Atrayee Sarkar

Action Crime

3.9  

Atrayee Sarkar

Action Crime

অমীমাংসিত

অমীমাংসিত

7 mins
500


"এক মুহূর্তের মধ্যে যেন মনে হলো সব টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেল । সবকিছুই অতীত হয়ে গেল। জীবনে যে এমন একটা কালো কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হতে হবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি। একদিকে আমি স্ত্রী ,,,, আমার ভালোবাসা,, অন্যদিকে ন্যায় ।"

ভাবতে ভাবতে কান্নায় ভেঙে পড়ল,,,, পুলিশ অফিসার মৌসুমি মিত্র ।

শিউলি চৌধুরি নামে একজন মেয়েকে রেপ করে মারা হয়েছে........... সেই খবরটা রটে গেছে।

শিউলি চৌধুরি.......শিলপী চৌধুরি আর দিব্যেন্দু চৌধুরির মেয়ে ছিল ।

শিউলি একটা স্কুলের শিক্ষিকা ছিল । তার সাথে শিউলি টিউশনি করতেও যেতো স্টুডেন্টদের বাড়িতে । বাড়ি ফিরতে শিউলির রাত দশটা বেজে যেতো ।

সেইদিন রাত ১০:৩০ বেজে গেছিল.... কিন্তু শিউলি বাড়ি ফিরছে না দেখে...... শিউলির মা,, বাবা,, শিউলিকে ফোন করে । ফোন সুইচ অফ শোনাচ্ছিল। দেখতে দেখতে রাত ১১ টা বেজে গেছিল। তাও শিউলির ফোন সুইচ অফ শোনাচ্ছিল।

শিউলি বাড়ি ফিরছে না দেখে..... শিউলির মা,, বাবা পুলিশের কাছে যায়।

পুলিশকে সব কথা বলতে......পুলিশ শিউলিকে খুজতে থাকে.. যেখান দিয়ে সাধারণত ও যাতায়াত করে ।

পুলিশ শিউলিকে একটা ঝোপের মধ্যে মৃত অবস্থায় পায় । শিউলির জামা ছেড়া ছিল ।

এসব দেখেই পুলিশ বুঝতে পারে... শিউলিকে রেপ করে মেরে ফেলেছে ।

শিউলির মা,, বাবা এই কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাচ্ছিল । কিন্তু ওরা চেয়েছিল যারা ওকে রেপ করেছে তাদের জেন শাস্তি হয়।

পুলিশ তদন্ত করছিল..... কার কার সাথে শিউলির সম্পর্ক ছিল। কার সাথে ফোনে কথা বলত।

খুঁজতে খুঁজতে দেখা গেছে.......বহু ফোন নাম্বার থেকে ফোন এসছে...... মানে মিনিটে মিনিটে কেউ সিম কার্ড চেঞ্জ করেছে । খুবই অদ্ভুত ঘটনা ।

সব পুলিশ অফিসারদের মধ্যে একজন মেয়ে পুলিশ অফিসার ও ছিল ।

মেয়ে পুলিশ অফিসারটার নাম ছিল..মৌসুমি মিত্র। মৌসুমি.... নাম করাই পুলিশ অফিসার ছিল।

মৌসুমি বিবাহিত ছিল।

মৌসুমি মিত্র ই এই কেসের ইনচার্জ ছিল।

এমন যায়গায় শিউলির রেপ হয়েছিল যেখানে কোন CCTV ক্যামেরা ছিল না।

মৌসুমি তাই শিউলির স্টুডেন্টদের ডেকে প্রশ্ন করছিল।

একজন স্টুডেন্ট বলে ম্যাম রাত ৯ টায় বেরিয়ে গেছিল। তারপর ৯:৩০ টার সময়,, আমার পড়াশোনার জন্য ফোন করেছিলাম। ম্যামের ফোন সুইচ অফ ছিল।

এই কথাতেই পুলিশ বোঝে রাত ৯:৩০ থেকেই কিছু হয়েছে।

 শিউলিকে যে রেপ করা হয়েছে,, সেটা  খবরের মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে গেছিল। 

মৌসুমি  ফোন নাম্বার সার্চ করতে করতে,,, এমন একটা ফোন নাম্বার পায়,,, যেটা ওর খুব চেনা চেনা লাগছিল। ও বুঝতে পারছিল না,,, ওটা কার ফোন নাম্বার ।

মৌসুমি নিজের বাড়িতে গিয়ে তখন খোঁজে।

তারপর দেখে ওটা ওর হাসব্যেন্ড অনিমেষের আগের ফোন নাম্বার।

মৌসুমি অবাক হয়ে যায়..... যে এ কি করে সম্ভব?

