এটাই হবার ছিল
এটাই হবার ছিল


ভেতরটা আজকে খুব গরম। আর তাই লি চাইছিল একটু উপরে গিয়ে ঠান্ডা হতে। অবশ্য উপরের কি অবস্থা তা জানেনা সে। আগে জেনে তারপর উপরে উঠবে। তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো লি। এখানে যে কয়টি পরিবার রয়েছে তাদের প্রত্যেকের জন্য একটা করে কক্ষ বরাদ্দ আছে। নিচে যেখানে খুশি যাও যা খুশি করো ওপরে ওঠার জন্য কন্ট্রোল রুমের পারমিশন লাগবে। না হলে উপর থেকে কোন বিপদ কে টেনে আনবে তার ঠিক নেই। লি তাই যাচ্ছিল কন্ট্রোল রুমের দিকে।
বিভিন্ন কারণে মানুষেরা এখন পৃথিবীর উপর থেকে মাটির নীচে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। অনেকদিন আগে এক মহামারীতে বেশিরভাগ মানুষই শেষ হয়ে যায়। যে কজন বেঁচে ছিল তারাও প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কতক্ষণ লড়াই করবে? তাদের পূর্ব পুরুষেরা প্রকৃতির উপর যে অত্যাচার করেছিল তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে।
মানুষ তাদের আরাম-আয়েসের জন্য এমন সব জিনিসপত্র তৈরি করে গেছে যা প্রকৃতির পক্ষে ক্ষতিকর। সেই সব পদার্থের খারাপ প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃতি বিষিয়ে গেছে। মানব সভ্যতার প্রতিকূল হয়ে গেছে পরিবেশ।
তারপর বাইরের কোন এক গ্রহ থেকে এসেছে নতুন প্রজাতির প্রাণীরা। তাদের আক্রমণে মানুষেরা পৃথিবীর অভ্যন্তরের লুকাতে বাধ্য হয়েছে। তাদের সঙ্গে লড়াই করার মতো লোকবল বা প্রযুক্তিবল কোন কিছুই এখন মানুষদের নেই। তাই পরাজিত হয়ে বাঁচার জন্য উপরিভাগের রাজত্ব ভিনগ্রহীদের কাছে দিয়ে দিয়েছে।
পৃথিবীর উপরের পরিবেশে এখন জীবাণু আর বিষাক্ত গ্যাস ভর্তি। সেখানে বেঁচে থাকার মত পরিবেশ শুধুমাত্র ভিনগ্রহীদের রয়েছে। তাই ওপরে যাবার অনুমতি মানুষদের নেই। লি-কে তাই অনুমতি নিতে হবে উপরে যাওয়ার জন্য।
ভিনগ্রহের একটা ছোট বাচ্চা খবরের চ্যানেল দেখছিল। সেখানে পৃথিবীর পরিবেশের বর্তমান অবস্থা দেখাচ্ছিলো। ওদের ব্যবহার করা জিনিসপত্রের অবশিষ্ট যা আবর্জনা হিসাবে ফেলে দেওয়া হয় তা মাটির নিচে বসবাসরত মানুষের ক্রমাগত ক্ষতি করে চলেছে। ওদের বসবাসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সেটা পরিবারের অন্যদের জানালো। তার উত্তরে তারা জানালো এর শুরু মানুষরা করেছিল তাদের এখানে আসার বহুকাল আগে থেকে। নতুন করে আর কিছু করেনি ভিনগ্রহীরা। তারা তাদের মতো করে জীবন চালাচ্ছে। মানুষও আগে অন্য জীবের পক্ষে ক্ষতিকর আবর্জনা ফেলে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। তাদের জায়গায় এখন মানুষ আর মানুষের জায়গায় ভিনগ্রহীরা। মানুষের কর্মফল- এটাই হবার ছিল। বাচ্চাটা ভাবল এরকম চললে এর পর তাদের সঙ্গেও এরকম হবে তাহলে।
লি কারও অনুমতি না নিয়ে চুপিচুপি উঠে এসেছিল উপরে। ওরা যেখানে থাকে তার উপরে আবর্জনার স্তূপ হয়ে গেছে। প্লাস্টিক রাবার বিভিন্ন ক্ষতিকর জিনিস ফেলা হয় এখানে। এটা যে আগে সমুদ্রের কিনারা ছিল এখন তা বোঝাই যায় না। একটা আবর্জনা ভর্তি যান লি-এর দিকে এগিয়ে আসছে। ওর মতো অতিক্ষুদ্র মানুষকে চোখে দেখতে পারছেনা ভিনগ্রহী যানচালক। আবর্জনায় চাপা পড়ার আগেই পালাতে হবে তাকে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য দৌড়াতে শুরু করল লি। পারবে কি সে বাঁচতে?