শিক্ষকের অপূর্ব শিক্ষা
শিক্ষকের অপূর্ব শিক্ষা


উনি ছিলেন আমার একজন গানের টিচার। মানে স্যার। গানের স্যার ই বলতাম আমি ওনাকে। তখন ছিল ২০১০ সাল।
গান শিখতাম,,, তার অনেক আগে থেকেই। ছোট থেকেই। গানের স্যার, প্রথম আমাকে বলেছিলেন " তুমি গানটা, ওর স্বরলিপি লিখবে"।
তখন এইরকম ইন্টারনেট কানেকশন ছিল না। এটা আমরা সবাই জানি।
Google খুলে অনলাইনে গীতবিতান পাব। এ ছিল ভাবনার ও বায়রে,,, এখন পাওয়া যায়।
যাই হোক, ইন্টারনেটের কথা নয়, স্যারের কথাই বলতে এসেছি।
উনি গানের খাতা দিয়ে যেতেন আর আমি লিখেও নিতাম। লিখিনি,, লিখব না,, এরকম আমি একদমই নই,, ছিলাম ও না।
৪ বছর ধরে শিক্ষা দিয়ে, উনি আমায় অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখিয়েছিলেন।
আজ আমি বুঝতে পারি,, কেন উনি আমাকে গান, স্বরলিপী লেখাতেন। উনি প্রতিটা তালের ছন্দ,, ও কত তাল আছে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই বলতেন লিখতে। তাই আমি জানতে পারলাম সমপদি আর বিশমপদি তাল কি।
পরিস্থিতিও দেখুন, উনিই আমায় ছেড়ে চলে গেলেন। শুধু আমায় নয়,,, পুরো পৃথিবীকে ত্যাগ করে চলে গেলেন। ভাল মানুষরা পৃথিবীতে শান্তি খুঁজে পায় না, তাই বোধহয় চলে যায়। হাসি খুশি মানুষ ছিলেন উনি।
কিডনির রোগ হয়ে গেছিল ওনার। তখন ওনার মেয়ে ছিল ছোট। চতুর্দিকে ওনাকে নিয়ে, ওনার চিকিৎসার জন্য ডাক্তার খুঁজতে খুঁজতে হাফিয়ে যেতেন ওনার স্ত্রী আর তখন আমায়ই ফোন করতেন উনি।
উনি ওনার স্বামীর চিকিৎসার জন্য চিন্তায় শেষ হয়ে যেতেন যখন, তখন আমার বাবা যেতেন ওনার সাহায্য করতে। হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।
আমি ছিলাম স্যারের স্ত্রীর বন্ধুর মতন।
ডায়লাসিসে নিয়ে গেলে, মনের বেদনা আমায়ই বলতেন উনি। আর আমি মনে শক্তি দিতাম। কেন, কিভাবে ওটা এখন আমি বলতে চাই না।
কিডনির রোগের চিকিৎসা তো এখনও বেরোয়নি। এই রোগ হল, মানে তুমি ওপোরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
হাসপাতালে উনি যেদিন মারা গেছিলেন আমার মন ভেঙ্গে গেছিল একদম।
সেদিন থেকেই আমি ঠিক করেছিলাম স্যারের স্ত্রীর পাশে আমি থাকব।
আজ ২০২২ সাল, স্যারের মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গেছে।
এর আগে স্যারের স্ত্রী ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। মনের মধ্যে জোর দেওয়ার জন্য এইটুকু তো করাই উচিত। কিন্তু এখন ওনাকে কাকিমা বলেই ডাকি।
হ্যা,,, আজও সম্পর্ক আছে ওনার সাথে আমার। নাম আর বললাম না স্যারের। উনি তো পৃথিবীতেই নেই।
✍ আত্রেয়ী সরকার