মৌসুমির কাছে যেন অবাস্তব লাগছিল ।

যাকে ও ভালোবাসে,,, তার এই রূপ?

মৌসুমি আর স্মৃতি একই কলেজে পড়ত। স্মৃতি ছিল মৌসুমির সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। স্মৃতি সব অনুষ্ঠানে তাই মৌসুমিকে ডাকত ।

অনিমেষ ছিল স্মৃতির দাদা রুদ্রর প্রিয় বন্ধু ।

রুদ্র ও সেরমই অনিমেষকে ডাকত।

স্মৃতি,,,, অনিমেষের সাথে মৌসুমির একদিন আলাপ করিয়ে দেয় ।

ওই প্রথম মৌসুমির সাথে অনিমেষের সম্পর্ক হয়।

এরম ভাবে দেখা হতে হতে ,,, একদিন অনিমেষ মৌসুমির ফোন নাম্বার চায় । মৌসুমি দিয়ে ও দেয়।

রোজ কথা বলত ওরা ফোনে,,, ম্যসেজে ।

যা হয়,,,,,,,, মন কখন কোথায় চলে যায়,,, কাকে পছন্দ করে জানা যায় না । ঠিক তাই

অনিমেষ আর মৌসুমি দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে । মৌসুমির সাথে অনিমেষের বিয়ে ও হয়ে যায়।

আজ ৫ বছর কেটে গেছে,,, অনিমেষের সাথে মৌসুমির জীবন ।

কিন্তু আজ কেস লড়তে গিয়ে মৌসুমি যেন ইতিহাসে হারিয়ে যাচ্ছিল ।

৫ বছর ধরে যার সাথে মৌসুমির ভালোবাসা একদম অটল ,,, তাঁর ফোন নাম্বার পেল ।

নিজের হাসবেন্ডের ফোন নাম্বার?? মৌসুমির মাথায় যেন বজ্রপাত ঘটেছিল।

সেই মুহূর্তে ই মৌসুমি কিছু বলতে পারেনি ।

মৌসুমি আরও তদন্ত করতে থাকে আর কে কে দায়ী এই রেপের জন্য ।

মৌসুমি অনিমেষের এক বন্ধু রাজীব সেনের ফোন নাম্বার পায়।

বাড়ি গিয়ে মৌসুমি ওর হাসবেন্ড অনিমেষের সাথে আনন্দ করে বলে -- " অনিমেষ,,,, একটা পার্টি করি না বাড়িতে । তুমি তোমার বন্ধু রাজীব আর অভয়কেও বলো । করতে পারি?

অনিমেষ-- " তুমি যখন বলছ ,,, নিশ্চয়ই হবে । তুমি আমার হৃদয়

মৌসুমি -- " অনিমেষ I love you too ।"

মৌসুমির নিজের মনটা ভেঙে যাচ্ছিল,,, যে ওকে নিজের ভালোবাসার মানুষটার সাথে নাটক করতে হচ্ছে । মৌসুমি,,, অনিমেষকে প্রচন্ড ভালোবাসত ।

সত্যিই পার্টি হলো। ড্রিঙ্ক করে যখন অনিমেষ ওর বন্ধু অভয় আর রাজীবের সাথে ঘুমিয়ে পরে,,, মৌসুমি ওদের ফোন তদন্ত করতে থাকে ।

