চকোলেট বের করে নিয়ে বলল "থ্যাংকস।"

বেতনের দিন ,তার বেতন থেকে বেলা চারশো টাকা কেটে নিয়ে দিল, বলল, "চকোলেটর দাম ।"

বোটো চমকে বলে,"এত দাম!"

"প্যাকেটের গায়ে দাম দেখেননি ! তবু কুড়ি পার্সেন্ট ছাড়। ফরেন পোডাক্ট তো ।" তারপর খুব হাসল।

বেলা হাসছে ! বোটো আর অপেক্ষা করেনি,আবেগ কন্ঠে বলে, 

"তোমাকে আমি ভীষণ ভীষণ ভালোবাসী।আমায় বিয়ে করবে?"

বেলা চেঁচিয়ে ওঠে, "দুর হোন এখুনি, এ বাড়ীতে আর জীবনে ঢুকবেন না।"বেলার ফর্সা রাঙ্গা মুখ ক্রোধে লাল।

বোটো হতাশায় বাড়ি ফিরল, পোষাক ,সেন্ট কিনে ফালতু কত বাজে খরচা হল ,বেলাকে দামী ডার্ক চকলেট গিফট দিয়েও অপমানিত হল ! আবার টিউশনটাও গেল !

 বোটো কাঁদ কাঁদ হয়ে গোপালকে বলল, আমার প্রেমের শখ মিটল না।

গোপাল বলে জগতে কি মাত্র দুটো মেয়ে !কোন এক রাজা , ব্রুস না কে বটে ,চৌদ্দ বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নির্জন পাহাড়ের গুয়ার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য আশ্রয় নেয় , শেষে সে মাকরসার কাছে শিক্ষা পায় ,চৌদ্দ বার চেষ্টায় ব্যর্থতার পর মাকরসাটা পনের বারে জাল বুনতে সফল হয়।আর ঐ রাজাও পনের বারের যুদ্ধতে জয়ী হয়, তোর পরাজয় বল ব্যর্থতা বল, মাত্র তো দুবার! চালিয়ে যা।প্রেম করাও এক ধরনের যুদ্ধ, মেয়েদের মন জয় করতে হয়।ভাষা আর্ট কৌশল আর অভিনয় তার অস্ত্র। 

বোটো বলে তা তো বুঝলাম,কিন্তু ঐ মেয়ে দুটো এখন দেখলেই কেমন ব্যাঙ্গ তাচ্ছিল্যের চোখে তাকায়,মুখ টিপে হাসে। এদের মত আবার আরও তেরো চৌদ্দ জন হলে ,গ্রামে টেকা দায়।

ভুল করছিস তুই, তিন বারেও তুই সফল হতেই পারিস, তবে পারলে এবার , গ্রামের বা পরিচিত কেউ নয়, একটু দুরে অজানা মেয়েদের টার্গেট কর।

"কোন মেয়েদের কথা বলছিস!

"যেমন ধর কোন বিয়ে বাড়ির বরযাত্রী দলে সুন্দরী অবিবাহিতা , বা শহরের কোন সপিং মলের সেলস গার্ল,বা কোন মেলা , উৎসব, পূজো প্যান্ডেলে অনেক মেয়ে দেখবি, যাদের চিনিস না , হাইফাই নিজের পরিচয় দিবি।প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করে।"

"পরে সবতো জানতে পারবে!"

"পারুক না,অনেক মেয়ে আবেগে ভাসে ,একবার ভালো বাসলে সব মিথ্যা জেনেও তোকে বিয়ে করবে, পেপারে পড়িস না! বাপ মা ছেড়ে জাত ধর্ম ছেড়ে, দেশ ছেড়ে কত মেয়ে উগ্রপন্থী পর্যন্ত হচ্ছে !  শুধুমাত্র একটা ছেলের প্রেমের মোহে! একটু তুই সেন্টিমেন্টাল হবি, মিথ্যা করে বলবি, তুমি ছাড়া আমি বাঁচব না, আত্মহত্যা করব, এসব বলবি তাতে কাজ হতে পারে , যদি তেমন বাপ মায়ের অবাধ্য হাঁদা বোকা মেয়ে হয়, কিন্তু নিজেকে ভীষণ চালাক ভাবে, জিতে যাবি। আর যদি কেউ ছেড়েও দেয় দিক না! তোর সাথে দেখা তো আর হবে না।লজ্জাও লাগবে না।

