ডায়েট ডিবাকল
ডায়েট ডিবাকল


‘ও মা, দেখ দেখ... মুন্নি ফ্রিজ খুলে কী যেন খাচ্ছে!!!’
জামাই বাবাজীবন দীপের ভারী গলা গমগম করে উঠল।
‘না, মা! আমি শুদ্দু একটা মটর খেয়েছি... চুগলখোর কহীঁকা!!’
পেন্টিং এর বাকিটা শেষ করতে করতে চোখ তোলে মৃন্ময়ী।
ততক্ষনে ছোটকন্যা মুন্নি তার কাছে এসে বসেছে।
‘সত্যি মা, আমি খাইনি... দেখ।’ হাঁ করে দেখায় সে। ছোটমেয়ে, মুন্নির কাছে, আবুধাবিতে বেড়াতে গেছিল মৃন্ময়ী। ফেরার সময়ে ছোট মেয়েকে নিয়ে ফিরেছে সে মুম্বই, বড়মেয়ের কাছে। ছুটি প্রায় শেষ, কলকাতা ফিরে গিয়েই স্কুল... মুন্নিও ফিরে যাবে তার গাল্ফ এয়ারের ডিউটিতে।
বড়মেয়ে অফিস থেকে ফিরে বলল, ‘ওয়াটারমেলোন ডায়েট এ যাব মা। খুব ওজন বেড়ে যাচ্ছে।’
ওরা তো ছোট। এই ব্যাপারে খুব চিন্তিত থাকে মৃন্ময়ীও। একে তো বেঁটে, তায় আবার যদি মুটোয়... পুরো কুমড়ো গড়াগড়ি।
‘চল, আমিও করব। কী করতে হবে?’
এক লিস্ট বানিয়ে ফ্রিজের গায়ে আটকে দিল, চুন্নু।
প্রথম দিন শুধু তরমুজ। তার পরে কোনদিন নানা রকম ফল, কোনদিন তরকারি সেদ্ধ, কোনদিন আবার মুরগীর মাংস/ব্রাউন রাইস... সাত দিনের কোর্স।
ছোট বলল, ‘ঠিক হ্যায়, আমিও ইন।’
কী যেন খুঁজতে ঘরে ঢুকেছিল দীপ।
‘কি সে ইন রে?’
‘আমরা ডায়েট প্ল্যান এ যাচ্ছি। তুই করবি?’
কতবার বলেছে মৃন্ময়ী, ‘বড় জামাইবাবু। তাকে তুই তোকারি করবি না, নাম ধরেও ডাকবি না…’ চোরা না শোনে ধম্ম কাহিনী।
‘ও তাই? হ্যাঁ...আমিও আছি।’
পরের দিন সকালে পেল্লাই এক তরমুজ এল বাড়িতে। কাটল মৃন্ময়ী... সারাদিন ধরে শুধুই তরমুজ ভক্ষণ। সে অবশ্য ভাল বাসে তরমুজ খেতে, একটু আধটু রকম ফের মাঝে মাঝে ভাল লাগে।
সকাল সকাল কিছুই খেতে চায় না, বড় কন্যা চুন্নু। টিফিনের ডাব্বা ভরে তরমুজ দিয়ে দিল মৃন্ময়ী।
‘না মা, অফিসের নিচেই ফল বসে। আমি খেয়ে নেব। এটা তোমরাই খাও। দরকার হলে দীপ কে বোল, এনে দেবে আরও।’
বিকেল বিকেল ফোন এল চুন্নু... চিত্রালীর। ‘কী করছ মা? আমাদের অফিসে আজ ফ্র্যাঙ্কি পার্টি। কী গন্ধ বেরোচ্ছে... উফফফফফ।’
মনটা খারাপ হয়ে গেল মৃন্ময়ীর, শাশুড়ি মা বলেন, ‘সুন্নু আমার একটু খাইত্যে লইত্যে বালা বাস্যে।’ বেচারা পড়েছে ডায়েটের যাঁতাকলে... কী যে মুশকিল।
‘ফ্রিজে কী আছে রে?’ ছোটমেয়ে মুন্নি, মৈথিলী কে ডেকে জিজ্ঞেস করে তার মা।
‘কাল চুন্নুর বন্ধুরা আলু- পরাঠা এনেছিল। দীপ এনেছিল শম্মি আর শিক কবাব। একটু একটু আছে। কেন মা?’
'চুন্নু কে ফোন লাগা তো!’
‘শোন, আজ আর ডায়েট করতে হবে না। যা ফ্র্যাঙ্কি খেগে যা।’ স্নেহ ঝরে পড়ে মৃন্ময়ীর স্বরে।
‘আর ডায়েট? না না তোমরা রোগা হবে, আর আমি মোটাই থাকব... সে হবে না…’
‘না রে, আমরাও করছি না। ফ্রিজে যা আছে ভাগ করে খেয়ে নিচ্ছি।’
দীপ বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে কুঁই কুঁই করে বলল, ‘আমি তো চিত্রা কে তাই ই বলছিলাম, মা যখন আমাদের কাছে আছে, কত্ত ভাল ভাল রান্না করবে, আর আমরা খাব! তখন কেউ ডায়েট করে...রাম রাম।'