কিন্তু কিছু পাচ্ছিলনা।

এরপর ডিলিটেড ম্যসেজ, call,,,, এগুলো খুঁজে বের করে ।

সবার ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে মৌসুমি শিউলির ফোন নাম্বার রাজীব আর অভয়ের ফোনের মধ্যে পায়। তদন্ত করে বোঝে,, রাজীব আর অভয় ই শিউলির সাথে কথা বলত বেশি।

অনিমেষের সাথে ২/৩ বার কথা বলেছে।

অভয়ের মোবাইলে শিউলির সাথে কথা বলার একটা call রেকর্ড পায় হঠাত্ মৌসুমি।

তদন্তের সব তথ্যগুলো মৌসুমি নিজের কাছে গুছিয়ে নেয়।

দুদিন বাদে মৌসুমি,, সকালেই অনিমেষকে একটা কাগজ দেয় ।

অনিমেষ -- " এটা কি দিচ্ছ?????"

মৌসুমি-- " পড়ে দেখে নাও কি ওটা ।"

অনিমেষ -- " তুমি আমায় divorce পেপার দিচ্ছ মৌসুমি???? কেন??? তুমি এইভাবে পাল্টে গেলে?? একবার তাকিয়ে দেখ আমি তোমায় কতো ভালোবাসি । তুমি এরম করবে আমি ভাবিনি। বিশ্বাস হচ্ছে না যানো। মনে হচ্ছে মজা করছ।"

মৌসুমি-- " আমার ও বিশ্বাস হয়নি যানো,,,,, তুমি যে এতো নোংরা কাজ করতে পার।"

অনিমেষ-- " নোংরা কাজ? আমি কি নোংরা কাজ করেছি?

মৌসুমি-- " দেখেছ,,,, তোমার ভালোবাসাটা কতদূর হারিয়ে গেছে । তুমি এখন আমায় মিথ্যে কথাও বলতে পার ।"

অনিমেষ-- " মৌসুমি তুমি কি বলছ???"

মৌসুমি-- " তোমার আর তোমার বন্ধুদের লজ্জা করলো না,,,, একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলতে?? ওর সাথে নুংরামি করে মেয়েটাকে মেরে ফেলেছ পর্যন্ত??? তুমি মানুষ না অমানুষ অনিমেষ?

অনিমেষ-- " কোন মেয়ে??? কার কথা বলছ ? আমি কোন মেয়েকে চিনিনা।"

মৌসুমি-- " নাটক করছ আমার সামনে? তুমি শিউলিকে চেন না? তুমি ওর সাথে ফোনে কথা বলতে অনিমেষ । শেষে ওকে রেপ করলে??? ছিঃ ছিঃ । তোমায় নিজের স্বামী বলতে আমার ঘেন্না লাগছে । কেন করলে এরম?

অনিমেষ -- " আমি কিছু করিনি । যা করার অভয় আর রাজীব করেছে । আমি মানা করেছিলাম ।"

মৌসুমি-- " তুমি ওকে ফোন করতে অনিমেষ।

আমার কাছে সব প্রমাণ আছে । সব কথা খুলে বল ওর সাথে কি হয়েছিল।

অনিমেষ-- " আমি শিউলিকে ফোন করতাম না। অভয়কে শিউলি ভালোবাসতে শুরু করেছিল। অভয়কে ওর এতো ভালো লেগেছিল। কিন্তু অভয় ওর সাথে flirt করছিল ।

অভয়ই কয়েকবার আমার ফোন দিয়ে শিউলিকে ফোন করেছিল।"

মৌসুমি-- " সবকিছু যেনেও তুমি চুপ করেছিলে?? উল্টে ওদের পাশে থাকতে?

অনিমেষ -- কেন এই কেসটা নিয়ে এগোচ্ছ ??? মেয়েটা তো আর নেই। আমাদের ভালোবাসাটা ভুলে গেলে???"

