দিন বদল
দিন বদল
বাইরে থাকা ছেলের খবর নিতে গেলে পাশের বাড়িতে গিয়ে ল্যান্ডফোনে খবর নিতে হয় কমলবাবুর। একটা নির্দিষ্ট সময় না গেলে আবার তাও পাওয়া যায় না। বিদেশের লাইন পাওয়া খুব কষ্টকর। তারপর আবার ক্রস কানেকশন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্য দিনের মতো আজও তিনি পাশের জিতেন বাবুর বাড়িতে গিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ফোনের রিং হবে।
কমলবাবু চুপচাপ বসে আছেন একটা চেয়ারে ফোনের আশায়। খানিক বাদে ফোন বাজলো। জিতেন বাবু ফোনটা তুললেন। তিনি হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কোন উত্তর আসলো হয়তো। তারপর কমলবাবুকে ডেকে ফোনটা ধরিয়ে দিলেন। অমলবাবু ফোনটার রিসিভার ধরে কথা চালিয়ে গেলেন। কথা শেষে রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন। আর তারপর জিতেন বাবুর সঙ্গে কিছু কথা বলে বাড়ির দিকে চললেন।
এভাবেই ছেলের খোঁজখবর নিতে থাকেন কমল বাবু। শুধু তিনি নন তার মতো আরো অনেকেই যাদের পরিবারের কেউ না কেউ
বাইরে থাকে এভাবেই খবর নেন। গ্রামের মধ্যে একটাই টেলিফোন। কিছু করার নেই। এভাবেই তাদের চলতে হবে।
কমলবাবুর মোবাইলে রিং হচ্ছে। ফোনটা তুলে নিলেন তিনি পাশের টেবিল থেকে। তার ছেলের ফোন এসেছে। সবুজ বোতাম টিপে ফোন রিসিভ করলেন। ফোনে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন। এখন আর কথা বলতে অসুবিধা হয়না। যতক্ষণ খুশি কথা বলা যায় খরচও কম। কথার শেষ দিকে ছেলে তাকে জানায় কমলবাবুর জন্য এবার একটা এন্ড্রয়েড ফোন পাঠিয়ে দেবে ছেলে। তাতে নাকি ভিডিওতেও কথা বলা যাবে। মোবাইলটা রেখে দিলেন কমলবাবু।
তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলেন আগের ল্যান্ড ফোনে ফোন আসার অপেক্ষায় বসে থাকতে হতো। এখন দিন বদলে গেছে। কারও জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় না। তারবিহীন এই মোবাইল ফোনে যেখানে খুশি বসে কথা বলা যায়। এরপর নাকি যার সঙ্গে কথা বলছে তাকে মোবাইলে দেখাও যাবে। সত্যি দিন বদলে গেছে ভাবলেন কমলবাবু।