গোপালের কথাটা বোটোর খুব মনে ধরেছিল।সেদিন ছিল খড়ির তীরে পয়লা মাঘের মেলা। সে সৌখিন পোষাক পরে, সেন্টের সুগন্ধ ছড়িয়ে মেলায় একা এসেছিল ,মুলত কোন প্রেমিকার সন্ধানে।মনের মত মেয়ে পেলেই সে প্রেমের প্রস্তাব দেবে। বেশ কিছু অবিবাহিতা সুন্দরী মেয়েদের মেলায় চলা ফেরা,তাদের ঢংঢাং নজরেও এল, কিন্তু হায় বেশীরভাগ মেয়েদের সঙ্গে কোন পুরুষ সাথী বা প্রেমিক ! আর বাকিদের কোন পুরুষ গর্জেন বা মহিলা অভিভাবক। আবার চার ছজন জোট বেঁধে বেশ কটা মেয়ে দলবদ্ধ হয়ে মেলায় রূপ ঢলিয়ে ঘুরছে। 

বোটো নিরীহ লাজুক স্বভাবের ,ভীতু, একা না পেলে কোন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া সম্ভব! আর বহুজনের মাঝে এভাবে একজন সুন্দরীর উদ্দেশ্যে ভালোবাসার ফেরী করতে গেলে মারধর খাবার ভয় প্রবল।তাই মনের দুঃখে, ব্যর্থ হৃদয়ে, মেলা ছেড়ে দুপুরের পরই বাড়ি ফিরছিল। ভগবান যেন তার সহায়! একটি মেয়ে বেশ সুন্দরী ! একা একা তার উল্টো দিক থেকে মেলায় যাচ্ছিল।তার দিকে তাকাচ্ছিল হাসি হাসি মুখ।বোটোর মনে হল নিশ্চয়ই আমাকে ওর ভালোলেগেছে! একটু সেও হাসি হাসি মুখ করতেই মেয়েটি বলল!

"হাসছেন যে বাবু !"

"তুমি ভারী সুন্দর, তোমার বাড়ি কোথায়! "

"আমার বাড়ী! মেলা পেরিয়ে ঐ যে, বাতাস পুরে, আপনি মেলায় গেছিলেন !"

"হ্যাঁ ,এবার বাড়ি ফিরব।"

"তা মেলার পাঁপড় জিলাপি কৈ! বাড়িতে কী আপন জন নেই!" তারপর খুব হাসছিল। 

বোটো নিশ্চিত মেয়েটি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

বলল, "তুমিও আমার আপনজন!"

"বেশ তো তা হলে মেলার জিলাপী মিষ্টি কৈ!"

বোটো পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বলল,"মেলায় কিনে খেয়ে নেবে।" 

মেয়েটি হেসে বলে,"আমার রসিক নাগড়, যেন কলির কেষ্ট! তবে বড় কৃপন!"

বোটো লজ্জা পেলো,আরও একশ টাকা দিয়ে বলল,"আজ আর টাকা নেই।তোমাকে জীবনে পেলে রাজরানী করে রাখব।"

কেমন খুশীর আবেগে বোটোর মন ভরে গেছিল। এতদিনে সে সফল,এক সুন্দরী তার প্রেমে পড়ছে।চাকরী না পাক, যা তাদের জমি সম্পত্তি যা আছে সংসার করলে অভাব হবে না।কিন্তু বাবা মা! না চাকরী হলে তার বিয়ে দেবে না। দু একটা বিয়ের সম্বন্ধ আসে,বাবা মা বাতিল করে দেয়। তেমন তাদের উপযুক্ত যোগ্য ঘর নয়। চাকরী পেলে তার দাম বাড়বে, ভালো বংশ, সচ্ছল ঘর ,সুন্দরী কণে, অনেক পণও পাবে। এখন সে যদি প্রেম করে ,মা বাবা আর না করতে পারবে না।আর এমন সুন্দরী!

