বৈষম্য
বৈষম্য


রাজিব বিকেলবেলাতেই পার্কে আসে। এসময় অন্য অনেককেও আসে। আজকে ও খেয়াল করল একটা লোক তার বিদেশী কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। কুকুরটার গায়ের রং সাদা। সাদা রংয়ের তুলতুলে নরম লোম রয়েছে সারা গায়ে। সে মালিকের আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে হেলেদুলে। আকারে খুব বেশি বড় নয়। দেশী কুকুরের চাইতেও ছোট। এদের প্রজাতি মনে হয় এরকম।
মালিকটা কুকুরের গলায় লাগানো বেল্টের সঙ্গে দড়ি ধরে আছে। কুকুরটা যেভাবে ছুটছে মালিক অত জোরে ছুটতে পারছেনা। আসলে লোকটা তার ভুঁড়ি নিয়ে কুকুরটা সঙ্গে যেতে পারছে না। এই দৃশ্য দেখে রাজিবের খুব হাসি পাচ্ছিল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারল না। তাহলে কেমন বাজে দেখাবে।
এবার রাজীব দেখলো আর একটা লোকও উল্টো দিক থেকে একটা কুকুরকে নিয়ে আসছে। এটা দেশি কুকুর। আকারে বিদেশীটার চেয়ে অনেকটাই বড় রংটা হলুদ। তবে এর মালিক আগের লোকটার মত মোটা নয়। কুকুরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হেঁটে চলেছে।
রাজিব ভাবছিল এই কুকুরটা যদি বিদেশীটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তবে তার কি করুণ দশা হবে। ওরা দুজন যত পরস্পরের কাছে আসছিল রাজিব মজা দেখার জন্য তত উৎসাহী হয়ে উঠছিল। কুকুর দুটো বোধ হয় একে অপরের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজীব অবাক হয়ে গেল এই দেখে ওরা কাছে আসতেই একে অপরকে বন্ধুত্বের দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। রাজিবের কোন তত্ত্বই কাটলো না এখানে।
কুকুরের মালিক দুজন দাঁড়িয়ে পড়ল। দুজনের হাতে ধরা কুকুরের দড়ি। কুকুর দুটো একে অপরের উপর যেখানে হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা সেখানে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ দেখাচ্ছে।
রাজীবের অবাক হওয়ার শেষ হয়নি তখনো। ও এবার মালিক দুজনের দিকে খেয়াল করল। হিংস্রতা ফুটে উঠেছে তাদের দৃষ্টিতে। তাদের দুজনের কাছে যার যার কুকুরই সেরা। একজনের বিদেশি কুকুর বলে গর্ব আরেকজনের দেশি বলে। তাই দুই কুকুরের মধ্যে বন্ধুত্ব হচ্ছে দেখে দুই মালিক তাদের টানতে টানতে নিয়ে গেল যেদিকে যাচ্ছিল সে দিকে।
এ দেখে রাজীব বুঝতে পারলো আসলে বৈষম্য কোথায়। ওর মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটে উঠল।