মাটির ভান্ডার
মাটির ভান্ডার


গতবছর রথের মেলা থেকে একটা মাটির ভান্ডার কিনেছিল কমলা। সেটা তার ছেলেকে দিয়েছিল বলেছিল প্রতিদিন পয়সা জমাতে। তাহলে বছর শেষে বেশ কয়েকটা টাকা হবে। তা দিয়ে পরের বছর মেলা দেখার খরচটা হয়ে যাবে।
তার পরদিন থেকেই তার ছেলে ভান্ডারে পয়সা জমাতে থাকে। এক টাকা দু' টাকা করে প্রতিদিনই তার মায়ের কাছ থেকে নেয় আর তার মধ্যে জমা করে। দু একদিন বাদে বাদে সে ভান্ডারটা উঁচু করে কানের কাছে ঝাঁকায়। তাতে পয়সার ঝুমঝুম শব্দ হয়। সেই শব্দ থেকে আন্দাজ করার চেষ্টা করে কত পয়সা তার মধ্যে জমেছে।
রথের মেলার আর দু-তিন মাস আছে। কিন্তু একটা সমস্যা সারা পৃথিবীকে ঘিরে ধরেছে। এই অবস্থায় মেলার কথা আর মনে পড়ছে না। সবাই এই সমস্যা কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তার ঝামেলায় ব্যস্ত। অনেক দিন মজুরের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কমলা লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। তারও কাজ প্রায় বন্ধ। কেউ কারো বাড়ি যেতে পারছে না। তাই সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।
রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় কমলার। দেখে ছেলে ঘুমিয়ে আছে। সে উঠে যায় ধীরে ধীরে। মাটির ভান্ডারটা তুলে নেয় হাতে। বেশ ভারী হয়েছে। বছর প্রায় ঘুরে এসেছে বেশ পয়সা জমেছে। কিন্তু এটা তার ছেলের মেলার জন্য।
উভয়সঙ্কটে পড়ে গেল কমলা। আগে তো বাঁচতে হবে মেলার জন্য না হয় সামনের বছর জমাবে। ভান্ডারটা মাটিতে আছড়ে ফেলল। ভেঙে টুকরো হয়ে সব পয়সা বেরিয়ে এল বাইরে। আর ছেলে শুনতে পেলে না তো? ভাবল কমলা।