মেয়েটি বলল, "আপনার নাম, গ্রামের নাম ঠিকানা সব দিলে আমার বাবাকে বলব। যদি আপনার আমাকে পছন্দ হয় , আমার বাবা আপনার বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করবেন। "

বোটোর আনন্দে ধরে না । মনে হচ্ছিল অজানা অচেনা সুন্দরীর ওষ্ঠে একটা চুম্বন করি।কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে আর এত তাড়াতাড়ি ঠিক নয়, অশালীন তাই বোটো সংযত হল। নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে গোপাল বলেছে, মেয়েদের পুরুষের প্রতি দুর্বলতা বাড়ে, ভালোবাসা আর প্রেমকে ঘন করে। তাই সংযত বোটৌ নিজের নাম, বাবার নাম সব ঠিকানা পরিচয় দিল, আর তাদের বাড়ি যাবার যাতায়াত পথের একটা ধারনাও দিল। 

খুশীতে বলল, "তোমাকে আমার খুব পছন্দ, তোমার বাবাকে বলবে আমাদের কোন দাবী নেই।"

মেয়েটি খুব হাসছিল, "ওমা,আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, আবার বাবা যথেষ্ট সচ্ছল আমাকে গহনা সোনায় ভরিয়ে দেবে। আমি চলি তোমার টাকায় আগে খেয়ে ধন্য হব, তবে এর চার গুন টাকায় তোমাদের বাড়ীতে বাবাকে মিষ্টি নিয়ে যেতে বলব।"

সুন্দরী, মিষ্টি হেসে বিদায় নিলেও বোটো অনেক ক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে স্থির দাঁড়িয়েছিল। দুর থেকে সুন্দরী ঘুরে দাঁড়িয়ে একবার হাত নাড়ল। 

বোটোও খুব আবেগ মনে হাত নাড়ছিল। হঠাৎই তার খুব দুঃখ আফসোস হচ্ছিল, ওর নাম, বাবার নাম তারও জানা উচিত ছিল। যদি ওর বাবা মা সুন্দরীর কথায় গুরুত্ব না দেয়! গ্রামের নাম শুধুমাত্র ও বলেছে।ঠিক আছে যদি যোগাযোগ সাতদিনে না করে ,সে নিজে বাতাস পুর যাবে। ওর রূপের বর্ননা দিয়ে ঠিক ওদের বাড়ি খুঁজে সে বার করবেই ।

একটা চাপা আবেগ আনন্দ কিন্তু বোটো গোপন করেছিল, একশ ভাগ সে নিশ্চিত নয় যে সুন্দরীর বাবা আগামীকাল বা পরে কোনদিন তাদের বাড়ী আসবে , বিয়ের যোগাযোগ করবে।

তবে স্বপ্ন দেখতে দোষ কী! দীপা আর রেখার অপমানের বদলা সে নেবেই । ফুলশস্যার ভোজে সে নিজে ওদের নিমন্ত্রণ করে আসবে।তার বৌ যে ওদের চেয়েও বহুগুন সুন্দরী বুঝিয়ে দেবে ,এর চেয়ে আর বড় অপমানের বদলা কী আছে!

পরদিন ঠিক তখন দশটা সদরের দরজার কড়া নাড়ার শব্দে বোটোর মন উতলা তবে লজ্জার কারনে ঘর থেকে বের হয়নি।

মা হাঁক দিল "কে !"

উত্তর এল " আপনার বটকৃষ্ণের বিয়ের জন্য এসেছি।"

মা বিরক্ত হয়ে বলে "ও চাকরী না পেলে বিয়ে করবে না।আমারও দেবো না।"

বোটো ঘর থেকে মাকে বলে "দরজাটা খুলে দাও মা।ভদ্রলোকদের আমি আসতে বলেছি।"

"তুই ওদের আসতে বলেছিস!"মা আকাশ থেকে পড়ে, "তুই ওদের চিনিস?"

"কাল মেলায় একটি সুন্দরী মেয়ের সাথে আলাপ হয়', বড় ঘরের ধনীর মেয়ে আজই আসবে ভাবি নেই। "

"আমাদের বলবি না! একটু ভালো খাবার বা যত্ন আত্তির জোগাড় করতাম! " সচ্ছল ঘরের সুন্দরী শুনে বোটোর মা তাড়াতাড়ি সদরের দরজা খুলে দেয়।