মৌসুমি-- " তুমি আমার ভালোবাসা,,, ঠিকই । অন্যদিকে আমি একজন পুলিশ অফিসার ও। crime is crime infront of me,,, সে যেই হোক।

উত্তর দাও অনিমেষ,, কি করেছিলে মেয়েটার সাথে সেইদিন ,,, নইলে আমি এক্ষুণি পুলিশকে ফোন করব।"

অনিমেষ-- " বলছি।

রাজীব,,,, শিউলির এক বান্ধবী রুমির হাসবেন্ড ছিল। রাজীবের কাছে শুনতাম শিউলি রুমির কাছে প্রায় দিনই আসত। রাজীব খালি বলতো "শিউলিকে খুব সুন্দর দেখতে,,, জানিস" যেটা আমার খুব খারাপ লাগত । রাজীব বিবাহিত হয়ে এই কথা বলছে ।

ওইদিন শিউলি রুমির থেকে নেওয়া একটা বই ফেরত্ দিতে এসছিল,,,, আর রুমি সেইদিন ছিল না।

রাজীব খুব ড্রিঙ্ক করে। সেইদিন,,, রাজীব,, অভয় আর আমি ড্রিঙ্ক করেছিলাম। অভয় আর রাজীব ড্রিঙ্ক করে মোদোমাতাল হয়ে গেছিল।

আমি দেখি রাজীব শিউলির হাত ধরে টানছে,,, kiss করছে ঠোঁটে । অভয়ও তাই করতে থাকে । কিন্তু আমি ওদের মানা করতে থাকি । সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি । কিন্তু ওরা কি করল কে জানে,,, শিউলি মারা গেছিল।

তারপর আমরা ঘাবড়ে যাই কি করব।

আমি অভয় আর রাজীবকে বলছিলাম-- " তোদের জন্য এরম হলো। ভেবে দেখ এবার কি হবে?? আমাদের তো জেল হয়ে যাবে ।

রাজীব বলে উঠল -- " হাট্,,, জেল । আমরা ওকে একটা ঝোপে ফেলে দিয়ে আসি।"

বললাম-- " ঝোপে ফেলে দেব?

রাজীব -- " হ্যা,,,, ভাবছিস কি অতো?? "

গাড়ি করে শিউলির মৃত দেহটা নিয়ে রাজীব ঝোপে ফেলে দেয়।

আমি ওদের সাথে গাড়ি করে গেছিলাম,,, ঠিকই,, কিন্তু আমি গাড়িতেই ছিলাম । যা করার অভয় আর রাজীব করল ।"

মৌসুমি-- " বাহ্ । বাহবা দেওয়া উচিত তোমায় এতো সুন্দর কাজ করার জন্য। যতক্ষণ না মেয়েটার মৃত্যু হলো,,, ততক্ষণ তোমরা অসভ্যতামি করে গেছিলে ওর সাথে । এবার বোলোনা,, তুমি কিছু করোনি। তুমি পারলে সেই সময় পুলিশকে ফোন করতে পারতে । কিন্তু তা করোনি । মেয়েটাকে সব সত্যি বলতে পারতে । বলোনি । তুমিও একজন ক্রিমিনাল। "

অনিমেষ-- " তুমি এই কেসটা নিয়ে কেন লড়ছ?? আমি তোমায় সব সত্যি বলেছি ,,, কিন্তু পুলিশকে আমি কিছু বলবো না। আর তুমি যদি এইভাবে force কর,,, তাহলে..... "

অনিমেষের কথা শেষ হওয়ার আগেই মৌসুমি বলে ওঠে-- " তাহলে তুমি কি করবে??? মেরে ফেলবে আমায়???

এদিকে তাকিয়ে দেখ,,, আমার কাছে বন্দুক আছে। আর আমি একজন পুলিশ অফিসার । আমি ছেলেদের ভয় পাইনা ।

আর হ্যা,,,, তুমি যা যা বলেছ,,,,,, পুলিশ শুনে নিয়েছে। ফোনটা on ছিল।

সব প্রমাণ আমি দিয়ে দিয়েছি । শুধু তোমার মুখ দিয়ে বলিয়ে,,, পুলিশকে শোনালাম ।

I just hate you । I want divorce । সাইন করো"

মৌসুমি চিল্লিয়ে কথাটা অনিমেষকে বলে। অনিমেষ সাইন করে দেওয়ার পর মৌসুমি অনিমেষের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action