বোটোর বাবা তখন বাড়িতে ছিল না।বাজার বা দোকান গেছিল। বোটো ,বোটোর মা হতচকিত গোটা ছয় হিজড়া একসাথে হুড়মুড়িয়ে বাড়িতে ঢুকে এল,সঙ্গে সেই সুন্দরী। হিজড়া হলে কি হবে! সে রীতিমত সুন্দরী মেয়েদের রূপে হারিয়ে দেয়।আজ আবার সে বেশ স্বল্প বাসনা।সচ্ছ পাতলা সিল্কের মেরুন শাড়ি, সিল্কের মসৃণ ঘনলাল রঙের হাতকাটা ব্লাউজের দীর্ঘ পিঠ বুক অনাবৃত,পিঠের বারোআনা খোলা।বুকের খাঁজ,পেটের গভীর নাভি  সব যেন শাড়ি ব্লাউজ অনাবরনের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে। কত গহনা,নাকে বড় নত, কপালে, কানে, কোমরে, দুই বাহু ,আর নিন্ম হাতে  ম্যাচিং গহনা, পায়ে নুপুর, আবার প্রতিটি আঙুলে আংটা। চোখে কাজল, আর ঠোঁট রাঙ্গা।গলায় রজনীগন্ধার মোটা গোরের মালা,আর সুগন্ধি তে চারদিক সিদ্ধ সুবাসে ম ম করছিল।লাজুক লাজুক চোখে নত মুখে যেন কত সংকোচ দাঁড়িয়েছিল।সমানে দাঁতে হাতের নখ খুটছিল যেন বড় লজ্জায় সে বিব্রত। 

বোটোর মা মমতা বেশ খানিকক্ষন হতবাক, বিষ্ময়ে ঘোর কাটিয়ে বলে "এ কী সব রসীকতা শুনি!"

বোটৌ ভয়ে ঘরে খিল দিয়েছিল, হিজড়াদের দুষ্টমী আর অত্যাচার সে জানে।

হিজড়াদের দলের প্রধান বলে "আপনার সাধের ধন বটকেষ্ট রসীক নাগড়,আমাদের এই রূপবতী আদরের কন্যা রাধামনিকে জীবন সঙ্গীনি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ থেকে ও আপনার বাড়ির বৌমা হয়েই থাকবে। "

মমতা প্রচন্ড ঝাগড়াটে মহিলা হলেও আজ এই হিজড়াদের সাথে পেড়ে উঠবে না জানে ,কারণ দোষ তার ছেলের ,তাই বলে এতটা বাড়াবাড়ি ! মমতা  বলল,

" হিজড়া হয়ে মেয়ের অভিনয় করে পুরুষ ঠকানো এক ধরনের পাপ।"

"আমাদের আবার পাপ পুণ্যির ভয় কী বেয়ান! "

"বেয়ান! কি সব বলছ!"

"আমার বাতাসপুর বাড়ী, রাধা আমার সন্তানের মত।গতকাল মেলায় আমরা ঘুরে ঘুরে মানুষের মনে আনন্দ দিয়ে টাকা আদায় করছিলাম। রাধা একটু আসতে দেরী করেছিল, বটুক বাবু যখন মেলা থেকে ফিরছে,আমার রাধার সাথে দেখা। তাদের অনেক প্রেম লীলা চলে।বটুক ভারী খুশী। কী গো বটকেষ্ট! ঘরের ভিতর থেকে এসো! তোমার নতুন বৌ ঘরে এসেছে, মাকে বলো বরন করতে! তুমি সিঁন্দুর দান করবে, মালা বদল করবে।এইসব দেখো কতকিছু যত্ন জোগাড় করে এনেছি।"

এক এক করে সব ওরা বার করছিল। ফুলের মালা থেকে মিষ্টি , টোপর থেকে লাল শাড়ি,  ধুতি আরও কত কী!

হিজড়াদের দলপতি বা নেত্রী ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে বলে, " তোমার দেড়শো টাকার বিনিময়ে,তোমার মনের যে আনন্দ স্বপ্ন,আমার রাধা মা দেখিয়েছে আমার রাধা মায়ের কাছে ঐ টাকা অতি তুচ্ছ। আজ আমরা আবার অনেক খরচ করে তোমাদের বিয়ের জন্যে ফুল মালা, সিঁন্দুর চন্দন কাজল শাড়ি ধুতি টোপর মিষ্টি কত কিছুর আয়োজন করেছি,  অনেক খরচ করেছি। আমাদের কিচ্ছু খরচ দিতে হবে না।আমার রাধাকে শুধুমাত্র তোমার ঘরে তুলে নাও, ঘরের বৌ করে সুখে রাখো।

এসব যে বাহানা মমতা সব বুঝছিল।অনেক টাকা আদায়ের কৌশল। কিন্তু সে নিরুপায়। পাড়ার বহু মানুষ জমেছে, তাদের দরজা পেরিয়ে, গৃহের ভিতর উঠানে প্রতিবেশী ছেলে ছোকড়ারা হাজির, তাদের হাসি হাসি মুখ ,সবাই কত মজা লুটছে।

রাধা বলে,"তোমার প্রেমে আমি সত্যিই পাগল গো! বটুক দা তুমি আমায় বিয়ে না করলে , গলায় দড়ি দিয়ে মরব, বিষ খেয়ে মরব, আগুনে পুড়ে মরব, যতবার যত রকম ভাবে মরব, তত বারই তোমার ফাঁসি হবে।"

রাধার এই কৌতুক ব্যঙ্গ যে, দীপা,  রেখার শতগুন তীব্র, যা তার হৃদয়ের আঘাত করছিল যেন তীক্ষ্ণ তপ্ত সলাকার মত। সে অনুভব কে করবে !

মমতা বলে "ছেলেটা বড় নির্বোধ, আর তার সুযোগ নিয়ে তোমরা ওকে বলির পাঁঠা করছ ! বেচারা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে ,ওর দোষটা কি তোমরা বলো! "

হিজড়াদের দলের প্রধান যেন একটু নরম হল,বলে, "আমাদের জীবনে কী আছে গো ! একটু শুধু রঙ্গ রসীকতা করছি। আমাদের নিয়ে তোমরা কী কম রসীকতা করো ! আমাদের মনের দুঃখ যন্ত্রণা কী কখনও তোমরা জানতে চাও !"

মমতা বলে, "এর জন্য আমাদের কী দোষ, বোটো  ওকে কোন অপমান করেছে কী!"

রাধা হাসতে হাসতে বলে "আমার রসীক নাগড় বড় মানুষ ভালো, কী গো বটুক বাবু ! তাই তো আমরা ছুটে এসেছি, আর যেন আমার সোনার চাঁদ এমন ফাঁদে না পড়ে।"

"বুঝলাম সব,এখন বলো তোমরা কী চাও।" মমতা যেন হতাশ। 

"আমাদের সংসারে স্থান নেই। খেতে পরতে তো হবে! কচি শিশু নাচিয়ে আর, মানুষ হাসিয়ে খাই, আর পুলিশের মারও খাই। সে সব দুঃখের কথা তোমারা সংসারী মানুষ বুঝবে না।যাক সে কথা আমাদের মেয়ে রাধা মায়ের ভরনপোষনের জন্য লাখ টাকা চাইছি না, পঁচিশ হাজার টাকা অন্তত দাও! আমরা চলে যাব। "

রাধা অভিনয় করে বলে "পায়ে পড়ি তোমাদের, আমাকে এভাবে নিঃস্ব অসহায় করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিও না গো!"তারপর রাধা কান্নার অভিনয় এমন শুরু করল,যেন সত্যিই কোন হতভাগী স্বামীর পরিত্যক্তা, নিঃস্ব অসহায় স্ত্রীর হৃদয় স্পর্শ করা সে কী করুন কান্না !স্বামী শাশুড়ি যেন সহায় সম্বলহীন, আত্মীয়স্বজন হারা, নিরাশ্রয় কোন গৃহ বধূকে ঝাঁটা মেরে নির্দয় ভাবে শ্বশুর বাড়ি ছাড়া করছে। 

অনেক দর কষাকষি শেষে , সেদিন দশ হাজার টাকায় লেনদেন রফা হয়।এতগুলো টাকা অকারন গচ্চার বিনিময়ে হিজড়াদের দল সেদিন বোটোদের বাড়ি ছাড়ল। 

এরপর বোটো লজ্জায় পাড়াতে মুখ দেখতে পারত না। মামার বাড়ি পালিয়ে সে কোনরকম নিজের  মান সম্মান ইজ্জত বাঁচাল। আর প্রেমের নেশা তার সারা জীবনের মত কেটে যায়। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract